ইসলামের দৃষ্টিতে চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণ: (সকল বিভ্রান্তির নিরসন)
যেহেতু সমতলে বিছানো
পৃথিবীতে কিভাবে এগুলো হয়, সেটা নিয়ে ব্যাপক তর্ক - বিতর্ক ও ভুল বুঝা বুঝির সৃষ্টি
হয়েছে। তাই আমি অনেকগুলো আর্টিকেলকে এই পোস্টটিতে একসাথে করেছি। আশা করি এখানে সবাই
সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন। ইনশাআল্লাহ। পুরোটা মনোযোগ দিয়ে পড়ার অনুরোধ রইলো। প্রথমে এ সংক্রান্ত
অনেকগুলো হাদিস দেখবো। তারপর স্কলারদের ইসলামিক ব্যাখ্যা দেখবো, এরপর বিজ্ঞানের ব্যাখ্যাটিও
দেখবো।
প্রথমে হাদিসগুলো দেখে
নেই।
আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
وَحَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ
بْنُ سَعِيدٍ، عَنْ مَالِكِ بْنِ أَنَسٍ، عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ، عَنْ
أَبِيهِ، عَنْ عَائِشَةَ، ح. وَحَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، -
وَاللَّفْظُ لَهُ - قَالَ حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ نُمَيْرٍ، حَدَّثَنَا
هِشَامٌ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ خَسَفَتِ الشَّمْسُ فِي عَهْدِ
رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَامَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم
يُصَلِّي فَأَطَالَ الْقِيَامَ جِدًّا ثُمَّ رَكَعَ فَأَطَالَ الرُّكُوعَ جِدًّا
ثُمَّ رَفَعَ رَأْسَهُ فَأَطَالَ الْقِيَامَ جِدًّا وَهُوَ دُونَ الْقِيَامِ
الأَوَّلِ ثُمَّ رَكَعَ فَأَطَالَ الرُّكُوعَ جِدًّا وَهُوَ دُونَ الرُّكُوعِ
الأَوَّلِ ثُمَّ سَجَدَ ثُمَّ قَامَ فَأَطَالَ الْقِيَامَ وَهُوَ دُونَ الْقِيَامِ
الأَوَّلِ ثُمَّ رَكَعَ فَأَطَالَ الرُّكُوعَ وَهُوَ دُونَ الرُّكُوعِ الأَوَّلِ
ثُمَّ رَفَعَ رَأْسَهُ فَقَامَ فَأَطَالَ الْقِيَامَ وَهُوَ دُونَ الْقِيَامِ
الأَوَّلِ ثُمَّ رَكَعَ فَأَطَالَ الرُّكُوعَ وَهُوَ دُونَ الرُّكُوعِ الأَوَّلِ
ثُمَّ سَجَدَ ثُمَّ انْصَرَفَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَقَدْ
تَجَلَّتِ الشَّمْسُ فَخَطَبَ النَّاسَ فَحَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ ثُمَّ
قَالَ " إِنَّ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ مِنْ آيَاتِ اللَّهِ وَإِنَّهُمَا لاَ
يَنْخَسِفَانِ لِمَوْتِ أَحَدٍ وَلاَ لِحَيَاتِهِ فَإِذَا رَأَيْتُمُوهُمَا
فَكَبِّرُوا وَادْعُوا اللَّهَ وَصَلُّوا وَتَصَدَّقُوا يَا أُمَّةَ مُحَمَّدٍ
إِنْ مِنْ أَحَدٍ أَغْيَرَ مِنَ اللَّهِ أَنْ يَزْنِيَ عَبْدُهُ أَوْ تَزْنِيَ
أَمَتُهُ يَا أُمَّةَ مُحَمَّدٍ وَاللَّهِ لَوْ تَعْلَمُونَ مَا أَعْلَمُ
لَبَكَيْتُمْ كَثِيرًا وَلَضَحِكْتُمْ قَلِيلاً أَلاَ هَلْ بَلَّغْتُ " .
وَفِي رِوَايَةِ مَالِكٍ " إِنَّ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ آيَتَانِ مِنْ
آيَاتِ اللَّهِ " .
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে একবার সূর্য গ্রহণ হলো। তখন রসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করতে লাগলেন। সলাতের মধ্যে
তিনি বেশ দীর্ঘ এবং বেশ দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকলেন। অতঃপর রুকূ’ করলেন এবং তা খুব
দীর্ঘায়িত করলেন। অতঃপর আবার রুকূ’ করলেন এবং রুকূ’ বেশ দীর্ঘায়িত করলেন, যা রুকূ’
থেকে বিছু কম, অতঃপর সাজদায় গেলেন। সাজদাহ্ থেকে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ সময় ক্বিয়াম
(দণ্ডায়মান হওয়া) করলেন। যা প্রথমবার ক্বিয়াম অপেক্ষা কিছুটা কম ছিল। অতঃপর
রুকূ’তে গেলেন এবং এতে দীর্ঘ সময় কাটালেন। অবশ্য তা প্রথম রুকূ’ অপেক্ষা কম ছিল।
অতঃপর দীর্ঘ রুকূ’ করলেন, অবশ্য তা প্রথম রুকূ’র চেয়ে কম ছিল। অতঃপর সাজ্দাহ
করলেন। তারপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত শেষ করলেন।
এতক্ষণে সূর্য পরিষ্কার হয়ে গেল। তিনি লোকদের সামনে খুত্বাহ্ দিলেন। খুত্বাহ্
প্রসঙ্গে আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান করলেন। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) বললেন, চন্দ্র ও সূর্য আল্লাহর দু’টি নিদর্শন। আর চন্দ্র গ্রহণ ও
সূর্য গ্রহণ কারো জন্ম ও মুত্যুর কারণে সংঘটিত হয় না। অতএব তোমরা যখন চন্দ্র গ্রহণ
ও সূর্য গ্রহণ দেখতে পাও, তখন তাকবীর পড় আর আল্লাহর কাছে দু‘আ কর এবং সলাত আদায় কর
ও সদাক্বাহ্ কর। হে উম্মাতে মুহাম্মাদ! মনে রেখ, এমন কেউ নেই যে মহান আল্লাহ থেকে
অধিক আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন, যখন তার দাস বা দাসী ব্যভিচারে লিপ্ত হয় (তখন তিনি
শাস্তি না দিয়ে থাকেন না)। হে উম্মাতে মুহাম্মাদী! আল্লাহর কসম, যদি তোমরা জানতে
যা আমি জানি, তবে তোমরা অবশ্যই অধিক পরিমাণে কান্না-কাটি করতে এবং খুব কম হাসতে।
আমি কি আল্লাহর বাণী পৌঁছিয়ে দিয়েছি? মালিকের রিওয়ায়াতে এ বাক্যটি এভাবে উদ্ধৃত
হয়েছে- সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর বিশেষ কুদরাতের নিদর্শনাবলী। (ই.ফা. ১৯৫৯, ই.সে.
১৯৬৬)
আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
وَحَدَّثَنَا
مُحَمَّدُ بْنُ مِهْرَانَ الرَّازِيُّ، حَدَّثَنَا الْوَلِيدُ بْنُ مُسْلِمٍ،
قَالَ قَالَ الأَوْزَاعِيُّ أَبُو عَمْرٍو وَغَيْرُهُ سَمِعْتُ ابْنَ شِهَابٍ
الزُّهْرِيَّ، يُخْبِرُ عَنْ عُرْوَةَ، عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّ الشَّمْسَ، خَسَفَتْ
عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَبَعَثَ مُنَادِيًا "
الصَّلاَةَ جَامِعَةً " . فَاجْتَمَعُوا وَتَقَدَّمَ فَكَبَّرَ .
وَصَلَّى أَرْبَعَ رَكَعَاتٍ فِي رَكْعَتَيْنِ وَأَرْبَعَ سَجَدَاتٍ .
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম)-এর সময় একবার সূর্য গ্রহণ হয়েছিল। তিনি জনৈক ব্যক্তিকে এ ঘোষণা দেয়ার
উদ্দেশে পাঠিয়ে দিলেন: (আরবী) “জামা‘আতে সলাত” অনুষ্ঠিত হচ্ছে। (ঘোষণা শুনে) সবাই
একত্রিত হলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সামনে অগ্রসর হয়ে
তাকবীর উচ্চারণ করলেন এবং দু’ রাক‘আত সলাত আদায় করলেন। দু’ রাক‘আতে চারটি রুকূ’ ও
চারটি সাজদাহ্ করলেন। (ই.ফা. ১৯৬২, ই.সে. ১৯৬৯)
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তিঃ আল্লাহ্ তা‘আলা
সূর্যগ্রহণ দিয়ে তাঁর বান্দাদের হুঁশিয়ার করেন।
وَقَالَ أَبُو مُوسَى عَنِ النَّبِيِّ صلى
الله عليه وسلم.
আবূ মূসা আশ‘আরী (রাযি.) নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে তা বর্ণনা করেছেন।
১০৪৮. আবূ বাকরাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
আল্লাহর রাসূল বলেছেনঃ সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শন সমূহের মধ্যে দু’টি
নিদর্শন। কারো মৃত্যুর কারণে এ দু’টির গ্রহণ হয় না। তবে এ দিয়ে আল্লাহ্ তা‘আলা
তাঁর বান্দাদের সতর্ক করেন। ইমাম বুখারী (রহ.) বলেন, ‘আবদুল্লাহ্ ওয়ারিস, শু‘আইব,
খালিদ ইবনু ‘আবদুল্লাহ্, হাম্মাদ ইবনু সালাম (রহ.) ইউনুস (রহ.) হতে ‘এ দিয়ে
আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদেরকে সতর্ক করেন’ বাক্যটি বর্ণনা করেননি; আর মূসা (রহ.)
