মানুষ সৃষ্টি করার আগে, আল্লাহ জ্বীন (extraterrestrials beings), ফেরেশতা এবং অন্যান্য অনেক জীবজন্তু ও জড়কে সৃষ্টি করেছেন। ইবলিস ছিল একজন জ্বীন, যাকে আগুনের ধোঁয়াহীন শিখা থেকে তৈরি করা হয়। পৃথিবীবাসী জ্বীনজাতিকে আল্লাহ তাঁকে মাবুদ হিসেবে মেনে নেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। আল্লাহ জ্বীনদের মাঝে রসূল প্রেরণ করেছিলেন তাদেরকে সঠিক পথ দেখানোর জন্য। কিন্তু পৃথিবীতে তারা দুর্নীতিতে লিপ্ত ছিল। জ্বীনরা তাদের নিজেদের মধ্যে কে বড় এবং কে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করতে যুদ্ধে লিপ্ত ছিল। তাদের মধ্যে খুব কম সংখ্যক জ্বীন ভালো ছিল, এবং ইবলিস তাদের মধ্যে ত্রকজন আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দা ছিল। পৃথিবীতে অনিষ্ট সৃষ্টিকারী জ্বীনদের বিরুদ্ধে ইবলিস যুদ্ধ করেছিল যে কারনে আল্লাহ ইবলিসকে ফেরেশতাগণের নিকটবর্তী থাকার অনুমতি দিয়েছিলেন। আল্লাহ তখন সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি ফেরেশতাদেরকে পৃথিবীতে পাঠাবেন এবং জ্বীন জগতের অবাধ্য জ্বীনদের নির্মূল করবেন। জ্বীনদের মাঝে মাত্র কয়েকজন জ্বীন বাকি ছিল এবং এদের থেকে পরে আবার জ্বীনদের বংশ শুরু হয়। আগেত্ত উল্লেখ করেছি, জ্বীনদের জীবনকাল মানুষ থেকে দীর্ঘ।
একদিন হঠাৎ, আল্লাহ ফেরেশতাদের কাছে তাঁর নতুন পরিকল্পনার কথা প্রকাশ করলেন এবং বললেন, "আমি পৃথিবীতে নতুন খলিফা (উত্তরাধিকারী) বানাতে যাচ্ছি।" ইবলিস বিস্মিত হয় যখন সে জানতে পারলো যে, পৃথিবীতে জ্বীন জগতের পাশাপাশি আরেকটি নতুন জগত সৃষ্টি করবেন ত্রবং আল্লাহর নতুন সৃষ্টি “মানুষ” পৃথিবীর সেই জগতের উত্তরাধিকারী হবে। ইবলিস হাজার বছর আল্লাহর উপাসনা করেছিল কারণ সে সমগ্র পৃথিবীর দায়িত্বে থাকার ক্ষমতা চেয়েছিল। আল্লাহ জানতেন ইবলিসের মনের কথা এবং তিনি তাকে পরীক্ষা করতে চেয়েছিলেন। ইবলীস ও ফেরেশতাগণকে যখন প্রথম মানব আদমের দিকে নত হতে বলা হল তখন প্রত্যেক ফেরেশতা সিজদা করেছিলেন শুধুমাত্র ইবলিস ব্যতীত। এটি শুধুমাত্র একটি সিজদা ছিল নয়; এটি আল্লাহর তৈরি অন্য সৃষ্টিকে সম্মান দেখানো যার দেহে আল্লাহ নিজে ফুঁ দিয়ে “আত্মা” দিয়েছেন। ইবলিস বিশ্বাস করত সে মাটির তৈরি মানুষ থেকে শ্রেষ্ঠ তাই সে আল্লাহর অবাধ্যতা করেছিল। কিন্তু আল্লাহ গর্ব এবং অহংকার অপছন্দ করেন, এবং তাই ইবলিস ফেরেশতাদের কাছাকাছি থাকার মর্যাদা হারালো। ফেরেশতারা মেনে নিয়েছিল মানুষকে পৃথিবীর নেতা/প্রতিনিধি হিসেবে কিন্তু ইবলিস তা চায়নি। ইবলিস ও জ্বীনজগতের কিছু সংখ্যক জ্বীন তখন “মানুষের চেয়ে জ্বীনরা শ্রেষ্ঠ” -প্রমাণ করার জন্য আল্লাহর অবাধ্য হয়ে জাদুবিদ্যা শিখলো যার মাধ্যমে তারা পৃথিবীর মাটি, বায়ু, পানি ও আগুন-এই চারটি শক্তি বা উপাদানকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা লাভ করল। ত্রভাবেই ইবলিস আল্লাহর অবাধ্য “কাফের” শয়তানে পরিণত হত। আল্লাহ ইবলিস ও তার সহযোগী সেই কাফের জ্বীনদের পৃথিবীর জ্বীন ও মানুষ উভয় জগতের নিয়ামত থেকে বঞ্চিত করলেন এবং তাদের জাহান্নামী করলেন। কিন্তু ইবলিস ও তার সহযোগী জ্বীন-শয়তানরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা না করে বরং তারা মানব ও জ্বীনজাতিকে আল্লাহর অবাধ্য করার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হল। ইবলিস আল্লাহর কাছে জ্বীন এবং মানবজাতিকে পরীক্ষা করার জন্য সময় চাইলো বিচারের দিন পর্যন্ত এবং আল্লাহ তাতে রাজি হন। তারপর শুরু হল মানব ও জ্বীন-এই দুই পৃথিবীবাসীর পরীক্ষা। আল্লাহ মানব ও জ্বীন উভয় জগতে ভিন্ন ভিন্ন নদী, সাগর, পাহাড়, চন্দ্র, সূর্য ইত্যাদি নিয়ামত দান করেছেন। আল্লাহ বলেছেন: “অতএব, তোমরা উভয়ে (মানুষ ও জ্বীন) তোমাদের পালনকর্তার কোন কোন অবদানকে অস্বীকার করবে ?” (সুরা রাহমান) ত্রবার এই পরীক্ষায় আগুনের তৈরি জ্বীন ও মাটির তৈরি মানুষকে প্রমাণ করতে হবে তাদের মধ্যে কে কর্মে অধিক শ্রেষ্ঠ!
আল্লাহ বলেছেন:”যিনি সৃষ্টি করেছেন মরণ ও জীবন, যাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন- কে তোমাদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ঠ? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাময়”। (সূরা মুলক, ১-২)
আল্লাহর অভিশাপপ্রাপ্ত ইবলিস তার সারা জীবনের ইবাদাতের বিনিময়ে পুরস্কার হিসেবে আল্লাহ তাআলার নিকট কিছু জিনিস প্রার্থনা করলঃ
১)পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত জ্বীন এবং মানবজাতিকে পরীক্ষা করার জন্য দীর্ঘ আয়ু ও বিশেষ কিছু ক্ষমতা,
২) পৃথিবীতে আদম সন্তানের চেয়ে বেশি সন্তানের অধিকারী,
৩) তার সহযোগী হিসেবে আল্লাহর অবাধ্য মানুষ-শয়তান ও জ্বীন-শয়তান এবং আল্লাহর বান্দা “মুসলমান”দের আক্রমণ করার জন্য মানুষ-শয়তান ও জ্বীন-শয়তানদের শক্তিশালী সেনাবাহিনী (অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনী),
৪) মানুষের সাথে জ্বীন-শয়তানদের বংশবিস্তার ও পার্থিব সম্পদ ভোগ,
৫ মানবদেহে জ্বীন-শয়তানদের প্রবেশ করার ক্ষমতা,
৬) ইবলিস ও তার সহযোগী জ্বীন-শয়তানরা তাদের জগত থেকে মানুষকে দেখতে পাওয়ার ক্ষমতা এবং
৭) মানুষের কণ্ঠস্বর অনুকরণ করে মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয়ার ক্ষমতা। যখন মানুষের জগতে কোন মানবশিশু জন্মগ্রহণ করে তখন জ্বীনদের জগতে তার মতই একটি ক্বারিন জ্বীনশিশুর জন্ম হয়। জন্মের পর প্রতিটি মানব ও জ্বীন শিশু মুসলমান থাকে কিন্তু পরবর্তীতে তারা নিজের সিদ্ধান্তে আল্লাহর বিরুদ্ধাচারন করতে পারে। মানবজাতিকে পরীক্ষা করার জন্য আল্লাহ শয়তানকে ক্ষমতা দিলেন এবং বললেন "মানুষের বুক (অন্তর) হবে তোর বাসা", যেখানে ক্বারিন জ্বীন-শয়তান কুমন্ত্রণা দেয়। মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয়ার ক্ষমতা দিলেও আল্লাহ ক্বারিন জ্বীনকে কুমন্ত্রণা দিতে আদেশ দেননি। যেসব সীমালঙ্ঘনকারী, ক্ষমতার অপব্যবহারকারী ও জাদুচর্চাকারী ক্বারিন জ্বীন তাদের জগত থেকে মানুষের জগত দেখার চেষ্টা করে এবং মানুষকে কুমন্ত্রণা দেয়, তারা আল্লাহর অবাধ্য হয়ে তাদের নেতা ইবলিসের পরিকল্পনামাফিক মানুষকে এক আল্লাহর সরল পথ থেকে পথভ্রষ্ট করে। আল্লাহ্ সুবহানওয়া তা'আলা বলেছেন: ''আমি তো বহু জ্বীন ও মানুষকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি, তাদের হৃদয় আছে কিন্তু তা দিয়ে উপলব্ধি করে না, তাদের কান আছে কিন্তু তা দিয়ে শুনে না, তারা জন্তু জানোয়ারের মত, বরং এর চেয়েও পথভ্রষ্ট, তারাই হল উদাসীন।'' (সূরা আরাফ, আয়াত: ১৭৯) যখন ক্বারিন জ্বীন-শয়তান মানুষকে মন্দ কাজ করায় উৎসাহিত করে তখন মুমিনরা আল্লাহকে স্মরণ করে।আল্লাহ বলেন, 'শয়তানের কুমন্ত্রণা যদি তোমাকে প্ররোচিত করে, তবে তুমি আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা কর, তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ'(সুরা আ'রাফ)। প্রতিটি কাজের আগে মুসলমানরা ““আ'উযু বিল্লাহিমিনাশ-শাইতানির রাযীম বিসমিল্লাহ রাহমানির রাহিম” বলে যেন শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে তাদের অন্তর ও নফস দূরে থাকতে পারে।যারা আল্লাহর আদেশের বদলে শয়তানের কুমন্ত্রণায় সাড়া দেয় তাদের উদ্দেশ্যে আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ “নিশ্চয় যারা সোজা পথ ব্যক্ত হওয়ার পর তৎপ্রতি পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে, শয়তান তাদের জন্যে তাদের কাজকে সুন্দর করে দেখায় এবং তাদেরকে মিথ্যা আশা দেয়।” (Muhammad: 25) “শয়তান তাদেরকে বশীভূত করে নিয়েছে, অতঃপর আল্লাহর স্মরণ ভূলিয়ে দিয়েছে। তারা শয়তানের দল। সাবধান, শয়তানের দলই ক্ষতিগ্রস্ত।” (Al-Mujaadila: 19) আল্লাহ উল্লেখ করেছেন: “মৃত্যুযন্ত্রণা নিশ্চিতই আসবে। এ থেকেই তো তুমি টালবাহানা করতে। এবং শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেয়া হবে এটা হবে ভয় প্রদর্শনের দিন। প্রত্যেক ব্যক্তি আগমন করবে। তার সাথে থাকবে চালক ও কর্মের সাক্ষী। তুমি তো এই দিন সম্পর্কে উদাসীন ছিলে। এখন তোমার কাছ থেকে যবনিকা সরিয়ে দিয়েছি। ফলে আজ তোমার দৃষ্টি সুতীক্ষ্ন। তার সঙ্গী ফেরেশতা বলবেঃ আমার কাছে যে, আমলনামা ছিল, তা এই। তোমরা উভয়েই নিক্ষেপ কর জাহান্নামে প্রত্যেক অকৃতজ্ঞ বিরুদ্ধবাদীকে, যে বাধা দিত মঙ্গলজনক কাজে, সীমালঙ্ঘনকারী, সন্দেহ পোষণকারীকে। যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্য গ্রহণ করত, তাকে তোমরা কঠিন শাস্তিতে নিক্ষেপ কর। ‘ক্বারিন’ (তার সঙ্গী জ্বীন-শয়তান) বলবেঃ হে আমাদের পালনকর্তা, আমি তাকে অবাধ্যতায় লিপ্ত করিনি। বস্তুতঃ সে নিজেই ছিল সুদূর পথভ্রান্তিতে লিপ্ত। আল্লাহ বলবেনঃ আমার সামনে বাকবিতন্ডা করো না, আমি তো পূর্বেই তোমাদেরকে আযাব দ্বারা ভয় প্রদর্শন করেছিলাম। আমার কাছে কথা রদবদল হয় না এবং আমি বান্দাদের প্রতি জুলুমকারী নই।” (সুরা ক্বাফ)
জ্বীন এবং মানবজাতিকে পরীক্ষা করার জন্য আল্লাহ শয়তানকে বললেন: ”তুই সত্যচ্যুত কর মানুষের মধ্য থেকে যাকে পারিস নিজের কণ্ঠস্বরে প্রলোভন দ্বারা, তোর নিজের অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনী নিয়ে তাদেরকে আক্রমণ কর, তাদের অর্থ-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে শরীক বা ভাগ বসা এবং তাদেরকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দে। ছলনা ছাড়া শয়তান মানুষকে কোন প্রতিশ্রুতি দেয় না। আমার বান্দাদের উপর তোর কোন ক্ষমতা নেই।” শয়তান বললঃ “আমি সামান্য সংখ্যক ছাড়া আদমের বংশধরদেরকে সমূলে ধ্বংস করে দেব। আমি তাদের বিভ্রান্ত করব। তারা আপনার অবাধ্য হবে।” আল্লাহ বললেনঃ ”যারা তোকে অনুসরন করবে তারা তোর সাথে জাহান্নামে যাবে।” (সূরা বনী ইসরাঈল) আল্লাহ পৃথিবীতে মুসলমানদের শয়তানের উপর জয় দিয়েছেন। তার মানে কোন মুসলমান যদি ধৈর্য ধারন করে আল্লাহর আদেশ মান্য করে আর আল্লাহর পথে জিহাদ করে তবে মুসলমানরা জয়ী হবে আর শয়তানরা পরাজিত হবে। অন্যদিকে, আল্লাহ পৃথিবীবাসীকে যেভাবে চলার নির্দেশ দিয়েছেন তা অমান্য করে যারা ইবলিসের কথা অনুযায়ী চলে আল্লাহ সে সমস্ত জালিমদের পথপ্রদর্শক করেন না।
আল্লাহর নিজের কোন ”সময়” নেই- তিনি অনন্ত। ‘নির্দিষ্ট সময়” জিনিসটাই তৈরি করা হয়েছে মানুষ আর জ্বীনকে পরীক্ষার করার জন্য। ক্বারিন জ্বীন-শয়তান মানবজাতির শত্রু। শয়তানের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলি হল: আল্লাহকে অমান্য করা, আল্লাহকে দোষারোপ করা, অকৃতজ্ঞতা, প্রতিশোধপরায়ণ, প্রতিহিংসাপ্রবণ এবং অহংকার। ক্বারিন জ্বীন-শয়তান সর্বদা এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলি মানুষের ব্যক্তিত্বের মধ্যে প্রবেশ করানোর চেষ্টা করে, যেন মানুষ বেহেশতে প্রবেশ করতে না পারে। মানবজাতিকে ছলনা করাই শয়তানদের মূল উদ্দেশ্য; তাদের উদ্দেশ্য মানুষকে আখেরাতের ব্যাপারে সন্দেহ সৃষ্টি করা, তাদেরকে এই দুনিয়ার জীবনের জন্য আরও বেশি আগ্রহী করে তোলা, তাদের ধর্মের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা, আল্লাহর প্রতি অকৃতজ্ঞ হওয়া, মানবজাতিকে এক আল্লাহর বদলে জ্বীন, মানুষ বা কোন বস্তুকে শরীক সাবস্ত করানো ত্রবং আল্লাহ মানুষকে পৃথিবীতে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য যে দায়িত্ব দিয়েছেন তাতে মানবজাতিকে অনুপযুক্ত প্রমাণ করা।
অন্যদিকে, আল্লাহ মানুষকে দিয়েছেন রূহ; এবং প্রতিটি মানুষের সাথে নিয়োজিত করেছেন ফেরেশতাগণ। আল্লাহ মানব ও জ্বীনজাতিকে দায়িত্ব দিয়েছেন প্রকৃত স্রষ্টাকে চিনতে পারা ও শুধুমাত্র তাঁর ইবাদাত করা।শয়তান থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য ত্রবং পার্থিব পরীক্ষায় সফলতা লাভ করার জন্য আল্লাহ জ্বীন ও মানবজাতিতে পাঠিয়েছেন পথনির্দেশিকা কিতাবসমূহ আর প্রেরণ করেছেন সর্তককারী নবী ও রাসূলগণ। প্রকৃত স্রষ্টায় বিশ্বাসী মুমিনদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার ক্ষমতা শয়তানের নেই। তিনি মানবজাতির একটা ভাল কর্ম ১০ গুণ বাড়িয়ে গণনা করবেন। এছাড়াও আল্লাহ মানবজাতিকে দিয়েছেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তওবা করার সুযোগ।আল্লাহ বলেছেন: "আর যে নিজের অপরাধ বুঝে তওবা করে এবং নিজেকে সংশোধন করে। নিশ্চয় আল্লাহ তার তওবা কবুল করেন। নিশ্চয় আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।" যখনি মানুষ প্রকৃত স্রষ্টার দিকে ফিরে আসবে তখনি আল্লাহ তাদের ক্ষমা করবেন।
পৃথিবীবাসীর সবচেয়ে বড় শত্রু বিতাড়িত শয়তানেরা। শয়তান শুধুমাত্র জ্বীনের মধ্যে নয়, মানুষের মধ্যেও শয়তান আছে। আল্লাহর অবাধ্য ও সীমালঙ্ঘনকারী মানুষ- শয়তানেরা হল ইবলিস ও জ্বীন-শয়তানের সহযোগী ত্রবং জাদুচর্চাকারী কাফের। তারা দুষ্ট প্রকৃতির। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “হে আবুজর, তুমি মানুষ ও জ্বীন শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করেছ কি? উত্তরে আবুজর (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল, শয়তান কি মানুষের মধ্য থেকেও হয়ে থাকে? নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, মানুষ শয়তানের অনিষ্টতা জ্বীন শয়তানের চেয়ে বেশি হয়।” আল্লাহ বলেছেনঃ “হে বনী-আদম! আমি কি তোমাদেরকে বলে রাখিনি যে, শয়তানের এবাদত করো না, সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু?”[সূরা ইয়াসীন, আয়াত ৬০]“ এই প্রকাশ্য শত্রু হল মানুষ-শয়তান।মানুষ-শয়তানের দলভুক্ত হল কাফের শাসক, কাফের বিজ্ঞানী, জাদুচর্চাকারী, সীমালঙ্ঘনকারী, কিছু মানব-জ্বীন হাইব্রিড এবং যেসব মানুষ যারা ইবলিসের পরিকল্পনায় মানবজাতিকে পথভ্রষ্ট করে। “শয়তান” সম্পর্কে মানুষের স্পষ্ট ধারনা থাকা প্রয়োজন কারন প্রাচীন ও বর্তমান বিশ্বের বেশির ভাগ যুদ্ধ, আন্দোলন, সমস্যা, বিশৃঙ্খলা ও ধ্বংসের পেছনে লুকানো কারন হল “শয়তান”।
