ইসলামিক সৃষ্টিতত্ব (পৃথিবী স্থির এবং সমতলে বিছানো):

 


  পৃথিবী সমতল স্থির

গোলাকার নয় কিংবা গতিশীলও নয়وَإِلَى ٱلْأَرْضِ كَيْفَ سُطِحَتْ

«এবং তারা কি দেখে না কিভাবে পৃথিবীকে সমতল করা হয়েছে

 [সূরা গাসিয়াহ: ২০]

وَأَلْقَىٰ فِى ٱلْأَرْضِ رَوَٰسِىَ أَن تَمِيدَ بِكُمَْ

«আর তিনি পৃথিবীতে সুদৃঢ় পর্বত স্থাপন করেছেন, যাতে পৃথিবী তোমাদেরকে নিয়ে নড়াচড়া না করে» [সূরা নাহলঃ ১৫]

সূচিপত্র

ভুমিকা / ০৩

সৃষ্টির সূচনা /০৪

সৃষ্টি বিকৃত করা শয়তানের মিশন/ ০

সৃষ্টি বিকৃতির কিছু দৃষ্টান্ত/ ০

সৃষ্টি বিকৃতির পেছনে কি তাদের উদ্দেশ্য? /১

গোলাকার পৃথিবী মতবাদের উৎপত্তি ক্রমবিকাশ /১৪

গোলাকার পৃথিবীর সমর্থনে আয়াতের ভুল ব্যাখ্যা / ১৮

বৈজ্ঞানিক মুজিযার নামে কোরআনের অপব্যাখ্যা /২৩

কোরআনের অপব্যাখ্যা হতে সাবধান! /৩১

পৃথিবী সমতল, গোলাকার নয় /৩৩

আকাশ পৃথিবীর উপরে, চারপাশে নয় / ৪০

পৃথিবী কোন গ্রহ নয়, এটি সুবিশাল সৃষ্টি / ৪২

পৃথিবী স্থির, গতিশীল নয় / ৪৪

সূর্য পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘোরে / ৫১

উপসংহার /৫৪

ছবি ও মানচিত্র /৫৬

২য় খন্ড /৫৮ (সংযুক্ত হবে ইনশাআল্লা)   

 

 

ভুমিকা

সমস্ত প্রশংসা রাব্বুল আ'লামীনের। সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ এবং তাঁর পরিবার ও সাহাবীগণের উপর।

অতপর,

আল্লাহ তাআ'লা বলেনঃ

إِنَّ فِى خَلْقِ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ وَٱخْتِلَٰفِ ٱلَّيْلِ وَٱلنَّهَارِ لَءَايَٰتٍ لِّأُو۟لِى ٱلْأَلْبَٰبِ ٱلَّذِينَ يَذْكُرُونَ ٱللَّهَ قِيَٰمًا وَقُعُودًا وَعَلَىٰ جُنُوبِهِم وَيَتَفَكَّرُونَ فِى خَلْقِ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْض رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هَٰذَا بَٰطِلًا سُبْحَٰنَكَ فَقِنَا عَذَابَ ٱلنَّارِ

«নিশ্চয় আকাশমন্ডলী পৃথিবীর সৃষ্টিতে এবং রাত দিনের পরিবর্তনে জ্ঞানী লোকেদের জন্য নিদর্শন রয়েছে •• যারা দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আকাশমন্ডলী পৃথিবীর সৃষ্টি সম্বন্ধে চিন্তা করে এবং (বলে,) হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি নিরর্থক সৃষ্টি করনি তুমি পবিত্র তুমি আমাদেরকে আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা কর» [সূরা আলে ইমরানঃ ১৯০--১৯১]وَكَذَٰلِكَ أَنزَلْنَٰهُ ءَايَٰت بَيِّنَٰت وَأَنَّ ٱللَّهَ يَهْدِى مَن يُرِيدُ

«এভাবেই আমি সুস্পষ্ট নিদর্শনরূপে ওটা অবতীর্ণ করেছি, আর নিশ্চয় আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে সৎপথ প্রদর্শন করেন» [সূরা হাজ্জঃ ১৬]

হ্যাঁ, নিশ্চয় কোরআনের আয়াতসমূহ সুস্পষ্ট ও সামঞ্জস্যপূর্ণ। আপনি সেখানে সাংঘর্ষিক কোন কিছু পাবেন না। এক আয়াতে বলা হচ্ছে পৃথিবী সমতল, আরেক আয়তে গোলাকার এমনটি কখনো হতে পারে না। একইভাবে এক আয়াতে পৃথিবীকে গতিশীল বলা হচ্ছে আরেক আয়াতে বলা হচ্ছে স্থির এমনটাও হতে পারে না।

কিন্তু সুস্পষ্ট আয়াত দেখেও সবার কপালে হেদায়েত জোটে না আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে হেদায়েত দান করেন...

সৃষ্টি সূচনা

আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ 

إِنَّ رَبَّكُمُ ٱللَّهُ ٱلَّذِى خَلَقَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضَ فِى سِتَّةِ أَيَّامٍ

«নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেন» [সূরা আরাফঃ৫৪]

ইবনে কাসীর (রাহি.) এই আয়াতের তাফসীরে বলেনঃ

{এই ছয় দিন হল, রবিবার, সোমবার, মঙ্গলবার, বুধবার এবং বৃহস্পতিবার শুক্রবার জুমার দিনই সমস্ত মাখলূক একত্রিত হয় দিনই আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে উক্ত ছয়দিন আমাদের এই দিনগুলোর সমান ছিলো নাকি একহাজার বছর বিশিষ্ট দিন ছিলো ব্যাপারে মতানৈক্য আছে ইবনে আব্বাস (রা.) এর মতে দিনগুলো একহাজার বিশিষ্ট দিন ছিলো.... বাকি থাকলো শনিবার; দিন কোন কিছু সৃষ্টি করা হয়নি} [তাফসীরে ইবনে কাসীর]

আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ 

قُلْ أَئِنَّكُمْ لَتَكْفُرُونَ بِٱلَّذِى خَلَقَ ٱلْأَرْضَ فِى يَوْمَيْنِ وَتَجْعَلُونَ لَهُۥٓ أَندَادًاۚ ذَٰلِكَ رَبُّ ٱلْعَٰلَمِينَ

وَجَعَلَ فِيهَا رَوَٰسِىَ مِن فَوْقِهَا وَبَٰرَكَ فِيهَا وَقَدَّرَ فِيهَآ أَقْوَٰتَهَا فِىٓ أَرْبَعَةِ أَيَّامٍ سَوَآءً لِّلسَّآئِلِينَ

ثُمَّ ٱسْتَوَىٰٓ إِلَى ٱلسَّمَآءِ وَهِىَ دُخَانٌ فَقَالَ لَهَا وَلِلْأَرْضِ ٱئْتِيَا طَوْعًا أَوْ كَرْهًا قَالَتَآ أَتَيْنَا طَآئِعِينَ

فَقَضَىٰهُنَّ سَبْعَ سَمَٰوَاتٍ فِى يَوْمَيْنِ وَأَوْحَىٰ فِى كُلِّ سَمَآءٍ أَمْرَهَاۚ وَزَيَّنَّا ٱلسَّمَآءَ ٱلدُّنْيَا بِمَصَٰبِيحَ وَحِفْظًاۚ ذَٰلِكَ تَقْدِيرُ ٱلْعَزِيزِ ٱلْعَلِيمِ

«বল, তোমরা কি তাঁকে অস্বীকার করবেই যিনি দু’দিনে পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, এবং তাঁর সমকক্ষ দাঁড় করাবে? তিনি তো বিশ্বজগতের প্রতিপালক।

তিনি তাতে (পৃথিবীতে) অটল পর্বতমালা স্থাপন করেছেন এবং স্থাপন করেছেন কল্যাণ এবং তাতে খাদ্যের ব্যবস্থা করেছেন (মোট) চার দিনের মধ্যে, সমানভাবে সকল অনুসন্ধানীদের জন্য।

অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোনিবেশ করেন, যা ছিল ধূম্রপুঞ্জবিশেষ। অতঃপর তিনি ওকে (আকাশকে) ও পৃথিবীকে বললেন, ‘তোমরা উভয়ে ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায় এস।’ ওরা বলল, ‘আমরা তো অনুগত হয়ে আসলাম।’

অতঃপর তিনি আকাশমন্ডলীকে দু’দিনে সপ্তাকাশে পরিণত করলেন এবং প্রত্যেক আকাশের নিকট তার কর্তব্য ব্যক্ত করলেন। আর আমি নিকটবর্তী আকাশকে সুশোভিত করলাম প্রদীপমালা দ্বারা এবং তাকে করলাম সুরক্ষিত। এ সব পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ আল্লাহর ব্যবস্থাপনা।

[সূরা ফুস্সিলাতঃ ৯-১২]

 ইবনে কাসীর (রাহি.) এই আয়াতগুলোর তাফসীরে বলেনঃ

{ কুরআন কারীমের একাধিক স্থানে উল্লেখ করা হয়েছে যে,خلق السماوات والأرض في ستة أيام

«আল্লাহ আকাশমন্ডলী পৃথিবীকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন», এই আয়াতগুলোতে তার কিছু বিশ্লেষণ করা হয়েছে এখানে বলা হলো, প্রথমে তিনি পৃথিবী সৃষ্টি করেন কারণ, এটি হলো ভিত্তি ইমারত নির্মাণের পদ্ধতিও এরকম; প্রথমে ভিত্তি তারপরে ছাদ নির্মাণ করা হয়........[ «...» এর ভিতর আয়াতের অর্থ, আর বাইরের অংশটি ব্যাখ্যা]

«তিনি দুদিনে পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন» এই দু'দিন হলো রবিবার সোমবার

«তিনি তাতে (পৃথিবীতে) অটল পর্বতমালা স্থাপন করেছেন এবং এতে বরকত দিয়েছেন» অর্থাৎ, মানুষ এতে বীজ বপন করে এবং তা হতে গাছ, ফল-মূল ইত্যাতি উৎপন্ন হয়

«তাতে খাদ্যের ব্যবস্থা করেছেন» মানুষের প্রয়োজনীয় রিযিক ক্ষেতখামারের ব্যাবস্থা করেছেন পর্বত স্থাপন, বরকত প্রদান খাদ্যব্যাবস্থার কাজটি করেছেন মঙ্গলবার বুধবারে পূর্বের দু'দিনসহ মোট হলো চারদিন......

«অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোনিবেশ করেন, যা ছিল ধূম্রপুঞ্জবিশেষ» এই ধূম্রপুঞ্জ ছিলো পৃথিবী সৃষ্টির সময় উপরে উঠে যাওয়া পানির ধোঁয়া

«তোমরা উভয়ে ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায় এসো» অর্থাৎ, আমার হুকুম মেনে নিয়ে আমি যা বলি তা হয়ে যাও, খুশি মনে কিংবা বাধ্য হয়ে তারা খুশি মনে মেনে নিলো এবং বললোঃ

«আমরা তো অনুগত হয়ে আসলাম» অর্থাৎ, আমরা আমরাদের মাঝে আপনি ফেরেশতা, জিন, মানুষসহ আরো যা কিছু সৃষ্টি করবেন সবাইকে নিয়ে আপনার আদেশ মেনে আপনার অনুগত হলাম

«অতঃপর তিনি আকাশমন্ডলীকে দুদিনে সপ্তাকাশে পরিণত করলেন»

এই দু'দিন ছিলো বৃহস্পতিবার জুমাবার

«প্রত্যেক আকাশের নিকট তার কর্তব্য ব্যক্ত করলেন» প্রত্যেক আকাশে তিনি ফেরেশতাসহ প্রয়োজনীয় সব কিছু তৈরী করলেন যা একমাত্র তিনিই জানেন

«আর আমি নিকটবর্তী আকাশকে সুশোভিত করলাম প্রদীপমালা দ্বারা» সেগুলো হলো গ্রহ-তারকা যারা দুনিয়াবাসীর জন্য আলো বিচ্ছুরিত করে

«এবং তাকে করলাম সুরক্ষিত» অর্থাৎ, উর্ধ্ব জগতের কোন কিছু শোনার উদ্দেশ্যে গমনকারী শয়তানদের জন্য নিরাপত্তাপ্রহরী রাখলেন (সেই প্রদীপমালা থেকে শয়তানদেরকে উল্কা নিক্ষেপ করা হয়),} [তাফসীরে ইবনে কাসীর]

সুবহানাল্লাহ

 

সৃষ্টি বিকৃত করা শয়তানের মিশন 

•• শয়তান মানুষকে সৃষ্টি বিকৃত করার নির্দেশ দেয়:-

وَلَءَامُرَنَّهُمْ فَلَيُغَيِّرُنَّ خَلْقَ ٱللَّهِۚ"

এবং তাদেরকে নিশ্চয় নির্দেশ দেব, ফলে তারা আল্লাহর সৃষ্টি বিকৃত করবেই

[সূরা নিসা: ১১৯]

•• শয়তান তার মিত্রদের কাছে বার্তা (ওহি) পাঠায় বা প্ররোচনা দেয়:

وَإِنَّ ٱلشَّيَٰطِينَ لَيُوحُونَ إِلَىٰٓ أَوْلِيَآئِهِمْ لِيُجَٰدِلُوكُمْۖ وَإِنْ أَطَعْتُمُوهُمْ إِنَّكُمْ لَمُشْرِكُونَ

