সূর্য কি চক্রাকারে ঘুরছে, নাকি দিন শেষে ডুবে যাচ্ছে?

 


সূর্য ঘুরার দলীলগুলো হলঃ

আল্লাহ তাআলা বলেন,

)فَإِنَّ اللَّهَ يَأْتِي بِالشَّمْسِ مِنْ الْمَشْرِقِ فَأْتِ بِهَا مِنْ الْمَغْرِبِ(

আল্লাহ তাআলা সূর্যকে পূর্ব দিক থেকে উদিত করেন তুমি পারলে পশ্চিম দিক থেকে উদিত কর” (সূরা বাকারাঃ ২৫৮) সূর্য পূর্ব দিক থেকে উঠার মাধ্যমে প্রকাশ্য দলীল পাওয়া যায় যে, সূর্য পৃথিবীর উপর পরিভ্রমণ করে

) আল্লাহ বলেনঃ

فَلَمَّا رَأَى الشَّمْسَ بَازِغَةً قَالَ هَذَا رَبِّي هَذَا أَكْبَرُ فَلَمَّا أَفَلَتْ قَالَ يَاقَوْمِ إِنِّي بَرِيءٌ مِمَّا تُشْرِكُونَ “
অতঃপর যখন সূর্যকে চকচকে অবস্থায় উঠতে দেখলেন তখন বললেনঃ এটি আমার পালনকর্তা, এটি বৃহত্তর অতপর যখন তা ডুবে গেল, তখন বলল হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা যেসব বিষয়ে শরীক কর আমি ওসব থেকে মুক্ত” (সূরা আনআমঃ ৭৮) এখানে নির্ধারণ হয়ে গেল যে, সূর্য অদৃশ্য হয়ে যায় একথা বলা হয়নি যে, সূর্য থেকে পৃথিবী ডুবে গেল পৃথিবী যদি ঘূরত তাহলে অবশ্যই তা বলা হত

) আল্লাহ বলেনঃ

)وَتَرَى الشَّمْسَ إِذَا طَلَعَتْ تَتَزَاوَرُ عَنْ كَهْفِهِمْ ذَاتَ الْيَمِينِ وَإِذَا غَرَبَتْ تَقْرِضُهُمْ ذَاتَ الشِّمَالِ(

তুমি সূর্যকে দেখবে, যখন উদিত হয়, তাদের গুহা থেকে পাশ কেটে ডান দিকে চলে যায় এবং যখন অস্ত যায়, তাদের থেকে পাশ কেটে বাম দিকে চলে যায়” (সূরা কাহাফঃ ১৭) পাশ কেটে ডান দিকে বা বাম দিকে চলে যাওয়া প্রমাণ করে যে, নড়াচড়া সূর্য থেকেই হয়ে থাকে পৃথিবী যদিনড়াচড়া করত তাহলে অবশ্যই বলতেন সূর্য থেকে গুহা পাশ কেটে যায় উদয় হওয়া এবং অস্ত যাওয়াকে সূর্যের দিকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে এটা থেকে বুঝা যায় যে, সূর্যই ঘুরে পৃথিবী নয়

) আল্লাহ বলেনঃ

)وَهُوَ الَّذِي خَلَقَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ كُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ(

এবং তিনিই দিবা-নিশি এবং চন্দ্র-সূর্য সৃষ্টি করেছেন সবাই আপন আপন কক্ষ পথে বিচরণ করে” (সূরা আমবীয়াঃ ৩৩)

ইবনে আব্বাস বলেন, লাটিম যেমন তার কেন্দ্র বিন্দুর চার দিকে ঘুরতে থাকে, সূর্যও তেমনিভাবে ঘুরে

) আল্লাহ বলেনঃ

)يُغْشِي اللَّيْلَ النَّهَارَ يَطْلُبُهُ حَثِيثًا(

তিনি রাতকে আচ্ছাদিত করেন দিনের মাধ্যমে, দিন দৌড়ে দৌড়ে রাতের পিছনে আসে” (সূরা রাফঃ ৫৪) আয়াতে রাতকে দিনের অনুসন্ধানকারী বলে ব্যাখ্যা করা হয়েছে অনুসন্ধানকারী পিছনে পিছনে দ্রুত অনুসন্ধান করে থাকে এটা জানা কথা যে, দিবা-রাত্রি সূর্যের অনুসারী

) আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

)خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ بِالْحَقِّ يُكَوِّرُ اللَّيْلَ عَلَى النَّهَارِ وَيُكَوِّرُ النَّهَارَ عَلَى اللَّيْلِ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ كُلٌّ يَجْرِي لِأَجَلٍ مُسَمًّى أَلَا هُوَ الْعَزِيزُ الْغَفَّار(

অর্থঃতিনি আসমান জমিন সৃষ্টি করেছেন যথাযথভাবে তিনি রাত্রিকে দিবস দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং দিবসকে রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং তিনি সূর্য চন্দ্রকে কাজে নিযুক্ত করেছেন প্রত্যেকেই বিচরণ করে নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত জেনে রাখুন, তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল” (সূরা যুমারঃ ) আয়াতের মাধ্যমে আমরা জানতে পারলাম যে, পৃথিবীর উপরে দিবা-রাত্রি চলমান রয়েছে পৃথিবী যদি ঘুরতো তাহলে তিনি বলতেন, দিবা-রাত্রির উপর পৃথিবীকে ঘূরান আল্লাহ তাআলা বলেন, “সূর্য এবং চন্দ্রের প্রত্যেকেই চলমান এই সমস্ত দলীলের মাধ্যমে জানা গেল যে, সুস্পষ্টভাবেই সূর্য চন্দ্র এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলাচল করছে কথা সুস্পষ্ট যে, চলমান বস্তকে বশীভুত করা এবং কাজে লাগানো একস্থানে অবস্থানকারী বস্তকে কাজে লাগানোর চেয়ে অধিক যুক্তিসঙ্গত

) আল্লাহ বলেনঃ

)وَالشَّمْسِ وَضُحَاهَا وَالْقَمَرِ إِذَا تَلَاهَا(

শপথ সূর্যের তার কিরণের, শপথ চন্দ্রের যখন তা সূর্যের পশ্চাতে আসে” (সূরা আশ্‌-শামসঃ -) এখানে বলা হয়েছে যে, চন্দ্র সূর্যের পরে আসে এতে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, সূর্য এবং চন্দ্র চলাচল করে এবং পৃথিবীর উপর ঘুরে পৃথিবী যদি চন্দ্র বা সূর্যের চার দিকে ঘুরত, তাহলে চন্দ্র সূর্যকে অনুসরণ করতনা বরং চন্দ্র একবার সূর্যকে, আর একবার সূর্য চন্দ্রকে অনুসরণ করত কেননা সূর্য চন্দ্রের অনেক উপরে এই আয়াত দিয়ে পৃথিবী স্থির থাকার ব্যাপারে দলীল গ্রহণ করার ভিতরে চিন্তা-ভাবনার বিষয় রয়েছে

) মহান আল্লাহ বলেনঃ

)وَالشَّمْسُ تَجْرِي لِمُسْتَقَرٍّ لَهَا ذَلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ, وَالْقَمَرَ قَدَّرْنَاهُ مَنَازِلَ حَتَّى عَادَ كَالْعُرْجُونِ الْقَدِيمِ, لَا الشَّمْسُ يَنْبَغِي لَهَا أَنْ تُدْرِكَ الْقَمَرَ وَلَا اللَّيْلُ سَابِقُ النَّهَارِ وَكُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ(

সূর্য তার নির্দিষ্ট অবস্থানে আবর্তন করে এটা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞ আল্লাহর নির্ধারণ চন্দ্রের জন্যে আমি বিভিন্ন মনযিল নির্ধারিত করেছি অবশেষে সে পুরাতন খর্জুর শাখার অনুরূপ হয়ে যায় সূর্যের পক্ষে চন্দ্রকে নাগাল পাওয়া সম্ভব নয় রাতের পক্ষেও দিনের অগ্রবতী হওয়া সম্ভব নয় প্রত্যেকেই আপন আপন কক্ষপথে পরিভ্রমণ করে” (সূরা ইয়াসীনঃ ৩৮-৪০) সূর্যের চলা এবং এই চলাকে মহা পরাক্রমশালী আল্লাহর নির্ধারণ বলে ব্যাখ্যা করা এটাই প্রমাণ করে যে, সূর্য প্রকৃতভাবেই চলমান আর এই চলাচলের কারণেই দিবা-রাত্রি এবং ঋতুর পরিবর্তন হয় চন্দ্রের জন্য মনযিল নির্ধারণ করার অর্থ এই যে, সে তার মনযিলসমূহে স্থানান্তরিত হয় যদি পৃথিবী ঘুরত, তাহলে পৃথিবীর জন্য মনযিল নির্ধারণ করা হত চন্দ্রের জন্য নয় সূর্য কর্তৃক চন্দ্রকে ধরতে না পারা এবং দিনের অগ্রে রাত থাকা সূর্য, চন্দ্র, দিন এবং রাতের চলাচলের প্রমাণ বহন করে

) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় আবু যরকে বলেছেনঃ

أَتَدْرِي أَيْنَ تَذْهَبُ قُلْتُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ قَالَ فَإِنَّهَا تَذْهَبُ حَتَّى تَسْجُدَ تَحْتَ الْعَرْشِ فَتَسْتَأْذِنَ فَيُؤْذَنُ لَهَا وَيُوشِكُ أَنْ تَسْجُدَ فَلَا يُقْبَلَ مِنْهَا وَتَسْتَأْذِنَ فَلَا يُؤْذَنَ لَهَا يُقَالُ لَهَا ارْجِعِي مِنْ حَيْثُ جِئْتِ فَتَطْلُعُ مِنْ مَغْرِبِهَا

হে আবু যর! তুমি কি জান সূর্য যখন অস্ত যায় তখন কোথায় যায়? আবু যার বললেন, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই ভাল জানেন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় আরশের নীচে গিয়ে সেজদায় লুটিয়ে পড়ে এবং পুনরায় উদিত হওয়ার অনুমতি চায় অতঃপর তাকে অনুমতি দেয়া হয় সে দিন বেশী দূরে নয়, যে দিন অনুমতি চাবে কিন্তু তাকে অনুমতি দেয়া হবে না তাকে বলা হবে যেখান থেকে এসেছ, সেখানে ফেরত যাও অতঃপর সূর্য পশ্চিম দিক থেকেই উদিত হবেএটি হবে কিয়ামতের পূর্ব মুহূর্তে আল্লাহ সূর্যকে বলবেন, যেখান থেকে এসেছ সেখানে ফেরত যাও, অতঃপর সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদিত হওয়ার বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, সূর্য পৃথিবীর উপরে ঘুরছে এবং তার এই ঘুরার মাধ্যমেই উদয়-অস্ত সংঘটিত হচ্ছে

১০) অসংখ্য হাদীছের মাধ্যমে জানা যায় যে, উদয় হওয়া, অস্ত যাওয়া এবং ঢলে যাওয়া এই কাজগুলো সূর্যের সাথে সম্পৃক্ত এগুলো সূর্য থেকে প্রকাশিত হওয়া খুবই সুস্পষ্ট পৃথিবী হতে নয়

হয়তো ব্যাপারে আরো দলীল-প্রমাণ রয়েছে সেগুলো আমার এই মুহূর্তে মনে আসছেনা তবে আমি যা উল্লেখ করলাম, এই বিষয়টির দ্বার উম্মুক্ত করবে এবং আমি যা উদ্দেশ্য করেছি, তা পূরণে যথেষ্ট হবে আল্লাহর তাওফীক চাচ্ছি!

গ্রন্থঃ ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম*
*
অধ্যায়ঃ ঈমান*

M:W: প্রচলিত ফ্লাট আর্থারদের মডেলে সূর্যকে চক্রাকারে ঘুরতে দেখা যায় অনেক আরবরাও  এমনটা মনে করে আর এক্ষেত্রে এটাই (ইবনে আব্বাস রা: এর বক্তব্যটি) সম্ভবত একমাত্র দলিল

ইবনে আব্বাস (রা:) বলেন, লাটিম যেমন তার কেন্দ্র বিন্দুর চার দিকে ঘুরতে থাকে, সূর্যও তেমনিভাবে ঘুরে

এই বক্তব্যটি ছাড়া উপরোক্ত পুরো আলোচনাই পূর্ব দিক থেকে সূর্য উদয় হয়ে, পশ্চিমে অস্ত যাওয়াকেই ইঙ্গিত করেআর আমরাও এমনটাই মনে করি  বাকি আল্লাহু আলম

 






Comments

  1. ইবনে আব্বাস সাহাবীর উক্তিটি কোন হাদীসে এসেছে?

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

পোলিও টিকাতে মূল উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয় বানরের কিডনি:

আপনার শিশুকে টিকা দিতে চান? তার আগে সত্য জানুন!

ডাইনোসর নিয়ে যত জল্পনা কল্পনা: