পবিত্র কাবা পৃথিবীর কেন্দ্রবিন্দু এবং প্রথম জমিন:
Article-1
আল্লাহ
তাআলা সৃষ্টির সূচনা থেকেই পবিত্র কাবা শরিফকে তাঁর মনোনীত বান্দাদের
মিলনমেলা হিসেবে কবুল করেছেন। পবিত্র কাবা পৃথিবীতে রাব্বুল আলামিন মহান আল্লাহর
জীবন্ত নিদর্শন।
ভৌগোলিকভাবেই পৃথিবীর মধ্যস্থলে পবিত্র কাবার
অবস্থান, যা পৃথিবীর কেন্দ্রস্থল হিসেবে বিবেচিত। এ বিষয়ে পিএইচডি করেছেন ড.
হুসাইন কামাল উদ্দীন আহমদ। তার থিসিসের শিরোনাম হলো—‘ইসকাতুল কুররাতিল আরধিয়্যা
বিন্ নিসবতে লি মাক্কাতিল মুকাররামা।’ (মাজাল্লাতুল বুহুসুল ইসলামিয়া, রিয়াদ :
২/২৯২)
ওই থিসিসে তিনি প্রাচীন ও আধুনিক
দলিল-দস্তাবেজের আলোকে এ কথা প্রমাণ করেছেন যে পবিত্র কাবাই পৃথিবীর মেরুদণ্ড ও
পৃথিবীর মধ্যস্থলে অবস্থিত। ইসলামের রাজধানী হিসেবে পবিত্র কাবা শরিফ একটি
সুপরিচিত নাম। পানিসর্বস্ব পৃথিবীতে মাটির সৃষ্টি এ পবিত্র কাবাকে কেন্দ্র করেই।
উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাকেন্দ্রের
পরিচালক ড. খালিদ বাবতিনের গবেষণায় দেখা গেছে, সৌদি আরবে অবস্থিত পবিত্র কাবাই
পৃথিবীর কেন্দ্রবিন্দু। (আল আরাবিয়া : ২৩ জুলাই, ২০১২)
আরেকটি বিষয় হলো, বছরের বিশেষ একটি দিন দুপুরে
সূর্য ঠিক মাথার ওপর থাকে। তখন পবিত্র কাবা বা মক্কায় অবস্থিত কোনো অট্টালিকায়
ছায়া দৃষ্টিগোচর হয় না। যেমন-২০১৪ সালের ২৮ মে দুপুর ১২টা ১৮ মিনিটে সূর্য ছিল
পবিত্র কাবার ঠিক মাথার ওপর। পৃথিবীর আর কোথাও এমনটি হয় না।
পবিত্র কাবাগৃহের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, তা
পৃথিবীর সর্বপ্রথম ও সুপ্রাচীন ঘর। পবিত্র কোরআনের ভাষায়, ‘নি:সন্দেহে সর্বপ্রথম
ঘর, যা মানুষের জন্য নির্ধারিত হয়েছে, সেটিই হচ্ছে এ ঘর, যা বাক্কায় (মক্কা
নগরীতে) অবস্থিত।’ (সূরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৯৬)
মাটিতে রূপান্তর হওয়ার আগে পবিত্র কাবা সাদা
ফেনা আকারে ছিল। সে সময় পৃথিবীতে পানি ছাড়া কিছু ছিল না। মহান আল্লাহর আরশ ছিল
পানির ওপর। হাদিসের ভাষ্য মতে, পবিত্র কাবার নিচের অংশটুকু পৃথিবীর প্রথম জমিন।
বিশাল সাগরের মাঝে এর সৃষ্টি। ধীরে ধীরে এর চারপাশ ভরাট হতে থাকে। সৃষ্টি হয় একটি
বিশাল মহাদেশের। এক মহাদেশ থেকেই সৃষ্টি হয় অন্য সব মহাদেশ।
মাটি বিছানোর পর জমিন নড়তে থাকে। হেলতে থাকে। এর
জন্য মহান আল্লাহ তাআলা পাহাড় সৃষ্টি করেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি পৃথিবীতে সুদৃঢ়
পর্বত স্থাপন করেছেন, যাতে পৃথিবী তোমাদের নিয়ে আন্দোলিত না হয় (হেলে না যায়)।’
(সূরা : নাহল, আয়াত : ১৫)
++++++++++++
Article-2
যে কারণে পৃথিবীর কেন্দ্রতে অবস্থিত পবিত্র কাবা শরীফ