আর নিশ্চয় শয়তান তার বন্ধুদেরকে তোমাদের সাথে বিবাদ করতে প্ররোচনা দেয় যদি তোমরা তাদের কথামত চল, তাহলে অবশ্যই তোমরা মুশরিক হয়ে যাবে, [সূরা আনআম: ১২১]

আল্লাহ তা'আলা আসমান-জমিন সৃষ্টিসহ বহু নিদর্শন রেখেছেন মানুষের জন্য, যেন তারা এসব নিদর্শন দেখে ইমান আনে। কিন্তু শয়তান যগে-গে এসব নিদর্শন সম্পর্কে মানবমনে মিথ্যা ও অবাস্তব ধারণা সৃষ্টি করে যেন মানুষ এসব কিছু দেখেও আল্লাহর নিদর্শন বুঝতে না পারে, বরং এসব নিদর্শনকেই রব বানিয়ে বসে। ফলে মানুষ একসময় চন্দ্র-সূর্যের পূজা শুরু করে। শয়তান তার এই এজেন্ডা বাস্তবায়নে বহুদূর এগিয়ে গেছে। বাকি আছে কেবল কানা দাজ্জাল এসে তার চূড়ান্ত পর্ব সমাপ্ত করার। এর আগে দাজ্জালের পথ সুগম করে যাচ্ছে ‘নাসা’সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, যেগুলো সরাসরি শয়তানের পৃষ্ঠপোষকতা করে।

 

 

 

সৃষ্টি বিকৃতির কিছু উদাহরণ

- আল্লাহ মানুষকে আদম (:) হতে সৃষ্টি করেছেনঃ

يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ ٱتَّقُوا۟ رَبَّكُمُ ٱلَّذِى خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍ وَٰحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيرًا وَنِسَآءًۚ

হে মানবসম্প্রদায়! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে একটি প্রাণ হতে সৃষ্টি করেছেন তা হতে তার সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন, যিনি তাদের দুজন (আদম হাওয়া .) থেকে বহু নরনারী (পৃথিবীতে) বিস্তার করেছেন [সূরা নিসা: ]

শয়তানঃ মনুষ তো বানর থেকে সৃষ্টি হয়েছে মানুষ হলো বানরের বিবর্তিত রুপ.....

- আদম (আঃ)-কে আল্লাহ ভাষা শিখিয়েছেন, ইলম শিক্ষা দিয়েছেন

وَعَلَّمَ ءَادَمَ ٱلْأَسْمَآءَ كُلَّهَا

এবং তিনি আদমকে যাবতীয় নাম শিক্ষা দিলেন [সূরা বাকারাহ: ৩১]

শয়তান: আদি যোগের মানুষেরা কিচ্ছু জানতো না তারা ছিলো পশুর মতো তারা থাকতো বস্ত্রহীন তাদের কোন ভাষা ছিলো না তারা ইশারা-ইঙ্গিতে মনের ভাব প্রকাশ করতো যোগটাকে বলা হয় প্রস্তর যোগ.....

- আল্লাহ আসমান-জমিন ৬দিনে সৃষ্টি করেছেন

إِنَّ رَبَّكُمُ ٱللَّهُ ٱلَّذِى خَلَقَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضَ فِى سِتَّةِ أَيَّامٍ

নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ যিনি আকাশমন্ডলী পৃথিবীকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেন [সূরা আরাফ: ৫৪]

শয়তানঃ মহাবিশ্বের সূচনা হয় বিগব্যাং বা মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমে এরপর পৃথিবী আস্তে আস্তে বাস উপযোগী হতে হতে কোটি-কোটি বছর লেগে যায়.....

- আল্লাহ পৃথিবীকে সমতল করেছেন

وَإِلَى ٱلْأَرْضِ كَيْف سُطِحَتْ

এবং তারা কি দেখে না পৃথিবীর দিকে যে, কিভাবে ওটাকে সমতল করা হয়েছে? ›[সূরা গাসিয়াহ: ২০]

শয়তানঃ আরে পৃথিবী তো গোলাকার, ফোটবল কিংবা পেয়ারা সদৃশ...

- আল্লাহ পৃথিবীকে স্থির করেছেন

أَمَّن جَعَلَ ٱلْأَرْض قَرَارًا

কিংবা তিনি, যিনি পৃথিবীকে স্থির করেছেন ওতে সুদৃঢ় পর্বতমালা স্থাপন করেছেন.. › [সূরা নামল: ৬১]

শয়তান: পৃথিবীর আছে বহুমুখী গতি এই যেমন-

- নিজ অক্ষ কেন্দ্রিক এর ঘুর্ণন গতি: ঘন্টায় ১৬৮০ কিমি

- সূর্য কেন্দ্রিক এর ঘুর্ণন গতি: ঘন্টায় ১০৭,৮২৫,৭৮ কিমি

- সূর্যসহ গ্যলাক্সি কেন্দ্রিক এর ঘুর্ণন গতি: ঘন্টায় ৮০০,০০০ কিমি

- সূর্য উদিত হয়, অস্ত যায় অর্থাৎ, সূর্য পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরছে

وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ قَبْلَ طُلُوعِ ٱلشَّمْسِ وَقَبْلَ ٱلْغُرُوبِ

অতএব তারা যা বলে, তাতে তুমি ধৈর্যধারণ কর এবং তোমার রবের প্রশংসা, পবিত্রতা   মহিমা ঘোষণা কর সূর্যোদয় সূর্যাস্তের পূর্বে [সূরা কাফ: ৩৯]


✖শয়তান: পৃথিবী সূর্যের চারপাশে ঘোরে। আসলে সূর্য উদয়ও হয় না অস্তও যায় না। পৃথিবীর আহ্নিক গতির জন্য (অক্ষ কেন্দ্রিক ঘুর্ণন কারণে) তোমার এমন মনে হয়...

- আল্লাহ আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষণ করেন

وَأَنزَل مِنَ ٱلسَّمَآء مَآءً

এবং তিনি আকাশ হতে পানি বর্ষণ করেন [সূরা বাকারা: ২২]

শয়তান: না, না বৃষ্টি তো আকাশ থেকে নামে না মূলত নদী আর সাগরের পানিই হলো বৃষ্টির উৎস নদি-নালা, খাল-বিল, সাগর-মহাসাগর থেকে পানি বাস্পাকারে উপরে উঠে মেঘ সৃষ্টি করে তারপর অভিকর্ষের টানে এগুলো বৃষ্টি হয়ে নেমে আসে...

- আকাশ অত্যন্ত মজবুত কঠিন সৃষ্টি:

وَبَنَيْنَا فَوْقَكُم سَبْعًا شِدَادًا

আর নির্মাণ করেছি তোমাদের উপরে সুদৃঢ় সপ্ত আকাশ [সূরা নাবা: ১২]

শয়তান: আসলে আকাশ কোন কঠিন বস্তু না এটা মূলত ফাঁকা স্থান, সীমাহীন স্পেস এর কোন শেষ নেই.....এজন্য একে বলা হয় মহাকাশ আর আকাশ শুধু আমাদের উপরে এটা ভুল ধারণা গোলাকার পৃথিবীর চারপাশ জুড়েই আকাশ.. সীমাহীন আকাশ..

- রাত-দিন ভিন্ন সৃষ্টি সূর্যের কারনেই রাত-দিন হয় এমন নয়

وَهُوَ ٱلَّذِى خَلَقَ ٱلَّيْلَ وَٱلنَّهَارَ وَٱلشَّمْسَ وَٱلْقَمَرَۖ كُلٌّ فِى فَلَكٍ يَسْبَحُونَ

আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি দিবস এবং সূর্য চন্দ্র; প্রত্যেকেই (অর্থাৎ, রাত-দিন চন্দ্র-সূর্য) নিজ নিজ কক্ষপথে সন্তরণ করে [সূরা আন্বিয়া: ৩৩]

শয়তান: রাত-দিন মূলত কিছুই না সূর্য থাকলে দিন, আর না থাকলে রাত

১০- পৃথিবীর বিশালতা: জান্নাতের প্রস্থ আকাশমন্ডল পৃথিবীর সমান

وَسَارِعُوٓا۟ إِلَىٰ مَغْفِرَةٍ مِّن رَّبِّكُمْ وَجَنَّة عَرْضُهَا ٱلسَّمَٰوَٰتُ وَٱلْأَرْضُ أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِينَ

তোমরা প্রতিযোগিতা (ত্বরা) কর, তোমাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে ক্ষমা এবং বেহেশ্তের জন্য, যার প্রস্থ আকাশ পৃথিবীর সমান, যা মুত্তাকীদের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে [সূরা আলে ইমরান: ১৩৩]

শয়তান: পৃথিবী হলো এই মহাশূন্যে ভাসমান একটি ছোট্ট গ্রহ অসংখ্য বিশাল বিশাল তারকারাজির মাঝে পৃথিবী অতি তুচ্ছ ক্ষুদ্র বালুকণা সদৃশ......

১১- এসব কিছু সৃষ্টি করেছেন এক আল্লাহ

هَٰذَا خَلْقُ ٱللَّهِ فَأَرُونِى مَاذَا خَلَقَ ٱلَّذِينَ مِن دُونِه

হলো আল্লাহর সৃষ্টি! তিনি ব্যতীত অন্যেরা কি সৃষ্টি করেছে আমাকে দেখাও তো বরং সীমালংঘনকারীরা স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে রয়েছে [সূরা লুকমান: ১১]

শয়তন: এই পৃথিবী, চন্দ্র-সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র, ইত্যাদি সবই প্রাকৃতিক ভাবে হঠাৎ সৃষ্টি হয়ে গেছে.. (মহাবিস্ফোরণ তত্ব) আর প্রাকৃতিক নিয়মেই সব কিছু চলছে...                   

১২- আসমান-জমিন সৃষ্টির সময় তারা কি উপস্থিত ছিলো?

مَّآ أَشْهَدتُّهُمْ خَلْقَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ وَلَا خَلْقَ أَنفُسِهِمْ وَمَا كُنتُ مُتَّخِذَ ٱلْمُضِلِّينَ عَضُدًا

আকাশমন্ডলী পৃথিবীর সৃষ্টিকালে আমি তাদেরকে (উপস্থিত) সাক্ষী রাখিনি এবং তাদের সৃজনকালেও নয় আর আমি এমনও নই যে, বিভ্রান্তকারীদেরকে সহায়করূপে গ্রহণ করব [সূরা কাহাফ: ৫১]

তাহলে তারা বিগব্যাং কোথায় পেলো? সূর্যের তাপমাত্রা মেপে আসলো কিভাবে?! পৃথিবীর গতিবেগ বের করলো কিভাবে? চন্দ্র-সূর্য পৃথিবীর আকার আকৃতি মেপে আসলো কখন?!...... প্রস্তরযুগের কল্পকাহিনিগুলো কোথায় পেলো তারা?!

১৩- কে শ্রেষ্ঠ? আগুনের শয়তান নাকি মাটির মানুষ? আগুনের সূর্য নাকি মাটির পৃথিবী?

قَالَ مَا مَنَعَكَ أَلَّا تَسْجُدَ إِذْ أَمَرْتُكَۖ قَالَ أَنَا۠ خَيْرٌ مِّنْهُ خَلَقْتَنِى مِن نَّارٍ وَخَلَقْتَهُۥ مِن طِينٍ

তিনি বললেন, ‘আমি যখন তোমাকে আদেশ দিলাম, তখন কিসে তোমাকে নিবৃত্ত করল যে, তুমি সিজদাহ করলে না?’ সে বলল, ‘আমি ওর (আদম) চেয়ে শ্রেষ্ঠ, তুমি আমাকে আগুন দ্বারা সৃষ্টি করেছ এবং ওকে সৃষ্টি করেছ কাদামাটি দ্বারা [সূরা আরাফ: ১২]

শয়তান: হ্যাঁ, মাটি থেকে আগুন শ্রেষ্ঠ, তদ্রুপ পৃথিবী থেকে সূর্য শ্রেষ্ঠ সূর্য সব শক্তির উৎস পৃথিবী সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরঘুর করে (তাওয়াফ করে!) তাই তোমরা এই মহা শক্তিধরের পুঁজা করো..                             

 

 

হে আল্লাহ,

আমরা অভিশপ্ত শয়তান হতে আপনার নিকট আশ্রয় কামনা করি...

 

 

সৃষ্টি বিকৃতির পেছনে কি তাদের উদ্দেশ্য?

আপনি দেখবেন বলাকার ও ঘূর্ণনয়মান পৃথিবীর  পৃষ্ঠপোষকদের অধিকাংশই নাস্তিক, দার্শনিক জ্যোতির্বিদ তারা এসব মতবাদের মাধ্যমে মূলত আল্লাহর কালামকে মিথ্যা সাব্যস্ত করতে চায় বর্তমানে তারা বিজ্ঞানের ছদ্মনামে এসব নাস্তিকতার প্রচারণা চালাচ্ছে এমনকি এই নাস্তিকতা আমাদের ছোট-ছোট সন্তানদের পাঠ্যবই পর্যন্ত চলে এসেছে আপনি তৃতীয় শ্রেণী থেকে শুরু করে এইচএসসি পর্যন্ত বিজ্ঞান বইগুলো চেক করে দেখুন সেখানে পুরো বই জুড়ে নাস্তিকতা দেখতে পাবেন মহাবিস্ফোরণ তত্ব, মহাসম্প্রসারণ তত্ব, বিবর্তনবাদ, প্রস্তর যুগ, জিবাশ্ম শক্তি, শক্তির নিত্যতা সূত্র ইত্যাদি বিষয়গুলোতে আপনি সরাসরি নাস্তিকতার যোগসূত্র পাবেন তারা প্রতিটি বিষয়কে প্রকৃতির শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে ফেলেছে, যেন সেখানে মহান রবের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই!..প্রকৃতিই সব কিছু..প্রকৃতিই তাদের মা'বুদ..

 

আল্লাহ পবিত্র, মহিমান্বিত

 এবং তারা যা বলে, তা হতে তিনি বহু ঊর্ধ্বে

 

 

 

গোলাকার পৃথিবী মতবাদের উৎপত্তি ক্রমবিকাশ:

মূসা আলাইহিসসালাম এর উপর নাযিলকৃত তাওরাতে সৃষ্টি জগতের বিশদ বর্ণনা ছিলো আর তখনকার মানুষরাও পৃথিবীকে সমতল বলেই জানতো পরবর্তীতে কিছু জ্যোতির্বিদ গোলাকার পৃথিবীর দাবী তোলে কিন্তু ধর্মবিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক হওয়াতে তারা সেসময় তেমন সাড়া পায়নি, বরং তাদের অনেককে ধর্মবিশ্বাসে আঘাত হানার কারণে মৃত্যুদন্ডও দেওয়া হয়েছিলো

গোলাকার পৃথিবীর মতবাদ প্রচারে ভুমিকা পালনকারী কিছু জ্যোতির্বিদদের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা

১- পিথাগোরাস (ইসায়ী পূর্ব ৪৯৫) : পিথাগোরাসই সর্বপ্রথম দাবী করে পৃথিবী গেলাকার, সমতল নয়। গণিতবিদ হিসেবে পরিচিত হলেও সে ছিলো মূলত একজন জ্যোতির্বিদ ও দার্শনিক। সে ছিলো নিরামিসভোজী অর্থাৎ, কোন প্রানির গোস্ত খেতো না। কারণ, সে বিশ্বাস করতো মানুষ মারা গেলে তার আত্মা অন্য কোন প্রাণিদেহে সঞ্চার হয়, হিন্দুদের ধর্মীয় পরিভাষায় যাকে ‘পুনজন্ম’ বলা হয়। একদিন সে দেখলো কিছু লোক একটি কুকুরকে মারছে। এতে সে ক্ষিপ্ত হয়ে বললো, আমি এই কুকুরের মধ্যে আমার এক বন্ধুর আত্মা দেখতে পাচ্ছি!.. অবশেষে সে হালাক হলো কিন্তু তার কল্পকাহিনীর প্রতি তখনো কারো আস্থা-বিশ্বাস তৈরী হয় নি।

২- সক্রেটিস (ঈসায়ী পূর্ব ৩৯৯) : সেও পিথাগোরাসের মতো দর্শন ও জ্যোতির্বিদ্যা চর্চা করতো এবং হিন্দুদের মতো পুনঃজন্মে বিশ্বাস করতো। গোলাকার পৃথিবীর মতবাদ প্রচারের অপরাধে গির্জাকর্তৃপক্ষ তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করে।

৩- প্লেটু (ঈসায়ী পূর্ব ৩৪৭) : ২০ বছর বয়সে সে সক্রেটিসের সন্ধান পায় ও তার চিন্তা-দর্শন ও ব্যতিক্রম ধ্যানধারণায় মুগ্ধ হয়ে যায়। ফলে দীর্ঘ ৮বছর তার সান্নিধ্যে কাটিয়ে দেয়। এরপর সে মিশরের ‘সূর্য-চোখ’ উপাসনালয়ের গণকদের কাছে জ্যোতির্বিদ্যা চর্চা করে।

৪- এরিস্টটল (ঈসায়ী পূর্ব ৩২২) : সে ছিলো প্লেটুর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও শিষ্য। সে প্লেটুর সান্নিধ্যে ছিলো দীর্ঘ ২০ বছর। এরিস্টটলও তার পূর্বসূরিদের মতো গোলাকার পৃথিবীর জোর প্রচারণা চালায়। কিন্তু তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা সত্তেও সমাজে তাদের এসব কল্পকাহিনি গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। সেগুলো কেবল তাদের রচিত বইপুস্তকের পাতায় সীমাবদ্ধ হয়ে থাকে।

অতপর আগমন ঘটে মারয়ামের পুত্র ঈসা আলাইহিস্সালামের তাঁর উপর নাযিলকৃত ইনজিল কিতাবেও পৃথিবীর সমতল হওয়ার স্পষ্ট দলীল ছিলো

৫- টলেমী (১৭০ ঈসায়ী) : ঈসা আলাইহিসসালামকে উঠিয়ে নেওয়ার পরবর্তী সময়ে বেশ পরিচিতি লাভ করে এ জ্যোতির্বিদ। জ্যোতির্বিদ

শাস্ত্রের Almagest নামক গ্রন্থটি তারই রচনা। সে দাবী করে “পৃথিবী গোলাকার ও স্থির। এটি শূন্যের উপর অবস্থিত, এর চারপাশে আছে ঘুর্নায়মান বিভিন্ন কক্ষপথ” পরবর্তীতে দার্শনিকদের কাছে তার লিখিত Almagest বইটি জ্যোতির্বিদ্যার মৌলিক গ্রন্থ হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

তার প্রসিদ্ধ মতবাদ হলো:

-পৃথিবী গোলাকার স্থির..

-জ্যোতিষ্করাজি পৃথিবীর চারপাশে বৃত্তাকার কক্ষপথে ঘুর্নায়মান..

-চাঁদ প্রথম কক্ষপথে, বুধ দ্বিতীয় কক্ষপথে..

-শুক্র তৃতীয় কক্ষপথে, সূর্য চতুর্থ কক্ষপথে..

-মঙ্গল পঞ্চম কক্ষপথে, বৃহস্পতি ষষ্ঠ কক্ষপথে..

-শনিগ্রহ সপ্তম কক্ষপথে..

অবশেষে ৫৭০ ঈসায়ীতে সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর আগমন হয় নাযিল হয় সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানী কিতাব আলকুরআন বহু আয়াতে সুস্পষ্টভাবে আল্লাহ জানিয়ে দেন পৃথিবী সমতল স্থির সৃষ্টি জগতের বাস্তব চিত্র সাহাবীগণের কাছে একেবারেই স্পষ্ট ছিলো তাঁদের পর তাবেয়ী তাবে তাবেয়ীগণ পৃথিবীকে সমতল হিসেবেই জানতেন বিভিন্ন তাফসীরগ্রন্থে তাদের সূত্রে বর্ণিত সমতল স্থির সম্পর্কিত আয়াতগুলোর ব্যাখ্যা তার প্রত্যক্ষ প্রমান

সবকিছু ঠিকঠাক চলছিলো। কিন্তু ১৫৬ হিজরির দিকে আব্বাসী খলিফা আবু জা'ফর আল-মানসূর দার্শনিক ও জ্যোতির্বদিদের রাজদরবারে টেনে আনে। তাদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলে। এসময় তার নির্দেশে দর্শন শাস্ত্রের গ্রন্থগুলো আরবিতে অনুবাদ করা হয়। বিশেষ করে প্লেটোর Almagest গ্রন্থটি সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে অনুবাদ করা হয়।

ইমাম সুয়ূতী রহি. তারিখুল খুলাফা গ্রন্থে উল্যেখ করেন:

«‹মুহাম্মদ বিন আলী আল-খুরাসানী বলেন: মনসুরই সর্বপ্রথম খলিফা যে জ্যোতির্বিদদের রাজদরবারে স্থান দেয় এবং রাশিচক্র চর্চা করে তাঁর নির্দেশেই সর্বপ্রথম অনারবী ভাষার গ্রন্থগুলো আরবিতে অনুবাদ করা হয় কালিলা ওয়াদামনা, ইক্লিদিস ইত্যাদি গ্রন এর উদাহরণ সেই সর্বপ্রথম আরবদের উপর প্রধান্য দিয়ে তার (অনারব) বন্ধুদেরকে বিভিন্ন পদে নিযুক্ত করে এভাবে চলতে চলতে একসময় আরবরা নেতৃত্বশূণ্য হয়ে যায়..» [তারিখুল খুলাফা- ইমাম সুয়ূতী]

পরবর্তীতে তার পদাংকো অনুসরণ করে খলিফা মামুন। এই মামুনই ‘আল-কোরআন আল্লাহর মাখলুক’  মতবাদের পৃষ্ঠপোষকতা করে চরম ফেতনার সৃষ্টি করেছিলো। দর্শন শাস্ত্রের কিতাবাদির প্রতি তার ছিলো প্রচন্ড আগ্রহ। সে ব্যাপকহারে সেগুলো অনুবাদ করে মুসলিমদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়। ফলে উদ্ভব হয় বহু ভ্রান্ত ফিরকা ও দল। এভাবে ইসলামী সভ্যতায় দর্শনশাস্ত্রের অনুপ্রবেশ করে মুসলিমদের আকিদা-বিশ্বাসে কুঠারাঘাত করে ও মুসলিম বিশ্বে এক ভয়ংকর বিপর্যয় সৃষ্টি করে।

এই ছিলো মুসলিমদের মাঝে গোলাকার পৃথিবীর ভ্রান্ত মতবাদের সূচনা। পরবর্তী প্রজন্মরাও এই মিথ্যার সবক নিয়ে বেড়ে উঠে যেমন আজ আমাদেরকে শিখানো হচ্ছে পৃথিবী গোলাকার, ঘুর্নায়মান ও গতিশীল..

কিন্তু কোরআনের সুস্পষ্ট আয়াতের সাথে সাংঘর্ষিক এসব ভ্রান্ত বিশ্বাসের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন তৎকালীন আলেমসমাজ। পূর্বেকার তাফসীর গ্রন্থসমূহে এর অসংখ্য প্রমাণ পাবেন। তারপরেও কিছু নির্ভর্যোগ্য আলেম সে দর্শনের প্রভাব বলয়ের মধ্যে পড়ে যান। ফলে পৃথিবীকে গোলাকার ধরে নিয়ে তাঁরা কোরআনের কিছু আয়াতের ভুল ভ্যখ্যা করে বসেন, আল্লাহ তাদের মাফ করুন।

 

 

গোলাকার পৃথিবীর সমর্থনে আয়াতের ভুল ব্যাখ্যা

- আল্লাহতা'আলা বলেনঃ  

يُكَوِّر ٱلَّيْلَ عَلَى ٱلنَّهَار وَيُكَوِّر ٱلنَّهَارَ عَلَى ٱلَّيْلِۖ

«তিনি রাত্রি দ্বারা দিনকে আচ্ছাদিত করেন এবং রাত্রিকে আচ্ছাদিত করেন দিন দ্বারা.. » [যুমারঃ ]

তারা দাবী করে আয়াতে পৃথিবী গোলাকার হওয়া পরক্ষ ইঙ্গিত আছে তারা বলে, “আয়াতেরতাকওয়ীর শব্দের মূল অর্থ পেঁচানো তাহলে অর্থ দাঁড়াচ্ছে, আল্লাহ দিনের উপর রাতকে পেঁচিয়ে দেন...আর পৃথিবী গোলকার হলেই কেবল এভাবে পেঁচানো সম্ভব; অতএব পৃথিবী গোলাকার

- তাদের আয়াতের অর্থ সঠিক হলেও এই আয়াত দ্বারা পৃথিবী গেলাকার প্রমাণিত হয় না বরং কোরআনের বহু আয়াত দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় পৃথিবী সমতল আর আল্লাহ সমতল পৃথিবীর উপরেই রাত-দিনের পালাবদল ঘটান, দিনকে রাত দ্বারা ঢেকে দেন বা পেঁচিয়ে দেন

দেখুন সালাফগণ এই আয়াতের ব্যাখ্যায় কি বলেছেন:

মাওয়ারদী রাহিঃ এই আয়াতের ব্যখ্যায় তিনটি উদ্ধৃতি দেনঃ

{১- ‘রাতকে দিনের উপর উঠিয়ে দেন বা চাপিয়ে দেন। একইভাবে দিনকে রাতের উপর চাপিয়ে দেন’ -- ইবনে আব্বাস এটি বলেছেন।

২- ‘রাত দিনকে ঢেকে ফেলে, ফলে দিনের আলো নিঃশেষ হয়ে যায়। এবং দিন রাতকে ঢেকে ফেলে, ফলে রাতের আলো নিঃশেষ হয়ে যায়’-- কাতাদাহ (রাহিঃ) এটি বলেছেন।

৩- ‘রাতদিন একটি আরেকটি থেকে ছোট হয়ে যায়। রাত ছোট হলে দিন বড় হয়, আর দিন ছোট হলে রাত বড় হয়’--দাহ্হাক (রাহিঃ) এটি বলেছেন।

তিনি আরো বলেন: ‘আয়াতের অর্থ এমনও হতে পারে যে, রাতকে তিনি গুটিয়ে ফেলেন যেন দিনের প্রকাশ ঘটে এবং দিনকে গুটিয়ে নেন যেন রাতের প্রকাশ ঘটে’}

ইবনে কাসীর (রহিঃ) বলেন:

{ তাঁর নির্দেশে দিন রাত একটি আরেকটির পর বরাবরই চলে আসছে এর ব্যাতিক্রম কখনো করে না তারা যেমন আল্লাহ তাআ'লা বলেনঃ

يُغْشِى ٱلَّيْلَ ٱلنَّهَارَ يَطْلُبُهُۥ حَثِيثًا

«...তিনিই দিবসকে রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত করেন; (এসময়) রাত ত্বরিতগতিতে দিনের পিছু নেয়...» ['রাফ: ৫৪]

ইবনে আব্বাস (রহিঃ), মুজাহিদ (রহিঃ), কাতাদাহ (রাহিঃ), সূদী (রহিঃ) প্রমূখের কথার ভাবার্থ এটিই }

২- কিন্তু কোরআনের কিছু সুস্পষ্ট আয়াত তারা এড়িয়ে যেতে পারেননি, যেগুলো সরাসরি পৃথিবী সমতল হওয়ার দলীল। তাই তারা সেসব আয়াতের অনুকূল ব্যখ্যা প্রদান করে। যেমন-

أَفَلَا يَنظُرُونَ إِلَى ٱلْإِبِلِ كَيْفَ خُلِقَتْ وَإِلَى ٱلسَّمَآءِ كَيْفَ رُفِعَت وَإِلَى ٱلْجِبَالِ كَيْفَ نُصِبَتْ ْ وَإِلَى ٱلْأَرْضِ كَيْف سُطِحَتْ

«তবে কি তারা উটের দিকে লক্ষ্য করে না যে, কিভাবে ওকে সৃষ্টি করা হয়েছে? •• এবং আকাশের দিকে যে, কিভাবে ওটাকে ঊর্ধ্বে উত্তোলন করা হয়েছে? •• এবং পর্বতমালার দিকে যে, কিভাবে ওটাকে স্থাপন করা হয়েছে? এবং পৃথিবীর দিকে যে, কিভাবে ওটাকে সমতল করা হয়েছে?» [সূরা গাসীয়াহঃ ১৭,১৮,১৯,২০]

২০ নং আয়াতটি গোলাকার পৃথিবীর বিরুদ্ধে সবচেয়ে স্পষ্ট আয়াত এটি। সমতল বুঝানোর জন্য 'সুতিহাত' শব্দের চেয়ে অধিক উপযোগী শব্দ আরবি ভাষায় আর নেই। তারপরেও তাদের বদ্ধমূল ধারণার সাথে না মিলার কারণে তারা আয়াতের একটা ব্যাখ্যা দাঁড় করায়। তারা বলে “আয়াতের শুরুর দিকে বলা হয়েছে ‹ أفلا ينظرون› ‘তারা কি দেখে না?’ এ দ্বারা বুঝা যাচ্ছে আল্লাহ এখানে মানুষের দৃষ্টির প্রেক্ষিতে পৃথিবীকে সমতল বলেছেন। প্রকৃতপক্ষে ওটা গোলাকার, কারণ, একটা বিশাল আকারের গোলাকার বস্তুর পৃষ্ঠকে সমতলই দেখা যায়, এর বক্রতা একদমই চোখে পড়ে না”

তাদের যুক্তি খন্ডন: প্রথমত: তারা যদি পূর্বের আরো ৩টি নিদর্শনের ক্ষেত্রে একই ব্যাখ্যা গ্রহন করতে পারে তবেই পৃথিবীর ক্ষেত্রে উক্ত ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য হবে, অন্যথায় না। কারণ, পূর্বে শুধু একবার বলা হয়েছে ‘তারা কি দেখে না?’  এরপর উট, আকাশ, পাহাড় ও পৃথিবীর কথা বলা হয়েছে। দেখুন এই ব্যাখ্যা অনুযায়ী আয়াতগুলোর অর্থ কি দাঁড়ায়:

-মানুষের দৃষ্টিতে উট মাখলুক, কিন্তু প্রকৃত পক্ষে মাখলুক না..

-মানুষের দৃষ্টিতে আকাশ সুউচ্চ, কিন্তু প্রকৃত পক্ষে সুউচ্চ না..

-মানুষের দৃষ্টিতে পাহাড়গুলো স্থাপিত, কিন্তু প্রকৃত পক্ষে স্থাপিত না..

-মানুষের দৃষ্টিতে পৃথিবী সমতল, কিন্তু প্রকৃত পক্ষে সমতল না..

আগের তিনটা আয়াতের এই ব্যাখ্যা করতে পারলে তখনই কেবল পৃথিবীর ক্ষেত্রে তাদের একই ব্যাখ্যা গ্রহনযোগ্য হবে, অন্যথায় না।

দ্বিতীয়তঃ  জিনদের চোখে পৃথিবী কেমন, গোলাকার নাকি সমতল?

এ কোরআন তো কেবল মানব জাতির জন্য নাযিল হয় নি, জিনদের জন্যও নাযিল হয়েছে। আর জিনেরা ভূপৃষ্ঠ থেকে বহু ঊর্ধ্বে বিচরণ করতে পারে। এমন কি তারা আকাশে কান লাগিয়ে ফেরেশতাদের কথাবার্তা শুনতে পেতো আগে। কিন্তু শেষ নবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর আগমনের পর থেকে তাদের এ সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এখন তারা আকাশের কাছে যেতে চায়লে উল্কাপিণ্ডের সম্মুখীন হয়। [দেখুন- সূরা জিনঃ ৯]

এখন প্রশ্ন হলো: জিনদের চোখে পৃথিবী কেমন? পৃথিবী গোলাকার হলে তারা উপর থেকে নিশ্চয় পৃথিবীকে গোলাকারই দেখবে। তবে কি কোরআনের আয়াত তাদের জন্য বাস্তবতার সাথে সাংঘর্ষিক হয়ে যায় না!? অথচ এ কোরআন মহান রবের কালাম, নির্ভুল ও সুসামঞ্জস্যপূর্ণ।

-উত্তর: জিনদের চোখেও পৃথিবী সমতল কোরআনের স্পষ্ট আয়াত- পৃথিবীকে সমতল করা হয়েছে এখানে অন্য কোন তাত্বিক ব্যখ্যা বিশ্লেষণ গ্রহনযোগ্য নয় তাছাড়া পৃথিবী সমতল হওয়ার ব্যাপারে এটা ছাড়াও কোরআনে আরো বহু আয়াত আছে

যাইহোক, তাঁরা ভুল করেছেন। তাঁদের ইলম দ্বারা আমরা উপকৃত হবো কিন্তু তাদের ভুলগুলোকে কখনই আমরা গ্রহণ করতে পারি না। তাঁদের ব্যাপারে আমরা সুধারণা রাখি। আল্লাহ তাঁদের মাফ করুন...

এখানে লক্ষ্যনীয় বিষয় হলো: তখনো পর্যন্ত জ্যোতির্বদরা পৃথিবীকে গোলাকার বললেও কেউ গতিশীল বলেননি। আলেমগণ সর্বসম্মতভাবে পৃথিবীকে স্থির ও সূর্যকে গতিশীল বলেছেন। আর পৃথিবী স্থির হওয়ার ব্যাপারে কোরআনের বহু স্পষ্ট আয়াত আছে।

 

 

 

 

 

সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহ

সুবহানাল্লাহিল আজীম  

 

 

 

 

 

বৈজ্ঞানিক মু'জিযার নামে কোরআনের অপব্যাখ্যা

বর্তমানে কিছু জাহেল ও গর্দবের দল বের হয়েছে, তারা নাস্তিকদের বানোওয়াট তত্বগুলোকে চিরন্তন সত্য বলে বিশ্বাস করে তার অনুকূলে কোরআন হাদীসের মনগড়া ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে নিজেদেরকে যামানার মুজতাহিদরুপে প্রতিষ্ঠা করতে তৎপর। তারপর বলে, এটা তো ১৪০০শ বছর পূর্বের নাযিলকৃত কোরআনে আছে! এভাবে তারা কোরআনের বৈজ্ঞানিক মু'জিযা দেখানোর নামে প্রতিনিয়ত নাস্তিক্যবাদী থিউরীগুলোকে সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে। লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ....তাদের মাঝে আর গোলাকার পৃথিবী সমর্থনকারী পূর্বেকার আলেমগণের মাঝে আসমান-জমিন পার্থক্য। তারা পশ্চিমা সভ্যতার প্রতিটা থিউরিকে কোরআন থেকে সমর্থন দিতে সদা প্রস্তুত। এতে কোরআনের অর্থ বিকৃত করতেও দ্বিধা বোধ করে না তারা..মুফাস্সিরে কোরআনের ছদ্মবেশে তারা মূলত কানা দাজ্জালের পথ সুগম করে যাচ্ছে..

- মহাবিস্ফোরণ তত্ব সত্যায়নে আয়াতের অর্থ বিকৃতি

[মহাবিস্ফোরণ সম্প্রসারণ তত্ব: মহাবিশ্ব একটি বিস্ফোরণের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়....মহাবিস্ফোরণের পর থেকে অসীম মহাশূণ্যে মহাবিশ্ব প্রতিনিয়ত সম্প্রসারিত হচ্ছে...]

•• আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

أَوَلَمْ يَرَ ٱلَّذِينَ كَفَرُوٓا۟ أَنَّ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضَ كَانَتَا رَتْقًا فَفَتَقْنَٰهُمَاۖ وَجَعَلْنَا مِنَ ٱلْمَآءِ كُلَّ شَىْءٍ حَىٍّۖ أَفَلَا يُؤْمِنُونَ

«কাফেররা কি (ভেবে) দেখে না যে, আকাশমন্ডলী পৃথিবী একসঙ্গে মিলিত ছিল; অতঃপর আমি উভয়কে পৃথক করে দিয়েছি এবং প্রত্যেকটি সজীব বস্তুকে পানি হতে সৃষ্টি করেছি; তবুও কি ওরা বিশ্বাস করবে না?› [ সূরা আন্বিয়া: ৩০]

এখানে ‹ আসমান-জমিন এক সঙ্গে মিলিত ছিলো অতপর আমি পৃথক করলাম› আয়াতাংশ দ্বারা তারা নাস্তিক্যবাদী মহাবিস্ফোরণ থিউরী সত্যায়ন করে। আর বলে, “কোরআন ১৪০০ বছর আগেই বিগব্যাং তত্ব দেয় যা আজ বিজ্ঞানীদের গবেষণায় প্রমানিত হলো” তবে তারা নিজেরাই সেটা আবিষ্কার করলো না কেন? নাস্তিকদের গবেষণা পত্রের দিকে এতোদিন চেয়ে ছিলো কেন? নাস্তিকরা বস্তুবাদী বিশ্বাস প্রতিষ্ঠা করার জন্য নতুন নতুন থিউরি বানিয়ে সৃষ্টি জগতকে বিকৃত করছে, আর এসব বোকা খচ্চরগুলো কোরআন-হাদীস বিকৃত করে সেগুলো সত্যায়ন করে যাচ্ছে!

•• দেখুন এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনে কাসীর রহিমাহুল্লাহ কি বলেন,

{ প্রথমে আসমান জমিন মিলিতভাবে ছিলো একটি অপরটি হতে পৃথক ছিলো না অতপর আল্লাহ তা'আলা ওগুলোকে পৃথক করে দেন

জমিনকে নিচে ও আসমানকে উপরে তোলে উভয়ের মাধ্যে বিরাট ব্যবধান সৃষ্টি করে হেকমতপূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি সাতটি জমিন ও সাতটি আসমান তৈরী করেছেন। জমিন ও প্রথম আসমানের মধ্যে দূরত্বের ব্যবধান সৃষ্টি করে আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষণ করে জমিনে নানাবিধ ফসল উৎপাদন করেন”

সাঈদ ইবনে যুবাইর রাহি. বলেন: “পৃথিবী ও আকাশসমূহ একে অপরের সাথে মিলিত ছিলো, অতপর যখন আকাশসমূহকে উপরে উত্থিত করা হয় তখন স্বাভাবিকভাবেই পৃথিবী পৃথক হয়ে যায় } [তাফসীরে ইবনে কাসীর].

- ‘মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ তত্ব' সত্যায়নে আয়াতের অর্থ বিকৃতি

•• আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

وَٱلسَّمَآءَ بَنَيْنَٰهَا بِأَيْي۟دٍ وَإِنَّا لَمُوسِعُونَ

«আমি আকাশকে ছাদ বানিয়েছি আমার (নিজ) ক্ষমতাবলে[] এবং আমি অবশ্যই (শক্তিশালী ) সামর্থ্যন» [সূরা যারিয়াত: ৪৭]

•• ইবনে জারীর রহি. এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেনঃ

{ আমি আসমানকে নিজ শক্তিবলে সুউচ্চ ছাদ বানিয়েছি এটি ছাড়াও অন্য যেকোনো কিছু সৃষ্টিতে আমি প্রবল ক্ষমতা রাখি আয়াতেমূসিউন শব্দের অর্থ সামর্থ্যবান শক্তিশালীমূসিউন শব্দটি সূরা বাকারার ২৩৬নং আয়াতেওশক্তিশালী সামর্থ্যবান অর্থে এসেছে

وَمَتِّعُوهُنَّ عَلَى ٱلْمُوسِع قَدَرُه وَعَلَى ٱلْمُقْتِرِ قَدَرُهُۥ

«তোমরা তাদেরকে (অর্থাৎ, তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীদেরকে) খরচপত্র দিও, সামর্থ্যবান ব্যক্তি তার সামর্থ্য অনুযায়ী এবং অভাবগ্রস্থ লোক তার সাধ্যমত খরচপত্র বহন করবে» }, [তাফসীরে তাবারী]

উক্ত আয়াতে তারা ‹মূসিউন› এর অর্থ করে ‘মহাসম্প্রসারণকারী যদিও শব্দিক অর্থে এটি ভুল না; কিন্তু তারা এর মাধ্যমে নাস্তিক্যবাদী ‘মহাবিস্ফোরণ ও সম্প্রসারণ’ থিউরির দলীল দাঁড় করাতে চায়!

অথচ নাস্তিকরা এই বানোওয়াট থিউরির মাধ্যমে প্রমাণ করতে চায় ‘এই মহাবিশ্ব সৃষ্টির পেছনে আল্লাহর কোন ভুমিকা নেই। হঠাৎ একটা বিস্ফোরণ ঘটে চার দিকে কণাগুলো ছড়িয়ে যায় আর সম্প্রসারণ হতে থাকে। এভাবেই উৎপত্তি হয় মহাবিশ্বের!’ আর এইসব বোকা খচ্চরের দল কোরআনের অর্থ বিকৃতি করে তাদের জানান দিতে চায় ‘এই দেখো তোমাদের ‘মহাবিস্ফোরণ ও সম্প্রসারণ তত্ব’ আমাদের কোরআনে আরো ১৪০০ বছর আগে থেকেই আছে’...

- ‘অভিকর্ষ বল সত্যায়নে তাদের অর্থ বিকৃতি

•• আল্লাহ তা'আলা বলেন:

أَلَمْ نَجْعَلِ ٱلْأَرْضَ كِفَاتًا أَحْيَآءً وَأَمْوَٰتًا

«আমি কি ভূমিকে সৃষ্টি করিনি ধারণকারী রূপে •• জীবিত মৃতদের জন্য?»[সূরা মুরসালাত: ২৫--২৬]

এখানেধারণকারী এর স্থলেআকর্ষণকারী অর্থ করে তারা অভিকর্ষ তত্ব সত্যায়ন করে!

••ইবনে জারীর তাবারী রহি.এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেনঃ

{ মুজাহিদ কাতাদা রহি. বলেন: ‘জীবিত অবস্থায় জমিন তোমাদেরকে স্বীয় পৃষ্ঠে বহন করেছে আর তোমাূের মৃত্যুর পরও নিজের পেটের ভিতর লুকিয়ে রেখেছে..’}, [তাফসীরে তাবারী]

শাবী রহি. বলেন: «পৃথিবীর অভ্যন্তরীন ভাগ ধারণ করছে মৃতদেরকে আর উপরিভাগ ধারন করছে জীবিতদেরকে»

- গোলাকার পৃথিবী সত্যায়নে অর্থ বিকৃতি

•• আল্লাহ তা'আলা বলেন:

وَٱلْأَرْضَ بَعْدَ ذَٰلِك دَحَىٰهَآ

«এবং তারপর তিনি পৃথিবীকে "বিস্তৃত" করেছেন» [সূরা নাযিআতঃ ৩০]

তারা পৃথিবীর ডিম্বাকৃতি প্রমাণের জন্য উক্ত আয়াতের অর্থ সম্পূর্ণরুপে বিকৃত করে দেয়!!

তাদের বিকৃত অর্থ হলোঃ অতপর, আল্লাহ পৃথিবীকে উটপাখির ডিমের মতো বানিয়েছেন। (আসতাগফিরুল্লাহ...)

আয়াতে উল্যেখিত "দাহা" শব্দের এধরণের অর্থ আরবদের মাঝে কখনো প্রচলিত ছিলো না, এখনো নেই। তাছাড়া পূর্ববর্তী কোন আলেম এ ধরণের অর্থ করেছে বলে প্রমাণ নেই।

তাহলে তারা এভাবে অর্থ কিকৃতির দুঃসাহস পেলো কোত্থেকে!!

•• দেখুন বিভিন্ন তাফসীর গ্রন্থে আয়াতের কি অর্থ করা হয়েছে:

••ইবনে জারীর তাবারী রহি. বলেন:

الدحو إنما هو البسط في كلام العرب والمد 

«আরবদের ভাষায় "দাহা" শব্দের অর্থ হলো-  বিছিয়ে দেওয়া বিস্তৃত করা» [তাফসীরে তাবারী]

•• তাফসীরে ইবনে কাসীরঃ

«পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে আকাশের পূর্বে কিন্তু তাকে "বিস্তৃত" করা হয়েছে আকাশ সৃষ্টির পর»

•• তাফসীরে জালালাইনঃ

« "দাহাহা" শব্দের অর্থ- পৃথিবীকে তিনি "বিস্তৃত" করেছেন»

থেকে বুঝা গেলো, উক্ত আয়াতটি মূলত পৃথিবী সমতল হাওয়ারই দলীল বহন করে, এবং এটি সমতল পৃথিবী সংক্রান্ত অন্যান্য আয়াতের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ....

- পৃথিবীর ঘুর্ণনগতি সত্যায়নে অর্থ বিকৃতি

وَتَرَى ٱلْجِبَالَ تَحْسَبُهَا جَامِدَةً وَهِىَ تَمُرُّ مَرَّ ٱلسَّحَاب

«তুমি পর্বতমালা দেখে অচল মনে করছ; কিন্তু ওরা হবে মেঘপুঞ্জের মত চলমান» [সূরা নামল: ৪৪]

এই আয়াত দেখিয়ে তারা বলতে চায়, কোরআন আজ থেকে ১৪০০ বছর পূর্ব থেকে বলে আসছে পৃথিবী গতিশীল!

অথচ এই আয়াতে কিয়ামতের ভয়াবহ দৃশ্যের বর্ণনা দেওয়া হচ্ছে এর পূর্বের আয়াতটি দেখলেই ব্যাপারটি বুঝতে পারবেন:

وَيَوْمَ يُنفَخُ فِى ٱلصُّورِ فَفَزِعَ مَن فِى ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَن فِى ٱلْأَرْضِ إِلَّا مَن شَآءَ ٱللَّهُۚ وَكُلٌّ أَتَوْهُ دَٰخِرِينَ

«যে দিন শিঙ্গায় ফুৎকার দেওয়া হবে সেদিন আল্লাহ যাদের ভীতিগ্রস্ত করতে চাইবেন না তারা ব্যতীত আকাশমন্ডলী পৃথিবীর সকলেই ভীতবিহব্বল হয়ে পড়বে এবং সকলেই তাঁর নিকট লাঞ্ছিত অবস্থায় উপস্থিত হবে» [সূরা নামল: ৮৭]

তারা পূর্বের আয়াতকে বিচ্ছিন্ন করে চলমান পাহাড়ের দৃশ্য দেখিয়ে বলছে পৃথিবী ঘুর্নায়মান!

আল্লাহ তা'আলা অন্যত্রে বলেন:

وَيَسْـَٔلُونَكَ عَنِ ٱلْجِبَالِ فَقُلْ يَنسِفُهَا رَبِّى نَسْفًا فَيَذَرُهَا قَاعًا صَفْصَفًا لَّا تَرَىٰ فِيهَا عِوَجًا وَلَآ أَمْتًا

«ওরা তোমাকে পর্বতসমূহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে বল, ‘আমার প্রতিপালক সে সবকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে উড়িয়ে দেবেন •• অতঃপর তিনি ভূমিকে মসৃণ সমতল মাঠে পরিণত করবেন •• যাতে তুমি উঁচু-নীচু দেখবে না» [সূরা তহা: ১০৫--১০৭]

আরেকটি আয়াতের অপব্যাখ্যাঃ

لَا ٱلشَّمْسُ يَنۢبَغِى لَهَآ أَن تُدْرِكَ ٱلْقَمَرَ وَلَا ٱلَّيْلُ سَابِقُ ٱلنَّهَارِۚ وَكُلٌّ فِى فَلَكٍ يَسْبَحُونَ

«সূর্যের পক্ষে চন্দ্রের নাগাল পাওয়া সম্ভব নয়, রজনীও দিবসকে অতিক্রম করতে পারে না এবং প্রত্যেকে নিজ নিজ কক্ষপথে সন্তরণ করে» [সূরা ইয়াসীনঃ ৪০]

তাফসীরে ইবনে কাসীরঃ

«প্রত্যেকেই অর্থাৎ সূর্য চন্দ্র, দিন রাত প্রত্যেকেই নিজ নিজ কক্ষপথে সাঁতার কাটছে ইবনে আব্বাস (রাঃ), ইকরামা (রহিঃ), দাহহাক (রাহিঃ), হাসান(রহিঃ), কাতাদাহ (রহিঃ), আতা আল-খুরাসানী (রাহিঃ) আয়াতের এরূপ ব্যাখ্যা দিয়েছেন»

এখানে বুঝতেই পারছেন, আয়াতে বলা হচ্ছে, চন্দ্র-সূর্য রাত-দিন কক্ষপথে সন্তরণ করছে কিন্তু তারা আয়াত দ্বারা প্রমাণ করতে চায় পৃথিবী গতিশীল অথচ এখানে পৃথিবীর কথা উল্লেখই করা হয় নি..!  

আল-কোরআনেরবৈজ্ঞানিক নিদর্শন আবিষ্কারের নামে সালাফদের ব্যাখ্যা অবজ্ঞা করে অপবিজ্ঞানের থিউরির আলোকে তারা এভাবে বহু আয়াতের অর্থ বিকৃত করছে আল্লাহ দুনিয়া আখেরাতে তাদের উপযুক্ত পাওনা বুঝিয়ে দিন

 

 

 

লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ

 

 

 

 

 

 

কোরআনের অপব্যাখ্যা হতে সাবধান!

•• আল্লাহ তাআ'লা বলেনঃ

إِنَّ ٱلَّذِين يُلْحِدُون فِىٓ ءَايَٰتِنَا لَا يَخْفَوْنَ عَلَيْنَآۗ أَفَمَن يُلْقَىٰ فِى ٱلنَّارِ خَيْرٌ أَم مَّن يَأْتِىٓ ءَامِنًا يَوْمَ ٱلْقِيَٰمَةِۚ ٱعْمَلُوا۟ مَا شِئْتُمْۖ إِنَّهُۥ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ

«নিশ্চয় যারা আমার আয়াতসমূহে অপব্যাখ্যা করে তারা আমার অগোচর নয়» [সূরা ফুস্সিলাত: ৪০]

তাফসীরের মূলনীতি

ইবনে কাসীর (রাহি.) বলেনঃ

{ তাফসীরের সবচেয়ে সহীহ পদ্ধতি হলো - কোরআনের তাফসীর কোরআন দিয়ে করা কোরআনের একজায়গায় কোনটি সংক্ষেপে বলা হলে অন্য জায়গায় বিস্তারিত বলা হয়েছে...

- কোরআন থেকে তাফসীর করা কষ্টকর হলে হাদিস দিয়ে করা হাদিস হলো কোরআনের ব্যাখ্যা স্পষ্ট বর্ণনা...

- আমরা যদি কোরআনেও তাফসির না পায়, হাদিসে না পায় তবে দেখবো সাহাবীগণ কি বলেছেন...

- কোরআন, হাদিস সাহাবীগণের কাছ থেকে তাফসীর না পেয়ে অনেক ইমামগণ তাবেয়ীগণ কি বলেছেন সেটা দেখেন....

খিয়াল মর্জিমতো তাফসীর করা হারাম ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ

مَنْ قَالَ فِي الْقُرْآنِ بِغَيْرِ عِلْمٍ فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ,

«তিনি বলেন, যে ব্যক্তি সঠিক ইল্ম ব্যতীত কুরআন প্রসঙ্গে কোন কথা বলে, সে যেন জাহান্নামকে নিজের জন্য বাসস্থান বানিয়ে নিলো»

(তিরমিজি, নাসাঈ, আবুদাওদ) }

এখনতো অনেকে কোরআনের তাফসীর করছে নাস্তিকদের কল্প-বিজ্ঞানের আলোকে এমনকি ওদের সাথে কোন কিছু সাংঘর্ষিক হলে কোরআনের ব্যাখ্যাকে ১৮০° ঘুরিয়ে দিয়ে প্রমাণ করে কোরআনেই বলা হয়েছে তাদের ওসব কল্প-কাহিনী!!! ইন্না-লিল্লাহ ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন..

তার একটা দৃষ্টান্ত হলো সূরা নাযিআতের আয়াতটিঃ

وَٱلْأَرْضَ بَعْدَ ذَٰلِك دَحَىٰهَآ

«এবং তারপর তিনি পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন» [সূরা নাযিআতঃ ৩০]

পূর্বের সমস্ত আলেমগণদাহা শব্দের অর্থ করেছেন «বিস্তৃত করেছেন» কিন্তু সাম্প্রতিক কিছু লোক অর্থটাকে সম্পূর্ণ উল্টে দেয় তারা অর্থ করে «ডিম্বাকৃতি করেছেন», নাস্তিকরা বলেছে পৃথিবী গোলাকার সুতরাং কোরআন থেকেও তাদের প্রমাণ করতে হবে পৃথিবী গোলাকার তাই আজ তাদের এই করুণ অবস্থা ...