আমরা জানি পৃথিবীতে একটাই ধর্ম ছিল যখন আদম (আঃ) আর হাওয়া পৃথিবীতে আসেন যা হল এক স্রস্টার এবাদাত করা আর তারপর নানান সম্প্রদায়ে শয়তানেরা এসে ধর্মে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। শয়তানরা তাদের ক্ষমতা দেখিয়ে সেসব জাতিকে এক আল্লাহর বদলে শয়তানদের, তাদের বংশধরদের এবং জ্বীনদের রহস্যময় প্রাণীদের উপাসনায় নিয়োজিত করেছিল। পাগান-পৌওোলিকরা (দেবদেবীপূজারী ও মূর্তিপূজারী), Celtic, Wicca, Satanitis বিভিন্ন Humanoid/Hybrid আকারের জ্বীন-শয়তানদের তাদের “দেবদেবী” হিসেবে পূজা করে। যেমন: জ্বীন-শয়তান “আনুবিশ”কে উপাসনা করত প্রাচীন মিশরীয় ফেরাউন; এছাড়াও হিন্দুরা সাপদেবী Pāli, প্রাচীন মিশরীয়রা Apep, প্রাচীন সুমেরীয়রা Ningizzidaকে সাপদেবী হিসেবে পূজা করে। অর্ধেক মাছ আর অর্ধেক মানুষ এমন চরিত্র যদিও শিশুদের কাছে “মৎসকন্যা”(the mermaid) নামে পরিচিত তা মূলত: জ্বীন। আল্লাহ বলেন: “মানুষের মধ্যে এমন একদল লোক আছে যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যদেরকে শরীক বানিয়েছে এবং তাদেরকে এমনভাবে ভালবাসে যেমন আল্লাহকে ভালোবাসা উচিত, আর যারা ঈমান এনেছে তারা আল্লাহকেই সর্বাধিক ভালবাসে”। (সূরা আল বাকারা: ১৬৫) তাদের উদ্দেশ্যে আল্লাহ বলেছেনঃ“তারা জ্বীনদেরকে আল্লাহর অংশীদার স্থির করে; অথচ জ্বীনদেরকে তিনিই সৃস্টি করেছেন। তারা অজ্ঞতাবশতঃ আল্লাহর জন্যে পুত্র ও কন্যা সাব্যস্ত করে নিয়েছে”।(সূরা আন আনাম ১০০) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আল্লাহ ইরশাদ করেছেন "তারা যাদেরকে (জ্বীনদেরকে) আহবান করে তারাই(জ্বীনরা) তো তাদের প্রতিপালকের নৈকট্য লাভের উপায় সন্ধান করে" এর ব্যাখ্যায় বলেন, একদা একদল জ্বীন মুসলমান হলো। তাদের পূজা করা হতো। কিন্তু পূজাকারী এ লোকগুলো তাদের পূজাই আকড়ে থাকলো। অথচ জ্বীনের দলটি ইসলাম গ্রহণ করেছে। [সহীহ মুসলিম, হাদিস নাম্বার: ৭২৭৩] পাগান ও পৌওোলিকদের উপাসনালয়ে জ্বীন-শয়তানদের যাতায়াত বেশি দেখা যায়। এমনকি জ্বীন-শয়তানরা মূর্তির ভেতরেও প্রবেশ করতে পারে কারন জ্বীনরা আত্মাবিহীন দেহে প্রবেশ করতে পারে সহজেই। আল্লাহ বলেছেন: “শয়তান তোমাদের অনেক দলকে পথভ্রষ্ট করেছে। তবুও কি তোমরা বুঝনি”? [সূরা ইয়াসীন, আয়াত ৬২] আল্লাহর বন্দেগী কর, তিনি ছাড়া তোমাদের কোন উপাস্য নাই।”(সূরা হুদ)
আল্লাহ ও তার বাহিনী (ফেরেশতা) যদি আল্লাহর বান্দাদের বন্ধু হন তাহলে তিনি কেন অবাধ্য ইবলিস ও তার সেই জ্বীন-শয়তান বাহিনীকে খাদ্য, পানি দিয়ে শক্তিশালী হতে সহায়তা করবেন? না, ফেরেশতারা জ্বীন-শয়তানদের সহায়তা করে না; তারা শুধুমাত্র আল্লাহয় বিশ্বাসী মুসলমান জ্বীন, মানুষ ও আল্লাহর সৃষ্টি অন্যান্য জীবজন্তুকে আল্লাহর আদেশে সহায়তা করে। পবিত্র কুরআনে উল্লেখ আছে ফেরেশতারা বলেন: “আল্লাহ পবিত্র, আমরা আপনার পক্ষে, তাদের(জ্বীন উপাসকদের) পক্ষে নই, বরং তারা জ্বীনদের পূজা করত। তাদের অধিকাংশই শয়তানে বিশ্বাসী।” (Saba: 41) ইবলিস ও তার সহযোগী সেই জাদুচর্চাকারী জ্বীন-শয়তানরা পৃথিবীর উভয় জগতের রহমত থেকে বিতাড়িত। কিয়ামতের আগ পর্যন্ত ইবলিসরা আল্লাহর কাছে মানুষের সম্পদ, সন্তান ভাগ বসাতে চেয়েছিল আর আল্লাহ বলেছিলেন: “আমার বান্দাদের উপর তোর কোন ক্ষমতা নেই আপনার পালনকর্তা যথেষ্ট কার্যনির্বাহী।” (সূরা আল-ইসরা; আয়াত: ৬৫)। যা কিছু হারাম, অপবিত্র, কৃত্রিম ত্রবং যা কিছুতে আল্লাহর নাম নেয়া হয় না তাতেই জ্বীন-শয়তানরা শরীক হয়। আল্লাহ বলেছেনঃ “হে মানব মন্ডলী, পৃথিবীর হালাল ও পবিত্র বস্তু-সামগ্রী ভক্ষন কর। আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। সে নিঃসন্দেহে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।” জ্বীন-শয়তানেরা মানুষের ফেলে দেয়া উচ্ছিষ্ট খেয়ে বাঁচে। জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: তোমাদের কারো লোকমা পড়ে গেলে সে যেন তা তুলে নেয়। তারপর তাতে যে আবর্জনা স্পর্শ করেছে তা যেন দূরীভূত করে এবং খাদ্যটুকু খেয়ে ফেলে। শয়তানের জন্য সেটি যেন ফেলে না রাখে। আর তার আঙ্গুল চেটে না খাওয়া পর্যন্ত সে যেন তার হাত রুমাল দিয়ে মুছে না ফেলে। কেননা সে জানে না খাদ্যের কোন অংশে বারাকাত রয়েছে”। (সহীহ মুসলিম; হাদীস ৫১৯৬) অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই কারন তারা প্রয়োজনের অতিরিক্ত অপব্যয়ের মাধ্যমে বিতাড়িত জ্বীন-শয়তানদের তা ভোগ করার ব্যবস্থা করে দেয়। আর জাদুচর্চাকারী কাফের ও জ্বীনউপাসক মুশরিকরা বিতাড়িত ইবলিস ও তার সহযোগীদের বন্ধু। কারণ যখন জ্বীন উপাসক (মূর্তিপূজারী ও দেবদেবীপূজারীরা) নানা ধরনের খাদ্য তাদের দেবদেবীর মূর্তিকে প্রদান করে তখন জ্বীন-শয়তানেরা মূর্তিতে প্রবেশ করে প্রসাদ ও উৎসর্গ করা খাদ্য যা কিছুতে আল্লাহর নাম নেয়া হয়নি। কাফের-মুশরিকরা (জ্বীনসাধক, জাদুকর, মূর্তিপূজারী, দেবদেবী/ পাগান-পৌওোলিক) মুসলমানদের শত্রু কারন তারা মানবজাতির শত্রু জ্বীন-শয়তানদের বেচেঁ থাকতে ও শক্তিশালী হতে সহায়তা করে। তেমনি ইবলিসের সহযোগী বিতাড়িত জ্বীন-শয়তানরাও কাফের জ্বীন-শয়তান ও মানুষ-শয়তানদের আল্লাহর বান্দাদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী হতে সহযোগীতা করে। আল্লাহ বলেছেনঃ “তারা আল্লাহর পরিবর্তে অনেক উপাস্য (জ্বীন-শয়তানদের) গ্রহণ করেছে যাতে তারা সাহায্যপ্রাপ্ত হতে পারে। অথচ এসব উপাস্য তাদেরকে সাহায্য করতে সক্ষম হবে না এবং এগুলো তাদের বাহিনী রূপে ধৃত হয়ে আসবে।' (সূরা ইয়াসীন) নিশ্চয় শয়তান তোমাদের শত্রু সুতরাং তাকে দুশমন হিসেবেই গ্রহণ কর।' (সুরা ফাতির : ৬) “হে ঈমানদারগণ! আমার শত্রুদের এবং আপনার শত্রুদের (কাফের/ জাদুচর্চা ও মুশরিকদের/দেবদেবী পূজারী/মূর্তি পূজারী/ জ্বীন-শয়তান উপাসক) বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করো না এবং তাদের প্রতি স্নেহ প্রদর্শন করো না "[আল মুমতাহানাহ 60: 1] হারাম অর্থ ও নিষিদ্ধ সময়ে/নিষিদ্ধ রীতিতে স্বামী-স্ত্রীর মিলনের ফলে বিতাড়িত শয়তান মানুষের সম্পদ ও সন্তানে শরীক হয়ে যায় ত্রবং সেই সন্তানের ক্ষতি করে। বিতাড়িত শয়তানরা রাত্রিবেলায় মানুষের ঘরে আশ্রয় ও খাদ্য খুঁজে। জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছেন যে যখন কোন ব্যাক্তি তার ঘরে প্রবেশের এবং খাবার গ্রহণের সময় আল্লাহ্র নাম স্মরণ করে, তখন শয়তান হতাশ হয়ে (তার সঙ্গীদের) বলে- তোমাদের (এখানে) রাত্রি যাপনও নেই, খাওয়াও নেই। আর যখন সে প্রবেশ করে এবং প্রবেশকালে আল্লাহর নাম স্মরণ না করে, তখন শয়তান বলে, তোমরা থাকার স্থান পেয়ে গেলে। আর যখন সে খাবারের সময় আল্লাহ্র নাম স্মরণ না করে, তখন শয়তান বলে, তোমাদের রাত্রি যাপন ও রাতে আহারের ব্যবস্থা হলো। (সহীহ মুসলিম; হাদীস ৫১৫৭) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ "যদি তোমরা কেউ স্ত্রী সহবাসের ইচ্ছা করে, তখন “বিসমিল্লাহ্। হে আল্লাহ! আমাদেরকে শয়তানের প্রভাব থেকে দূরে রাখ” পড়ে, তাহলে তাঁদের ভাগ্যে সন্তান এলে, শয়তান তার কোন ক্ষতি করতে পারে না।” (বুখারী-মুসলিম) ঘরে প্রবেশ করার আগে, পানাহারের আগে, পোশাক পরার সময় ও সহবাসের আগে “বিসমিল্লাহ” (আল্লাহর নামে শুরু করছি) বললে শয়তান থেকে দূরে থাকা সম্ভব। কেন “বিসমিল্লাহ” বললে বিতাড়িত শয়তান মুসলমানদের কাছে আসতে পারে না? কারণ মানুষের প্রতিটি কথা, বিশ্বাস, কাজ, নিয়ত ও দোয়ার শক্তি আছে। জাপানিজ বিজ্ঞানী Masaru Emoto ত্রর গবেষণা ইঙ্গিত করে যে পানিরও প্রাণ আছে। ত্রই প্রাণ বলতে মানুষের মত প্রাণ বুঝানো হচ্ছে না, বুঝানো হচ্ছে পানিও সংবেদনশীল। বিজ্ঞানী Masaru Emoto আবিষ্কার করেছে জমজম পানির সামনে আল্লাহর নাম নেয়া হলে পানির বিন্দুগুলো ভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া করতে শুরু করে। আল্লাহর বান্দারা আল্লাহর নাম নিলে পৃথিবীর পানি, মাটি, বায়ু ও আগুনের প্রতিক্রিয়ার পরিবর্তন হয় আর সেসময় শয়তান তার প্রভাব বিস্তার করতে পারে না।