ইসলাম ডেস্ক : মুসলমানদের কিবলা পবিত্র কাবাঘর। হজের মৌসুমে প্রতিবছর লাখ লাখ মুসলমান কাবাঘর তাওয়াফ করতে মক্কায় গমন করেন। পবিত্র কোরাআন ও হাদিসের ব্যখ্যায় পৃথিবীর কেন্দ্রস্থলে মক্কা নগরের অবস্থান হওয়ায় ‘বায়তুল্লাহ’ বা ‘কাবাঘর’ মক্কাতেই স্থাপন করা হয়। আল্লাহতায়ালার নির্দেশে ফেরেশতারা প্রথম দুনিয়ায় কাবাগৃহ নির্মাণ করে এখানে ইবাদত করেন। কাবাঘরটি আল্লাহর আরশে মুয়াল্লার ছায়াতলে সোজাসুজি সপ্তম আসমানে অবস্থিত মসজিদ বাইতুল মামুরের আকৃতি অনুসারে ভিত্তিস্থাপন করা হয়। আল্লাহতায়ালা কাবাগৃহকে মানবজাতির ইবাদতের কেন্দ্রস্থলরূপে নির্দিষ্ট করেন।
মুসলিম মানবজাতির ইবাদতের কেন্দ্রস্থল কাবা শরীফ পৃথিবীর ঠিক কেন্দ্রতেই অবস্থিত। কিন্তু বর্তমান সময়ে জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রসারের ফলে অনেকেই এই বিষয়টিকে উড়িয়ে দিতে চান।
পবিত্র কাবা শরীফের অবস্থান ও সৃষ্টিকাল নিয়ে ইসলামের ব্যখ্যা
বেহেশত থেকে দুনিয়ায় পাঠানোর পর আদি মানব-মানবী হজরত আদম (আ.) ও হজরত হাওয়া (আ.) ইবাদতের জন্য একটি মসজিদ প্রার্থনা করেন। আল্লাহতায়ালা তাদের দোয়া কবুল করে কাবাগৃহকে ইবাদতের কেন্দ্র হিসেবে নির্ধারণ করে দেন। এরপর হজরত নূহ (আ.)-এর যুগের মহাপ্লাবনে কাবা শরিফ ধসে যায়। পরে আল্লাহর হুকুমে হজরত ইবরাহিম (আ.) তার পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)-কে সঙ্গে নিয়ে কাবাগৃহের পুনর্নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেন। আল্লাহতায়ালার নির্দেশে আল্লাহর ঘর পবিত্র কাবা শরিফের নির্মাণ হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর জীবনের অমর কীর্তি ও অন্যতম অবদান।
বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তি পবিত্র কাবাঘর পুনঃনির্মাণের সৌভাগ্য অর্জন করলেও একমাত্র হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর নির্মাণের কথা আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে কারিমের অংশ বানিয়ে কিয়ামত পর্যন্ত মুসলিম উম্মাহর জন্য সংরক্ষিত করেছেন।
কোরআনে কারিমে ওই ঘটনাটি খুবই চিত্তাকর্ষক ভঙ্গিতে উপস্থাপন করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘স্মরণ করো, যখন ইবরাহিম ও ইসমাঈল কাবাগৃহের ভিত্তি স্থাপন করেছিল। তারা দোয়া করেছিল, হে পরওয়ারদেগার! আমাদের এ আমলটুকু কবুল করো। নিশ্চয়ই তুমি শ্রবণকারী, সর্বজ্ঞ। ওহে পরওয়ারদেগার! আমাদের উভয়কে তোমার আজ্ঞাবহ করো এবং আমাদের বংশধর থেকে একটি অনুগত জাতি সৃষ্টি কর। আমাদের হজের রীতিনীতি বলে দাও এবং আমাদের ক্ষমা করো। নিশ্চয়ই তুমি তওবা কবুলকারী, দয়ালু। হে আমাদের প্রভু! এ ঘরের পড়শিদের মধ্য থেকে একজন রাসূল পাঠাও, যিনি তাদের কাছে তোমার আয়াতগুলো পাঠ করবেন। তাদের কিতাব ও হেকমত শিক্ষা দেবেন এবং তাদের পবিত্র করবেন। নিশ্চয়ই তুমি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ -সূরা বাকারা : ১২৭-১২৯