 

 

আসতাগফিরুল্লাহ....

 

 

পৃথিবী সমতল, গোলাকার নয়

আয়াতের তাফসীরগুলো পড়লে বুঝতে পারবেন, কোরআনের সাথে সাংঘর্ষিক জ্যোতির্বিদদের গোলাকার ধারণাকে কিভাবে আলেমগণ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন.. 

- আল্লাহ তাআ'লা বলেনঃ

وَهُوَ ٱلَّذِى مَد ٱلْأَرْضَ

«তিনিই পৃথিবীকে বিছিয়ে দিয়েছেন (বা সম্প্রসারিত করেছেন) » [সূরা রা'দঃ৩]

আসুন, দেখে নিই এই আয়াতের ব্যাখ্যায় পূর্ববর্তী আলেমগণ কি বলেছেন.. (ব্রেকেটের ভিতর তাঁদের মৃত্যু সন উল্যেখিত)

-তাফসীরে তাবারী (৩১০ হিজরি):-

« আল্লাহ তাআ'লা পৃথিবীকে সম্প্রসারিত করেছেন " এর অর্থ হলো- তিনি দৈর্ঘ্য প্রস্থের দিক থেকে পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন» [গোলাকার বস্তুর কোন দৈর্ঘ্য-প্রস্থ থাকে না]

-তাফসীরে মাওয়ারদী (৪৫০ হিজরি):-

« তিনি পৃথিবীকে বসবাসের উপযোগী করার জন্য বিছিয়ে দিয়েছেন যারা পৃথিবীকে বলের মতো গোলাকার বলে, এই আয়াত তাদের বিপক্ষে দলীল»

-তাফসীরে ইবনে আতিয়্যাহ (৫৪১ হিজরি):-

« ‘তিনি পৃথিবীকে প্রসস্থ করলেন আয়াতাংশ এটা প্রমান করে পৃথিবী বলের মত (গোলাকার) নয় এটা শরিয়তের সুস্পষ্ট বিষয়»

-তাফসীরে ক্বুরতুবী (৬৭১ হিজরি):-

{ এই আয়াতে গোলাকার পৃথিবীর দাবিদারদের কথা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে আহলে-কিতাব মুসলিমদের বক্তব্য হলো, পৃথিবী স্থির নিশ্চল এটি কেবল ভুমিকম্পের সময় নড়ে উঠে..}

- আল্লাহ তাআ'লা বলেনঃ

وَإِلَى ٱلْأَرْضِ كَيْف سُطِحَتْ

«এবং তারা কি দেখে না যে কিভাবে পৃথিবীকে সমতল করা হয়েছে?» [গাসিয়াহঃ২০]

-তাফসীরে ইবনে আতিয়্যাহ (৫৪১ হিজরি):-

« স্পষ্টত এই আয়াত দ্বারা বুঝা যাচ্ছে, পৃথিবী সমতল; বলের মতো (গোলাকার) নয় এটিই আহলুল ইলমের অভিমত »

-তাফসীরে জালালাইন (৮৬৪ হিজরি):-

« এই আয়তে " সুতিহাত" শব্দ দ্বারা স্পষ্টত বুঝা যাচ্ছে পৃথিবী সমতল আর এটিই শরিয়তের আলেমগণের অভিমত পৃথিবীকে গোলাকার দাবী করা ভূতত্ববিদদের কথা সঠিক নয়»

- আল্লাহ তাআ'লা বলেনঃ

وَٱللَّهُ جَعَلَ لَكُمُ ٱلْأَرْض بِسَاطًا

«আর আল্লাহ তোমাদের জন্য পৃথিবীকে করেছেন বিস্তৃত» সূরা নূহঃ ১৯]

-ইমাম ইবনে মুজাহিদ (৩২৪ হিজরি) বলেন:

«পৃথিবী যদি বলের মতো (গোলাকার) হতো তবে ভূপৃষ্ঠে কোন পানি থাকতো না» [তাফসীরে ইবনে আতিয়্যাহ]

- আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

وَٱلْأَرْضَ بَعْدَ ذَٰلِكَ دَحَىٰهَآ

«এবং তারপর তিনি পৃথিবীকে "বিস্তৃত" করেছেন» [সূরা নাযিআতঃ ৩০]

-তাফসীরে তাবারী (৩১০ হিজরী) :

الدحو إنما هو البسط في كلام العرب والمد"

«আরবদের ভাষায় "দাহা" শব্দের অর্থ হলো-  বিছিয়ে দেওয়া বিস্তৃত করা»

-তাফসীরে ইবনে কাসীরঃ

«পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে আকাশের পূর্বে কিন্তু তাকে "বিস্তৃত" করা হয়েছে আকাশ সৃষ্টির পর»

-তাফসীরে জালালাইনঃ

« "দাহাহা" শব্দের অর্থ- পৃথিবীকে তিনি "বিস্তৃত" করেছেন»

- আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

وَٱلْأَرْضِ وَمَا طَحَىٰهَا

«শপথ পৃথিবীর এবং তার বিস্তীর্ণতার» [সূরা শামছ: ]

-তাফসীরে ত্বাবারী (৩১০ হিজরী) :

«ত্বহাহা অর্থ তিনি পৃথিবীকে ডানে, বামে সর্বদিকে বিস্তৃত করেছেন»

[গোলকের কোন ডান, বাম বা দৈর্ঘ্য-প্রস্থ থাকে?]

- আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

وَٱلْأَرْض فَرَشْنَٰهَا فَنِعْمَ ٱلْمَٰهِدُونَ

«এবং আমি ভূমিকে বিছিয়ে দিয়েছি, আমি কত সুন্দর বিস্তারকারী! » [সূরা যারিয়াতঃ৪৮]

- পৃথিবীর আকার নিয়ে দার্শনিকদের বিরুধিতা করে ইমাম ক্বাহত্বানী আল-আনদালূসী (৩৮৭ হিজরি) তাঁর বিখ্যাত কাব্য 'নুনিয়্যাতুল কাহতানী'তে বলেন:

كذب المهندس و المنجم مثله **** فهما

 

 لعلم الله مدّعيان

الأرض عند كليهما كروية **** و هما بهذا القول مقترنان

والأرض عند أولي النهى لسطيحة **** بدليل صدق واضح القرآن

والله صيرها فراشاً للورى **** و بنى السماء بأحسن البنيان

والله أخبر أنها مسطوحة **** و أبان ذلك أيــّـما تبيان

•• অনুবাদঃ«•মিথ্যা বলেছে জ্যোতির্বিদ জ্যামিতিবিদ, তারা তো আল্লাহর গায়বি ইলমের দাবিদার,

তাদের উভয়ের একই উক্তি - পৃথিবী গোলাকার,

আর বিচক্ষণ লোকদের নিকট কোরআনের নির্ভুল ও স্পষ্ট দলীল দ্বারা প্রমাণিত - পৃথিবী সমতল,

সৃষ্টিকুলের জন্য আল্লাহ পৃথিবীকে বিছানা স্বরুপ বানিয়েছেন। সর্বোত্তম গঠনে বানিয়েছেন আসমান,

কত স্পষ্ট ভাষায় আল্লাহ আল্লাহ জানিয়ে দিলেন- পৃথিবী সমতল »

৮- ইমাম আবু মানসূর আলবাগদাদী (৪২৯ হিজরি) বলেনঃ

« আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত এই বিষয়ে ঐক্যমত (ইজমা) পোষণ করেছেন যে, 'পৃথিবী স্থির ও নিশ্চল। এটি কেবল ভুমিকম্পের সময় সময় নড়ে উঠে।' কিন্তু নাস্তিকদের বক্তব্য হলো, 'পৃথিবী (মহাশূন্যে) ভাসমান।' .... এবং তারা (আহলে সুন্নাত) এই বিষয়ে ইজমা করেছেন যে, 'পৃথিবীর চারদিকে প্রান্তসীমা আছে, (অর্থাৎ পৃথিবী গোলাকার নয়, গোলকের প্রান্তসীমা থাকে না।) একইভাবে আসমানেরও ছয় দিক থেকে সীমানা রয়েছে।' .... এবং তাঁরা এই বিষয়ে ইজমা করেছেন যে, 'আসমান পৃথিবীর চারপাশে গোলাকার গঠন নয়।' কিন্তু অন্যরা দাবী করে, 'আসমানগুলো গোলাকার গঠন, যা একটি আরেকটির গর্ভে অবস্থিত আর পৃথিবী হলো এই গোলাকার গঠনের কেন্দ্রস্থল» [আলফারকু বাইনাল ফিরাক লিল-বাগদাদী]

৯- গোলকের কেন্দ্র তার পৃষ্ঠে নয়, অভন্তরে

বাইতুল মা'মুর যেমন আকাশের কেন্দ্রে অবস্থিত, তদ্রূপ ক্বাবা শরীফ

পৃথিবীর কেন্দ্রে অবস্থিত কিন্তু আপনি নিশ্চয়ই জানেন গোলাকার বস্তুর কেন্দ্র হলো তার পেটের ভিতর যেমন, একটি ফোটবলের কেন্দ্র হলো বলের অভ্যন্তরে ঠিক মাঝখানে কাজেই পৃথিবী সমতল না হলে কোনভাবে কাবা এর কেন্দ্রে অবস্থান করতে পারে না

 

 

 

 

 

 

চিত্রঃ গোলকের কেন্দ্র

১০-গোলাকার পৃথিবীতে কেবলা নির্ণয় অসম্ভব

আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

 فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ ٱلْمَسْجِدِ ٱلْحَرَامِۚ وَحَيْثُ مَا كُنتُمْ فَوَلُّوا۟ وُجُوهَكُمْ شَطْرَهُ

«অতএব (নামাযে) তুমি মাসজিদুল হারামের (পবিত্র কাবাগৃহের) দিকে মুখ ফেরাও তোমরা যেখানেই থাক না কেন, (নামাযে) সেই (কাবার) দিকে মুখ ফেরাও» [সূরা বাকারাহঃ১৪৪]আপনাকে অবশ্যই কিবলার দিকে ফিরে সালাত পড়তে হবে,আবার কেবলাকে পিছ দিয়ে সালাত পড়লে সালাত বাতিল হয়ে যাবে

 

এবার দেখুন, পৃথিবী পৃথিবী গোল হলে কেবলার দিকে মুখ করার কোন অর্থ হয় না কারণ, আপনি যেদিকে ফিরেন সেদিকেই কেবলা!

আবার দেখুন, আপনি কেবলার দিকে মুখ করলেও কেবলা আপনার পিছনে থাকছে!

«তোমরা যেখানেই থাক না কেন, (নামাযে) সেই (কাবার) দিকে মুখ ফেরাও» [সূরা বাকারাঃ১৪৪]

আকাশ পৃথিবীর উপরে, চারপাশে নয়

- আকাশ পৃথিবীর ছাদ

 

•• আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

ٱلَّذِى جَعَلَ لَكُمُ ٱلْأَرْض فِرَٰشًا وَٱلسَّمَآء بِنَآءً

«যিনি পৃথিবীকে তোমাদের জন্য বিছানা [] আকাশকে ছাদ [] স্বরূপ সৃষ্টি করেছেন» [সূরা বাকারাঃ২২]

-তাফসীরে তাবারীঃ

«আল্লাহ তা'আলা পৃথিবীকে সমতল বানিয়েছেন যেন এর উপর মানুষ চলাচল করতে পারে, স্থির করেছেন যেন মানুষ এতে বসবাস করতে পারে ইবনে মাসউদ আরো কিছু সাহাবী (রা.) বলেন: আকাশ পৃথিবীর উপর গম্বুজ সদৃশ ছাদ»

আল্লাহ তা'আলা বলেন:

وَجَعَلْنَا ٱلسَّمَآءَ سَقْفًا مَّحْفُوظًاۖ وَهُمْ عَنْ ءَايَٰتِهَا مُعْرِضُونَ

«এবং আকাশকে করেছি সুরক্ষিত ছাদ স্বরূপ কিন্তু তারা আকাশস্থ নিদর্শনাবলী হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়» [সূরা আন্বিয়া: ৩২]

- আকাশ সুদৃঢ় এবং আমাদের উপরে অবস্থিত, চারপাশে নয়

•• আল্লাহ তা'আলা বলেন:

وَبَنَيْنَا فَوْقَكُم سَبْعًا شِدَادًا

«আর নির্মাণ করেছি তোমাদের উপরে সুদৃঢ় সপ্ত আকাশ» [সূরা নাবা:১২]

লক্ষ্য করুনঃ আল্লাহ আসমান সৃষ্টি করেছেন আমাদের উপরে, চারপাশে নয় তাছাড়া আসমান হলো পৃথিবীর ছাদ ছাদতো সর্বদা ঘরের উপরেই থাকে আসমান যদি আমাদের চারপাশে হয় তবে এটি যেমন আমার উপরে আছে তদ্রূপ নিচেও বিদ্যমান এমতাবস্থায় উক্ত আয়াতটি অসামঞ্জস্য হয়ে পড়ে...অথচ আল্লাহর কথায় কোন অসামঞ্জস্যতা নেই

 

পৃথিবী কোন গ্রহ নয়; এটি আল্লাহর সুবিশাল সৃষ্টি

নিচের তিনটা আয়াত নিয়ে একটু ভাবুন, তাহলে বুঝতে পারবেন পৃথিবী কত বড়!

- আল্লাহর কুরসীর বিশালতা বুঝানোর জন্য আল্লাহ পৃথিবীর কথা উল্যেখ করেছেন কেন? এটা কি পৃথিবীর বিশালতা ইঙ্গিত করে না!!?

وسع كرسيه السماوات والأرض

«তাঁর কুরসী আকাশমন্ডলী পৃথিবী পরিব্যাপ্ত» [সূরা বাকারাঃ২৫৫]

- জান্নাতের বিশালতা বুঝাতে গিয়ে আল্লাহ পৃথিবীর কথা উল্যেখ করেছেন

وسارعو إلى مغفرة من ربكم وجنة عرضها السماوات والأرض أعدت للمتقين

«তোমরা প্রতিযোগিতা (ত্বরা) কর, তোমাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে ক্ষমা এবং বেহেশ্তের জন্য, যার প্রস্থ আকাশ পৃথিবীর সমান, যা ধর্মভীরুদের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে» [সূরা আলে ইমরানঃ১৩৩]

- আসমানের মতো যমিনও সাতটি

الله الذي خلق سبع سماوات و من الأرض مثلهن يتنزل الأمر بينهن

«আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন সপ্ত আকাশ এবং পৃথিবীও অনুরূপ, ওগুলোর মধ্যে নেমে আসে তাঁর নির্দেশ» [সূরা তালাকঃ ১২]

তাফসীরে কুরতুবিতে আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়ঃ

জমহুর আলেমগণের মতে সাত যমিন একটি আরেকটির উপরে করে স্তরে স্তরে সৃষ্টি করা হয়েছে এক আকাশ থেকে অন্য আকাশের মাঝে যত ব্যাবধান দুই যমিনের মাঝেও আছে অনুরূপ ব্যাবধান প্রত্যেক জমিনে আল্লাহর সৃষ্টি আবাদ রয়েছে [তাফসীরে কুরতুবী]

দাহ্হাক (রাহি.) বলেনঃ «সাত যমিন একটি আরেকট উপরে কিন্তু সাত আসমানের মতো এদের মাঝে ফাঁকা নেই»

নবী (সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

من ظلم قيد شبر من الأرض طوقه من سبع أرضين

«যে লোক এক বিঘত জমি অন্যায়ভাবে নিয়ে নেয়, (কিয়ামতের দিন) এর সাত তবক জমি তার গলায় লটকিয়ে দেয়া হবে» [বুখারীঃ২৪৫২]

«আর তোমাদেরকে খুব অল্প পরিমান জ্ঞানই দেওয়া হয়েছে»

[সূরা ইসরাঃ৮৫]

 

পৃথিবী স্থির, গতিশীল নয়

পৃথিবী গতিশীল ঘুর্নায়মান মতবাদের প্রবক্তা কে?

নিকোলাস কপারনিকাস (১৫৪৩ ঈ) : এই পাপিষ্ঠ খবিসের হাত ধরে জন্ম নেয় আরো নিকৃষ্ট একটি মতবাদ। সে সর্বপ্রথম দাবী করে পৃথিবী গতিশীল ও ঘুর্নায়মান। সে দাবী করে:

পৃথিবী গোলাকার, নিজ অক্ষে (লাটিমের মত) ঘুরে চন্দ্রও গোলাকার, পৃথিবীর চারপাশে ঘুরে আর পৃথিবীসহ অন্যান্য গ্রহগুলো ঘোরে সূর্যের চারপাশে সূর্য জগতের কেন্দ্রীয় অবস্থানে স্থির হয়ে আছে, সব কিছু তাকে কেন্দ্র করে ঘুরছে

কিন্তু গির্জা কর্তৃপক্ষের ভয়ে সে এসব কিছু সরাসরি বলতো না। অতি সংগোপনে এসবের প্রচারণা চালাতো। কারণ, তখন কেউ ইনজিলের সাথে সাংঘর্ষিক কোন মতবাদ প্রচার করলে রোমের গির্জা কর্তৃপক্ষ তাকে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করতো। কপারনিকাস মারা যাওয়ার পর তার রচিত গ্রন্থগুলো মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে এবং তার মতবাদগুলো বেশ পরিচিতি লাভ করে....

তার উত্তরসূরি হয়ে কাজ করে জন কেপলার (১৬৩০ ), গ্যালিলিও (১৬৪২ ), নিউটন (১৭২৭ ), আইনস্টাইন (১৯৫৫ ), স্টিফেন হকিং (২০১৮ ) ইত্যাদি খবিসের দল...

১- মহান আল্লাহ বলেন:

وَأَلْقَىٰ فِى ٱلْأَرْضِ رَوَٰسِى أَن تَمِيدَ بِكُمْ

«আর তিনি পৃথিবীতে সুদৃঢ় পর্বত স্থাপন করেছেন, যাতে পৃথিবী তোমাদেরকে নিয়ে (এদিক ওদিক) হেলে না পড়ে» [সূরা নাহলঃ১৫]

আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনে কাসীর রাহি. বলেনঃ

«আল্লাহ তা'আলা পৃথিবীর উপর সুদৃঢ় উঁচু উঁচু পাহাড় প্রোথিত করলেন যেন এটি নড়াচড়া বা হেলা-দোলে না যায় এমনটি না করলে (পৃথিবীর নাড়াচড়ার কারণে) মানুষের জীবন দুর্বিষহ হতো» [তাফসীরে ইবনে কাসীর]

ইবনে জারীর তাবারী রহি. বলেনঃ «আল্লাহ তা'আলা পাহাড়সমূহ দ্বারা পৃথিবীকে স্থির করে দিলেন যেন এটি এর উপর বাসবাসকারীদেরকে নিয়ে হেলেদুলে না যায়। পাহাড় দ্বারা স্থির করার পূর্বে এটি হেলেদুলে যাচ্ছিলো। তিনি একটি সূত্রে বর্ণনা করেন: ‘আল্লাহ পৃথিবী সৃষ্টি করার পর এটি হেলেদুলে যাচ্ছিলো। ফেরেশতাগণ তা দেখে বললেন, এই জমিনে কেউ বসবাস করতে পারবে না। পরদিন সকালে তাঁরা দেখতে পেলো এর উপর প্রোথিত করা হয়েছে সুদৃঢ় পাহাড়সমূহ’» [তাফসীরে তাবারী]

- আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

أَلَمْ نَجْعَلِ ٱلْأَرْض مِهَٰدًا وَٱلْجِبَال أَوْتَادًا

«আমি কি পৃথিবীকে বিছানা সদৃশ করেনি?  এবং পর্বতসমূহকে পেরেকের মতো নির্মাণ করেনি?» [সূরা নাবাঃ ৬,৭]

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনে কাসীর রাহি. বলেনঃ

« অর্থাৎ, আমি সমস্ত সৃষ্টি জীবের জন্য এই পৃথিবীকে সমতল করে বিছিয়ে দেয়নি? এভাবে যে ওটা তোমাদের সামনে বিনীত অনুগত রয়েছে নড়াচড়া না করে নীরবে পড়ে আছে আর পাহাড়কে আমি এর উপর পেরেক বানিয়েছি যাতে এটি হেলেদুলে যেত না পারে এবং এর উপর বসবাসকারীরা যেন উদ্বিগ্ন হয়ে না পড়ে » [তাফসীরে ইবনে কাসীর]

পানির উপর হেলেদুলে যাওয়া জাহাজকে যেভাবে নঙ্গর দ্বারা স্থির করা হয়, তদ্রূপ সমতল পৃথিবীর উপর পাহাড়সমূকে পেরেকের মতো গেঁথে দেওয়া হয়েছে যেন এটি হেলা-দোলা না করে

- আল্লাহ তা'আলা বলেন:

إِنَّ ٱللَّهَ يُمْسِكُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْض أَن تَزُولَاۚ وَلَئِن زَالَتَا إِنْ أَمْسَكَهُمَا مِنْ أَحَدٍ مِّنۢ بَعْدِهِۦٓۚ إِنَّه كَانَ حَلِيمًا غَفُورًا

«আল্লাহ আকাশমন্ডলী পৃথিবীকে (ধরে) স্থির রাখেন, যাতে ওরা স্থানচ্যুত না হয় ওরা স্থানচ্যুত হলে তিনি ব্যতীত কেউ ওগুলিকে স্থির রাখতে পারে না তিনি সহনশীল, ক্ষমাপরায়ণ» [সূরা ফাতিরঃ৪১]

ইবনে জারীর তাবারী একটি সূত্রে বর্ণনা করেন,

{ একলোক আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. এর কাছে আসলো

তিনি লোকটিকে জিজ্ঞেস করলেন: ‘আপনি কোত্থেকে আসলেন?

লোকটি বললো: ‘আমি শাম থেকে এসেছি

তিনি বললেন: ‘আপনি কার সাথে সাক্ষাৎ করেছেন?

লোকটি বললো: ‘কা'বের সাথে [প্রসিদ্ধ তাবেয়ী কাবুল আহবার]

তিনি বললেন, ‘কা' আপনাকে কি বললেন?

লোকটি বললো, কা' আমাকে বলেছেন, আসমানসমূহ একজন ফেরেশতার কাঁধের উপর ঘুরছে

তিনি বললেন, আপনি কি একথা বিশ্বাস করেছেন নাকি করেন নি?

লোকটি বললো, আমি বিশ্বাসও করিনি আবার অবিশ্বাসও করিনি

তিনি বললেন, আপনি যদি এখনই বাহন আর আসবাবপত্র নিয়ে তাঁর কাছে যেতেন! কা' মিথ্যা বলেছেন আল্লাহ তা'আলা বলেন «আল্লাহ আকাশমন্ডলী পৃথিবীকে (ধরে) স্থির রাখেন, যাতে ওরা স্থানচ্যুত না হয়...» আসমান ঘুরলে সেটা স্থানচ্যুত হবেই }  [তাফসীরে তাবারী]

এ থেকে স্পষ্টত প্রমাণিত হলো পৃথিবী ও আসমান উভয়কে আল্লাহ স্থির রেখেছেন।

৪- স্থির নক্ষত্রগুলো প্রমাণ করে পৃথিবী স্থির

মহান আল্লাহ বলেনঃ

وَبِالنَجْمِ هُم يَهتدون

«এবং ওরা নক্ষত্রের সাহায্যেও পথের নির্দেশ পায়» [সূরা নাহলঃ ১৬].

কম্পাস আবিষ্কারের পূর্বে সমূদ্রের নাবিকরা তারা দেখে দিক নির্ণয় করতো।

আপনি পারেন নক্ষত্রের অবস্থান দেখে দিক নির্ণয় করতে!?

- আপনাকে ধ্রুব তারা খুঁজে বের করতে হবে [ধ্রুব তারা থাকে উত্তর আকাশে তাই উত্তর দিকটা খোলা থাকতে হবে আপনার সামনে কোন পাহাড় বা উঁচু ভবন থাকা যাবে না],

দিক নির্ণয়ের পদ্ধতিঃ [ছবির সাথে মিলিয়ে নিন]

--ধ্রুব তারার পাশে থাকে দুটা সপ্তর্ষি [সপ্তর্ষি = সাতটি তারকা মিলে চতুর্ভুজ গঠন করে]

--সপ্তর্ষি দেখেই আপনাকে ধ্রুব তারা খুঁজে বের করতে হবে

--ধ্রুব তারাকে সামনে নিয়ে দাঁড়ালে আপনার পিছনের দিকটা দক্ষিন,  ডানে পূর্ব, আর বামে পশ্চিম

আপনি সারা বছরই এই ধ্রুব তারাকে একই স্থানে দেখতে পাবেন পৃথিবী স্থির না হলে তারাগুলোকে সেই প্রাচীনকাল থেকে মানুষ একই স্থান দেখতে পেতো না

- বাইতুল মা'মূরের অবস্থান প্রমাণ করে পৃথিবী স্থির                                          •• আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

والبَيتُ المعمور

শপথ বায়তুল মামূরের [সূরা ত্বূরঃ৪]

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনে জারীর তাবারী রহি. বর্ণানা করেন, কাতাদা রা. হতে বর্ণিতঃ «নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একদিন তাঁর সাহাবীদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি জানো বাইতুল মা'মুর কি? তাঁরা বললো, আল্লাহ তাঁর রাসূল ভালো জানেন তিনি বললেন, এটি আসমানে ক্বাবা বরারবর অবস্থিত একটি মাসজিদ এটি যদি পতিত হয়তবে ক্বাবার উপরেই পতিত হবে...» [তাফসীরে তাবারী]

বাইতুল মা'মুর কাবার উপর পতিত হওয়ার জন্য পৃথিবীকে অবশ্যই স্থির হতে হবে কিন্তু কল্প-বিজ্ঞানের দাবী, পৃথিবীর আছে বহুমুখী গতি যেমন-

- নিজ অক্ষ কেন্দ্রিক এর ঘুর্ণন গতি: ঘন্টায় ১৬৮০ কিমি

- সূর্য কেন্দ্রিক এর ঘুর্ণন গতি: ঘন্টায় ১০৭,৮২৫,৭৮ কিমি

- সূর্য সহ গ্যলাক্সি কেন্দ্র

সংশয় জবাব

নাস্তিক বিজ্ঞানীদের কোন থিউরি বা অনুকল্প কোরআনের সাথে সাংঘর্ষিক হলেই বিজ্ঞানপ্রেমী কিছু লোক কোরআনের নতুন নতুন ব্যাখ্যা শুরু করে দেয়। এই তাদের ইমান!                                                        দেখুন পৃথিবী স্থির হওয়ার আয়াতগুলো নিয়ে তাদের অপব্যাখ্যা

- ‘আল্লাহ পৃথিবীকে স্থির করেছেন এর অপব্যখ্যায় তারা বলে, আসলে পৃথিবী গতিশীল কিন্তু তার গতিটা সুশৃঙ্খল হওয়ার কারণে আল্লাহ পৃথিবীকে স্থির বলেছেন!

-জাবাব, চন্দ্র-সূর্য রাত-দিন তো সুশৃঙ্খলভাবে ভাবে ঘুর্নায়মান তাদের ক্ষেত্রে আল্লাহকারার বা স্থির শব্দ ব্যবহার করেন নি কেন?

- আবার অনেকে বলে, আল্লাহ পৃথিবীকেকারার বানিয়েছেন আর কারার শব্দের অর্থ শুধু স্থির না, এর আরেকটি অর্থ- বাসস্থান আমরা বাসস্থান অর্থটিও গ্রহণ করতে পারি

-জবাব, একটি শব্দের একাধিক অর্থ থাকতেই পারে তো আপনিকারার শব্দের অর্থ বাসস্থান নিলেও স্থির অর্থটা তো বাদ দিতে পারেন না আর আলেমগণ এর অর্থ স্থির- নিয়েছেন

- ‘পাহাড় দ্বারা পৃথিবী স্থির করেছেন, এর অপব্যাখ্যায় তারা বলে, পৃথিবীর মাটি কয়েক স্তরে বিভক্ত এতে কিছু প্লেট আছে, সেই প্লেটগুলোকে আটকিয়ে ভুমিকম্প থেকে রক্ষা করার জন্য আল্লাহ পাহাড়গুলো স্থাপন করেছেন কিন্তু পৃথিবী এই পাহাড়গুলো নিয়ে মহাশূন্যে ঘুর্নায়মান!

-জবাব, ভূমিকম্প একটি আজাব বান্দাকে সতর্ক করার জন্য আল্লাহ এটি সৃষ্টি করেন আর ভুমিকম্পকে আরবিতে বলা হয়যিলযাল ভূমিকম্প থেকে রক্ষা করার জন্যই পাহাড় সৃষ্টি করেছেন এমনটি বলা হয় নি পাহাড় সৃষ্টি করেছেন যেন পৃথিবী হেলেদুলে না যায় হেলেদুলে যাওয়া আর কম্পিত হওয়া এক নয়

 

সূর্য পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘোরে

- পৃথিবী সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘোরলে  হলে কিয়ামতের আগেই আরেকটি কিয়ামত হয়ে যাবে

আমরা জানি সূর্য পূর্ব দিক হতে উদিত হয়, আর পশ্চিম দিকে অস্ত যায় কিয়ামতের একটি নিদর্শন হলো সূর্য পশ্চিম দিক হতে উদিত হবে

আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূর্য অস্ত যাবার সময় আবূ যার (রাঃ)-কে বললেন, তুমি কি জান, সূর্য কোথায় যায়? আমি বললাম, আল্লাহ এবং তাঁর রসূলই ভাল জানেন। তিনি বললেন,

فإنها تذهب حتى تسجد تحت العرش، فتستأذن فيؤذن لها، ويوشك أن تسجد فلا تقبل منها،وتستأذن فلا يوذن لها، يقال لها ارجعي من حيث جئت، فتطلع من مغربها، فذلك قوله تعالى، والشمس تجري لمستقر لها ذلك تقدير العزيز العليم

তা যেতে যেতে আরশের নীচে গিয়ে সিজদা পড়ে যায়। অতঃপর সে আবার উদিত হবার অনুমতি চায় এবং তাকে অনুমতি দেয়া হয়। আর শীঘ্রই এমন সময় আসবে যে, সিজ্‌দা করবে কিন্তু তা কবূল করা হবে না এবং সে অনুমতি চাইবে কিন্তু তাকে অনুমতি দেয়া হবে না। তাকে বলা হবে, যে পথ দিয়ে আসলে ঐ পথেই ফিরে যাও। তখন সে পশ্চিম দিক হতে উদিত হয়-- এটাই মর্ম হল মহান আল্লাহর বাণীরঃ “আর সূর্য নিজ গন্তব্যে (অথবা) কক্ষ পথে চলতে থাকে। এটা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞের নিয়ন্ত্রণ।” (ইয়াসীন ৩৮) [সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৩১৯৯]

কল্পবিজ্ঞান বলে, “সূর্য স্থির। পৃথিবী সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘোরার পাশাপাশি নিজ অক্ষের উপর পশ্চিম হতে পূর্ব দিকে ঘন্টায় ১৬০০ কিলোমিটার বেগে ঘুর্নায়মান। এ ঘুর্ণনটিআহ্নিকগতি নামে পরিচিতএ ঘুর্ণনের কারণে সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয় হয়”

তাহলে সূর্য পশ্চিম দিকে উদিত হওয়ার জন্য পৃথিবী হঠাৎ করে উল্টো দিকে ঘুরতে শুরু করবে?!

আমরা যখন বলি, পৃথিবীর এই প্রচন্ড ঘুর্ণনবেগ সত্তেও আমদের কোন অনুভূতি হয় ন কেন? তখন তারা বলে, “পৃথিবীর সাথে আমরাও সমবেগ প্রাপ্ত হয়, তাই অনুভুত হয় না। যেমন, গাড়ি বা প্লেনের ভিতর যাত্রীদের তেমন কোন অনুভুতি হয় না।” আচ্ছা বলুন তো প্রচন্ড গতিসম্পন্ন একটি বাস হঠাৎ ব্রেক করলে যাত্রীদের কি অবস্থা হবে!? গাড়ির বেগ যত বেশি হবে ক্ষতির পরিমানও তত বেশি হবে।

এবার ভাবুন তো, ঘন্টায় ১৬০০ কিমি বেগে ঘুর্নায়মান পৃথিবী হঠাৎ ব্রেক করে ঠিক উল্টোদিকে ঘুরতে শুরু করলে কি ভয়ংকর অবস্থা দাঁড়াবে? কেউ বেঁচে থাকবে? কোন প্রাণি বেঁচে থাকাতো দূরের কথা, মূহুর্তের মধ্যে ভূপৃষ্ঠের সব কিছু উলটপালট হয়ে যাবেমোটকথা, কল্পবিজ্ঞানের থিউরি মতো সেদিনই সব শেষ হয়ে যাবে...

কিয়ামতের আগেই কিয়ামত হয়ে যাবে... (নাউজুবিল্লাহ..)

কিন্তু আপনি সমতল ও স্থির পৃথিবীতে চিন্তা করুন, সূর্যের গতিপথ পরিবর্তনের কারণে এধরণের কোন সমস্যাই হবে না। হ্যাঁ, কিয়ামতের নিদর্শন দেখে মানুষ ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে তাওবা করবে.. কিন্তু তাওবার দরজা তো ইতিমধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে!

- ইউশা বিন নূন (আলাইহিসসালাম) এর ঘটনা

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ

«কোন একজন নবী জিহাদ করেছিলেন..............অতঃপর তিনি জিহাদে গেলেন এবংআসরের সলাতের সময় কিংবা এর কাছাকাছি সময়ে একটি জনপদের নিকটে আসলেন তখন তিনি সূর্যকে বললেন, তুমিও আদেশ পালনকারী আর আমিও আদেশ পালনকারী হে আল্লাহ্! সূর্যকে থামিয়ে দিন তখন তাকে থামিয়ে দেয়া হল অবশেষে আল্লাহ তাকে বিজয় দান করেন»  [সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৩১২৪]

ফায়েদাঃ

ইউশা বিন নূন (আলাইহিসসালাম) জুমার দিন আসরের সময় যুদ্ধ  করছিলেন যুদ্ধ করতে করতে তিনি বিজয়ের কাছাকাছি পৌঁছে গেলেন কিন্তু এদিকে মাগরিবের সময় নিকটবর্তী হয়ে গেলো

আর ইহুদীদের শরীয়তে শনিবার যুদ্ধ হারাম ছিলো যেহেতু সূর্যাস্তের পর পরই শনিবার শুরু হয়ে যাবে, তাই তিনি আল্লাহর কাছে দোওয়া করেছিলেন, আল্লাহ যেন সূর্যের গতি কিছুক্ষণের জন্য থামিয়ে দেন অতপর তিনি বিজয়ী হওয়ার পর্যন্ত সূর্য স্থির ছিলো

সূর্য যদি স্থির হতো, আর পৃথিবী যদি সূর্যের চারপাশে ঘোরতো, তবে তিনি পৃথিবীর গতিরোধের জন্য আল্লাহর কাছে দোওয়া করতেন, সূর্যের নয় আর পৃথিবী যদি সূর্যের চারপাশে ঘুর্নায়মান হতো, তবে সূর্যের গতিরোধ করলেও পৃথিবীর ঘুর্ণনের কারণে তো ঠিক পূর্বের মতোই মাগরিব চলে আসতো এতে প্রমাণিত হয়, পৃথিবী স্থীর সূর্য আকাশের কক্ষপথে ,ঘুর্ণায়মান

 

 

 

 

 

 

 

 

উপসংহার

প্রিয় ভায়েরা,

কোরআন এর আয়াত অনুসারে পৃথিবী সমতল স্থির

কাজেই আমরা অবশ্যই বিশ্বাস করবো, পৃথিবী সমতল স্থির

আমাদের বুঝে আসুক বা না আসুক আমরা বিশ্বাস করবো পৃথিবী সমতল স্থির

এমনকি আমরা খালি চোখে পৃথিবীকে গোলাকার

ঘুর্নায়মান দেখলেও বিশ্বাস করবো পৃথিবী সমতল স্থির

হ্যাঁ, এটাকেই বলে ইমান

আকল অকার্যকর হলেও মহা সত্য ওহির বিশ্বাস অকার্যকর করে দিবো না.....

এক কথায় কোরআন-হাদীসের সাথে যা কিছু সাংঘর্ষিক হবে সবই মিথ্য ছুড়ে ফেলে দিবো সেগুলো.. সেটা বিজ্ঞান বা অন্য যেকোনো নামে আসুক না কেন..

দেখুন, দাজ্জাল এসে কিন্তু এক হাতে জান্নাত আরেক হাতে জাহান্নাম দেখাবে কিন্তু মুমিনরা স্বচক্ষে জান্নাত-জাহান্নাম দেখেও তাকে বিশ্বাস করবে না

রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ

وَإِنَّ مِنْ فِتْنَتِهِ أَنَّ مَعَهُ جَنَّةً وَنَارًا فَنَارُهُ جَنَّةٌ وَجَنَّتُهُ نَارٌ

«দাজ্জালের অনাসৃষ্টির মধ্যে একটি এই যে, তার সাথে জান্নাত জাহান্নাম থাকবে তবে তার জাহান্নাম হবে জান্নাত এবং তার জান্নাত হবে জাহান্নাম» [ইবনু মাজাহ]

মেরাজের সংবাদ শুনার পর আবু বকর (রা.) কোন বোধগম্যব্যাখ্যা চেয়েছিলেন? নাকি শুনা মাত্রই বিশ্বাস করে নিয়েছেন?

তারপরও আমরা স্বভাবতই কৌতুহলী হয়ে কিছু বিষয় জানতে চাই যেমন, সমতল পৃথিবীতে রাত-দিন কিভাবে হয়? সমতল পৃথিবীতে ঋতুপরিবর্তন কিভাবে হয়? বুরুজ বা কক্ষপথ কি? বৃষ্টি কিভাবে নাযিল হয়? কম্পাস কিভাবে কাজ করে? দূরের জিনিস অদৃশ্য হয়ে যায় কেন? ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে থাকছে এই বয়ের দ্বিতীয় খন্ড..

সাথে আরেকটি মঝার বিষয় থাকবে আর তা হলো কল্প-বিজ্ঞানের পোস্টমর্টেম..

 

ওয়ামা তাওফীকী ইল্লা বিল্লাহ

°°°°°°

আল্লাহুম্মা সাল্লি আ'লা মুহাম্মাদ

 

 

 

 

 

 

 

  

নাস্তিকদের গোলাকার থিউরিকে পিটিয়ে চেপ্টা বানানো হবে ইনশাআল্লাহ...

সমতল পৃথিবীর মানচিত্র, এই মানচিত্র অনুসারেই বিমান চলাচল করে..

Comments

  1. আচ্ছা পৃথিবী সমতল হলেতো সব জায়গায় রাত দিন সমান হওয়ার কথা ছিল কিন্তু এরকম হয়না কেন??

    ReplyDelete
    Replies
    1. সূর্য পৃথিবী থেকে ছোট। তাই এমনটা হয়না।

      Delete

Post a Comment

Popular posts from this blog

ইখওয়ান-আস সাফা: মধ্যযুগে জ্ঞানচর্চার গুপ্ত সংগঠন

স্যাটানিস্ট নিউটন ও তার কথিত গ্রাভিটির ব্যাবচ্ছেদ: