সমতল ও স্থির পৃথিবীতে ঋতুবৈচিত্র কিভাবে হয়:


 


প্রথমে দুই ভাইয়ের দুটি বক্তব্য তুলে ধরা হলো। তারপর আরো কিছু কথা থাকবে ইনশাআল্লাহ।

বক্তব্য-১:

ঋতু পরিবর্তন ছাড়াও অনেক বিষয় আছে যার ব্যাখ্যা আমাদের হাতে নেই প্রাচীন আলিম মুফাসসীরীন এমনকি সাহাবিদের জামায়াত সমস্ত বিষয়ের ব্যাখ্যা তলব করেন নি,আমরাও করিনা ব্যাখ্যা না করলেই যে অসত্য হবে এমনটাও তাদের শিক্ষা ছিল না মূলত তারা এসব শুনেই বিশ্বাস করতেন বিনা যুক্তিতেশুনলাম মানলামআমরাও এর দিকে উৎসাহিত করি সমতল বিশ্বব্যবস্থায় পশ্চিমা কাফিরদের ভার্সনে সবকিছুরই মোটামুটি যুক্তিনির্ভর ব্যাখ্যার চেষ্টা করেছে আমরা সেদিকে যাইনা আগ্রহও নেই তাছাড়া ওদের দেখানো জগতটি ইসলামের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ না তাই, আপনার যদি খুব কৌতূহল হয় আপনি এসব নিয়ে সময় ব্যয় করতে পারেন(যদিও মুহুর্তে এসবে সময় দেয়াকে অসমর্থন করি), নিজের মত লজিক্যাল ইন্টারপ্রিটেশান দাড় করাতে পারেন কাফিরদের ভার্সনের সমতল যমীনকেও ব্যবহার করতে পারেন সবকিছুর ব্যাখ্যা করার জন্য ইতোমধ্যে তারা সমতল যমীনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ইলেক্ট্রম্যাগনেটিজম সহ অনেক তত্ত্ব তৈরি করেছে নিজেদের উদ্যোগে আপনি অতি কৌতূহলী হলে সেসবে প্রবেশ করতে পারেনসমতল কিংবা বর্তুলাকার ব্যপার না,অতীতের দার্শনিকদের পছন্দের ভেদ হয়েছে ফিলসফিক্যাল ফাউন্ডেশন অনুযায়ী এরপর সবকিছুর মনগড়া ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে গানিতিক শুদ্ধতা সহ! এটা আইনস্টাইনও বলেন

উপরের বক্তব্যটি সম্ভবত ইমরান ভাইয়েরআমার ঠিক মনে নেইঅনেক আগে সংগ্রহ করে রেখেছিলামওই কথা গুলোই ঠিকসব কিছুর ব্যাখ্যা খুঁজতে যাওয়া ঠিক নয়তারপরেও মুমিনদের অন্তরের প্রশান্তির জন্য কোনো কোনো ভাই চেষ্টা করে যাচ্ছেননিচে এমনি আরেক ভাইয়ের বক্তব্য দেয়া হলো

বক্তব্য-:

সহজ উপস্থাপনঃ
সূর্যের গতি দু'ধরণের
- দৈনিক গতিঃ পূর্ব থেকে পশ্চিমে ২৪ ঘন্টায় এক চক্র সম্পন্ন করে এর ফলে সকাল, দুপুর বিকাল হয় সকালে সূর্য আপনার দিকে আসতে থাকে, ভর দুপুরে আপনার সর্বাধিক কাছে থাকে তারপর আবার দূরে সরে যেতে যেতে আপনার দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে যায়, এভাবে তার চক্র সম্পন্ন করে অস্তমিত হয় আল্লাহকে সেজদা করে তারপর আবার উদিত হয়
- বাৎসরিক গতিঃ অক্ষরেখায় চলতে চলতে দক্ষিণ থেকে উত্তর দিকে উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে যে গতি বিদ্যমান তাকে বাৎসরিক গতি বলে প্রতিটি অক্ষরেখায় সূর্য প্রায় ৩মাস অবস্থান করে ১ম অক্ষ থেকে ৩য় অক্ষে আসতে ৬মাস লাগে; তারপর আবার ৩য় অক্ষরেখা থেকে ১ম অক্ষরেখায় ফিরে যেতে লাগে ৬মাস এভাবে একবছর পূর্ণ হয় ঋতুবৈচিত্র দেখা দেয় আল্লাহ অধিক অবগত...

 

 

বলাকার ঘূর্ণায়মান পৃথিবী তত্ত্বে কাফেররা সত্য মিথ্যা মিলিয়ে সব ব্যাখ্যা দিয়ে রেখেছে। কিন্তু আমাদের পক্ষে সেটা সম্ভব নয়। তারপরেও যথাসাদ্ধ চেষ্টা করেছি।

এছাড়াও আমরা নিচের এই হাদীসটি থেকে শীত ও গ্রীষ্মের পরিবর্তনের ধারণাটিও নিতে পারি।

 

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহ্ রসূল (সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘জাহান্নাম তার রবের নিকট অভিযোগ করে বলেছে, হে রব! আমার এক অংশ অপর অংশকে খেয়ে ফেলেছে তখন তিনি তাকে দুটি নিঃশ্বাস ফেলার অনুমতি প্রদান করেন একটি নিঃশ্বাস শীতকালে আর একটি নিঃশ্বাস গ্রীষ্মকালে কাজেই তোমরা গরমের তীব্রতা এবং শীতের তীব্রতা পেয়ে থাক

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

ইসলামের দৃষ্টিতে সৃষ্টিতত্ব ৮ম খন্ডের এই অংশটুকুও পড়ুন:

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা নিম্নতম আসমানে চাঁদ সূর্যের জন্য কক্ষপথ নির্ধারন করেছেন আসমানী সমুদ্রের কক্ষপথে চাঁদ সূর্যের জন্য ৩৬০ জন করে ফেরেশতা নিয়োগ করেছেন যারা চাঁদ সূর্যকে টেনে নিয়ে যায় আল্লাহ সমতল পৃথিবীর পূর্বে পশ্চিমে ১৮০টি করে উত্তপ্ত কালো পানির জলাশয় তৈরি করেছেন, চাঁদ সূর্য প্রতিদিন ভিন্ন ভিন্ন স্থানে অস্তগমন করে, তেমনি ১৮০টির মধ্যে প্রতিদিন ভিন্ন ভিন্ন স্থান থেকে উদিত হয় শীত গ্রীষ্মে উদয়াচল অস্তাচলে সূর্যের উদয় অস্তের স্থান পরিবর্তন করে, এতে দিন রাত্রির দৈর্ঘ্য বাড়ে কমে এজন্য আল্লাহ বলেনঃ

"তিনি দুই উদয়াচল দুই অস্তালয়ের মালিকl"

(আর রহমান; আয়াত ১৭)


"
আমি শপথ করছি উদয়াচল অস্তাচলসমূহের পালনকর্তার, নিশ্চয় আমি সক্ষমl"

(আল মা'আরিজ; আয়াত ৪০)

 

অন্য একটি ব্লগের আলোচনা থেকে (লিখেছেনঃ শেখ সা'দী) আরো সহজ করে বুঝে নিন

আল্লাহ তাআলা আল কুরআনে বলেনঃ

 رَبُّ الْمَشْرِقَيْنِ وَرَبُّ الْمَغْرِبَيْنِ

অর্থঃ তিনি দুইমাশরিক  দুইমাগরিব’ এর প্রভু।

(আল কুরআন, আর রহমান ৫৫ : ১৭)

মুফাসসিরগণ এই আয়াতের ব্যাখ্যা করেন শব্দগুলোর ব্যুৎপত্তিগত অর্থ থেকে বছরের প্রত্যেক দিনই সূর্য আকাশে ভিন্ন ভিন্ন কোণ (angle) তৈরি করে উদিত অস্তমিত হয় গ্রীষ্ম শীতে সূর্যের উদয়াচল অস্তাচলের কোণে (angle) সবচেয়ে বেশি পার্থক্য দেখা যায় আয়াতে এই দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে

বছর জুড়ে সূর্যের গতিপথ কেমন হয় তা নিচের ফিগারে (প্রদত্ত ছবি)  দেখে নিতে পারেন

চিত্রে লাল বৃত্ত দিয়ে কোণ (angle) নির্দেশ করা হচ্ছে সবার বাইরের বৃত্তে ডিগ্রীতে কোণের পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে আর নীল রেখাগুলো হচ্ছে সূর্যের সারাদিনের গতিপথ নীল দাগগুলোর উপর লম্বা লম্বা ছোট কিছু দাগ রয়েছে এগুলো দিনের বিভিন্ন ঘণ্টা নির্দেশ করে বছরের ৬টি দিনে সূর্যের গতিপথ দেখানো হয়েছে সবার নিচেরটি জুন ২১ এর, আর সবার উপরেরটি ডিসেম্বর ২১ এর আর এই পর্যবেক্ষণটি রটারডাম নামক স্থান থেকে গৃহীত খেয়াল করুন:

  • জুনের ২১ তারিখ সেখানে ভোর ৪টায় সূর্য উত্তর থেকে ৫০ ডিগ্রী কোণ করে, অর্থাৎ ঠিক পূর্ব থেকে উত্তরে ৪০ ডিগ্রী কোণ থেকে উদিত হয়েছে
  • ডিসেম্বরের ২১ তারিখ সেখানে সূর্য উদিত হয়েছে সকাল সোয়া ৮টায়। এবার সূর্য উদিত হয়েছে ঠিক পূর্ব থেকে দক্ষিণে ৪০ ডিগ্রী কোন করে
  • অর্থাৎ মাসে সূর্যের উদয়স্থল বা উদয়াচলের পার্থক্য হচ্ছে ৮০ ডিগ্রী
  • একইভাবে অস্তাচলের ক্ষেত্রে জুন ২১ ডিসেম্বরের ২১ ৮০ ডিগ্রী পার্থক্য আছে

 

এটাই কুরআনে উল্লিখিত দুই উদয়াচল দুই অস্তাচলের ব্যাখ্যা। উদয়াচল অস্তাচল প্রতিদিনই ভিন্ন হয়। কিন্তু গ্রীষ্ম শীতে এর পরিবর্তন ভাল করে বোঝা যায়। তাই দৃষ্টি আকর্ষণ সহজে উপলব্ধির জন্য আয়াতে এই দুই ঋতুর দিকেই ইঙ্গিত রয়েছে

 

উপসংহার: আশা করি সমতলে বিছানো পৃথিবীতে কিভাবে ঋতু বৈচিত্র হয় তা বুঝতে পেরেছেন, ইনশাআল্লাহ। । সব আলোচনার সারমর্ম হচ্ছে আল্লাহর ইচ্ছায় সূর্যের গতিপথের পরিবর্তনের কারণে এবং আবারো আল্লাহর ইচ্ছাতেই পৃথিবীতে ঋতু পরিবর্তন হয়ে থাকে।

 

 


 

Comments

Popular posts from this blog

পোলিও টিকাতে মূল উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয় বানরের কিডনি:

আপনার শিশুকে টিকা দিতে চান? তার আগে সত্য জানুন!

ডাইনোসর নিয়ে যত জল্পনা কল্পনা: