ইসলামকে বৈজ্ঞানিক প্রমান করতে গিয়ে বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার সাহেবের অপব্যাখ্যাগুলোর পর্যালোচনা:
একজন বিশিষ্ট
ইসলামিক স্কলার সাহেব তার ‘কোরান ও
আধুনিক বিজ্ঞান : বিরোধ নাকি সাদৃশ্য‘ লেকচারে বলেছেন :
” আগেকার দিনে মানুষ মনে করতো, আমরা যে
পৃথিবীতে বাস করি সেটা সমতল; আর তারা
খুব বেশি দুরে যেতে ভয় পেতো হঠাত করে যদি নিচে পড়ে যায় সেজন্য l এরপর ১৫৫৭ খ্রিস্টাব্দে স্যার ফ্রান্সিস ড্রেক জাহাজে করে
পুরো পৃথিবী ঘুরে আসলেন আর প্রমান করলেন যে পৃথিবী আসলে
বর্তুলাকার l
পবিত্র কুরানে সুরা লুকমানের ২৯ নাম্বার আয়াতে
উল্লেখ করা আছে ,
” আল্লাহ তাআলা রাত্রির ভিতর দিবসকে অন্তর্ভুক্ত করেন এবং রাত্রিকে দিবসের ভিতর অন্তর্ভুক্ত করেন l“
অন্তর্ভুক্ত করা একটি ধীর গতির চলমান প্রক্রিয়া l রাত ধীরে ধীরে চলমান
প্রক্রিয়ায় দিনে পরিনত হয় আর দিন ধীরে ধীরে চলমান প্রক্রিয়ায় রাতে পরিনত হয় l এটা শুধু মাত্র তখনই সম্ভব হবে যদি পৃথিবী বর্তুলাকার হয় l পৃথিবী
সমতল হলে এটা সম্ভব হবে না l পৃথিবী সমতল হলে দিন রাত হঠাত করে বদলে যেত l
পবিত্র কুরানে সুরা আল জুমার ৫ নাম্বার আয়াতে
উল্লেখ করা আছে যে ,
“আল্লাহ
তাআলা এই আকাশ মন্ডলী ও পৃথিবীকে
সৃষ্টি করিয়াছেন যথাযথ ভাবে l এবং তিনি রাত্রি দ্বারা দিবসকে আচ্ছাদিত করেন এবং রাত্রিকে আচ্ছাদিত করেন দিবস দ্বারা l“
এখানে যে আরবি শব্দটা আছে সেটা হলো ‘কাওয়ারা‘ যার অর্থ
কোনো কিছু আচ্ছাদন করা l যেভাবে আমরা আমাদের মাথায় পাগড়ি পড়ি, আমরা
যেভাবে আমাদের মাথায় পাগড়ি পড়ি l
এই মতবাদটা যে রাত দিনকে আর দিন রাতকে আচ্ছাদন
করছে এটা শুধু তখনই সম্ভব হবে যদি
পৃথিবী বর্তুলাকার হয় l যদি পৃথিবী সমতল হয় তাহলে এটা সম্ভব হবে না l দিন রাত
তখন হঠাত করে বদলে যেত l
এরপর
পবিত্র কুরআনে আছে, সুরা নাযিয়াতের ৩০ নাম্বার আয়াতে উল্লেখ করা আছে যে ,
“এবং ইহার
পর তিনি পৃথিবীকে করিয়াছেন ডিম্বাকৃতির l“
এখানে আরবি শব্দ ‘দাহাহা‘ যার মূল
শব্দ ‘দুইয়া‘ যার অর্থ
হলো ডিম্বাকৃতির l এই শব্দটা দিয়ে কোনো স্বাধারণ ডিমকে বুঝানো হয়না l শব্দটা দিয়ে বিশেষ করে বোঝানো হয় উটপাখির ডিমকে l
আর এখন আমরা জানি যে আমাদের পৃথিবী পুরোপুরি ফুটবলের মত গোল নয় l এটা আসলে বর্তুলাকার l এটা উপরে আর নিচে চাপা আর দুই পাশে কিছুটা ফোলানো l
এটা হলো বর্তুলাকার l
আর আপনারা যদি উট পাখির ডিমকে ভালো ভাবে দেখেন
এই ডিমটা বর্তুলাকার l উপরে নিচে কিছুটা চাপা আর দুই পাশে কিছুটা ফুলানো l
তাহলে পবিত্র কুরআনে পৃথিবীর আকার সঠিক ভাবে
উল্লেক করা হয়েছে ১৪০০ বছর আগে l“
এই হচ্ছে ইসলামিক বিশেষজ্ঞ সাহেবের বক্তব্য l
বিশ্লেষণ:
আল্লাহ তাআলা যে কথাগুলো মুহাম্মদ স: কে বলেছেন
বা তার উপর যে বাণী প্রেরণ করেছেন জিব্রাইল (আ:)-এর মাধ্যমে তাই কোরআনুল কারীমে লিপিবদ্ধ হয়ে আছে l আল্লাহ তার কথা গুলো মোহাম্মদ (স:) কে বুঝানোর জন্য খুব সহজ
