ইসলামের দৃষ্টিতে জোয়ার ভাটা:


 



কুরআনে জোয়ার-ভাটার কথা উল্লেখ নেই- এমনটা নয়, বরং বলা ভালো সরাসরি উল্লেখ নেই। তবে, এ বিষয়ে কুরআনের দাবী হল-"এ গ্ৰন্থে কোনও কিছুরই বর্ণনা বাদ দেওয়া হয় নি"(6:38, 12: 111, 22:70)।
وَمَا مِن دَآبَّةٍ فِي الأَرْضِ وَلاَ طَائِرٍ يَطِيرُ بِجَنَاحَيْهِ إِلاَّ أُمَمٌ أَمْثَالُكُم مَّا فَرَّطْنَا فِي الكِتَابِ مِن شَيْءٍ ثُمَّ إِلَى رَبِّهِمْ يُحْشَرُونَ
আর যত প্রকার প্রাণী পৃথিবীতে বিচরণশীল রয়েছে এবং যত প্রকার পাখী দু' ডানাযোগে উড়ে বেড়ায় তারা সবাই তোমাদের মতই একেকটি শ্রেণী। আমি কোন কিছু লিখতে ছাড়িনি। অতঃপর সবাই স্বীয় প্রতিপালকের কাছে সমবেত হবে।[ সুরা আন’য়াম ৬:৩৮ ]
لَقَدْ كَانَ فِي قَصَصِهِمْ عِبْرَةٌ لِّأُوْلِي الأَلْبَابِ مَا كَانَ حَدِيثًا يُفْتَرَى وَلَـكِن تَصْدِيقَ الَّذِي بَيْنَ يَدَيْهِ وَتَفْصِيلَ كُلَّ شَيْءٍ وَهُدًى وَرَحْمَةً لِّقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ
তাদের কাহিনীতে বুদ্ধিমানদের জন্য রয়েছে প্রচুর শিক্ষণীয় বিষয়, এটা কোন মনগড়া কথা নয়, কিন্তু যারা বিশ্বাস স্থাপন করে তাদের জন্যে পূর্বেকার কালামের সমর্থন এবং প্রত্যেক বস্তুর বিবরণ রহমত ও হেদায়েত।[ সুরা ইউসুফ ১২:১১১ ]
أَلَمْ تَعْلَمْ أَنَّ اللَّهَ يَعْلَمُ مَا فِي السَّمَاء وَالْأَرْضِ إِنَّ ذَلِكَ فِي كِتَابٍ إِنَّ ذَلِكَ عَلَى اللَّهِ يَسِيرٌ
তুমি কি জান না যে, আল্লাহ জানেন যা কিছু আকাশে ও ভুমন্ডলে আছে এসব কিতাবে লিখিত আছে। এটা আল্লাহর কাছে সহজ। [ সুরা হাজ্জ্ব ২২:৭০ ]
তবে কুরআনের আশ্চর্য মুজেজা হচ্ছে: ছোট এই আসমানী কিতাবটিতে সমস্ত কিছুই সরাসরি বা ইঙ্গিতে দেয়া আছে। এতে সব কিছু সরাসরি হয়ত পাবেন না, কিন্তু পরোক্ষ ভাবে পেতে পারেন। আর জোয়ার-ভাটার ব্যাপারটিও এ রকম।
আল্লাহ তায়ালা বলেন:
আমার কাছে প্রত্যেক বস্তুর ভান্ডার রয়েছে। আমি নির্দিষ্ট পরিমানেই তা অবতরণ করি। [ সুরা হিজর ১৫:২১ ]
------------------------
গায়েবের জ্ঞান হলো এমন জ্ঞান যা কেবল আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার। এটি আপনি কোনোভাবেই পরিপূর্ণরুপে জানতে পারবেন না। গায়েবের কিছু বিষয়ে শরীয়তে সামান্য বর্ণনা থাকতে পারে কিন্তু সেসবকে সেভাবেই রেখে দেয়া উত্তম। নিজের বুঝে বুঝতে যাওয়া একদমই অনুচিত। কেননা ঐযে, ঐসব বিষয়ের পরিপূর্ণ জ্ঞান কেবল আল্লাহর। উপরন্তু, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা তার সৃষ্টি সম্পর্কে কিছু বিষয় গোপন রাখতে পছন্দ করেন বিধায় আপনি চাইলেই সৃষ্টির প্রত্যেক বিষয়ে সম্যক জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন না। এই অসম্ভব বিষয়টাই শয়তানের দেখানো বিকৃত সৃষ্টিতে সম্ভব হয়েছে ; বিজ্ঞান তো কেবল মোড়ক মাত্র যেন সকলের কাছে ব্যাপারগুলো গ্রহণযোগ্য করে তোলা যায়।
বিজ্ঞানের বলা সৃষ্টিতে আপনি প্রায় সব কিছুরই ব্যাখা পাবেন - হোক না ভুলে ভরা মিথ্যায় ভরপুর! কিন্তু ইসলামে এসব ছলচাতুরীর কোনো জায়গা নেই, যেসব বিষয় সম্পর্কে আমাদের জানতে দেয়া হয়নি সেসব বিষয়ে কি উত্তর দিব আপনাকে? বিজ্ঞানের ন্যায় নিজের বানানো সুত্রকে প্রকৃতির নিয়ম বলে চালান দিয়ে মান বসিয়ে বলব "ব্যস, প্রমাণিত?" মুর্খতা নয়, আমরা আল্লাহর নারাজির ভয় করি বিধায় সেসব বিষয়ে আমরা চুপ থাকি এবং according to Quran, "শুনলাম ও মেনে নিলাম" রুপে বিনা বাক্যে বিশ্বাস করি এবং এটাই মুসলিমের বৈশিষ্ট্য। বিজ্ঞানপুজারীরা সবকিছুর ব্যাখা খুজে অথচ বুঝে না যে ইসলাম সবকিছুর ব্যাখা দিয়ে ঈমান আনালে সেটা ঈমান-ই হতো না। জোয়ার ভাটার ব্যাপারটাও তেমন। এটার ইসলামী কোনো ব্যাখ্যা নেই।
সারকথাঃ আল্লাহর জ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত বিষয়ে নাক গলানো মূর্খের কাজ, সেসব গায়েবের বিষয়ে চুপ থাকা শুধু শ্রেয়-ই নয়, বাঞ্চনীয়।
---------------------
তবুও আমরা এ সংক্রান্ত কিছু আয়াত একত্র করেছি, যাতে জোয়ার ভাটা সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়।
আল্লাহ তায়ালা বলেন:
وَإِن مِّن شَيْءٍ إِلاَّ عِندَنَا خَزَائِنُهُ وَمَا نُنَزِّلُهُ إِلاَّ بِقَدَرٍ مَّعْلُومٍ
وَأَرْسَلْنَا الرِّيَاحَ لَوَاقِحَ فَأَنزَلْنَا مِنَ السَّمَاء مَاء فَأَسْقَيْنَاكُمُوهُ وَمَا أَنتُمْ لَهُ بِخَازِنِينَ
আমি বৃষ্টিগর্ভ বায়ু পরিচালনা করি অতঃপর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করি, এরপর তোমাদেরকে তা পান করাই। বস্তুতঃ তোমাদের কাছে এর ভান্ডার নেই। [ সুরা হিজর ১৫:২২ ]
আল্লাহ অন্যত্র বলেন, ‘আমি আকাশ হতে পানি বর্ষণ করে থাকি পরিমাণ মতো, অতপর আমি তা জমিনে সংরক্ষণ করি এবং আমি তা অপসারণও করে থাকি। অতপর আমি তা দ্বারা তোমাদের জন্য খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান সৃষ্টি করেছি। তোমাদের জন্য এতে প্রচুর ফল আছে এবং তোমরা তা থেকে আহার করে থাক।’ (সুরা মুমিনুন : আয়াত ১৮-১৯)

পিপাসা নিবারণে...
আল্লাহ মানুষের পিপাসা নিবারণের জন্য সুস্বাদু পানির ব্যবস্থা করেছেন। যা ছাড়া মানুষের বেঁচে থাকা সম্ভব হতো না। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা যে পানি পান কর, সে সম্পর্কে ভেবে দেখেছ কি? তোমরা কি তা মেঘ থেকে নামিয়ে আন? না আমি বর্ষন করি? আমি ইচ্ছা করলে তাকে লোনা করে দিতে পারি, অতঃপর তোমরা কেন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর না?’ (সুরা ওয়াকিয়া : আয়াত ৬৮-৭০)
আল্লাহ তায়ালা বলেন:
اللّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ وَأَنزَلَ مِنَ السَّمَاء مَاء فَأَخْرَجَ بِهِ مِنَ الثَّمَرَاتِ رِزْقًا لَّكُمْ وَسَخَّرَ لَكُمُ الْفُلْكَ لِتَجْرِيَ فِي الْبَحْرِ بِأَمْرِهِ وَسَخَّرَ لَكُمُ الأَنْهَارَ
তিনিই আল্লাহ, যিনি নভোমন্ডল ও ভুমন্ডল সৃজন করেছেন এবং আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে অতঃপর তা দ্বারা তোমাদের জন্যে ফলের রিযিক উৎপন্ন করেছেন এবং নৌকাকে তোমাদের আজ্ঞাবহ করেছেন, যাতে তাঁর আদেশে সমুদ্রে চলা ফেরা করে এবং নদ-নদীকে তোমাদের সেবায় নিয়োজিত করেছেন(১৪:৩২)

উপরোক্ত আলোচনা থেকে মুত্তাকী মুমিনরা ঠিকই বুঝে ফেলেছেন যে, জোয়ার ভাটা কিভাবে হয়। আর যারা এখনো বুঝতে পারেননি তাদের জন্য নিচে আরো দুটি দলিল দেয়া হলো। এই দুটি আয়াতে একদম সরাসরি বলা হয়েছে। একবারে না বুঝলে , বার বার পড়ুন। বুঝতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।


আল্লাহ তায়ালা বলেন:
وَأَنزَلْنَا مِنَ السَّمَاء مَاء بِقَدَرٍ فَأَسْكَنَّاهُ فِي الْأَرْضِ وَإِنَّا عَلَى ذَهَابٍ بِهِ لَقَادِرُونَ
আমি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে থাকি পরিমাণ মত অতঃপর আমি জমিনে সংরক্ষণ করি এবং আমি তা অপসারণও করতে সক্ষম(২৩:১৮)
আল্লাহ বলেনঃ
قُلْ أَرَأَيْتُمْ إِنْ أَصْبَحَ مَاؤُكُمْ غَوْرًا فَمَن يَأْتِيكُم بِمَاء مَّعِينٍ
বলুন, তোমরা ভেবে দেখেছ কি, যদি তোমাদের পানি ভূগর্ভের গভীরে চলে যায়, তবে কে তোমাদেরকে সরবরাহ করবে পানির স্রোতধারা?(৬৭:৩০)

অর্থাৎ আমরা বুঝতে পারলাম বৃষ্টি পানি ও ভূগর্ভস্থ পানির ভান্ডারকে আল্লাহ তায়ালা নিজ কুদরতের দ্বারা বাড়িয়ে ও কমিয়ে জোয়ার ভাটার সৃষ্টি করেন।
তাফসীরে মারেফুল কোরআনে এই স্রোতধারা বলতে সাগর ও নদীর স্রোতকে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন জায়গার বরফ গলে নদীর পানির স্তর বেড়ে যাওয়ার কথাও আছে।

Comments

Popular posts from this blog

পোলিও টিকাতে মূল উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয় বানরের কিডনি:

আপনার শিশুকে টিকা দিতে চান? তার আগে সত্য জানুন!

ডাইনোসর নিয়ে যত জল্পনা কল্পনা: