ইসলামের দৃষ্টিতে আগ্নেয়গিরি (এক টুকরো জাহান্নাম)
মহান আল্লাহর অনন্য নৈপুণ্য ও রহস্যময় সৃষ্টির নিদর্শন হলো বিশ্বময় ছড়িয়ে থাকা আগ্নেয়গিরিসমূহ। ল্যাতিন
Vulcanus অর্থ জ্বলন্ত পর্বত। শব্দটির ইতালিয়ান রূপ Vulcano এবং ইংরেজি প্রতিশব্দ Volcano এর বাংলা অর্থ হলো আগ্নেয়গিরি। তবে অনেকের মতে ইংরেজি Volcano শব্দটি রোমানদের অগ্নিদেবতা Vulcan থেকে নেওয়া হয়েছে।
গবেষকগণ
মত প্রকাশ করেন, ভূপৃষ্ঠের ৮০ শতাংশ সৃষ্টি হয়েছে আগ্নেয়গিরির লাভাস্রোত থেকে। পৃথিবীর ১৫ শতাধিক সক্রিয় আগ্নেয়গিরির মধ্যে বেশির ভাগের অবস্থান সাগরতলে। কার্যকারিতার বিবেচনায় সক্রিয়, নিষ্ক্রিয় ও ঘুমন্ত তিন প্রকার আগ্নেয়গিরির ধারণা পাওয়া যায়। আবার উদিগরণগত বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে আগ্নেয়গিরি যৌগিক, ঢালবিশিষ্ট, মোচা আকৃতির ও গম্বুজ আকৃতির হয়ে থাকে। প্রাথমিক পর্যায়ে আগ্নেয়গিরির লাভা নির্গমন হতে শুরু করলে তাপমাত্রা থাকে ৫০০ ডিগ্রির চেয়েও বেশি। তাইতো আগ্নেয়গিরি আমাদের অন্তরে জাহান্নামের ভয় জাগিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
আগ্নেয়গিরি আসলে এক বিশেষ প্রকৃতির পাহাড়, যা সক্রিয় হয়ে উঠলে বের হয় উত্তপ্ত শিলা, ছাই ও গলিত লাভার সে্রাত এবং তা ভূপৃষ্ঠের শীতল পরিবেশে দ্রুত ঠাণ্ডা হয়ে জমাট, কঠিন রূপ লাভ করে। হাওয়াইতে অবস্থিত পৃথিবীর সর্বোচ্চ আগ্নেয়গিরির নাম ‘মাউনা কিয়া’। সমুদ্র তলদেশ থেকে এর উচ্চতা প্রায় ৩৩ হাজার ৫০০ ফুট, অর্থাৎ এভারেস্টের চেয়েও বেশি।
আগ্নেয়গিরির ভয়াবহতা জাহান্নামের আতঙ্ক ও নিত্যতা প্রমাণের জন্য যথেষ্ট। মনে রাখতে হবে দুনিয়ার তাপমাত্রা তো শুধু জাহান্নামের উত্তাপের ৭১ ভাগের এক ভাগ মাত্র। অন্যদিকে মহান আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানবজাতি যখন ইবাদতবিমুখ হয়ে অপকর্মে লিপ্ত হয় তখন তার পাপ তাকে জাহান্নামের দিকে ধাবিত ও পতিত করে। তাইতো আগ্নেয়গিরির মতোই পাপীদের জন্য জাহান্নাম সুপ্ত-গুপ্ত অবস্থায় রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই জাহান্নাম গোপন ফাঁদ। সীমা লঙ্ঘনকারীদের জন্য প্রত্যাবর্তনস্থল।’ (সুরা নাবা, আয়াত : ২১, ২২)।
মহান আল্লাহ আরো বলেন, ‘তোমরা জাহান্নামকে ভয় করো, যা প্রস্তুত করা হয়েছে কাফিরদের জন্য।’ (আলে ইমরান, আয়াত : ১৩১)
আগ্নেয়গিরির মতোই জাহান্নামের স্তর রয়েছে। পাপীদের পাপের তারতম্য অনুযায়ী জাহান্নামির স্তর ঠিক করে দেওয়া হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘প্রত্যেকে যে যা করে সে অনুযায়ী তার স্থান নির্ধারিত রয়েছে।’ (সুরা আনআম, আয়াত : ১৩২)
আগ্নেয়গিরির মতোই জাহান্নামের গঠন আকৃতিও ভিন্ন ভিন্ন রকমের হবে। আগ্নেয়গিরির একেকটি জ্বালামুখ যেন পবিত্র কোরআনে বর্ণিত জাহান্নামের দরজাগুলোরই নমুনা মাত্র। মহান আল্লাহ আমাদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন : ‘অবশ্যই জাহান্নাম তাদের (পাপীদের) সবার জন্য প্রতিশ্রুত স্থান। তাতে রয়েছে সাতটি দরজা। প্রত্যেক দরজার জন্য আছে আলাদা আলাদা শ্রেণি।’ (সুরা হিজর, আয়াত : ৪৩-৪৪)
পাহাড়চাপা ভয়াল অগ্নিকুণ্ডের নাম আগ্নেয়গিরি। সাধারণভাবে শান্ত-সুপ্ত আগ্নেয়গিরি দেখাও মানুষের কাছে শখের বিষয় বা পর্যটন ভাবনার অংশ। কিন্তু যখন আগ্নেয়গিরি জ্বলে ওঠে, উদিগরণ ও লাভাস্রোত বের হয় তখন বোঝা যায় কত শক্তি ও ভয়াবহ ক্ষতির ক্ষমতা ওই পাহাড়ের আড়ালে থাকা আগুনের, যাতে থাকে তাপ ও যন্ত্রণা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা আমার নিদর্শন প্রত্যাখ্যান করে তারাই হতভাগা। তারা পরিবেষ্টিত হবে অবরুদ্ধ অগ্নিতে।’ (সুরা বালাদ, আয়াত : ১৯-২০)
মানবিক সম্পর্কে স্বার্থের দ্বন্দ্বে মানুষ হয়ে ওঠে অন্ধ এবং চায় ছলে-বলে, কলে-কৌশলে অন্যের ওপর আধিপত্য করতে। কেননা প্রাচুর্যের মোহ মানুষের সহজাত এবং পাপ ও পতনের এ পথেই মানুষ জাহান্নামের দিকে ধাবিত হচ্ছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘পরিতাপ প্রত্যেক পশ্চাতে নিন্দুকের জন্য, যে সম্পদ জমা করে, গণনা করে এবং ধারণা করে এটাই তাকে অমর করবে। কখনোই নয়, সে অবশ্যই নিক্ষিপ্ত হবে হুতামায়। তুমি কি জানো হুতামা কী? এটা তো আল্লাহর প্রজ্বলিত অগ্নিকুণ্ড (হুতাশন)। যা হৃদয়কে গ্রাস করবে। নিশ্চয়ই তা তাদের পরিবেষ্টন করে রাখবে দীর্ঘায়িত স্তম্ভসমূহে।’ (সুরা হুমাজাহ, আয়াত : ০১-০৯)
আগ্নেয়গিরির সৃষ্টি ও ক্ষমতার মধ্যেও আমাদের জন্য শিক্ষা রয়েছে।
পরিশেষে মহান আল্লাহর শাহি দরবারে মুনাজাত—হে আল্লাহ! আমাদের জাহান্নামের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করুন। আমিন।
Comments
Post a Comment