কিছু শব্দ বেছে নিয়েছিল যেন মুহাম্মদ (স:) সেগুলো খুব সহজে বুঝতে
পারে l সেই কথা গুলো
মোহাম্মদ স: বুঝেছিল এবং তার সাহাবাদেরকে তিনি ভালো ভাবে বুঝিয়েছিলেন l আর কিছু
কিছু আয়াত আল্লাহ রূপক ভাবে বলেছেন এবং তিনি এটাও বলে দিয়েছেন যে এগুলোর অর্থ তিনি (আল্লাহ) ছাড়া কেউ বুঝতে পারবে না l আর এগুলো বাদে বাকিগুলিই গুরুত্বপূর্ণ l
এখন আল্লাহ যে কথাগুলো মোহাম্মদ স: কে বলেছেন এবং যে শব্দ গুলো দিয়ে বাক্য তৈরী করেছেন সেগুলো দিয়ে ওই
অর্থই প্রকাশ করেছেন যেটা আল্লাহ মুহাম্মদ স: কে বলতে চেয়েছিলেন l
এবং মুহাম্মদ স: ওই অর্থই বুঝেছিলেন যেটা আল্লাহ বলতে চেয়েছিলেন তাকে l
এখন যদি সেসব বাক্যের কতগুলো নির্দিষ্ট শব্দের
অর্থের অন্য অর্থগুলো (সমার্থক অর্থ ) দিয়ে সেই বাক্যটির অর্থ করা হয়, তাহলে
আল্লাহ যে কথা গুলো মুহাম্মদ
স: কে বলেছেন সেই অর্থ গুলো বদলে যাবে l
এক্ষেত্রে যদি আমরা একটা উদাহরণ দেই যেমন ইংরেজি বাক্যে যদি বলা হয়ে থাকে “It is
raining cats and dogs” . এর বাংলা
হবে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে l কারণ ইংরেজ ভাষাভাষী মানুষ গুলো এটা দিয়ে এই অর্থই করে থাকে l এখন যদি একজন ওই বাক্যটার অর্থ করে এরকম ” বিড়ালে
কুকুরে বৃষ্টি হচ্ছে ” তাহলে
কিন্তু এর অর্থ ঠিক থাকলো না l কারণ বৃষ্টির সাথে বিড়াল কুকুরের কোনো সম্পর্ক নেইl
আবার কোনো শব্দের উত্পত্তি হয়েছে যে শব্দ থেকে সেই শব্দের অর্থই যদি
কোরানে উল্লেখিত শব্দের
অর্থ ধরি তবুও কিন্তু সেই অর্থটা আর আল্লাহর বলা কথার অর্থটা আর ঠিক থাকবে না l
যেমন ধরি বাংলা একটা শব্দ ‘হাত‘ যার
সমার্থক শব্দ ‘হস্ত‘ l আর এই হস্ত
শব্দটি এসেছে হস্তি থেকে lএখানে হস্তি মানে হচ্ছে হাতি আর হস্ত মানে হাত l এখন যদি কেও বলে যে আমি হাত দিয়ে ভাত খাই lআর একজন
যদি এর অর্থ করে আমি হাতি দিয়ে ভাত খাই l এবং সে যদি যুক্তি দেখায় যে হাত সেটাকে হস্ত বলা হয় সেটা এসেছে হস্তি শব্দ থেকে এবং হস্তির অর্থ
হচ্ছে হাতি তাই আমি বাক্যটির অর্থ করেছি এই রকম l তাহলে কিন্তু আর আগের অর্থ ঠিক থাকলো না l
ঠিক সেভাবেই কোরানে বর্ণিত শব্দ গুলোর অর্থ
সেটাই করতে হবে যেটা মুহাম্মদ স: বুঝেছেন l
এখন যদি কেও কোরানে বর্ণিত বাক্যের ব্যবহৃত
শব্দ গুলোর কোনো একটার অর্থ পরিবর্তন
করে (সমার্থক শব্দ এনে) সেই বাক্যটির অর্থ করে তাহলে কিন্তু আল্লাহ মুহাম্মদ স: কে যে কথাটা বলেছিল সেটা আর ঠিক থাকবে
না l কারণ আল্লাহ, মুহাম্মদ
স: কে সেভাবেই শব্দ প্রয়োগ করে বুঝিয়েছেন যেভাবে তিনি সবচেয়ে ভালো বুঝবেন l আর মুহাম্মদ স: সেই কথা
গুলো বুঝেছিলেন খুব ভালো ভাবে এবং
তার সাহাবাদেরকে (রা:) ব্যাখ্যা করেছেন খুব ভালো ভাবে l
তার মানে কোরানে ব্যবহৃত শব্দ গুলোর সেই অর্থই ধরতে হবে যেগুলো মুহাম্মদ স: বুঝেছেন l অন্য সমার্থক শব্দ এনে অর্থ করলে সেই অর্থটা বিকৃত হয়ে যাবে l যেটা অনেক স্কলার্সরাই করছেন হর
হামেশাই l এক অর্থে তারা আল্লাহর কথাগুলোকে বিকৃত করে ফেলেছে সমার্থক অর্থ দিয়ে
কোরান-এর অর্থকরে l সব আধুনিক মুসলমানরা বিজ্ঞানের সাথে কোরান কে মিলাতে
কোরানে ব্যবহৃত শব্দের অন্য সমার্থক শব্দ এনে অনেক আয়াতকে পুরাপুরি বিকৃত করে ফেলেছে l
এবার মূল আলোচনা:
স্কলার সাহেব কোরানের বর্ণনায় পৃথিবী সমতল নাকি গোলক আকৃতির তা প্রমানের
জন্য কোরানের যে আয়াতটি তুলে ধরেছেন তা হলো :
(৩১) সুরা
লুকমান; আয়াত ২৯ :
” আল্লাহ তাআলা রাত্রির ভিতর দিবসকে অন্তর্ভুক্ত করেন l এবং রাত্রিকে দিবসের ভিতর অন্তর্ভুক্ত করেন l“
এই আয়াতটির অন্য অনুবাদ হলো :
(৩১) সুরা
লুকমান; আয়াত ২৯ :
“তুমি কি
দেখনা যে, আল্লাহ রাত্রিকে দিবসে প্রবিষ্ট করেন এবং দিবসকে রাত্রিতে প্রবিষ্ট করেন ? তিনি
চন্দ্র ও সূর্যকে কাজে
নিয়োজিত করেছেন l প্রত্যেকেই নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত পরিভ্রমন করে l তুমি কি
আরও দেখো না যে, তোমরা যা কর, আল্লাহ তার খবর রাখেন ?
(৩১) সুরা
লুকমান; আয়াত ২৯ :
তুমি কি দেখো না যে , আল্লাহ
রাত্রিকে দিবসে এবং দিবসকে রাত্রির ভিতরে প্রবেশ করান ? তিনি
চন্দ্র-সূর্যকে করেছেন নিয়মাধীন, প্রত্যেকটি
পরিভ্রমন করে নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত; তোমরা যা কর আল্লাহ সে
অবহিত l” (প্রফেসর ড: মুহাম্মদ মূজীবুর রহমান)
(৩১) সুরা
লুকমান; আয়াত ২৯ :
তুমি কি দেখনি যে তিনি রাতকে দিনের ভেতরে ঢুকিয়ে দেন এবং দিনকে ঢুকিয়ে দেন রাতের ভেতরে এবং সূর্য ও
চন্দ্রকে তিনি অনুগত করেছেন, প্রত্যেকটিই এক নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত বিচরণ করে; আর তোমরা যা কর সে সম্বন্ধে আল্লাহ নিশ্চই পূর্ণ ওয়াকিবহাল ?” (অনুবাদ – ড: জহুরুল হক)
এখন স্কলার সাহেব বলেছেন যে কোরানে আছে যে আল্লাহ ধীরে ধীরে রাতকে দিনের ভিতর অন্তর্ভুক্ত করেন এবং দিনকে রাতের ভিতর
অন্তর্ভুক্ত করেন l এই অন্তর্ভুক্তিকরণ খুব ধীর গতির প্রক্রিয়া , তাই পৃথিবী
যদি সমতল হয় তবে এটা সম্ভব
নয় l পৃথিবী গোল বলেই এটা সম্ভব l
আপনারা লক্ষ করুন এখানে স্কলার সাহেবর যুক্তিটা
কত ঠুনকো l এটা কোনো যুক্তি হলো যে দিন রাত ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয় বলেই প্রমান হয় পৃথিবী গোল ? হাজার
হাজার বছর আগে থেকেই মানুষ দেখে আসছে যে দিন রাত ধীরে ধীরে পরিবর্তন হয় l তবুও তারা বিশ্বাস করত যে পৃথিবী সমতলl এমনকি ১৫৫৭ সালের আগেও মানুষ(মুসলমান সহ) বিশ্বাস করত যে পৃথিবী সমতল l তাহলে কি ধরে নেব যে প্রাচীন কালের মানুষ যেহেতু দেখেছে যে দিন রাত ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয় তাই তারা পৃথিবীকে গোল বলেই
জানত ? কি আজব যুক্তি!
পৃথিবী গোলক আকৃতির এবং সেজন্যই রাত দিন ধীরে
ধীরে পরিবর্তিত হয় এটা আবিষ্কার করেছে বিজ্ঞান l কোরআন অনুযায়ী আল্লাহর রাসূল (স:) ও সাহাবারা (রা:) যদি জানতেনই পৃথিবী বর্তুলাকার, তাহলে তারা এটা বলেননি কেন ? তার মানে
হচ্ছে আল্লাহর রাসূল (স:) ও সাহাবারা (রা:) ঠিকিই জানতেন এবং মানতেন পৃথিবী সমতল l আর এটাই আল্লাহর রাসূল (স:), তার সাহাবাদের
কে বলেছেন l এবং এজন্যই মুসলমানদের কোনো লেখাতেই পাবেন না যে পৃথিবী বর্তুলাকার l ‘পৃথিবী গোল‘ এটা প্রমানিত হবার আগের মুসলমানদের কোনো লেখকের লেখাতেই পাবেন
না যে লেখা আছে পৃথিবী বর্তুলাকার l
আর এর একমাত্র কারণ হচ্ছে যে আল্লাহর রাসূল (স:) এটাই জানতেন যে পৃথিবী সমতল l তিনি কখনই জানতেন না যে
পৃথিবী বর্তুলাকার l
তাই স্কলার সাহেব যে যুক্তিটা দিয়েছে সেটা বাচ্চাদের কে সাত পাঁচে তেরোর বুঝ
বুঝানোর মতো l
সে আর যে আয়াতটা উল্লেখ করেছে সেটা হলো :
(৩৯) সুরা
আল যুমার; আয়াত ৫ :
“আল্লাহ
তাআলা এই আকাশ মন্ডলী ও পৃথিবীকে সৃষ্টি করিয়াছেন যথাযথ ভাবে l এবং তিনি রাত্রি দ্বারা দিবসকে আচ্ছাদিত করেন এবং রাত্রিকে আচ্ছাদিত করেন দিবস দ্বারা l“
স্কলার সাহেব বলেন এখানে ‘কাওয়ারা‘ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে, যার অর্থ
কোনো কিছু আচ্ছাদন করাl যেভাবে আমরা আমাদের
মাথায় পাগড়ি পড়ি, আমরা যেভাবে আমাদের মাথায় পাগড়ি পড়ি l
এখানে আমার প্রশ্ন ‘কাওয়ারা‘ শব্দটি কি
শুধু পাগড়ি পরার ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হয় নাকি এর অর্থ কোনো কিছু আচ্ছাদন করা ?
এর অর্থ যদি কোনো কিছু আচ্ছাদন করা হয় তবে বলতে
হবে যে রাত দিনকে বা দিন রাত কে আচ্ছাদন করছে না l আবার সবসময় পৃথিবীর একপাশে থাকছে রাত আর অন্য পাশে থাকছে দিন l অর্থাত অর্ধেক পৃথিবীতে সবসময় রাত থাকছে এবং বাকি অর্ধেক পৃথিবীতে সবসময় দিন থাকছে l সুতরাং এটা দিয়ে প্রমান হবার প্রশ্নই আসে না যে পৃথিবী
গোলক আকৃতির l এটা একটা ফালতু ধারণা ছাড়া আর কিছুই না l আর স্কলার সাহেব এই
যুক্তিটি দিয়ে গোজামিল করে পৃথিবীর গোল আকৃতি প্রমানের ব্যর্থ চেষ্টা করেছে মাত্র l এটা দিয়ে আসলে কিছুই প্রমান হয়নি l
এরপর স্কলার সাহেব তার সবচেয়ে
বড় অস্ত্র প্রয়োগ করেছেন l সে একটি আয়াত উল্লেখ করেছেন l সেটা হলো :
(৭৯) সুরা
নাযিয়াত; আয়াত ৩০ ,
“এবং ইহার
পর তিনি পৃথিবীকে করিয়াছেন ডিম্বাকৃতির l“
এরপর স্কলার সাহেব বলেন, “এখানে আরবি শব্দ ‘দাহাহা‘ যার মূল শব্দ ‘দুইয়া‘ যার অর্থ হলো ডিম্বাকৃতির l এই শব্দটা দিয়ে কোনো স্বাধারণ ডিমকে বুঝানো হয়না l শব্দটা দিয়ে বিশেষ করে বোঝানো হয় উটপাখির ডিমকে l“
তার মতে পৃথিবী এবং উটপাখির ডিম একই আকৃতির l
তার উল্লেখিত আয়াতের অন্যান্য অনুবাদ গুলো হলো
:
(৭৯) সুরা
আন-নাযিয়াত; আয়াত ৩০ :
“পৃথিবীকে
এরপরে বিস্তৃত করেছেন l“
(৭৯) সুরা
আন-নাযিয়াত; আয়াত ৩০ :
“এবং
পৃথিবীকে এরপর বিস্তৃত করেছেন l” (অনুবাদ – প্রফেসর ড:
মুহাম্মদ মুজিবুর রহমান)
(৭৯) সুরা
আন-নাযিয়াত; আয়াত ৩০ :
“আর পৃথিবী-
এর পর তাকে প্রসারিত করেছেন l” (অনুবাদ- ড:
জহুরুল হক)
SURA (79) AN-NAZIAT :
30. And after that He spread the earth,
(79) Al Nazi’at :
30. And the earth, moreover, hath He extended
(to a wide expanse);
তাহলে দেখা যাচ্ছে যে উপরে বর্ণিত কোনো
অনুবাদেই নেই যে পৃথিবী ডিম্বাকৃতির তাও আবার উটপাখির ডিম l
অথচ অনুবাদের ক্ষেত্রে অনুবাদক সবসময় খেয়াল
রাখেন যে অনুবাদ যেন যে ভাষা থেকে
অনুবাদ করা হয়েছে সেই ভাষার ওই অনুবাদের অর্থের সাথে মিল থাকে l অর্থাত
অনুবাদ যা করা হয় সেটা সেই ভাষার অর্থের সাথে মিল রাখতে হয় l আর এজন্যই যখন
অনুবাদ গ্রন্থ পড়া হয় সেখানে দেখা যায় যে মূল বাক্যের সাথে অনুবাদের আভিধানিক অর্থের থেকে পার্থক্য দেখা যায় l এর কারণ ওই বাক্য দিয়ে সেই ভাষার মানুষ বা লেখক কি বুঝে সেটাকে গুরুত্ব দেয়া হয় l এজন্যই মূল বাক্যের
আভিধানিক অর্থের সাথে অনুবাদের অর্থের কিছুটা পার্থক্য থাকে l
এখন কোরান অনুবাদ করার সময়ও অনুবাদক কোরানের
অর্থ আরবরা যা বুঝে সেটাকেই অনুবাদে তুলে ধরবেন l
তার মানে কোরান অনুবাদ করার সময় অনুবাদকগণ লক্ষ
রাখেন যে কোরানের আয়াত গুলোর অর্থ
আল্লাহর রাসূল (স:) ও সাহাবারা (রা:) কি বুঝতেন l আর তারা বিভিন্ন হাদিসের সাহায্য নিয়েই অনুবাদ করে থাকেন l
এখন যদি আপনারা লক্ষ করেন তবে দেখবেন যে
কোরানের কয়েক বছর আগে যে অনুবাদগুলো ছিল তার সাথে বর্তমানের অনুবাদ
গুলোর বেশ পার্থক্য রয়েছে l আর এর কারণ বিজ্ঞানের সাথে কোরানের মিল খোজতে যেয়ে modaret মুসলমানরা কোরানের অর্থের পরিবর্তন করে ফেলেছে l আর এজন্যই আগের অনুবাদগুলোতে
দেখবেন যে উপরিউক্ত আয়াতের অর্থ আগের অনুবাদগুলোতে ছিল ‘বিস্তৃত বা
প্রসারিত‘; কিন্তু পরের অনুবাদগুলোতে দেখবেন যে এর অর্থ করা হয়েছে
ডিম্বাকৃতির l আর এই
পরিবর্তনটা করা হয়েছে পৃথিবী পুরোপুরি গোল বা ১০০% সুষম গোলক নয় এটা প্রমানিত হবার পর l অর্থাত কোরানের মতে যেটা ছিল সমতল আর সেটাই হয়ে গেছে গোল বা ডিম্বাকৃতির l
কিন্তু আজ থেকে কয়েকশ বছর আগেও এর অর্থ করা হত বিস্তৃত বা প্রসারিত পৃথিবী l যেটা আল্লাহর রাসূল (স:) ও সাহাবা (রা:) এবং এরপরের
সময় থেকে ওই সময় পর্যন্ত এর অর্থ ছিল ঐটা l কিন্তু এখন এটার অর্থ
পরিবর্তিত হয়ে গেছে l অর্থাত বিকৃত হয়ে গেছে l
আবার স্কলার সাহেব এখানে দেখাচ্ছে যে, আরবি শব্দ ‘দাহাহা‘ যার মূল
শব্দ ‘দুইয়া‘ যার অর্থ
হলো ডিম্বাকৃতির l এখানে লক্ষ করুন দুইয়া অর্থ ডিম্বাকৃতি কিন্তু দাহাহা অর্থও কি ডিম্বাকৃতির ? আরবি
ডিকশনারিতে দাহাহা এর অর্থ আসে বিস্তৃত করা , যেটা আগের
প্রায় সবকটা অনুবাদেই পাওয়া যেতো l দুইয়া অর্থ ডিম্বাকৃতির
সেটা ভালো কথা তাই বলে কি দাহাহা এর অর্থও কি ডিম্বাকৃতি ? হস্ত
শব্দটি এসেছে হস্তি শব্দ থেকে তাই বলে কি হাত আর হাতি এক হলো ? আর একটা
শব্দের অনেকগুলো অর্থ থাকতে
পারে l তার মানে এটা নয় যে কোরানে আল্লাহর রাসূল (স:) ও সাহাবা (রা:) দাহাহা
দিয়ে ডিম্বাকৃতি এই অর্থ বুঝতেন l
এটাই প্রমান করে যে আল্লাহর রাসূল (স:) ও সাহাবা (রা:) দাহাহা দিয়ে বিস্তৃত পৃথিবীই বুঝতেন l ডিম্বাকৃতির বুঝতেন না l (একটা
শব্দের অর্থ পরিবর্তন করে বাক্যের অর্থ পরিবর্তন করা যায় কিন্তু তাতে মূল অর্থ ঠিক থাকে না l)
আর সব অনুবাদেই উঠে আসতো যে পৃথিবী ডিম্বাকৃতির l অথচ কয়েক বছর বা কয়েক দশক আগের অনুবাদেও এর অর্থ করা হয়েছে বিস্তৃত পৃথিবী l যেটা অতিসাম্প্রতিক অনুবাদগুলোতে এর অর্থ বদলে হয়েছে ডিম্বাকৃতির l
N:B: এমন বিস্তারিত আলোচনার পরেও কেউ যদি বলেন, অমুক আলেম বা অমুক স্কলার তো পৃথিবীকে বর্তুলাকার বলেছেন, সেটার কি হবে? তাহলে আর আমাদের কিছুই বলার নেই। এখানে খুব ভালো করে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে যে, বর্তমানের আধুনিকতা ও বিজ্ঞান প্রিয় মডারেট মুসলমানেরা ইসলামকে বৈজ্ঞানিক হিসেবে প্রমান করতে গিয়েই এই ধরণের সমস্যাগুলো সৃষ্টি করেছে। অর্থাৎ বিকৃত অর্থ ও অপব্যাখ্যার আশ্রয় নিয়েছে। অথচ অতীতে মুসলমান তো বটেই
পৃথিবীর সব মানুষেরই বিশ্বাস ছিল পৃথিবী সমতলে বিছানো।
Comments
Post a Comment