ইসলামের দৃষ্টিতে বজ্র ও বিদ্যুৎ:
এ সংক্রান্ত চারটি আর্টিকেল ও করণীয় - বর্জনীয় দেয়া হলো:
Article - 1
বজ্রপাতের মূল কারণ কী, তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, বজ্রপাত আল্লাহ তাআলার শক্তির নিদর্শনগুলোর একটি, যা তিনি তাঁর প্রিয় বান্দাদের সাবধান করার জন্য রেখেছেন। তিনি চাইলেই যে কাউকে এর মাধ্যমে যেকোনো সময় শাস্তি দিতে পারেন। যদিও সব ক্ষেত্রে পরম করুণাময় আল্লাহ তাআলা এমনটি করেন না। যা আল্লাহ তাআলা নিজেই পবিত্র কোরআনে কারিমে ইরশাদ করেছেন, ‘বজ্র তাঁরই তাসবিহ ও হামদ জ্ঞাপন করে এবং তাঁর ভয়ে ফেরেশতাগণও (তাসবিহরত রয়েছে)। তিনিই গর্জমান বিজলি পাঠান, তারপর যার ওপর ইচ্ছা একে বিপদরূপে পতিত করেন। আর তাদের (অর্থাৎ কাফিরদের) অবস্থা এই যে তারা আল্লাহ সম্পর্কেই তর্কবিতর্ক করছে, অথচ তাঁর শক্তি অতি প্রচণ্ড। (সুরা রা’দ, আয়াত : ১৩)
মানুষের কাজকর্মই বজ্রপাতের মূল কারণ। খোদাদ্রোহিতা, জিনা, ব্যভিচার, পরকীয়া, অন্যায়-অত্যাচার দুনিয়ায় যত বাড়বে, ততই দুনিয়ার বুকে বিভিন্ন ধরনের দুর্যোগ বাড়বে। কিন্তু কী করব! আমরা তো অতি আধুনিক হতে গিয়ে আল্লাহকে নিয়ে কটাক্ষ করা শিখে গেছি। নিজেদের জ্ঞানী হিসেবে জাহির করার জন্য রাসুলের বিরোধিতা করতে আমরা ভীষণ পছন্দ করি। (নাউজুবিল্লাহ্!) এককথায় বলতে গেলে ধর্মকে কটাক্ষ করাটা এখন ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। বলা যায়, এখন খোদাদ্রোহিতার ট্রেন্ড পার করছি আমরা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মানুষ গড়ার কারিগর হওয়ার দাবিদাররাও এই ঘৃণ্য কাজে আত্মনিয়োগ করে ফেলেছেন।
উপরোক্ত আয়াতটির শেষাংশে [আর তাদের (অর্থাৎ কাফিরদের) অবস্থা এই যে তারা আল্লাহর সম্পর্কেই তর্কবিতর্ক করছে, অথচ তার শক্তি অতি প্রচণ্ড।] এ ধরনের অতি আপডেট ব্যক্তিদের দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে।
+++++++++++++++++
Article - 2
বজ্রপাতের প্রচণ্ড গর্জন এবং আলোর ঝলকানি মহান আল্লাহ তাআলার মহাশক্তির বহিঃপ্রকাশ। বজ্রপাতের গর্জন ও আলোর ঝলকানি মানুষের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিশেষ সতর্কবাণী।
বজ্রপাতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয়বান্দাদের সাবধান করার জন্য বর্ষণ করে থাকেন। তিনি চাইলে এ বজ্রপাতের মাধ্যমে তাঁর অবাধ্য সীমালংঘনকারী বান্দাদেরকে শাস্তি প্রদান করতে পারেন।
মহান আল্লাহ তাআলা বজ্রপাত প্রসঙ্গে কুরআনে ইরশাদ করেন, ‘মেঘের গর্জন তাঁর প্রশংসা সহকারে পবিত্রতা বর্ণনা করে এবং ফেরেশতারা তাঁর ভয়ে প্রকম্পিত হয়ে তাসবিহ পাঠ করে; তিনি বজ্রপাত করেন এবং (অনেক সময়) তাকে যার ওপর চান, ঠিক সে যখন আল্লাহ সম্পর্কে বিতণ্ডায় লিপ্ত তখনই নিক্ষেপ করেন। অথচ আল্লাহ তাআলার শক্তি কৌশল ও শক্তি বড়ই জবরদস্ত।’ (সুরা রা’দ : আয়াত ১৩)