মুবারক (রহ.) স্থলে হাসান (রহ.) হতে ইউনুস (রহ.)-এর অনুসরণ করেছেন। তিনি বলেন,
আমাকে আবূ বাকরা (রাযি.) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বলেন, নিশ্চয়
আল্লাহ্ এ দিয়ে তাঁর বান্দাদেরকে সতর্ক করেন। (১০৪০) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৯৮৫,
ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৯১)
সূর্যগ্রহণের সময় ক্রীতদাস মুক্ত করা
পছন্দনীয়।
১০৫৪. আসমা (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্যগ্রহণের সময় গোলাম আযাদ করার নির্দেশ
দিয়েছেন। (৮৬) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৯৯০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৯৬)
এবার আমরা কয়েকটি আর্টিকেল পড়বো, ইনশাআল্লাহ।
Article - 1
ইসলামের দৃষ্টিতে সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ
সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণকে ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গিতে এতদুয়ের ওপর একটি ক্রান্তিকাল হিসেবে গণ্য করা হয়। সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর সৃষ্টি। এর প্রমাণস্বরূপই আল্লাহ এ দুটোর ওপর ‘গ্রহণ’ দান করেন। আর এই দুটি আল্লাহর অপার কুদরতের নিদর্শন বৈ অন্য কিছুই নয়।
হাদিস বিশারদ ও ইসলামের গবেষকরা বলেছেন, সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ আল্লাহর পক্ষ থেকে এ সতর্কবাণী পৌঁছে দেয় যে, অন্যান্য সৃষ্টির মতো চন্দ্র-সূর্যও আল্লাহর মাখলুক; এরা উপাসনার যোগ্য নয়। এ দুটি যেহেতু নিজেরাই বিপদাক্রান্ত হয়, তাই এগুলো উপাসনার যোগ্য হতে পারে না। বরং এ দুটিকে মহান আল্লাহকে চেনার মাধ্যম গ্রহণ করাই বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক।
আল্লাহ বলেছেন, ‘তার নিদর্শনগুলোর মধ্যে রয়েছে রাত, দিন, সূর্য ও চন্দ্র। তোমরা সূর্যকে সিজদা কোরো না, আর চন্দ্রকেও না; আল্লাহকে সিজদা করো, যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন, যদি তোমরা নিষ্ঠার সঙ্গে শুধু তারই ইবাদত করে থাকো।’ (সুরা হা-মিম সিজদা, আয়াত : ৩৭)
জাহিলি যুগে মানুষের ধারণা ছিল, কোনো মহাপুরুষের জন্ম-মৃত্যু বা দুর্যোগ-দুর্ভিক্ষ প্রভৃতির বার্তা দিতে সূর্য বা চন্দ্রগহণ হয়। ইসলাম এটাকে একটি ভ্রান্ত ধারণা আখ্যায়িত করেছে। ‘গ্রহণ’-কে সূর্য ও চন্দ্রের ওপর একটি বিশেষ ক্রান্তিকাল বা বিপদের সময় গণ্য করেছে।
এ কারণে সূর্য বা গ্রহণের সময় মুমিনদের অন্যান্য কাজকর্ম বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, তারা যেন এ সময়ে আল্লাহর তাসবিহ ও পবিত্রতা বর্ণনা করে। দোয়া, নামাজ ও আমল ইত্যাদিতে ব্যস্ত থাকে।
হাদিসের আলোকে সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণ
মুগিরা ইবনু শুবা (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.)-এর পুত্র ইবরাহিমের মৃত্যুর দিনটিতেই সূর্যগ্রহণ হয়। তখন আমরা সবাই বলাবলি করছিলাম যে, নবিপুত্রের মৃত্যুর কারণেই এমনটা ঘটেছে। আমাদের কথাবার্তা শুনে রাসুল (সা.) বলেন, ‘সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর অগণিত নিদর্শনগুলোর মধ্যে দুটি নিদর্শন, কারোর মৃত্যু বা জন্মের ফলে চন্দ্রগ্রহণ বা সূর্যগ্রহণ হয় না।’ (বুখারি, হাদিস : ১০৪৩; মুসলিম, হাদিস : ৯১৫)
আবু বকর (রা.) বর্ণনা করেন, আমরা রাসুল (সা.)-এর কাছে ছিলাম। এমন সময় সূর্যগ্রহণ শুরু হয়। রাসুল (সা.) তখন উঠে দাঁড়ালেন এবং নিজের চাদর টানতে টানতে মসজিদে প্রবেশ করেন। আমরাও প্রবেশ করি। তিনি আমাদের নিয়ে সূর্য প্রকাশিত হওয়া পর্যন্ত দু’রাকাত নামাজ আদায় করেন। এরপর তিনি বলেন, ‘কারও মৃত্যুর কারণে কখনো সূর্যগ্রহণ কিংবা চন্দ্রগ্রহণ হয় না। তোমরা যখন সূর্যগ্রহণ দেখবে তখন এ অবস্থা কেটে যাওয়া পর্যন্ত নামাজ আদায় করবে এবং দোয়া করতে থাকবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৯৮৩)
আবু মুসা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) -এর যুগে সূর্যগ্রহণ হয়েছিল। তখন তিনি এই আশঙ্কায় উঠে দাঁড়ালেন যে, কিয়ামতের মহাপ্রলয় বুঝি সংঘটিত হবে। তিনি দ্রুত মসজিদে চলে আসেন। এরপর অত্যন্ত দীর্ঘ কিয়াম, দীর্ঘ রুকু ও দীর্ঘ সিজদার সঙ্গে নামাজ আদায় করেন। আমি আর কোনো নামাজে কখনো এমন (দীর্ঘ) দেখিনি। এরপর রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর এসব নিদর্শনাবলি কারও মৃত্যুর কারণে হয় না, কারও জন্মের কারণেও হয় না। তিনি এগুলো প্রেরণ করেন তার বান্দাদের সতর্ক করার জন্য। যখন তোমরা এসব নিদর্শনাবলির কিছু দেখতে পাও তখন তোমরা আতঙ্কিত হৃদয়ে আল্লাহর জিকির-স্মরণ, দোয়া ও ইস্তিগফারে ব্যস্ত হও। (মুসলিম, হাদিস : ১৯৮৯)
+++++++++++
Article - 2
আল কোরআনের আলোকে সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ
বছরে দুইবার সূর্যগ্রহণ হয় এবং দুইবার চন্দ্রগ্রহণ হয়। এই গ্রহণ কখনো পূর্ণ গ্রাস রূপে দেখা দেয়। আবার কখনো আংশিক গ্রাস হিসেবে পরিলক্ষিত হয়। সূর্যগ্রহণ এবং চন্দ্রগ্রহণ মূলত আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের কুদরতে কামেলার বহিঃপ্রকাশ, যা এ দু’টি নক্ষত্র
বা জ্যোতিষ্কের অবলুপ্তি বা ভুমন্ডেলের বিলয় প্রাপ্তির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
আরবী ভাষায় সূর্যগ্রহণকে ‘কুসুফ’ বলা হয়। ব্যবহারিক অর্থে সূর্যের আলোকরশ্মি বিপিরণের পথে অন্ধকারের ছায়া নিপতিত হওয়াকে কুসুফ বলা হয়। আরবীতে বলা হয় ‘ইনকেসাফুস শামস’ অর্থাৎ সূর্য অন্ধকারের ছায়ায় আপতিত হয়েছে বা ঢাকা পড়েছে। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : ‘তারা আকাশের কোনো খন্ড ভেঙে পড়তে দেখলে বলবে এটা তো এক পুঞ্জীভূত মেঘ।’ -সূরা তুর : আয়াত ৪৪।
পুঞ্জীভূত মেঘ যেমন কালো ও অন্ধকারাচ্ছন্নরূপে পরিদৃষ্ট হয়, তেমনি গ্রহণ চলাকালে সূর্যকেও কালো ও অন্ধকারাচ্ছন্ন দেখা যায়। অপর এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে : (কাফেররা বলে) ‘অথবা তুমি যেমন বলে থাক তদনুযায়ী আকাশকে খন্ড-বিখন্ড করে আমাদের ওপর ফেলবে, অথবা আল্লাহ ও ফিরিশতাগণকে আমাদের সম্মুখে উপস্থিত করবে। অন্যথায় আমরা তোমার ওপর ঈমান আনয়ন করব না।’ এই আয়াতে কারিমায় ‘কিসাফান’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। একই অর্থজ্ঞাপক আয়াত সূরা শোয়ারাতেও এসেছে। ইরশাদ হয়েছে : ‘তুমি যদি সত্যবাদী হও, তাহলে আকাশের একখন্ড আমাদের ওপর ফেলে দাও।’ -সূরা শোয়ারা : আয়াত ১৮০। শুধু তা-ই নয়, সূরা রূমেও কিসাফান শব্দের ব্যবহার লক্ষ করা যায়। ইরশাদ হয়েছে : আল্লাহ তিনি, যিনি বায়ু প্রেরণ করেন, ফলে ইহা মেঘমালাকে সঞ্চারিত করে। তারপর তিনি একে যেমন ইচ্ছা আকাশে ছড়িয়ে দেন। পরে একে খন্ড-বিখন্ড করেন এবং তুমি দেখতে পাও তা হতে বারিধারা নির্গত হয়, তারপর যখন তিনি তার বান্দাদের মধ্যে যাদের নিকট ইচ্ছা ইহা পৌঁছে দেন, তখন তারা হর্সোৎফুল্ল হয়। -সূরা রূম : আয়াত ৪৮।
তাছাড়া সূরা সাবা এর মধ্যেও কিসাফান শব্দটির ব্যবহার লক্ষ করা যায়। ইরশাদ হয়েছে : ‘তারা কি তাদের সম্মুখে ও পশ্চাতে, আসমান ও জমিনে যা আছে তার প্রতি লক্ষ করে না? আমি ইচ্ছা করলে তাদেরসহ ভূমি ধসিয়ে দিতে পারি অথবা তাদের ওপর আকাঙ্ক্ষা পতন ঘটাতে পারি, আল্লাহর অভিমুখী প্রতিটি বান্দার জন্য এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে। -সূরা সাবা : আয়াত ৯। উপরোল্লিখিত আয়াতসমূহে ‘কিসফান’ ও ‘কিসাফান’ শব্দদ্বয় আসলে ‘ইনকিসাফুস শামস’ অর্থাৎ সূর্যের অন্ধকারাচ্ছন্ন হওয়ার প্রতিই ইঙ্গিত প্রদান করে। যাকে আমরা সূর্যগ্রহণ বলে জানি।
আর চন্দ্রগ্রহণকে আরবীতে ‘খুসুফ’ বলা হয়। সূর্য যেমন অন্ধকার ছায়ার আবর্তে পতিত হয়ে অন্ধকার হয়ে যায়, তেমনি চন্দ্রও বছরে দুইবার স্বীয় কক্ষপথে পরিভ্রমণরত অবস্থায় অন্ধকারের ছায়ায় আচ্ছাদিত হয়ে থাকে। ইহার আংশিক রূপ কখনো দৃশ্যমান হয়। আবার কখনো সার্বিক রূপ পরিদৃষ্ট হয়। কালো রঙ বা অন্ধকারের এই হাতছানিকেই চন্দ্রগ্রহণরূপে আখ্যায়িত করা হয়। বস্তুত চন্দ্রগ্রহণের বিষয়টি আল কোরআনে মহান আল্লাহ পাক নিজেও উল্লেখ করেছেন, ইরশাদ হয়েছে : যখন চক্ষু স্থির হয়ে যাবে এবং চন্দ্র জ্যোতিহীন হয়ে পড়বে এবং যখন সূর্য ও চন্দ্রকে একত্র করা হবে। সেদিন মানুষ বলবে, আজ পালাবার পথ কোথায়? -সূরা কিয়ামাহ : ৭, ৮, ৯ ও ১০। এখানে চন্দ্র জ্যোতিহীন হয়ে পড়ার বাস্তব রূপই হচ্ছে চন্দ্রগ্রহণ, যা বছরে দুইবার হয়ে থাকে। এতদ প্রসঙ্গে আরও ইরশাদ হয়েছে : ‘তারপর আমি কারূনকে এবং তার প্রাসাদকে ভ‚গর্ভে প্রোথিত করলাম।’ -সূরা কাসাস : আয়াত ৮১। পরবর্তী আয়াতে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন : যদি আল্লাহ পাক আমাদের প্রতি সদয় না হতেন, তবে আমাদেরও তিনি ভ‚গর্ভে প্রোথিত করতেন।’ -সূরা কাসাস : আয়াত ৮২। বস্তুত ভ‚গর্ভে প্রোথিত হলে বা প্রোথিত করলে প্রতিটি বস্তুই যেমন অন্ধকারের অতল তলে তলিয়ে যায়, তেমনি গ্রহণের সময়ও চাঁদ ও সূর্য অন্ধকারে ঢাকা পড়তে থাকে। আলোহীন ও বিবর্ণ রূপ ধারণ করে। মূলত চাঁদ ও সূর্যের গ্রহণ বিশ্ব মানবতাকে একথা স্মরণ করিয়ে দেয় যে, সমগ্র সৃষ্ট জগত অবশ্যই একদিন অন্ধকার ও বিলয়প্রাপ্ত হবে। এর কোনো অন্যথা হবে না।
+++++++++++++
Article – 3
এই সম্পর্কিত আরো কিছু হাদিস ও আমল (করণীয়-বর্জনীয়)
চন্দ্র, সূর্য, এই আসমান, জমিনসহ সমস্ত মাখলুকাত আল্লাহ তাআলার সৃষ্টি। সূর্যগ্রহণ এবং চন্দ্রগ্রহণ আল্লাহ তাআলার কুদরতের দুটি অন্যতম নিদর্শন। মোটকথা সবকিছুই আল্লাহ তাআলার অপার কুদরতের নিশানা।
জাহিলিয়াতের যামানায় লোকেরা মনে করত বড় কোনো ব্যক্তিত্বের মৃত্যুতে মনে হয় সূর্যগ্রহণ লাগে। মুগিরা ইবনু শু’বা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) এর পুত্র ইবরাহীমের মৃত্যুর দিনটিতে সুর্যগ্রহণ হলো। তখন আমরা সকলে বলাবলি করছিলাম যে, নবীপুত্রের মৃত্যুর কারণেই এমনটা ঘটেছে। আমাদের কথাবার্তা শুনে রাসুল (সা.) বললেন:
إِنَّ
الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ آيَتَانِ مِنْ آياتِ اللهِ، لاَ يَنْخَسِفَانِ لِمَوْتِ
أَحَدٍ وَلاَ لِحَيَاتِهِ، فَإِذَا رَأَيْتُمْ ذلِكَ فَادْعُوا اللهَ وَكَبِّرُوا
وَصَلُّوا وَتَصَدَّقُوا
অর্থ: সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্যে দু’টি নিদর্শন। কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ হয় না। কাজেই যখন তোমরা তা দেখবে তখন তোমরা আল্লাহর নিকট দুআ করবে। তাঁর মহত্ব ঘোষণা করবে এবং সলাত আদায় করবে ও সাদাকা প্রদান করবে। (বুখারি ও মুসলিম।)
সূর্যগ্রহণের নামায
রাসুলুল্লাহ (সা.)
থেকে সালাতুল কুসুফ তথা সূর্যগ্রহণের নামায সম্পর্কে অনেকগুলো সহীহ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তাই এ ব্যাপারে সবাই একমত যে, সালাতুল কুসুফ তথা সূর্যগ্রহণের নামায সুন্নাত। জামাতের সঙ্গে আদায় করাও সুন্নাত।
সালাতুল কুসুফের সময়:
আবু বাকরাহ (রা.)
বলেন-
كُنَّا
عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَانْكَسَفَتْ
الشَّمْسُ فَقَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَجُرُّ
رِدَاءَهُ حَتَّى دَخَلَ الْمَسْجِدَ فَدَخَلْنَا ، فَصَلَّى بِنَا رَكْعَتَيْنِ
حَتَّى انْجَلَتْ الشَّمْسُ ، فَقَالَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : إِنَّ
الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ لا يَنْكَسِفَانِ لِمَوْتِ أَحَدٍ ، فَإِذَا
رَأَيْتُمُوهُمَا فَصَلُّوا وَادْعُوا حَتَّى يُكْشَفَ مَا بِكُمْ
একবার আমরা রাসুল (সা.)
এর কাছে থাকাকালে সূর্যগ্রহণ শুরু হলো। তখন রাসুল (সা.) উঠে দাঁড়ালেন এবং পরিহিত চাদর টানতে টানতে মসজিদে প্রবেশ করলেন। তাঁর সঙ্গে আমরাও প্রবেশ করলাম। তিনি আমাদের নিয়ে দুই রাকাত সালাত আদায় করলেন এবং গ্রহণ ছেড়ে গেলো। তিনি বললেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, কারো মৃত্যুর কারণে কখনও সূর্য বা চন্দ্রগ্রহণ হয় না। তোমরা যখন গ্রহণ দেখবে তখন অবস্থাটি থাকা পর্যন্ত সালাত আদায় করবে এবং দোয়ায় মগ্ন থাকবে। (সহীহ বুখারী)
এই হাদীস থেকে বোঝা গেলো, সালাতুল কুসুফ তথা সূর্যগ্রহণের নামাযের ওয়াক্ত হলো, গ্রহণ লাগা থেকে নিয়ে গ্রহণ শেষ হওয়া পর্যন্ত। তাই যথাসম্ভব সালাতুল কুসুফ দীর্ঘ হওয়া চাই। রাসুলুল্লাহ (সা.)
কুসুফের নামায দীর্ঘ কেরাত, দীর্ঘ রুকু, দীর্ঘ সিজদার মাধ্যমে আদায় করতেন।
সালাতুল কুসুফের নিয়ম:
সালাতুল কুসুফ তথা সূর্যগ্রহণের নামায ২ রাকাত। অন্য সাধারণ নামাযের মতই এই নামায আদায় করতে হয়। যদিও প্রতি রাকাতে ২ রুকু, ৩ রুকু এমনকি ৪ রুকুর মাধ্যমে ব্যতিক্রমী নিয়মে এই নামায পড়ার বিবরণও এসেছে। কিন্তু হানাফী মাযহাবে সাধারণ নিয়মে ২ রাকাত নামায আদায়ই বিধেয়। দলিল এবং যুক্তির আলোকে এটাই অধিক গ্রহণযোগ্য।
আযান-ইকামত ছাড়া মাকরূহ ওয়াক্ত ব্যতীত মসজিদে এই নামায জামাতের সঙ্গে আদায় করা সুন্নাত। তবে দিনের নামায হওয়ার কারণে কিরাত আস্তে পড়াই নিয়ম। হাদীস এবং যুক্তির আলোকেই এটাই বাস্তবসম্মত। সাহাবি হযরত জাবির ইবনে সামুরা (রা.)
বলেন-
صَلَّى
بِنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي كُسُوفِ الشَّمْسِ
رَكْعَتَيْنِ، لَا نَسْمَعُ لَهُ فِيهِمَا صَوْتًا.
অর্থ: রাসুলুল্লাহ (সা.)
আমাদের নিয়ে ২ রাকাত সূর্যগ্রহণের নামায পড়লেন, কিন্তু উভয় রাকাতে আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে কোনো আওয়াজ শুনি নাই। (আবু দাউদ: ১১৮৪, নাসাঈ: ১৪৮৪, তিরমিযী: ৫৬২, ইবনে মাজাহ: ১২৬৪)
كُنْتُ
إِلَى جُنُبِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ كُسِفَتِ
الشَّمْسُ، فَلَمْ أَسْمَعْ لَهُ قِرَاءَةً.
অর্থ: আমি সূর্যগ্রহণের দিন রাসুলুল্লাহ (সা.)
এর পাশে দাঁড়িয়েছি (নামায আদায় করেছি), কিন্তু রাসুল (সা.) থেকে কিরাত শুনি নি। (তাবারানী: ১১৬১২)
এখান থেকে বোঝা গেলো সালাতুল কুসুফে কিরাত আস্তে হবে। তবে সশব্দে কিরাত পড়াও জায়েয আছে।
সালাতুল কুসুফে ‘গ্রহণ’ শেষ হওয়া পর্যন্ত দীর্ঘ নামায পড়া সুন্নাত। তবে গ্রহণ শেষ হবার আগে নামায শেষ করে নেয়াতেও কোনো সমস্যা নেই। তবে বাকি সময়টুকু যিকির, দুআ, ইস্তেগফার করে কাটানো উচিত।
চন্দ্রগ্রহণের নামায
রাসুলুল্লাহ (সা.)
থেকে চন্দ্রগ্রহণের নামাযও প্রমাণিত রয়েছে। তবে হানাফী মাযহাব মতে সালাতুল খুসুফ জামাতের সঙ্গে নয়, বরং একাকি নিজ ঘরে পড়াই নিয়ম। তাই চন্দ্রগ্রহণের সময় আমাদেরও নিজ নিজ ঘরে একাকি চন্দ্রগ্রহণের নামায আদায় করা উচিত। এবং এটা সুন্নাতও।
ﺃَﻣَّﺎ
ﻓِﻲ ﺧُﺴُﻮﻑِ ﺍﻟْﻘَﻤَﺮِ ﻓَﻴُﺼَﻠُّﻮﻥَ ﻓِﻲ ﻣَﻨَﺎﺯِﻟِﻬِﻢْ؛ ﻟِﺄَﻥَّ ﺍﻟﺴُّﻨَّﺔَ ﻓِﻴﻬَﺎ
ﺃَﻥْ ﻳُﺼَﻠُّﻮﺍ ﻭُﺣْﺪَﺍﻧًﺎ
অর্থ: চন্দ্রগ্রহণের সময় ঘরে নামায আদায় করা হবে। কেননা সুন্নাহ হচ্ছে, তখন একাকি নামায পড়া। (বাদায়েউস সানায়ে’: ১/২৮২)
নারীদের করণীয়:
নারীরাও সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণের সময় ঘরে একাকি নামায আদায় করবেন। গ্রহণের বাকি সময়টুকু যিকর-আযকার ও তাসবিহ-তাহলিলে মাশগুল থাকবেন।
সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণ-কেন্দ্রিক কুসংস্কার
সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণকে কেন্দ্র করে আমাদের সমাজে কিছু কুসংস্কার, বিভ্রান্তি ও অমূলক ধারণা রয়েছে। ‘এ সময় খাওয়া-দাওয়া করা যাবে না’। ‘গর্ভবতী মায়েরা ঘরের কাজকর্ম করতে পারবে না’। সমাজে আরো নানা রকমের কুসংস্কারমূলক কথা প্রচলিত রয়েছে। মূল কথা হচ্ছে, চন্দ্র বা সূর্যগ্রহণের সময় গর্ভবতী মায়েদের ভয় কিংবা আশঙ্কার কিছু নেই। অন্যদিনের মতো পানাহারসহ স্বাভাবিক সব কাজকর্ম করতে পারবেন। লোকমুখে যা শোনা যায়, সব ভ্রান্ত বিশ্বাস ও কুসংস্কার।
‘গ্রহণ’কে ঘিরে এমন বিশ্বাসও রয়েছে, যে কথাগুলোর উপর বিশ্বাস রাখলে ঈমানের ক্ষতি হবার সমূহ সম্ভাবনা আছে। মোটকথা এ সময় শরীয়ত কারো জন্যে কোনো বাধ্যবাধকতা বা কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করে নি। তাই এসব ভ্রান্ত বিশ্বাস থেকে বেঁচে থাকা সবার জন্যে কর্তব্য।
লেখক: পরিচালক, ইসলামিক ফিকহ ইন্সটিটিউট, সিলেট
********************
Article – 4
বিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যার সাথে সমন্বয় :
চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণ হলো আল্লাহ তাআলা কর্তৃক নির্ধারিত একটি প্রক্রিয়া। চাঁদ যখন পরিভ্রমণ অবস্থায় কিছুক্ষণের জন্য পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে এসে পড়ে, তখন পৃথিবীর কোনো দর্শকের কাছে কিছু সময়ের জন্য সূর্য আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে অদৃশ্য হয়ে যায়। এটাই সূর্যগ্রহণ (Solar
eclipse) বা কুসুফ। আর পৃথিবী যখন তার পরিভ্রমণ অবস্থায় চাঁদ ও সূর্যের মাঝখানে এসে পড়ে, তখনই পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে চাঁদ কিছুক্ষণের জন্য অদৃশ্য হয়ে যায়। এটাই চন্দ্রগ্রহণ (Lunar eclipse) বা খুসুফ।
নবীজি (সা.) তাঁর উম্মতকে চন্দ্র বা সূর্যগ্রহণে আতঙ্কিত হয়ে তা থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য নামাজের নির্দেশ দিয়েছেন। আধুনিক বিজ্ঞানও বলছে যে সত্যি চন্দ্র বা সূর্যগ্রহণ পৃথিবীর জন্য আতঙ্কের বিষয়। সৌরজগতে মঙ্গল ও বৃহস্পতির কক্ষপথের মধ্যবলয়ে অ্যাস্টেরয়েড
(Asteroid), মিটিওরাইট (Meteorite), উল্কাপিণ্ড প্রভৃতি পাথরের এক সুবিশাল বেল্ট আছে বলে বিজ্ঞানীরা ১৮০১ সালে আবিষ্কার করেন। এ বেল্টে ঝুলন্ত একেকটা পাথরের ব্যাস ১২০ থেকে ৪৫০ মাইল। গ্রহাণুপুঞ্জের এ পাথরখণ্ডগুলো পরস্পর সংঘর্ষের ফলে অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাথরখণ্ড প্রতিনিয়ত পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসে। কিন্তু সেগুলো বায়ুমণ্ডলে এসে জ্বলে-পুড়ে ভস্ম হয়ে যায়। কিন্তু গ্রহাণুপুঞ্জের বৃহদাকারের পাথরগুলো যদি পৃথিবীতে আঘাত করে, তাহলে ভয়াবহ হুমকির সম্মুখীন হবে পৃথিবী। বিজ্ঞানীরা বলেন, সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণের সময় সূর্য, চন্দ্র ও পৃথিবী একই সমান্তরালে, একই অক্ষ বরাবর থাকে বলে এ সময়ই গ্রহাণুপুঞ্জের ঝুলন্ত বড় পাথরগুলো পৃথিবীতে আঘাত হানার আশঙ্কা বেশি। বৃহদাকারের পাথর পৃথিবীর দিকে ছুটে এলে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের পক্ষে তা প্রতিহত করা অসম্ভব। ধ্বংসই হবে পৃথিবীর পরিণতি।
--------------------------------
সংযোজন: উপরোক্ত পুরো আর্টিকেলটি থেকে আমরা যা বুঝলাম,
তা হলো মুমিন হিসেবে সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্র গ্রহণের সময় এটাকে আল্লাহর বিশেষ নিদর্শন
হিসেবে ভয় পেয়ে নামাজে দাঁড়াতে হবে। তার পর আমরা এটার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের কথা চিন্তা
করবো। আর এই আর্টিকেলটি সেভাবেই সাজানো হয়েছে। প্রথমেই মুত্তাকী মুমিনদের জন্য নিদর্শন,
ভয় ও আমলের হাদীসগুলোকে আনা হয়েছে। তারপর ইসলামিক ব্যাখ্যা। এরপর যারা আরেকটু বেশি
জানতে চায়, তাদের জন্য বৈজ্ঞানিক ব্যাক্ষাটাও দেয়া হয়েছে।
অর্থাৎ তিন শ্রেণীর মুমিনের জন্যই আলোচনা রাখা হয়েছে।
এখন প্রশ্ন হলো, সমতল পৃথিবীতে এটা কিভাবে সম্ভব?
অসম্ভবের কিছু নেই। চাদ ও সূর্য দুটোই প্রায় একই আকৃতির। সুতরাং একটা আরেকটার সামনে
চলে আসলে, গ্রহণ হওয়াতে কোনো সমস্যা নেই। বিষয়টা আরো ভালো করে বুঝতে চাইলে এই ভিডিওটি
(FLAT EARTH - ECLIPSE
দেখতে পারেন।
তবে এখানে যেই (round) মডেলটা দেখানো হয়েছে, সেটা নিয়ে যথেষ্ট তর্ক বিতর্ক আছে। এটা
শুধু এজন্যই দেখতে বলছি, যেন বিষয়টা আপনারা বুঝতে পারেন। এটাকে চূড়ান্ত মডেল হিসেবে
না নেয়ার অনুরোধ রইলো।
আল্লাহ আমাদেরকে সত্য বুঝার তৌফিক দান করুন। আমিন।
Comments
Post a Comment