আল কুরআনে “দুই পূর্ব ও দুই পশ্চিম” সংক্রান্ত তথ্য
আল্লাহ
তা’আলা
আল কুরআনে বলেনঃ
رَبُّ الْمَشْرِقَيْنِ
وَرَبُّ الْمَغْرِبَيْنِ
অর্থঃ “তিনি দুই ‘মাশরিক’ ও দুই ‘মাগরিব’ এর প্রভু।”
(আল
কুরআন, আর রহমান ৫৫ : ১৭)
এখানে ‘মাশরিক’ কী?
‘মাগরিব’ কী?
ডিকশনারি
খুললে ‘মাশরিক’, ‘মাগরিব’ এই
শব্দগুলোর অর্থ আপনি পাবেন - পূর্ব, পশ্চিম। এখন এর উপর ভিত্তি করে যদি চট করে আপনি বলে দেন, “কুরআনের
মত অবৈজ্ঞানিক কিছু নেই। কারণ পৃথিবীর দুইটা পূর্ব দিক এবং দুইটা পশ্চিম দিক থাকা কীভাবে সম্ভব?”
- তাহলে সেটি খুবই তাড়াহুড়ো করা মনোভাবের পরিচায়ক হবে। এটা সাধারণত নাস্তিকদের পয়েন্ট অফ ভিউ।
এখন অন্য
ইন্টারপ্রিটেশন (ব্যাখ্যা)
খেয়াল করা যাক। আরবিতে ‘শারাক্বা’ অর্থ
আলোকজ্জ্বল হওয়া এবং ‘গারাবা’ অর্থ
ডুবে যাওয়া । ‘মাশরিক’ অর্থ
আলোকজ্জ্বল হবার স্থান এবং মাগরিব অর্থ ডুবে যাওয়ার স্থান, যেভাবে ‘সাজাদা’ অর্থ
সেজদা করা, আর ‘মাসজিদ’ অর্থ
সেজদা করার স্থান; ‘জালাসা’ অর্থ
বসা, আর ‘মাজলিস’ অর্থ
বসার জায়গা। সূর্য
যেহেতু পূর্বদিকে
আলোকজ্জ্বল হয়ে
উদিত হয়
তাই পূর্বকে আরবিতে ‘মাশরিক’ বলে, আর
পশ্চিমে গিয়ে
অস্তমিত হয়, তাই
পশ্চিমকে ‘মাগরিব’ বলে।
অর্থাৎ
মাগরিব/মাশরিকের মূল অর্থ পূর্ব বা পশ্চিম নয়। বরং সূর্যের অস্তাচল ও উদয়াচল। আকাশে উদিত ও অস্তমিত হবার জায়গা।
মুফাসসিরগণ
এই আয়াতের ব্যাখ্যা করেন শব্দগুলোর ব্যুৎপত্তিগত অর্থ
থেকে। বছরের প্রত্যেক দিনই সূর্য আকাশে ভিন্ন ভিন্ন কোণ (angle) তৈরি করে উদিত ও অস্তমিত হয়। গ্রীষ্ম ও শীতে সূর্যের উদয়াচল ও অস্তাচলের কোণে (angle) সবচেয়ে বেশি পার্থক্য দেখা যায়। আয়াতে এই দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। বছর জুড়ে সূর্যের গতিপথ কেমন হয় তা নিচের ফিগারে দেখে নিতে পারেন।
চিত্রে লাল বৃত্ত দিয়ে কোণ (angle) নির্দেশ করা হচ্ছে। সবার বাইরের বৃত্তে ডিগ্রীতে কোণের পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে। আর নীল রেখাগুলো হচ্ছে সূর্যের সারাদিনের গতিপথ। নীল দাগগুলোর উপর লম্বা লম্বা ছোট কিছু দাগ রয়েছে। এগুলো দিনের বিভিন্ন ঘণ্টা নির্দেশ করে। বছরের ৬টি দিনে সূর্যের গতিপথ দেখানো হয়েছে। সবার নিচেরটি জুন ২১ এর, আরে সবার উপরেরটি ডিসেম্বর ২১ এর। আর এই পর্যবেক্ষণটি রটারডাম নামক স্থান থেকে গৃহীত। খেয়াল করুন:
- জুনের
২১
তারিখ
সেখানে
ভোর
৪টায়
সূর্য
উত্তর
থেকে
৫০
ডিগ্রী
কোণ
করে,
অর্থাৎ
ঠিক
পূর্ব
থেকে
উত্তরে
৪০
ডিগ্রী
কোণ
থেকে
উদিত
হয়েছে।
- ডিসেম্বরের
২১
তারিখ
সেখানে
সূর্য
উদিত
হয়েছে
সকাল
সোয়া
৮টায়।
এবার
সূর্য
উদিত
হয়েছে
ঠিক
পূর্ব
থেকে
দক্ষিণে
৪০
ডিগ্রী
কোন
করে।
- অর্থাৎ
৬ মাসে
সূর্যের
উদয়স্থল
বা
উদয়াচলের
পার্থক্য
হচ্ছে
৮০
ডিগ্রী।
- একইভাবে
অস্তাচলের
ক্ষেত্রে
জুন
২১
ও ডিসেম্বরের
২১
এ ৮০
ডিগ্রী
পার্থক্য
আছে।
এটাই কুরআনে উল্লিখিত দুই উদয়াচল ও দুই অস্তাচলের ব্যাখ্যা। উদয়াচল ও অস্তাচল প্রতিদিনই ভিন্ন হয়। কিন্তু গ্রীষ্ম ও শীতে এর পরিবর্তন ভাল করে বোঝা যায়। তাই দৃষ্টি আকর্ষণ ও সহজে উপলব্ধির জন্য আয়াতে এই দুই ঋতুর দিকেই ইঙ্গিত রয়েছে।
Comments
Post a Comment