পৃথিবী একটি যুদ্ধক্ষেত্রসরূপ। ইবলিসের পদাতিক বাহিনীতে আছে মানুষ-শয়তান (জাদুবিদ্যাচর্চাকারী কাফের, জ্বীনউপাসক মুশরিক, মানব-জ্বীন হাইব্রিড) ও জাদুবিদ্যাচর্চাকারী কাফের জ্বীন-শয়তান যারা আল্লাহর বান্দা মুসলমানদের আক্রমণ করে ইবলিসের পরিকল্পনায়। মুসলমানদের বন্ধু ফেরেশতারা আর যেসব ধর্মালম্বীরা জ্বীনদের দেবদেবী হিসেবে পূজা করে তাদের বন্ধু আল্লাহর অবাধ্য জ্বীন-শয়তানরা। আল্লাহ বলেছেনঃ “একদলকে পথ প্রদর্শন করেছেন এবং একদলের জন্যে পথভ্রষ্টতা অবধারিত হয়ে গেছে। তারা আল্লাহকে ছেড়ে শয়তানদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করেছে এবং ধারণা করে যে, তারা সৎপথে রয়েছে।” (সূরা আল আরাফ,৩০) ” “যে কেউ আল্লাহকে ছেড়ে শয়তানকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, সে প্রকাশ্য ক্ষতিতে পতিত হয়।”(সুরা নিসা-১১৯) যারা জ্বীন-শয়তানের বন্ধু তারা আল্লাহর বান্দা মুসলমান ও ফেরেশতাদের শত্রু। আল্লাহ বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহ তাঁর ফেরেশতা ও রসূলগণ এবং জিবরাঈল ও মিকাঈলের শত্রু হয়, নিশ্চিতই আল্লাহ সেসব কাফেরের শত্রু।”(সুরা বাকারাহ, ৯৮)।শয়তানেরা মুসলমানদের উপর আক্রমন করবে তাই মুসলমানদের আত্মরক্ষার জন্য মুশরিক আর কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা ফরয করা হয়েছে। আল্লাহ বলেছেন: ..আর মুশরিকদের সাথে তোমরা যুদ্ধ কর সমবেতভাবে, যেমন তারাও তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে যাচ্ছে সমবেতভাবে। আর মনে রেখো, আল্লাহ মুত্তাকীনদের সাথে রয়েছেন।" [ সুরা তাওবা ৯:৩৬ ] “যারা ঈমানদার তারা যে, জেহাদ করে আল্লাহর রাহেই। পক্ষান্তরে যারা কাফের তারা লড়াই করে শয়তানের পক্ষে সুতরাং তোমরা জেহাদ করতে থাক শয়তানের পক্ষালম্বনকারীদের বিরুদ্ধে, (দেখবে) শয়তানের চক্রান্ত একান্তই দুর্বল।” (An-Nisaa: 76) মুসলমানরা যদি শয়তানের বিরুদ্ধে জিহাদ না করে ঘরে বসে আরাম করে তবুত্ত ইবলিসের আদেশে শয়তানেরা তাদের আক্রমণ করবে। আল্লাহ বলেছেন: "হে ঈমানদারগণ, তোমাদের কি হল, যখন আল্লাহর পথে বের হবার জন্যে তোমাদের বলা হয়, তখন মাটি জড়িয়ে ধর, তোমরা কি আখেরাতের পরিবর্তে দুনিয়ার জীবনে পরিতুষ্ট হয়ে গেলে? অথচ আখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার জীবনের উপকরণ অতি অল্প। [ সুরা তাওবা ৯:৩৮ ]"আল্লাহ বলেছেন: “হে মানব জাতি! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর এবং ভয় কর এমন এক দিবসকে, যখন পিতা পুত্রের কোন কাজে আসবে না এবং পুত্রও তার পিতার কোন উপকার করতে পারবে না। নিঃসন্দেহে আল্লাহর ওয়াদা সত্য। অতএব, পার্থিব জীবন যেন তোমাদেরকে ধোঁকা না দেয় এবং আল্লাহ সম্পর্কে প্রতারক শয়তানও যেন তোমাদেরকে প্রতারিত না করে।” (Luqman: 33) "তোমরা কি মনে কর যে, তোমাদের ছেড়ে দেয়া হবে এমনি, যতক্ষণ না আল্লাহ জেনে নেবেন তোমাদের কে যুদ্ধ করেছে এবং কে আল্লাহ, তাঁর রসূল ও মুসলমানদের ব্যতীত অন্য কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করা থেকে বিরত রয়েছে। আর তোমরা যা কর সে বিষয়ে আল্লাহ সবিশেষ অবহিত।" [ সুরা তাওবা ৯:১৬ ] ইসলাম ধর্ম মানেই শান্তি। কিন্তু শয়তানদের হাতে পৃথিবীর নেতৃত্ব থাকলে তারা পৃথিবীকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে তাই এই পৃথিবীর উওরাধিকারী মুসলমানদের আল্লাহ দায়িত্ব দিয়েছেন শয়তানদের বিরুদ্ধে জিহাদ করে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে এবং আল্লাহর দেয়া পৃথিবীর সম্পদ, আল্লাহর সৃষ্টি গাছপালা,জীবজন্তু, মাটি, আকাশ ইত্যাদিকে মন্দ শয়তানদের হাত থেকে রক্ষা করতে।
ইবলিস সবসময়ই চায় মুসলিম সম্প্রদায়ে “মুসলিমের বেশে” তার সহযোগী কাফের, জ্বীন উপাসক কিংবা শয়তানের বংশধরদের “নেতা” হিসেবে বসাতে যেন তারা মুসলমানদের সরল পথ থেকে বিচ্যুত করতে পারে। সেসব মানুষ-শয়তান শাসকদের কাজ হল এমন সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা চালু করা যা আল্লাহর আইনকে চ্যালেঞ্জ করে আর সমাজে পাপ, শিরক ও অরাজকতার প্রচার করা ও প্রসার ঘটানো যেন মুসলমানরা আল্লাহর বিরুদ্ধাচারণ করে। আল্লাহ বলেছেন: “তারা মুখে বলে “আমরা মুসলিম”, অথবা অন্য ধর্মাবলম্বী কিন্তু তারা আসলে ইবলিসের আদেশ মান্যকারী। আর তারা যখন ঈমানদারদের সাথে মিশে, তখন বলে, আমরা ঈমান এনেছি। আবার যখন তাদের শয়তানদের সাথে একান্তে সাক্ষাৎ করে, তখন বলে, আমরা তোমাদের সাথে রয়েছি। আমরা তো (মুসলমানদের সাথে) উপহাস করি মাত্রা।” (Al-Baqara: 14) মুহাম্মাদ ইবনু সাহল ইবনু আসকার তামীমী ও আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর রহমান দারেমী (রহঃ) ... হুযায়ফা ইবনু ইয়ামান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমরা ছিলাম অমঙ্গলের মধ্যে; তারপর আল্লাহ আমাদের জন্য মঙ্গল নিয়ে আসলেন। আমরা তাতে অবস্থান করছি। এ মঙ্গলের পিছনে কি আবার কোন অমঙ্গল আছে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। আমি বললাম এ মঙ্গলের পিছনে কি আবার কোন অমঙ্গল আছে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, আমি বললাম, এ মঙ্গলের পিছনে কি আবার কোন অমঙ্গল আছে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, আমি বললাম, তা কিভাবে? তিনি বললেন, আমার পরে এমন সব নেতার উদ্ভব হবে, যারা আমার হেদায়েতে হেদায়েতপ্রাপ্ত হবে না এবং আমার সুন্নাতও তারা অনুসরণ করবে না। তাদের মধ্যে এমন মানুষ থাকবে যাদের দেহ হবে মানুষের আর অন্তর হবে শয়তানের। রাবী বলেন, তখন আমি বললামঃ তখন আমরা কি করবো ইয়া রাসুলাল্লাহ! যদি আমরা সে পরিস্থিতীর সম্মুখীন হই? বললেনঃ তুমি শুনবে এবং মানবে যদি তোমার পিঠে বেত্রাঘাত করা হয় বা তোমার ধন-সস্পদ কেড়েও নেয়া হয়, তবুও তুমি (আল্লাহর) আনুগত্য করবে। [সহীহ মুসলিম, অধ্যায়ঃ ৩৪/ রাষ্ট্রক্ষমতা ও প্রশাসন, হাদিস নম্বরঃ ৪৬৩২] কাফের শাসকরা ক্ষমতায় আসলেই মানবজাতিকে কুফরীর দিকে ধাবিত করে। আল্লাহ বলেন: “তারা শয়তানের মত, যে মানুষকে কাফের হতে বলে। অতঃপর যখন সে কাফের হয়, তখন শয়তান বলেঃ তোমার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। আমি বিশ্বপালনকর্তা আল্লাহ তা’আলাকে ভয় করি।” (Al-Hashr: 16) বর্তমানে সব দেশের পতাকা আর সংস্থাগুলোয় জ্বীন উপাসকদের মত বাঘ, সিংহ, শাপলা, পদ্ম , ঈগল, সূর্য, অর্ধচন্দ্র, চোখের মণির ন্যায় বৃও ইত্যাদি নানা ধরনের প্রতীক ব্যবহার, নেতাদের মূর্তি (প্রতিমা) স্থাপন আর কাফের-মুশরিকদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক দেখলেই বোঝা যায় মুসলিম জাতির শাসকরা আসলে “মুসলিম” নয়! জ্বীন ও মানুষ শয়তানেররা চায় সমাজে শির্ক আর কুফুরীকে বিভিন্ন নামে বিভিন্ন উপায়ে ছড়িয়ে দিতে যেন সাধারন মানুষ বুঝতে না পারে।ত্রতোটাই সূক্ষ্ম তাদের ছড়ানো শির্ক যা মানুষ অহরহ করে আর তাতেই তারা অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। আবার কিছু কাফের-বিজ্ঞানী ও গবেষকরা যা কিছু ইসলাম বলেছে তার বিপরীত প্রমাণ দেয়ার জন্য মিথ্যা গবেষণা উপস্থাপন করে।