কাবাগৃহের নির্মাণ কোনো সাধারণ ঘটনা নয়। পৃথিবীর ইতিহাসে এর চেয়ে মর্যাদাপূর্ণ বিষয় আর কিছুই হতে পারে না। কাবা নির্মাণের সময় হজরত ইবরাহিম (আ.) যে দোয়া করেছিলেন সেগুলো যত্নের সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে। দুনিয়ার মানুষের স্বভাব হলো, সমাজে বা ধর্মীয় কাজে সামান্য অবদান রেখে মানুষের সামনে তা বারবার উল্লেখ করে এবং আত্মপ্রশংসায় ডুবে যায়। অথচ সরাসরি আল্লাহ
তায়ালার ঘর নির্মাণ করছেন, তবুও তার মনে এক বিন্দু অহঙ্কার নেই। ছিল বিনয়পূর্ণ মিনতি। বিনয়াবনত কণ্ঠে বারবার তিনি বলেছেন, ‘হে আল্লাহ! মেহেরবানি করে আমাদের এ খেদমতটুকু কবুল করে নাও।’ দোয়ার দ্বিতীয় বাক্যে বলেছেন, ‘হে প্রভু! তুমি আমাদের উভয়কে তোমার আজ্ঞাবহ করো।’
+++++++++
Article-3
কাবা কি পৃথিবীর ভৌগোলিক কেন্দ্র?
পৃথিবির হজ্জ্ব, মুসলিম মিলন কেন্দ্র কাবাঘর। বৈজ্ঞানিক সৃষ্টি কেন্দ্র
'Golden ratio', পৃথিবির এই গোল্ডেন রেশিও কাবাশরীফ, মক্কা,সৌদিআরব।
ভৌগোলিক অবস্থানের দিক থেকে কাবা পৃথিবীর কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত। পৃথিবীর মধ্যস্থলে কাবার অবস্থান।
বৈজ্ঞানিকভাবে আমরা জানি যে, বছরের একটি বিশেষ দিনে একটি বিশেষ সময়ে (মধ্যাহ্নে) সূর্য কাবা শরিফের ঠিক মাথার ওপরে অবস্থান করে। তখন কাবা শরিফ বা মক্কা শরিফে অবস্থিত কোনো অট্টালিকা বা কোনো স্থাপনারই ছায়া চোখে পড়ে না। পৃথিবীর অন্য কোনো স্থানে এরূপ ঘটে না। এর দ্বারা প্রমাণিত হয়, পবিত্র কাবা ভূমণ্ডলের ঠিক মধ্যস্থলে অবস্থিত।
ভূপৃষ্ঠের কেন্দ্রবিন্দু হওয়ায় কাবাকে পৃথিবীর কেন্দ্র বা হৃদয় বলা যায়। মানুষের হৃৎপিণ্ডকে যেমন হৃদয় বলা হয়, পৃথিবীর কেন্দ্রবিন্দুকেও তেমনি সঙ্গতভাবেই পৃথিবীর হৃদয় বলে ভিহিত করা চলে। এটা হলো একধরনের বৈজ্ঞানিক বা বস্তুগত ধারণা, যে জন্য কাবাকে পৃথিবীর হৃৎপিণ্ড হিসেবে অভিহিত করা যায়।
মহান স্রষ্টা এক এবং তাঁর কোনো অংশীদার নেই। তিনি সর্বজ্ঞ ও সর্বমতার অধিকারী। তিনি
স্রষ্টা আর বাকি সবই তাঁর সৃষ্টি। সমগ্র বিশ্ব সৃষ্টির পর তিনি তাঁর নিয়ন্ত্রণ, রণাবেণ ও প্রতিপালন করে চলেছেন। এক্ষেত্রে তিনি কারো মুখাপেী নন। মহাবিশ্বের চন্দ্র-সূর্য-গ্রহ-তারা-নত্র ইত্যাদি
সবই তাঁর নির্দেশ ও নিয়ন্ত্রণের অধীন। অর্থাৎ যিনি সৃষ্টি করেছেন, সৃষ্টিজগতের সব কিছুই
একমাত্র তাঁর হুকুম-নির্দেশই মেনে চলছে। বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় এটাকে কথিত মাধ্যাকর্ষণ আর
ইসলামের পরিভাষায় এটাই একত্ববাদ, অর্থাৎ স্রষ্টার প্রতি সৃষ্টির নিঃসঙ্কোচ আত্মসমর্পণ বা আনুগত্য।
আদি মানব আদম আ: ও হাওয়া আ:-কে সৃষ্টির পরমহান আল্লাহ জান্নাতে বসবাসের অনুমতি দেন। জান্নাতের সব নিয়ামত প্রদান করে শুধু একটিমাত্র বৃরে নিকটবর্তী হতে তাদেরকে নিষেধ করা হয়। কিন্তু শয়তানের প্ররোচনায় কোনো এক দুর্বল মুহূর্তে আদম-হাওয়া আ: উভয়েই আল্লাহর হুকুম বিস্মৃত হয়ে ওই নিষিদ্ধ বৃরে নিকটবর্তী হয়ে সে বৃরে ফল আস্বাদন করেন। আল্লাহর নিষেধ অমান্য করায় আল্লাহ তাদের ওপর অসন্তুষ্ট হন এবং শাস্তিস্বরূপ তাদেরকে জান্নাত থেকে বহিষ্কার করে দুনিয়ায় প্রেরণ করেন।
এর দ্বারা মানুষের কৃতকর্মের ফল মানুষকে যে ভোগ করতে হয়, সে শিাই মহান সৃষ্টিকর্তা
মানবজাতিকে প্রদান করেছেন। এ পবিত্র স্থানে আদি মানব ও প্রথম নবী আদম আ: বসতি স্থাপন করেছিলেন এবং এ স্থানই আখেরি ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল ও সর্বোত্তম মানুষ মুহাম্মদ সা:-এর প্রিয় জন্মভূমি। মক্কা নগরীতে বায়তুল্লাহ শরিফ বা পবিত্র কাবা অবস্থিত। ‘বায়তুল্লাহ’ অর্থ আল্লাহর ঘর। কাবা শরিফ দুনিয়ার প্রাচীনতম ও পবিত্রতম ইবাদতগাহ। আদি মানব আদম আ: দুনিয়ায় আসার পর আল্লাহর ইচ্ছায় ফেরেশতা জিব্রাইল আ: কর্তৃক দেখিয়ে দেয়া নির্দিষ্ট স্থানে ইবাদতগৃহ নির্মাণ করেন। দুনিয়ায় এটাই প্রথম মসজিদ, যা ‘বায়তুল্লাহ’ বা কাবা শরিফ। আদম আ: ও তার বংশধরগণ এ ঘরেই সালাত বা নামাজ আদায় করতেন। পরে নুহ আ:-এর সময় যে মহাপ্লাবন হয়, তাতে কাবাগৃহ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। পরবর্তীকালে আল্লাহর হুকুমে মুসলিম মিল্লাতের পিতা ইব্রাহিম আ: তার পুত্র ইসমাইল আ:-কে সাথে করে ওই একই স্থানে কাবাগৃহ পুনর্নির্মাণ করেন। কাবাগৃহের অদূরে অবস্থিত ‘জাবালুল কাবা’ পর্বত থেকে পাথর সংগ্রহ করে সেগুলো একটির পর একটি স্থাপন করে পৃথিবীর ওই প্রথম ইবাদতগাহ পুনর্নির্মিত হয়।
ওই সময় থেকেই হজের রেওয়াজ চালু হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুসলমানগণ প্রতি
বছর জিলহজ মাসে কাবা শরিফে সমবেত হয়ে হজ পালন করেন।
সারা দুনিয়ার মুসলমান পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার সময় কাবাকে কেবলা, অর্থাৎ কাবার দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করে। হজ ও ওমরা পালনের সময় হাজীগণ সাতবার কাবা শরিফ তাওয়াফ করেন। কাবার অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো এটা গোলাকারভাবে নির্মিত। গোলাকারভাবে নির্মিত হওয়ার কারণ হলো, এটি পৃথিবীর কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত এবং এটা মুসলিম
মিল্লাতের কেবলা। পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে কাবার দিকে মুখ করে নামাজ আদায়
ও সেজদা করতে হয়। কাবা শরিফে নামাজ আদায়কারীগণও কাবার চারপাশ ঘিরে কাবার দিকে মুখ করে দাঁড়ান। কাবাকে বায়তুল্লাহ শরিফ বা আল্লাহর ঘর বলা হয়। মহান স্রষ্টার আরশের নিচেই এর অবস্থান। এ পবিত্র স্থানকে স্বয়ং আল্লাহ শান্তি ও নিরাপত্তার স্থান হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন।
অতএব, এর মর্যাদা ও গুরুত্ব অপরিসীম। মুসলিম- হৃদয়ে কাবার অবস্থান হৃৎপিণ্ডের মতো, তার অনুভবও হৃদস্পন্দনের মতোই গভীর ও অতলস্পর্শী। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহর
ঘোষণা : ওরা কি দেখে না আমি হারমকে (কাবার চতুষ্পার্শ্বস্থ নির্ধারিত এলাকাকে হারম বলা হয়) নিরাপদ স্থান করেছি।’ (সূরা আনকাবুত, আয়াত : ৬৭আংশিক)।
কাবার মর্যাদা, বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহ বলেন : ‘মানবজাতির জন্য সর্বপ্রথম যে গৃহ
প্রতিষ্ঠিত হয় তা তো বাক্কায় (মক্কার অপর নাম বাক্কা) এটা বরকতময় ও বিশ্বজগতের দিশারী।
এতে অনেক সুস্পষ্ট নিদর্শন আছে, (যেমন) মাকামে ইব্রাহিম, এবং যে কেউ সেখানে
প্রবেশ করে সে নিরাপদ। মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে, আল্লাহর
উদ্দেশ্যে ওই গৃহে গিয়ে হজ করা তার ওপর ফরজ এবং কেউ প্রত্যাখ্যান করলে (সে
জেনে রাখুক) আল্লাহ বিশ্বজগতের কারো মুখাপেী নন।’ (সূরা আল ইমরান, আয়াত : ৯৬-৯৭)।
আল কুরআনে অন্য আরেকটি আয়াতে আল্লাহ বলেন : ‘সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনগুলোর অন্যতম।’ (সূরা বাকারা, ১৫৮ নম্বর আয়াতের প্রথমাংশ)। শুধু ভূতাত্ত্বিক দিক থেকে পবিত্র মক্কা নগরী পৃথিবীর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত তাই নয়; ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও তাৎপর্যের দিক থেকেও মক্কা নগরী মানবসভ্যতার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত। আদম আ: থেকে আখেরি নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা: পর্যন্ত পৃথিবীতে যত নবী-রাসূলের আগমন ঘটেছে, তারা সবাই কোনো না কোনো সময় পবিত্র মক্কা নগরীতে এসে বায়তুল্লাহ শরিফ তাওয়াফ করেছেন।
হাদিস শরিফে উল্লেখ আছে, ‘কাবা শরিফে নামাজ পড়ার সাওয়াব সাধারণ মসজিদে পড়ার তুলনায় এক লাখ গুণ বেশি।’ কাবা শরিফে মহান স্রষ্টার উদ্দেশ্যে মস্তক অবনত করে সিজদা করার সময় মনে হয়, এটাই সে স্থান যা পৃথিবীর হৃদয় বা কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিচিত, মহান স্রষ্টার আরশের নিচে অবস্থিত এ স্থানে আদি মানবের প্রথম বসতি গড়ে উঠেছিল, মহান স্রষ্টার নির্দেশে তাঁর আরশের ছায়ার নিচে মানবজাতির প্রথম ইবাদতগাহ (বায়তুল্লাহ শরিফ) নির্মিত হয়, এটাকেই কেবলা করে সমগ্র মুসলিম জাতি মহান স্রষ্টার উদ্দেশ্যে সিজদাবনত হয়।
পৃথিবির গোল্ডেন রেশিও কেন্দ্র কাবা?
এই বিশ্ব
ব্যবস্থায় প্রতিটি বস্তুর নিখুঁত অবকাঠামোগত মান হচ্ছে ১.৬১৮
পৃথিবীতে যা কিছু আছে সব কিছুর মধ্যেই গোল্ডেন রেশিও
(Golden Ratio) বা স্বর্গীয় অনুপাতটি আছে।
মানুষের মুখের দৈর্ঘ্যের সাথে নাকের দৈর্ঘ্যের অনুপাত ১.৬১৮(প্রায়)।
মানুষের আঙ্গুলের অগ্রভাগ থেকে কুনুইয়ের দৈর্ঘ্য এবং কব্জি থেকে কুনুইয়ের দৈর্ঘ্যের অনুপাত ১.৬১৮(প্রায়)।
মানুষের নাভি থেকে পায়ের পাতার আঙ্গুলের ডগা পর্যন্ত এবং নাভি থেকে মাথা পর্যন্ত অনুপাত ১.৬১৮(প্রায়)।
এভাবে মানবদেহের প্রতিটি অঙ্গই
"গোল্ডেন রেশিও বা স্বর্গীয়" অনুপাতে গঠিত।
শুধু তাই নয়, শামুখের খোলস, ঘুর্ণিঝড়ের ঘূর্ণন, মুরগীর ডিম, বৃক্ষের কান্ড বিন্যাস, মানুষের হৃদপিণ্ড,
DNA, ফুল, মাছ, গাছপালা, গ্রহ-নক্ষত্র ইত্যাদি সবকিছুতেই স্রষ্টা শুধুমাত্র ১.৬১৮ মান ব্যবহার করেছেন। আর সেই অনুপাতই হল “স্বর্গীয় অনুপাত”।
পবিত্র নগরী মক্কার নাম সমগ্র কুরআনে মাত্র একবার উল্লেখিত হয়েছে সুরা আল-ইমরান এর ছিয়ানব্বই আয়াতে।
এই আয়াতে মক্কা শব্দটি উচ্চারিত হওয়া পর্যন্ত বর্ণ সংখ্যা হচ্ছে ২৯ টি এবং সমগ্র আয়াতে
রয়েছে ৪৭ টি বর্ণ।
এখন আমরা যদি উক্ত আয়াতটি লিখে ফাইমেট্রিক্স (ফাইমেট্রিক্স হচ্ছে এক ধরনের সফটওয়্যার যার দ্বারা কোন ছবির গোল্ডেন রেশিও পয়েন্ট মাপা হয়) আর এটাই হচ্ছে গোল্ডেন রেশিও পয়েন্ট Φ এর মান।
এছাড়া, আমরা জানি আল্লাহর ঘর কাবা হজ্জ্বের স্থান মক্কা থেকে উত্তর মেরু ৭৬৩১৬৮ কিমি
এবং মক্কা থেকে দক্ষিন মেরুর দূরত্ব ১২৩৪৮৩২ কিমি। ভাগফল দাড়ায় " ইউনিক গোল্ডেন নাম্বার ১.৬১৮" (প্রায়)
সুতরাং গোল্ডেন রেশিও অনুপাত থেকে আমরা এই সিদ্ধান্তে সহজে আসতে পারি যে, সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা একজন এবং তিনি নিঃসন্দেহে আল্লাহ।
++++++++
Article-4
পৃথিবীর প্রথম মাটির ওপর কাবাঘর
সাগর চৌধুরী, সৌদি আরব থেকে
২২ জুলাই ২০১৯, ১২:১৩ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
মুসলমানরা মনে করেন, পৃথিবীতে মহান রাব্বুল আলামীনের অনন্য নিদর্শন পবিত্র কাবা শরিফ।
ভৌগোলিকভাবে গোলাকার পৃথিবীর মধ্যস্থলে বরকতময় পবিত্র কাবার অবস্থান- এটাও অনেকের জন্য আশ্চর্যজনক বিষয়। কাবাগৃহের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, তা পৃথিবীর সর্বপ্রথম ও সুপ্রাচীন ঘর। কোরআনের ভাষায়, ‘নিঃসন্দেহে সর্বপ্রথম ঘর, যা মানুষের জন্য নির্ধারিত হয়েছে, সেটিই হচ্ছে এ ঘর, যা মক্কা নগরীতে অবস্থিত।’ (সুরা: আল ইমরান, আয়াত: ৯৬)
ইসলামী জ্ঞানের তথ্যমতে পৃথিবীতে ভূমির সৃষ্টি হয় বিশাল সাগরের মাঝে, এর মাঝে মক্কায় অবস্থিত কাবাঘরের স্থলকে কেন্দ্র করেই। তাই, কাবার নিচের অংশটুকু অর্থাৎ কাবাঘরের জমিনটুকু হচ্ছে পৃথিবীর প্রথম মাটি।
ধীরে ধীরে এর চারপাশ ভরাট হয়ে সৃষ্টি হয় একটি বিশাল মহাদেশের। পরে এক মহাদেশ থেকেই সৃষ্টি হয় সাত মহাদেশের। মাটিতে রূপান্তর হওয়ার আগে কাবা সাদা ফেনা আকারে ছিল। সে সময় পৃথিবীতে পানি ছাড়া কিছু ছিল না। আল্লাহর আরশ ছিল পানির ওপর। মাটি বিছানোর পর জমিন নড়তে থাকে। হেলতে থাকে। এর জন্য মহান আল্লাহ পাহাড় সৃষ্টি করেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি পৃথিবীতে সুদৃঢ় পর্বত স্থাপন করেছেন, যাতে পৃথিবী তোমাদের নিয়ে আন্দোলিত না হয় (হেলে না যায়)।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ১৫)। এভাবেই পবিত্র কাবার বরকতে পৃথিবী স্থির হয়ে যায়। ধীরে ধীরে এখানে মানবসভ্যতার গোড়াপত্তন হয়।
সৃষ্টির আদিকাল থেকেই আল্লাহ পবিত্র কাবা শরিফকে তার মনোনীত বান্দাদের মিলনমেলাস্থল হিসেবে কবুল করেছেন । দুনিয়াজুড়ে মুসলমানদের কিবলা এ কাবা শরিফ।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন বন্যা ও শত্রুদের আক্রমণের কারণে বেশ কয়েকবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পবিত্র কাবা শরিফ। তাই বেশ কয়েকবারই ক্ষতিগ্রস্ত কাবাকে পুনঃনির্মাণ করা হয়েছে। সর্বাধিক নির্ভরযোগ্য ঐতিহাসিক তথ্য মতে, কাবাকে এ পর্যন্ত ১২ বার পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। বিভিন্ন বিপর্যয়ের হাত থেকে সংরক্ষণ করতে কাবা শরিফকে সর্বশেষ ১৯৯৬ সালে আধুনিক ও শক্তিশালী প্রযুক্তির প্রয়োগে সংস্কার করা হয়। কাবা পুনঃসংস্কারের সঙ্গে সঙ্গে ১৯৯৬ সালে হাতিমে কাবাও পুনঃনির্মাণ করা হয়।
পবিত্র কাবা শরিফ নির্মাণ-পুনঃনির্মাণে বিভিন্ন যুগে হজরত আদম (আ.), হজরত ইব্রাহিম (আ.), হজরত ইসমাইল (আ.) এবং আখেরি নবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) ও অংশগ্রহণ করেছিলেন। নবী ইব্রাহিমের (আ.) আমল থেকেই মূলত পবিত্র কাবা শরিফ আয়তক্ষেত্র আকৃতির ছিল।
ইসলামের আগমনের পূর্বে কুরাইশরা যখন পবিত্র কাবাকে পুনঃনির্মাণ করে তখন তহবিলের অভাবে পবিত্র কাবা শরিফের পুরো কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি তারা। যে স্থানটি তখন নির্মাণ করতে পারেনি সেই স্থানটিকে বলা হয় ‘হাতিমে কাবা’। এটি কাবারই অংশ। এ কারণে হাতিমে কাবাকে তাওয়াফে অন্তর্ভূক্ত করতে হয়। যা একটি ছোট্ট গোলাকার প্রাচীর দ্বারা চিহ্নিত।
পবিত্র কাবা শরিফের এক কোণে সংযুক্ত ‘হাজরে আসওয়াদ’ কালো পাথরটি আগে আকারে বড় ছিল। বর্তমানে এ পাথরটি ভেঙে ৮ টুকরায় বিভিন্ন সাইজে বিভক্ত। যা একটি সিলভার রংয়ের ফ্রেমে একত্র করে কাবা শরিফের পূর্ব-দক্ষিণ কোণে লাগানো। পাথরটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ তথা বন্যাসহ অনেকবার চুরি ও জালিয়াতির চেষ্টার কারণে অনাকাঙ্খিতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। হাজরে আসওয়াদের প্রথম সিলভার ফ্রেমটি তৈরি করেছিলেন আবদুল্লাহ বিন জুবাইর।
প্রাক ইসলামি যুগ থেকে এখন পর্যন্ত কাবা শরিফের চাবি একটি পরিবারের কাছেই রয়েছে। সম্মানিত এ পরিবারটি হলো বনু তালহা গোত্র। এ গোত্র ১৫ শতাব্দী ধরে এ দায়িত্ব পালন করছে। এটি ওই পরিবারের জ্যৈষ্ঠ সদস্যরা উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত হন।
বছরে দু বার এর পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করা হয়। প্রথমবার করা হয় শাবান মাসে আর দ্বিতীয় বার করা হয় জিলকদ মাসে। এ পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম বনু তালহা তথা আলশিবি পরিবারের লোকেরাই করে থাকেন।
পবিত্র জমজমের পানি, তায়েফ গোলাপ জল এবং বহু মূল্যবান ‘ঊড’ তৈল দিয়ে একটি পরিস্কার মিশ্রণ তৈরি করে তা দিয়েই পবিত্র কাবা শরিফ পরিস্কার করা হয়। পবিত্র নগরী মক্কার গভর্নর এ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে গণ্যমান্য ব্যক্তিদেরকে আমন্ত্রণ জানান।
একটা সময়ে পবিত্র কাবা শরিফের দরজা সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এ পবিত্র ঘরে প্রবেশ করে ইবাদাত-বন্দেগিও করতো। হজের সময় হাজিরা ইচ্ছা করলে এতে প্রবেশ করতে পারতো। কিন্তু হাজিদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় এ ঘরের নিরাপত্তার জন্যই এখন কেউ ইচ্ছা করলেও অভ্যন্তরে যেতে পারে না। এটা এখন মাঝে মাঝে বিশেষ বিশেষ মেহমানদের জন্য খোলা হয়।
পবিত্র কাবা শরিফ সম্পর্কে অবিশ্বাস্য হলেও চিরন্তন সত্য যে, এর চারদিকে ঘোরা অর্থাৎ তাওয়াফ কখনো বন্ধ হয় না। তবে হ্যাঁ, নামাজের সময় যখন মুয়াজ্জিন জামাতের জন্য ইক্বামাত দেন ঠিক নামাজের সময় তাওয়াফকালীন অবস্থায় যে যেখানে থাকে সেখানে দাঁড়িয়েই নামাজে অংশগ্রহণ করে। নামাজের সালাম ফিরানোর সঙ্গে সঙ্গে আবার তাওয়াফ শুরু হয়ে যায়।
উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাকেন্দ্রের পরিচালক ড. খালিদ বাবতিনের গবেষণায় দেখা গেছে, সৌদি আরবে অবস্থিত পবিত্র কাবাই পৃথিবীর কেন্দ্রবিন্দু। (আল আরাবিয়া : ২৩ জুলাই, ২০১২)
আরেকটি বিষয় হলো, বছরের বিশেষ একটি দিন দুপুরে সূর্য ঠিক মাথার ওপর থাকে। তখন পবিত্র কাবা বা মক্কায় অবস্থিত কোনো অট্টালিকায় ছায়া দৃষ্টিগোচর হয় না। যেমন - ২০১৪ সালের ২৮ মে দুপুর ১২টা ১৮ মিনিটে সূর্য ছিল পবিত্র কাবার ঠিক মাথার ওপর। পৃথিবীর আর কোথাও এমনটি হয় না।
বর্তমানে কাবাঘরের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সৌদি রাজপরিবারের। সৌদী সরকারের প্রধান (বাদশাহ) কাবা শরীফের মোতাওয়াল্লির দায়িত্বে থাকেন।
Source:
News paper & Islamic Blog
Comments
Post a Comment