পথহারা মানুষের জন্য মেঘের গর্জন ও বিদ্যুৎচমক শিক্ষণীয় বিষয়। কারণ মেঘের গর্জন এ কথা প্রকাশ করে যে, আল্লাহ তাআলা যে বায়ু পরিচালিত করেন, বাষ্প ও মেঘমালাকে একত্র করেন। এ বিদ্যুৎকে বৃষ্টির মাধ্যম বা উপলক্ষ বানান এবং পৃথিবীর সৃষ্টিকূলের জন্য তিনি পানির ব্যবস্থা করেন।
তিনি যাবতীয় ভুল-ত্রুটি-অভাব মুক্ত। তিনি জ্ঞান ও শক্তির দিক থেকে পূর্ণতার অধিকারী। পশুর মতো নির্বোধ শ্রবণ শক্তির অধিকারীতো এ মেঘের মধ্যে শুধুই গর্জনই শুনতে পায় কিন্তু বিচার-বুদ্ধি সম্পন্ন সজাগ শ্রবণ শক্তির অধিকারী ব্যক্তিরা মেঘের গর্জনের মধ্যে আল্লাহর অসীম ক্ষমতার নির্দশন দেখতে পান।
আরবের মুশরিকরা আল্লাহর উপাসনা বাদ দিয়ে ফেরেশতাদেরকেও দেবতা হিসেবে গণ্য করতো। মানুষের আল্লাহদ্রোহীতা ও জুলুম-অত্যাচার, জ্বিনা-ব্যাভিচারসহ যাবতীয় মনবতা বিবর্জিত অন্যায় কাজেই এ বজ্রপাতের মূল কারণ।
এ সব বজ্রপাত ও বিদ্যুৎ চমক থেকে বেঁচে থাকতে হলে অবশ্যই মানুষকে দুনিয়ার যাবতীয় অন্যায় পরিত্যাগ করতে হবে। নিজেদের গোনাহ থেকে খাঁটি তাওবা করতে হবে। যারা খাঁটি তাওবার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার দিকে ফিরে আসবে তারাই বজ্রপাত থেকে মুক্ত থাকবে।
হাদিসে এসেছে, ‘হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মহা পরাক্রমশালী আল্লাহ বলেছেন, আমার বান্দারা যাদ আমার বিধান যথাযথ মেনে চলত, তবে আমি তাদেরকে রাতের বেলায় বৃষ্টি দিতাম আর সকাল বেলায় সূর্য (আলো) দিতাম এবং কখনও তাদেরকে বজ্রপাতের আওয়াজ শুনাতাম না।’ (মুসনাদে আহমদ)
কুরআন এবং হাদিসের বর্ণনায় এ কথা সুস্পষ্ট যে, বজ্রপাত পরাক্রমশালী আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে এক মহা দুর্যোগ। আল্লাহ প্রদত্ত এ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বেঁচে থাকতে হলে কুরআন হাদিসের নির্দেশ পালনের বিকল্প নেই।
পত্র-পত্রিকায় দৃষ্টি দিলে দেখা যায়, কোথাও না কোথাও বজ্রপাতে প্রাণহানি ঘটেছে। আবার একই সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বজ্রপাতের ঘটনা ঘটছে। যা মানুষের জন্য তাদের অবাধ্যতার সতর্কবাণী। কুরআনের বিধান পালন এবং প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শেখানো তাসবিহ ও দোয়া পাঠে বজ্রপাতের দুর্যোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
বজ্রপাতসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে আত্মরক্ষায় প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর উম্মতদের বিভিন্ন দোয়া ও তাসবিহ শিখিয়েছেন।
অন্য রেওয়ায়েতে এসেছে-
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে জুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নিশ্চয় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মেঘের গর্জন শুনতেন তখন কথাবার্তা ছেড়ে দিতেন এবং এ আয়াত পাঠ করতেন-
অর্থ : আমি সেই সত্তার পবিত্রতা ঘোষণা করছি, যার পবিত্র ঘোষণা করছে মেঘের গর্জন তাঁর প্রশংসার সাথে। আর ফেরেশতাকুল প্রশংসা করে ভয়ের সাথে। (মুয়াত্তা মালেক, মিশকাত)
+++++++++++++
Article - 3
মেঘের গর্জন ও বজ্রপাত প্রকৃতির স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। মহান আল্লাহ তাআলা প্রকৃতির এ নিয়ম নির্ধারণ করে দিয়েছেন। বজ্র-নিনাদের মাধ্যমে প্রকৃতি মহান আল্লাহর একচ্ছত্র আধিপত্য, তাঁর পরিপূর্ণতা ও মহিমা বর্ণনা করে থাকে। এছাড়াও মেঘমালা সৃষ্টি ও বৃষ্টিপাত ঘটানোর দায়িত্বে নিয়োজিত ফেরেশতারা মেঘের গর্জনের সৃষ্ট আতঙ্কে আরো বেশি আল্লাহর মহিমা ও গুণকীর্তন করেন।
পবিত্র
কোরআনে
আল্লাহ
তাআলা
ইরশাদ
করেন,
‘তার
(আল্লাহর) সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা
করে
বজ্রধ্বনি এবং
ফেরেশতারাও, সভয়ে
(তাঁর
তাসবিহ
পাঠ
করে)। তিনি বজ্রপাত করেন
এবং
যাকে
ইচ্ছা
তা
দিয়ে
আঘাত
করেন।
তার পরও তারা আল্লাহ সম্পর্কে বিতণ্ডা করে। অথচ তিনি মহাশক্তিশালী। ’ (সুরা রাদ, আয়াত : ১৩)
বজ্রপাতের কারণে প্রলয়ঙ্করী শব্দ হয়। বজ্রপাত কখনো কারো প্রাণ কেড়ে নেয়। আবার কখনো কারো কোনো ক্ষতি হয় না। এসব আল্লাহর নিরঙ্কুশ অস্তিত্বের প্রমাণ বহন করে।
বৃষ্টি আল্লাহর রহমতের নিদর্শন। কিন্তু কখনো আবার বৃষ্টি আজাবেও রূপ নিতে পারে। বৃষ্টির কারণে ও প্রাকৃতিক বৈরিতার কারণে অনেকে কষ্টে পড়তে পারেন। নানা ধরনের অসুবিধাও তৈরি হতে পারে। আয়েশা (রা.) বলেন, যখন আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হতো এবং ঝোড়ো বাতাস বইত—তখন রাসুল (সা.) এর চেহারায় চিন্তার রেখা ফুটে উঠত। এই অবস্থা দেখে তিনি এদিক-সেদিক পায়চারি করতে থাকতেন এবং এ দোয়া পড়তে থাকতেন, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরাহা ওয়া খাইরা মা-ফিহা ওয়া খাইরা মা-উরসিলাত বিহি, ওয়া আউজুবিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররি মা-ফিহা ওয়া শাররি মা-উরসিলাত বিহি। ’ অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে এ বৃষ্টির মাধ্যমে প্রেরিত সমূহ কল্যাণ প্রার্থনা করছি, আর এ বৃষ্টির মাধ্যমে প্রেরিত সমূহ বিপদাপদ থেকে পরিত্রাণ চাই। ’ এরপর যখন বৃষ্টি হতো তখন মহানবী (সা.) শান্ত হতেন।
আয়েশা (রা.) আরো বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করেছি যে লোকজন মেঘ দেখলে বৃষ্টির আশায় আনন্দিত হয়ে থাকে, আর আপনি তা দেখে চিন্তিত হয়ে পড়েন?’ এর জবাবে রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমি এ ভেবে শঙ্কিত হই যে বৃষ্টি আমার উম্মতের ওপর আজাব হিসেবে পতিত হয় কি না। কেননা আগের উম্মতদের ওপর এ পদ্ধতিতে (বৃষ্টি বর্ষণের আকারে) আজাব পতিত হয়েছিল। ’ (মুসলিম, হাদিস নং : ৮৯৯)
তাই ঈমানদারদের উচিত, আকাশে বৃষ্টির ভাব দেখলে উল্লিখিত দোয়া পাঠ করা।
অন্যদিকে বজ্রপাত থেকে রক্ষা পেতে মহানবী (সা.) একটি বিশেষ দোয়া পড়তেন। এ দোয়া পাঠ করা হলে ইনশাল্লাহ বজ্রপাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন বজ্রের আওয়াজ শুনতেন তখন এ দোয়া পড়তেন, ‘আল্লাহুম্মা লা-তাক্বতুলনা বিগাজাবিকা ওয়া লা-তুহলিকনা বিআজা-বিকা ওয়া আ-ফিনা-ক্ববলা জা-লিকা। ’ অর্থাৎ হে আল্লাহ, আপনি আমাকে আপনার গজব দিয়ে হত্যা করে দেবেন না এবং আপনার আজাব দিয়ে ধ্বংস করে দেবেন না। এসবের আগেই আপনি আমাকে পরিত্রাণ দিন। (তিরমিজি, হাদিস নং : ৩৪৫০)
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুল (সা.) বজ্রপাতের শব্দ শুনলেই পড়তেন, ‘সুবহানাল্লাজি ইয়ুসাব্বিহুর রা‘অদু বিহামদিহি। ’ অন্য রেওয়ায়েতে আছে, ইবনে আবি জাকারিয়া থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি বজ্রের আওয়াজ শুনে এ দোয়া পড়বে, ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি’, সে বজ্রে আঘাতপ্রাপ্ত হবে না। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ২৯২১৩)
++++++++++++++
উপরোক্ত তিনটি আর্টিকেল মুমিনদের জন্য যথেষ্ট। এর পরেও কিছু মানুষ হয়তো আরেকটু বেশি জানতে চাইবে। তাদের জন্য নিচের আর্টিকেলটি বোনাস হিসেবে দেয়া হলো।
Article - 4
সূরা রা’দ (১৩: ১২-১৩): “তিনিই তোমাদেরকে বিদ্যুৎ দেখান ভয়ের জন্যে এবং আশার জন্যে এবং উক্ষিত করেন ঘন মেঘমালা। তাঁর প্রশংসা পাঠ করে বজ্র এবং সব ফেরেশতা, সভয়ে। তিনি বজ্রপাত করেন, অতঃপর যাকে ইচছা, তাকে তা দ্বারা আঘাত করেন; তথাপি তারা আল্লাহ সম্পর্কে বিতন্ডা করে, অথচ তিনি মহাশক্তিশালী।”
ইবনে আহমদ ইবনে হাম্বল (র) যথাক্রমে ইয়াজিদ ইবনে হারুন, ইব্রাহীম ইবনে সাদ ও সাদ সূত্রে গিফার গোত্রের জনৈক প্রবীণ ব্যক্তি থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (স) কে বলতে শুনেছি: আল্লাহ মেঘ সৃষ্টি করেন, ফলে তা উত্তমভাবে কথা বলে ও উত্তম হাসি হাসে।
মুসা ইবনে উবায়দা ইবনে সাদ ইব্রাহীম (র) বলেন, “মেঘের কথা বলা হলো বজ্র আর হাসি হলো বিজলী “. ইবনে আবু হাতিম বর্ণনা করেন যে, মুহম্মদ ইবনে মুসলিম বলেন, আমাদের নিকট সংবাদ পৌঁছেছে যে, আল-বার্ক এমন একজন ফেরেস্তা, যার চারটি মুখ আছে, মানুষের মুখ, ষাঁড়ের মুখ, শকুনের মুখ ও সিংহের মুখ. সে তার লেজ নাড়া দিলেই তা থেকে বিজলি সৃষ্টি হয়.
ইমাম আহমদ, তিরমিযী, নাসাঈ ও বুখারী (র) কিতাবুল আদবে এবং হাকিম তাঁর মুসতাদরাকে হাজ্জাজ ইবনে আর্তা (র) বর্ণিত সালিমের পিতার সূত্রে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (স) যখন বজ্রধনি শুনতেন তখন বলতেন: “হে আল্লাহ! আমাদেরকে তুমি তোমার গজব দ্বারা বধ করো না ও তোমার আযাব দ্বারা ধ্বংস করো না এবং এর আগেই তুমি আমাদেরকে নিরাপত্তা দান করো.”
ইবনে জারীর (র) আবু হুরায়রা (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (স) বজ্রের আওয়াজ শুনলে বলতেন: “পবিত্র সেই মহান সত্তা, বজ্র যার সপ্রশংস মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা করে”.
মালিক আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (স) বজ্রের আওয়াজ শুনলে কথা-বার্তা ত্যাগ করে বলতেন: পবিত্র সেই সত্তা, বজ্র ও ফেরেস্তাগণ সভয়ে যার প্রশংসা, মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা করে.
তিনি আরও বলতেন: নিশ্চয়ই এটা পৃথিবীবাসীর জন্য এক কঠোর হুঁশিয়ারি।
ইবনে আহমদ (র) আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন: তোমাদের রব বলেছেন: আমার বান্দারা যদি আনুগত্য করতো, তাহলে আমি তাদের জন্য রাতে বৃষ্টি দিতাম আর দিনে সূর্য উদিত করতাম আর তাদেরকে বজ্রের নিনাদ শুনাতাম না. অতএব , তোমরা আল্লাহর জিকির করো. কারণ জিকিরকারীর উপর তা আপতিত হয় না.
তথ্যসূত্রঃ হাফিজ ইবনে কাছীর প্রণীত আল-বিদায়া ওয়ান -নিহায়া কিতাব প্রথম খন্ড
*********************
বজ্রপাত অবস্থায় করণীয়
বজ্রপাত খোদায়ি দুর্যোগ, এর থেকে বেঁচে থাকার কিছু বাহ্যিক করণীয়ও রয়েছে, যা ইদানীংকালে বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। তবে হাদিসের পাতায় চোখ বুলালে দেখা যায়, বজ্রপাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রিয় নবী (সা.) তাঁর উম্মতদের বিভিন্ন দোয়া শিখিয়েছেন। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) তাঁর বাবা থেকে বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) যখন বজ্রের শব্দ শুনতেন তখন বলতেন, ‘আল্লাহুম্মা লা তাকতুলনা বিগজাবিকা ওয়ালা তুহলিকনা বিআজাবিকা ওয়া আ-ফিনা কবলা জালিকা।’ (তিরমিজি : ৩৪৫০)
অন্য রেওয়ায়েতে আছে, হজরত ইবনে আবি জাকারিয়া থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি বজ্রের আওয়াজ শুনে এ দোয়া পড়বে, ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি’, সে বজ্রে আঘাতপ্রাপ্ত হবে না। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ২৯২১৩)
পরিশেষে...
মেঘের গর্জন তথা বজ্রপাত ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো ভয়াবহ শাস্তি থেকে মুক্ত থাকতে আল্লাহ তাআলার বিধান মেনে চলা জরুরি। পাশাপাশি বজ্রপাতের ভয়াবহতা থেকে বেঁচে থাকতে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শেখানো দোয়া ও তাসবিহগুলো পড়া উচিত।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মেঘের গর্জন তথা বজ্রপাতের সময় আল্লাহর প্রশংসা করা, সব ধরণের অন্যায় ও অবাধ্য আচরণ থেকে আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাওয়ার এবং তার বিধান পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
Source: Newspaper,
Islamic blog, page & website.
Comments
Post a Comment