যেমনঃ ত্রকদল বিজ্ঞানী বলছে জমজম পানি দেহের জন্য নাকি খুবই ক্ষতিকর আর অন্যদিকে বলছে জেনেটিকালি মোডিফাইড আর কৃত্রিম খাদ্য খেলে নাকি দেহের কোন ক্ষতি হয় না। হাস্যকর ব্যাপার! কাফের কিংবা মুশরিক শাসকরা ক্ষমতায় বসার সাথে সাথে সমাজে চালু হবে জ্বীনউপাসকদের মত শ্রেণীবৈষম্য ব্যবস্থা। জ্বীনউপাসক হিন্দুদের মধ্যে যেমন ব্রাক্ষণ, ক্ষত্রিয়, বৈষ্য-শুদ্র ত্ররূপ শ্রেণীবৈষম্য চালু আছে তেমনি বর্তমানের সব দেশেই চালু আছে যারা যত বেশি কাফের/মুশরিক শাসকদের সহায়তা করবে তার মর্যাদা অনুযায়ী শ্রেণীবিষম্য এবং সুবিধা। যেমনঃ শিক্ষিত পন্ডিতগণ- প্রথম সারির, তারপর কর্পোরেটের ব্যবসায়ী, তারপর শাসকের আদেশের দাস সেনাবাহিনী ও পুলিশ, আর যারা আল্লাহর ভূমি দেখাশোনা করবে আর পশুপাখি চরিয়ে জীবনযাপন করবে তারা সমাজের শ্রেণীবিষম্যে সর্বনিম্ন যদিও আমাদের নবীরা পশুপালন করতেন ত্রবং তারাই ছিলেন আল্লাহর কাছে মর্যাদার অধিকারী। যেসব শিক্ষিত পন্ডিতরা কাফের/মুশরিক শাসকের আদেশে ক্ষেপণাস্ত্র বানাতে সাহায্য করে আর পুলিশরা শাসকের আদেশে জনগণকে পেটায় তারাই কাফের/মুশরিক শাসকের সহকারী। শয়তানেরা বিভিন্ন পাপ কাজকে নাম পরিবর্তন করে সমাজে ছড়ায় যেন মানুষ পাপ কাজকে সহজভাবে গ্রহণ করে। যেমনঃ ত্রখন সুদকে fixed deposit নামে ডাকা হয় তাই মানুষ সুদ যে পাপ তা ভুলে যায়। আজকাল মদ আর নেশাজাতীয় দ্রব্যগুলোকে বিভিন্ন কোমল পানীয়ের নামে মানুষ পান করে কিন্তু আজকে যদি কোমল পানীয়ের label ত্র ব্র্যান্ডের নামের পরিবর্তে “জাহান্নামের পানীয়” লেখা থাকত তবে অনেকেই তা থেকে বিরত থাকত।
আল্লাহ মানুষের জগতের সম্পদের উওরাধিকারী করেছেন আল্লাহর বান্দা মুসলমান মানুষদের আর জ্বীনজগতের সম্পদের অধিকারী করেছেন মুসলমান জ্বীনদের যেন লোহা ইত্যাদি সম্পদ ব্যবহার করে পৃথিবীর কাফের মানুষ ও জ্বীনদের বিরুদ্ধে মুসলমানরা শক্তিশালী হয়। আল্লাহর রহমতে মুসলিম জাতিগুলোর মাটি ও পানির নিচে আছে অফুরন্ত সম্পদ। যেমনঃ ইউরেনিয়াম, সোনা, খনিজ তেল ইত্যাদি। মাটি ও পানির নিচে থাকা এই সম্পদ মহাকাশযান এবং অনেক শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র ইত্যাদি তৈরি এবং মহাকাশযানের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এখন মানুষ-শয়তান ও জ্বীন-শয়তানেরা সমবেতভাবে পদাতিক বাহিনী নিয়ে মুসলমানদের আক্রমণ করে সম্পদ নিজেদের আওয়াতাধীন করে শক্তিশালী হচ্ছে। প্রকৃত মুসলমান শাসক সে দেশের বিদ্যুৎ, গ্যাস ইত্যাদি সম্পদ উওোলন করে সে জাতির মানুষের মধ্যে ভাগ করে দেয়ার কথা; বরং এখন শাসকরা আল্লাহর সম্পদ দখল করে সে জাতির মানুষদের দিয়ে পাশাপাশি গ্যাস, বিদ্যুতের বিল দেয়ায় কিন্তু গ্যাসক্ষেত্রের মালিক কি শাসক বা ব্যবসায়ী নাকি আল্লাহ? মানুষের কর থেকেই তো গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস উওোলন করা যায়। ত্রকজন প্রকৃত মুসলমান শাসক পৃথিবীর মালিক এক আল্লাহর ইবাদাত প্রতিষ্ঠা করে পৃথিবীতে শান্তি আনয়নে নেতৃত্ব দেবে। কুরআন হল পৃথিবীতে শয়তানের সাথে যুদ্ধ করে টিকে থাকার জন্য পথনির্দেশিকা। কুরআন ও সুন্নত না মেনে চললে সহজেই শয়তানেরা মানুষকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাবে। আল্লাহ বলেছেনঃ" আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ় হস্তে ধারণ কর; পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।..." কিন্তু আজ শয়তানের প্ররোচনায় মুসলমানরা নানা দলে ও মতবাদে বিভক্ত হয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছে। যদিও শয়তানেরা মানুষকে এক আল্লাহর আদেশ পালন করতে বাধা দেয় কিন্তু শয়তানেরা ইবলিসের world order অক্ষরে অক্ষরে পালন করে!
পৃথিবীর মহাকাশ স্টেশনগুলো বিলিয়ন ডলার খরচ করছে কেন? মহাকাশ প্রযুক্তি আর স্পেসশীপ তো কোন নতুন আবিষ্কার নয়, প্রায় ২৫০০ বছর আগেও তৈরি করা হয়েছিল Toprakkale স্পেসশাটল। আর জ্বীনরা প্রযুক্তিতে মানুষের চেয়ে অনেক বেশি উন্নত। ইবলিসের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে জ্বীন-শয়তানেরা মানুষ-শয়তানদের প্রযুক্তি দিয়ে সহায়তা করে। প্রাচীন মিশরে জ্বীন-শয়তানেরা ফেরাউনদের space travel technology সহায়তা করত। প্রাচীন মিশরে ছিল the anti-gravity, winged scarab beetle "the celestial boat" যা ব্যবহৃত হত the satellite বহন করতে (eye of Horus) যাকে প্রাচীন মিশরীয়রা আকাশে বহনে ব্যবহৃত স্বর্গীয় নৌকা হিসেবে দেখতো। প্রাচীন মিশরে ছিল The Eye of Horus টেলিস্কোপ, বর্তমান সময়ের স্পেস শাটল এবং বড় বুস্টার রকেট এর মত দেখতে। মানুষ-শয়তান ও জ্বীন-শয়তান উভয়ই আকাশের ঘাঁটিতে কর্মরত আল্লাহর আদেশপালনকারী ফেরেশতাদের কথা চুরি করে শুনতে চায়, জানতে চায় স্রষ্টার পরিকল্পনা এবং খুঁজে বের করতে চায় বেহেশত। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ শয়তানেরা তখন একে অপরের কাছে সমবেত হয় (ঊর্ধ্ব জগতের কথা শুনার জন্য)। (সহিহ বুখারী:7481) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নবুওয়াত প্রাপ্তির পর আল্লাহ উর্ধ্বাকাশ এবং নিচের আকাশের মাঝে একটি পর্দা (barrier) দিয়ে দিলেন। সেই সময় থেকে শয়তানেরা আর শুনতে পারে না ফেরেশতাদেরা কি আদেশ পালন করছে কিন্তু এখনও তারা শুনতে চেষ্টা করে। আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ “আমি সর্বনিম্ন আকাশকে তারা দ্বারা সুসজ্জত করেছি; সেগুলোকে শয়তানদের জন্যে ক্ষেপণাস্ত্রবৎ করেছি এবং প্রস্তুত করে রেখেছি তাদের জন্যে জলন্ত অগ্নির শাস্তি।” আল্লাহ বলেছেন: “হে জ্বীন ও মানবকূল, নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের প্রান্ত অতিক্রম করা যদি তোমাদের সাধ্যে কুলায়, তবে অতিক্রম কর। কিন্তু ছাড়পত্র ব্যতীত তোমরা তা অতিক্রম করতে পারবে না।” (সূরা আর-রহমান, ৩৩) “ছাড়া হবে তোমাদের (শয়তানদের) প্রতি অগ্নিস্ফুলিঙ্গ ও ধুম্রকুঞ্জ তখন তোমরা সেসব প্রতিহত করতে পারবে না।” (সূরা আর-রহমান) আল্লাহ আকাশকে অতি উচ্চ করেছেন যেন অবাধ্য জ্বীন ও মানুষ নিজেদের সীমা অতিক্রম করে তাদের জগত থেকে বের হতে না পারে। জ্বীন ও মানবজগতের গ্রহ-নক্ষত্র যা কিছু আমরা দেখি তা সবই নিম্ন আকাশ। “We Discovered Alien Bases on the Moon” বইয়ের তথ্য অনুযায়ী চাদেঁ এলিয়েনদের ঘাঁটি খুজেঁ পাওয়া গেছে।”এলিয়েন” মানে মানুষ আর পশুপাখি থেকে ভিন্ন প্রজাতি যা হতে পারে জ্বীন কিংবা ফেরেশতা। আমরা জানি ফেরেশতারা আল্লাহর নির্দেশে চাদঁ আর সূর্যকে নিয়ন্ত্রণ করে। তাহলে কি এই ঘাঁটি ফেরেশতাদের? এর চেয়েও বড় সংবাদ হল ন্যাশনাল এ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নাসা) ২ টন বোম মেরেছে চাদেঁ!!! তাহলে কি ফেরেশতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে তারা? আল্লাহ বলেছেন:“যে ব্যক্তি আল্লাহ তাঁর ফেরেশতা ও রসূলগণ এবং জিবরাঈল ও মিকাঈলের শত্রু হয়, নিশ্চিতই আল্লাহ সেসব কাফেরের শত্রু।”(সুরা বাকারাহ, ৯৮) বর্তমানে meteors বা shooting stars ত্রর পরিমান যে হারে বেড়েছে তাতে বোঝাই যাচ্ছে শয়তানেরা আকাশবাসী ফেরেশতাদের কাজে বাধা দেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।
আল্লাহ যত অবাধ্য জাতিকে ধ্বংস করেছিলেন সেসব জাতির শাসকেরা জ্বীন-শয়তানদের সাহায্যকারী হিসেবে কাজ করত। সেসব শাসকদের মাটির নিচে জ্বীন-শয়তানদের সাথে কাজ করার জন্য লুকানো ঘাঁটি (Underground Bases) ছিল। মানুষের সাথে যুদ্ধ করার জন্য কামান, বন্দুক আর তীরই যথেস্ট; কিন্তু ফেরেশতাদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য প্রয়োজন হয় মহাকাশপ্রযুক্তি আর ক্ষেপণাস্ত্র। শয়তানেরা ফেরেশতাদের ঘাঁটির দিকে ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করে ছুঁড়ে মারত তাতে অনেক সময় ক্ষেপণাস্ত্র মাটির উপরের জাতিগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করত আর তাই শয়তান আর তার অনুসারী লোকরা মাটির নিচে (ভূগর্ভস্থ জায়গায়) নিরাপদে অবস্থানে আশ্রয় নিত। আল্লাহ বলেছেন: “আমি কত জনপদ ধ্বংস করেছি এমতাবস্থায় যে, তারা ছিল গোনাহগার। এই সব জনপদ এখন ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে এবং কত কূপ পরিত্যক্ত হয়েছে ও কত সুদৃঢ় প্রাসাদ ধ্বংস হয়েছে।”(সূরা হাজ্জ্ব) ইতিহাসবিদ ও গবেষকরা প্রমাণ খুঁজে পেয়েছে বর্তমানের পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের প্রাচীন ত্রকটি শহর মোহেনজো দারোকে ধ্বংস করে পারমাণবিক বোমা যা ইঙ্গিত করে মানুষ-শয়তান ও জ্বীন-শয়তানে উভয় মিলে আক্রমণ করেছিল আকাশবাসী ফেরেশতাদের কিন্তু ফেরেশতাদের ঘাঁটির দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়লে সেসমসত জাতির মাটিতেই কিছু ক্ষেপণাস্ত্র ত্রসে পড়ায় তারা ধ্বংস হয়েছিল । যেমনটা ২য় বিশ্বযুদ্ধের নামে জাপানের হিরোশিমা আর নাগাসাকিকে ধ্বংস করে দেয় পারমাণবিক বোমা। “আমরা(আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ) নিশ্চয়ই প্রত্যেক উম্মতের মধ্যে একজন রসূল পাঠিয়েছি: আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর এবাদত কর এবং তাগুত (মিথ্যা উপাস্য/সীমালঙ্ঘনকারী শয়তান ) থেকে নিরাপদ থাক।অতঃপর তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যককে আল্লাহ হেদায়েত করেছেন এবং কিছু সংখ্যকের জন্যে বিপথগামিতা অবধারিত হয়ে গেল।সুতরাং তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং দেখ মিথ্যারোপকারীদের কিরূপ পরিণতি হয়েছে।”
শয়তানের নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া এবং গণমাধ্যম সবসময় মুসলমানদের যুদ্ধপ্রিয় আর আল্লাহর অবাধ্যদের শান্তিপ্রিয় দেখায় যদিও বাস্তবে তা সম্পূর্ণ বিপরীত। তাদের পরিচালিত গণমাধ্যমগুলোকে বিশ্বাস করলে ভুল করবেন কারণ গণমাধ্যমের কাজ হল মানুষকে বিভ্রান্ত করা। মানুষের ব্রেনওয়াস করে নতুন করে ব্রেন প্রোগ্রামিং করার টুল হল টেলিভিশন। আপনি ঈদে কি পরবেন, কি রান্না করবেন, কোন খবর বিশ্বাস করবেন, কিভাবে ভাববেন, কি দেখলে ভয় পাবেন, কি দেখলে আল্লাহর স্মরণ থেকে দূরে থাকবেন আর কি করলে ভুলে থাকবেন মৃত্যুর কথা-তার নামই মিডিয়া। আল্লাহ বলেছেন “শয়তানরা ধোঁকা দেয়ার জন্যে একে অপরকে কারুকার্যখচিত কথাবার্তা শিক্ষা দেয়।” ইবলিসের আদেশে ক্বারিন জ্বীন-শয়তান যেমন মানুষকে কুমন্ত্রণা দেয় তেমনি মিডিয়ায় মানুষ-শয়তান এবং তাদের সহযোগীরা সবসময়ই মানুষকে এক আল্লাহর কথার অবাধ্য হয়ে পাপ কাজ করতে উৎসাহিত করে এবং কুমন্ত্রণা দেয়। শয়তানরা মানুষকে চোখের, কানের, অন্তরের যিনা করতে উদ্বুদ্ধ করে। আল্লাহ বলেছেন: “হে ঈমানদারগণ, তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। যে কেউ শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে, তখন তো শয়তান নির্লজ্জতা ও মন্দ কাজেরই আদেশ করবে। যদি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া তোমাদের প্রতি না থাকত, তবে তোমাদের কেউ কখনও পবিত্র হতে পারতে না। কিন্তু আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পবিত্র করেন। আল্লাহ সবকিছু শোনেন, জানেন।” (An-Noor: 21) আয়িশাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসাছিলেন।সেসময় আমরা একটা সোরগোল ও শিশুদের হৈচৈ শুনতে পেলাম।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠে গিয়ে দেখলেন, এক হাবশী নারী নেচেকুদে খেলা দেখাচ্ছে আর শিশুরা তার চারদিকে ভীড় জমিয়েছে। …..ইত্যবসরে উমর(রাযিঃ) আবির্ভূত হন এবং মুহুর্তের মধ্যে সমস্তলোক তার কাছ হতে সটকে পড়ে।আয়িশাহ (রাযিঃ) বলেন, সেসময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি দেখলাম জ্বীন ও মানব বেশধারী শয়তানগুলো 'উমারকে দেখেই সরে যাচ্ছে। তিনি বলেন, তারপর আমি ফিরে এলাম।(সূনান আত তিরমিজী- হাদিস নাম্বার:৩৬৯১) শয়তানরা মানুষকে বিনোদন দিয়ে ভুলিয়ে রাখতে চায় পার্থিব জীবন ক্ষণস্থায়ী যেন মানুষ আল্লাহর পথ ছেড়ে পার্থিব কাজে মনোনিবেশ বেশি করে। শয়তান নারীদের ব্যবহার করে সমাজে ফিতনা সৃষ্টি করতে চায়। সমাজে নগ্নতা, অবৈধ প্রেম বাড়িয়ে দিয়ে তরুণসমাজকে আল্লাহর ইবাদাত ও জিহাদ থেকে দূরে রাখতে চায়।জ্বীন-শয়তান ও মানুষ-শয়তানের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল তারা সবসময় মানুষকে পার্থিব কারণে আতঙ্কিত করে রাখতে চায় কারন ভয় হল অস্ত্রস্বরূপ যা মানুষকে আল্লাহর কাজে নিয়োজিত হওয়ার সাহসকে বাধা দেয়। জিহাদের ভুল ব্যাখ্যা প্রচারের জন্যই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত উগ্রবাদীদের খবরগুলো দেখা যায় যেন মুসলমান তরুণরা “জিহাদ” সম্পর্কে ভুল ধারনা পোষণ করে এবং তাদের ধর্মের প্রতি অনীহা সৃষ্টি হয়। অবশ্যই কাফেররা মুসলমানদের ভয় পায়। আল্লাহ বলেছেন: “শয়তানরাই মানুষকে সৎপথে বাধা দান করে, আর মানুষ মনে করে যে, তারা সৎপথে রয়েছে।” (Az-Zukhruf: 37) "হে মুমিন গন, আল্লাহকে ভয় কর, তার নৈকট্য অন্বেষণ কর এবং তার পথে জেহাদ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।" (আল মায়ীদা ৬, আয়াত-৩৫) "তোমরা কি তাদের ভয় কর? অথচ তোমাদের ভয়ের অধিকতর যোগ্য হলেন আল্লাহ, যদি তোমরা মুমিন হও।" [ সুরা তাওবা ৯:১৩]
জ্বীনউপাসকরা বিতাড়িত শয়তানদের থেকে নানা ধরনের প্রযুক্তি ও সৃজনশীল কর্ম তৈরি সম্পর্কিত জ্ঞান লাভ করে যা তাদের পার্থিব খ্যাতি এবং অর্থ লাভ করতে সাহায্য করে। কিন্তু বিতাড়িত শয়তানের কি লাভ মানব ও জ্বীনজাতিকে প্রযুক্তি দিয়ে? কারন শয়তানরা ভালো করেই জানে এই নির্দিষ্ট পৃথিবীতে আল্লাহ মানুষ ও জ্বীনকে নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ দিয়েছেন পরীক্ষা দেয়ার জন্য।সুরা হিজরে আল্লাহ বলেছেনঃ“ আমার কাছে প্রত্যেক বস্তুর ভান্ডার রয়েছে।আমি নির্দিষ্ট পরিমানেই তা অবতরণ করি।” শয়তান প্রযুক্তি দিয়ে মানুষ ও জ্বীনকে ভুলিয়ে রাখে যে এই অস্থায়ী পৃথিবী আর স্থায়ী বেহেশত এক নয় এবং বোকা মানুষ ও জ্বীনরা শয়তানের প্রতারণায় অস্থায়ী পৃথিবীকে নিজের মনের মত বেহেশত বানাতে শুরু করে।যেমনঃ গাছ কেটে পছন্দসই আসবাবপত্র আর আকাশছোয়া দালান বানাচ্ছে পৃথিবীতে, এতে গাছ কমে যাওয়ায় পৃথিবীর নির্দিষ্ট অক্সিজেন কমে যাচ্ছে।আর গবেষকরা ধারনা করছে ২০৩০ সালে অক্সিজেনের অভাবে অনেক প্রানী বিলুপ্ত হয়ে যাবে। আর পৃথিবীতে মানুষ আর প্রানী একে অন্যকে আহার করে জীবনধারন করে।যত নতুন নতুন প্রযুক্তি আসছে তত বেশি বিদ্যুতের ব্যবহৃত হচ্ছে।যেভাবে আল্লাহর দেয়া তেল, কয়লা, ইত্যাদি প্রাকৃতিক সম্পদ তুলে ব্যবসায়ীরা আপনার স্বপ্নের পার্থিব বেহেশত তৈরিতে গ্যাস বিল, বিদ্যুত বিল ইত্যাদি নিচ্ছে তাতে অচিরেই পৃথিবী ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।আল্লাহ মানুষকে অনেক সৃষ্টি থেকে প্রাধান্য দিয়েছেন, এবং মানুষকে দিয়েছেন বুদ্ধিবিবেচনা। মানুষের হাতে পৃথিবী তুলে দিয়েছেন আর তাকে বুদ্ধিবিবেচনাকে কাজে লাগিয়ে পৃথিবীতে চলার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেছেন: “তিনিই তোমাদেরকে(মানুষকে) পৃথিবীতে স্বীয় প্রতিনিধি করেছেন। অতএব যে কুফরী করবে তার কুফরী তার উপরই বর্তাবে।কাফেরদের কুফর কেবল তাদের পালনকর্তার ক্রোধই বৃদ্ধি করে এবং কাফেরদের কুফর কেবল তাদের ক্ষতিই বৃদ্ধি করে।” যে আল্লাহর পৃথিবীতে সম্পদ আর প্রানীদের উপযুক্ত ব্যবহার করতে পারবে না, সে বেহেশতেও আল্লাহর সৃষ্টির অপব্যবহার করবে।তাই বেহেশতে সেই যাওয়ার যোগ্য যে পৃথিবীতে আল্লাহর সম্পদকে নিজের ভেবে অপচয় করে না।পৃথিবী শুধুমাত্র পরীক্ষার জায়গা।বিশ্বাসীরা তাই পৃথিবীতে করে যা তার মৃত্যুর পরের জীবনে কাজে লাগবে।সুতরাং শয়তান চায় মানবজাতি নিজেই প্রতারিত হয়ে আল্লাহর দেয়া পৃথিবীর নিদিষ্ট সম্পদ অপব্যয় করে নিজেই পৃথিবীকে ধবংসের দিকে নিয়ে যায়।আল্লাহ তাআলা বলেছেন:“শয়তান তোমাদের শত্রু; অতএব তাকে শত্রুরূপেই গ্রহণ কর।সে তার দলবলকে আহবান করে যেন তারা জাহান্নামী হয়।” (Faatir: 6)
আল্লাহর নিয়ামত থেকে বিতাড়িত ইবলিস মানুষকে দোজোখে নেওয়ার জন্য চারটি প্রতিশ্রুতি করেছিল এবং আল্লাহকে বলেছিল:
১) “আমি অবশ্যই তোমার বান্দাদের মধ্য থেকে নির্দিষ্ট অংশ গ্রহণ করব।” (সুরা নিসা -১১৮) এই আয়াত ইঙ্গিত করে যে শয়তান ও তার বংশধররা এই দুনিয়াতে আল্লাহর মত প্রভাব বিস্তার করতে চাইবে যেন মানুষ ভুলবশত: শয়তানকে এই পৃথিবীর অধিপতি হিসেবে উপাসনা করে। কিন্তু কিভাবে? আমরা জানি, আল্লাহর ৯৯টি নাম আছে এবং এই নামগুলি আল্লাহর ক্ষমতা প্রকাশ করে। শয়তানরা তাদেরকে পৃথিবীতে এমন অবস্থানে রাখবে যা আল্লাহ কর্তৃত্ব বা মহিমার সাথে সংযুক্ত/অংশীবাদিতা হয় যেন মানুষ আল্লাহর সাথে তাদের শরীক করে। যেমনঃ শয়তানের সহযোগী শাসক যদি পরিবর্তন করে ফেলে আল্লাহর আইন আর মানুষ তা মেনে নিলে তারা শয়তানকে গ্রহণ করল। আল্লাহ মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য শয়তানকে কিছু ক্ষমতা দিয়েছেন যাতে বুঝতে পারবেন কে আল্লাহর অবাধ্য আর কে বাধ্য।
২) শয়তান আল্লাহকে বললঃ “মানুষকে পথভ্রষ্ট করব, তাদেরকে আশ্বাস দেব; তাদেরকে পশুদের কর্ণ ছেদন করতে বলব এবং তাদেরকে আল্লাহর সৃষ্ট আকৃতি পরিবর্তন করতে আদেশ দেব। যে কেউ আল্লাহকে ছেড়ে শয়তানকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, সে প্রকাশ্য ক্ষতিতে পতিত হয় ।”(সুরা নিসা -১১৯)
আল্লাহর একটি নাম হল আল-মুসাওয়ের (المصور যার অর্থ সৌন্দর্য এর গড়নদাতা। আল্লাহ যাকে যেভাবে তৈরি করেছেন তাই আল্লাহর কাছে পছন্দনীয়। শয়তান চেষ্টা করবে মানুষ যেন নিজেকে নিয়ে অসুখীবোধ করতে আর সৌন্দর্য বৃদ্ধির নামে নিজেকে পরিবর্তন করতে উদাহরণস্বরূপ প্লাস্টিক সার্জারি। মনে রাখবেন আপনার শরীর আপনার নয়। এর মালিক আল্লাহ। শয়তান আপনাকে কখনোই আল্লাহ যা দিয়েছে তা নিয়ে শুকরিয়া করতে দেবে না। কিছু মানুষ ছেলে থেকে মেয়ে এবং মেয়ে থেকে ছেলে হওয়ার জন্য লিঙ্গ পরিবর্তন সার্জারি (sex reassignment surgery) করে।এভাবে শয়তান তাদেরকে আল্লাহর সৃষ্ট আকৃতি পরিবর্তন করতে আদেশ দেয়। আজকাল বিজ্ঞানীরা গরুর কান কেটে তার কোষ নিয়ে আরেকটি প্রানীর কোষের সাথে মিশিয়ে ক্লোনিং প্রক্রিয়ায় নতুন ধরনের প্রাণী তৈরি করছে। তারা জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর নামে পশুর সাথে মানুষের সংমিশ্রণে মানব-পশু হাইব্রিড (human-animal hybrid) তৈরি করছে। জ্বীন-শয়তান ও মানব-শয়তানরা বয়স কমাতে ও পৃথিবীতে অমরত্ব লাভের আশায় আল্লাহর তৈরি দেহের কোষ ও DNAকে পরিবর্তন ও বিকৃত করছে gene therapy, ডিজাইনার বেবি, gene modification ইত্যাদির নামে। আল্লাহর তৈরি সৃষ্টিকে বিকৃত করার বুদ্ধি বিতাড়িত ইবলিস ছাড়া আর কে দেবে? ইবলিস ও তার সহযোগী বিতাড়িত জ্বীন-শয়তানেরা শুধুমাত্র মানবজাতিকে নয়, তারা জ্বীনজাতিকেও আল্লাহর আইন, নিয়ম ও সৃষ্টিকে পরিবর্তন আদেশ দেয়। তাদের আদেশ মেনে জাদুচর্চাকারী কাফের জ্বীনরা নিজেদের আকৃতি পরিবর্তন করে অন্য প্রাণীর বেশে মানবজগতে প্রবেশ করে। আল্লাহ পৃথিবীতে মানুষ ও জ্বীনজাতিকে পরীক্ষা করার জন্য পৃথিবীর নানা কর্মে ফেরেশতাদের নিয়োজিত করেছেন যেমনঃ বৃষ্টিবর্ষণ করা ইত্যাদি। ইবলিস ও বিতাড়িত শয়তানরা মানবজাতি ও জ্বীনজাতিতে তাদের অনুসারীদের ফেরেশতাদের কাজে বাধা দিতে আদেশ দেয়। এখন জিও ইঞ্জিনিয়ারিং (geo engineering) আর ক্লাইমেট ইঞ্জিনিয়ারিং (Climate engineering) প্রযুক্তির মাধ্যমে আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তন ও ম্যানিপুলেশন করা হচ্ছে। বর্তমানে কাফের জ্বীন ও মানুষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিজেরাই মেঘ থেকে বৃষ্টিবর্ষণ করছে।
৩) শয়তান মানুষকে মিথ্যা আশা দেবে। “পক্ষান্তরে শয়তান তাদেরকে প্রতারিত করে পথভ্রষ্ট করে ফেলতে চায়।” (An-Nisaa: 60)
আল্লাহ বলেনঃ “শয়তান তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দেয় এবং তাদেরকে আশ্বাস দেয়। শয়তান তাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দেয়, তা সব প্রতারণা বৈ কিছু নয়।”(সুরা নিসা, ১২১)। শয়তান সবসময় আপনাকে পৃথিবীর জিনিস নিয়ে ব্যস্ত রাখতে চায় যেন আপনি আপনার মরণের কথা ভুলে যান যেমন: মিডিয়া, সঙ্গীত, ভিডিও গেমস ইত্যাদি আপনাকে মিথ্যা জগতে আটকে ফেলছে। শয়তান মন্দ কাজকে মানুষের কাছে সুন্দর ও আকর্ষণীয় করে দেখায়। শয়তানের ত্রসব মোহের জাল থেকে দূরে না সরলে বাস্তবতা বোঝা কঠিন।
৪) “অতঃপর শয়তান উভয়কে (আদম ও হাওয়া) প্ররোচিত করল, যাতে তাদের অঙ্গ, যা তাদের কাছে গোপন ছিল, তাদের সামনে প্রকাশ করে দেয়। সে বললঃ তোমাদের পালনকর্তা তোমাদেরকে এ বৃক্ষ থেকে নিষেধ করেননি; তবে তা এ কারণে যে, তোমরা না আবার ফেরেশতা হয়ে যাও-কিংবা হয়ে যাও চিরকাল বসবাসকারী।” (সুরা আরাফ-১২১)
আদম (আলাইহি-আস-সালাম) এবং তার স্ত্রীকে শয়তান মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়েছিল আজীবন বেহেশতে থাকার। শয়তান মানুষকে প্ররোচিত করে এমনভাবে যেন তারা ভাবে পৃথিবীতে তারা আজীবন বেঁচে থাকবে। কেয়ামতের আগ পর্যন্ত দীর্ঘায়ু প্রাপ্ত ইবলিস মানুষ-শয়তান, জ্বীন-শয়তান, শয়তানের বংশধর ও জ্বীনসাধকদের অমরত্ব দেয়ার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তাই তারা অমরত্ব লাভ ও পৃথিবীতে পুনর্জন্মের ধারণায় বিশ্বাসী; তারা মৃত্যু ও বিচারদিবসে বিশ্বাসী নয়। আর শয়তানেরা সেই মিথ্যা প্রতিশ্রুতির আশায় ইবলিসের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যস্ত। আল্লাহ বলেছেনঃ “যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বললামঃ আদমকে সেজদা কর, তখন সবাই সেজদা করল ইবলীস ব্যতীত। সে ছিল জ্বীনদের একজন। সে তার পালনকর্তার আদেশ অমান্য করল। অতএব তোমরা কি আমার পরিবর্তে তাকে এবং তার বংশধরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করছ? অথচ তারা তোমাদের শত্রু। এটা জালেমদের জন্যে খুবই নিকৃষ্ট বদল।(সুরা কাহফ, ১৮:৫০) সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছে মানুষের মস্তিষ্ক একটি রোবটের শরীরের মধ্যে স্থানান্তর করা সম্ভব, এতে নাকি মানুষ রোবটের ভেতর আজীবন বেঁচে থাকবে। তার মানে অর্ধেক রোবট আর অর্ধেক মানুষ ! এদের বলা হচ্ছে ট্রান্সহিউম্যান (transhuman)। এইসব রোবট-মানবদের নাকি ফেরেশতাদের মত খাওয়া বা ঘুমের দরকার হয় না। এগুলো শয়তানের প্রতারণা ছাড়া কিছু নয়! এভাবে রোবট হয়ে পৃথিবীতে কতবছর বাঁচবে? কেয়ামতের আগে তো পৃথিবীই ধ্বংস হয়ে যাবে!
কেন মানুষ-শয়তান ও জ্বীন-শয়তানেরা ইবলিসের আদেশ মেনে চলে? যখন কোন সরীসৃপ তার লেজ হারায় তখন সেখানে একটি নতুন লেজ (নতুন কোষ) তৈরি হয়। ত্রকে “regeneration” বলে। ইবলিসের সহযোগী বিতাড়িত জ্বীন-শয়তান যারা আল্লাহর অনুমতিতে কেয়ামতের আগ পর্যন্ত দীর্ঘ আয়ু লাভ করেছে তারা ত্রই সরীসৃপ টিকটিকির মতই REGENERATIVE BEINGS, যাদের ক্ষতিগ্রস্ত কোষ নিজেই পুনরায় তৈরি হয় আল্লাহর আদেশে। সুতরাং জ্বীন ও মানবজাতি কেয়ামতের আগে ত্রই বিতাড়িত জ্বীন-শয়তানদের হত্যা করতে পারবে না। তারা মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে মানুষ ও জ্বীন শয়তানেরা যদি তাদের আদেশ মেনে চলে তবে তারাও লাভ করবে তাদের মতই অমরত্ব। আল্লাহ পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করেছেন শয়তান কিভাবে মানবজাতির পিতা আদম (আলাইহি-আস-সালাম)কেও অমরত্ব ও চিরস্থায়ী হত্তয়ার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল “অতঃপর শয়তান তাকে কুমন্ত্রনা দিল, বললঃ হে আদম, আমি কি তোমাকে বলে দিব অনন্তকাল জীবিত থাকার বৃক্ষের কথা এবং অবিনশ্বর রাজত্বের কথা?” (Taa-Haa: 120) “হে বনী-আদম শয়তান যেন তোমাদেরকে বিভ্রান্ত না করে; যেমন সে তোমাদের পিতামাতাকে জান্নাত থেকে বের করে দিয়েছে এমতাবস্থায় যে, তাদের পোশাক তাদের থেকে খুলিয়ে দিয়েছি-যাতে তাদেরকে লজ্জাস্থান দেখিয়ে দেয়। সে এবং তার দলবল তোমাদেরকে দেখে, যেখান থেকে তোমরা তাদেরকে দেখ না। আমি শয়তানদেরকে তাদের বন্ধু করে দিয়েছি, , যারা বিশ্বাস স্থাপন করে না।” (Al-A'raaf: 27) এই বিতাড়িত শয়তানরা মানুষ-শয়তান ও জ্বীন-শয়তানদের বহু মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আর মানুষ ও জ্বীন শয়তানেরা সেই মিথ্যা প্রতিশ্রুতির আশায় ইবলিসের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যস্ত। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘হে মানুষ ! আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য; সুতরাং পার্থিব জীবন যেন কিছুতেই তোমাদের প্রতারিত না করে। এবং সেই প্রতারকও (শয়তান) যেন কিছুতেই তোমাদের আল্লাহ সম্পর্কে প্রতারিত না করে। নিশ্চয়ই শয়তান তোমাদের শত্রু, সুতরাং তাকে শত্রু হিসেবে গ্রহণ করো, সে তো তার দলবলকে শুধু এজন্য ডাকে, তারা যেন দোযখবাসী হয়।” (সূরা ফাতির, ৫-৬) “শয়তান তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দেয় এবং তাদেরকে আশ্বাস দেয়। শয়তান তাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দেয়, তা সব প্রতারণা বৈ নয়”। (An-Nisaa: 120) বিতাড়িত ইবলিস ও তার সহযোগী জ্বীন-শয়তানেরা নিজেদের বিশেষ ক্ষমতা দেখিয়ে মানব ও জ্বীন জগতের বাসিন্দাদের বিভ্রান্ত করার জন্য বলেছে তারাই মানব ও জ্বীনজাতিকে সৃষ্টি করেছে। ওল্ড টেস্টামেন্টে শয়তানকে স্রষ্টা হিসাবে দেখানো হয়। যারাই বিতাড়িত শয়তানদের কথা বিশ্বাস করে তাদের আধ্যাত্মিক সাধনা ও জাদুবিদ্যা শিক্ষা দেয় বিতা্ড়িত শয়তানরা যেন তারা মানব ও জ্বীনজগতের সীমারেখা অতিক্রম করে সীমালঙ্ঘন করে। আল্লাহ বলেছেনঃ “...অতএব তোমরা কি আমার পরিবর্তে শয়তান এবং তার বংশধরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করছ? অথচ তারা তোমাদের শত্রু। এটা জালেমদের জন্যে খুবই নিকৃষ্ট বদল।”(সুরা কাহফ, ১৮:৫০) তারপর বিতাড়িত শয়তানরা তাদের জানায় মানব ও জ্বীনের পৃথিবীতে আসার মূল লক্ষ্য হল ধ্যানের মাধ্যমে ক্বারিন জ্বীনের সত্ত্বার সাথে মানব সত্ত্বাকে মিলিত করা তাহলে তারা পাবে ঈশ্বরের ন্যায় ক্ষমতা ত্রবং অমরত্ব। জ্বীন ও মানুষের মধ্যে যারা ইবলিসের সহযোগী বিতাড়িত শয়তানদের কথা মেনে চলে তাদের শয়তানরা জাদুবলে সহযোগীতা করে। ফেরাউন ও নিমরুদের মত কাফেররা ইবলিসের কথা মেনে পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, আল্লাহর বান্দাদের পথভ্রষ্ট করার চেষ্টা করে ত্রবং তারা বিশ্বাস করে ইবলিসের কথা মনে চললে তারা পৃথিবীতে বারবার পুনর্জন্ম লাভ করবে। বর্তমানে জ্বীন-শয়তানদের সাহায্যগ্রহণকারী বিজ্ঞানীরাও পৃথিবীতে চিরজীবী হওয়ার জন্য digital immortality এর মত নানা প্রযুক্তির আবিষ্কার করছে এবং হিমায়িত করা মৃতদেহকে ক্লোনিং করে জীবন দেয়ার চেষ্টা করছে। সম্প্রতি আমেরিকান সোসাইটি ফর সেল বায়োলজির বার্ষিক সভায় একটি গবেষণামূলক দল বিবৃত করেছে নতুন gene “MORF4” অমর করবে। ইবলিস ও সহযোগী বিতাড়িত জ্বীন-শয়তানেরা জ্বীন ও মানুষকে ফেরেশতাদের ঘাঁটিতে হামলা চালানোর আদেশ করে যেন পৃথিবীর নেতৃত্ব ইবলিস দিতে পারে। ত্রকারনেই প্রাচীন ব্যবিলিয়নের শাসক নিমরুদ আল্লাহকে চ্যালেঞ্জ করেছিল ও ইবলিসের আদেশে ফেরেশতাদের ঘাঁটির দিকে আধুনিক space weapon এর মতো arrow নিক্ষেপ করেছিল। আল্লাহর বাহিনী ফেরেশতাদের হামলা করা মানে আল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা। তখন আল্লাহর আদেশে মশা নিম্রোদকে ধ্বংস করে দেয়। ইবলিস কাফের জ্বীন ও মানুষদেরকে এও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে মানুষ ও জ্বীনরা যদি বেহেশত যাওয়ার পোর্টাল খুঁজে পায় তবে এখনি তাতে প্রবেশ করতে পারবে। তাই জ্বীন ও মানুষ শয়তানেরা মহাকাশে বেহেশতের সন্ধান করছে। সবশেষে ইবলিস প্রতিশ্রুতি দিয়েছে মানুষের জগতের সাথে যদি জ্বীনজগতের পর্দা (barrier) ভেঙ্গে উভয় জগতকে ত্রক করে ফেলতে পারলেই পৃথিবীতে “সময়” বলে কিছু থাকবে না তখন মানুষ ও জ্বীন সময়হীন ত্রক জগতে অমরত্ব লাভ করবে। তাই মানুষ ও জ্বীন-শয়তান দুই পৃথিবীকে এক করার চেষ্টায় মও আর যেদিন তাদের কারনে দু’জগতের পর্দা (barrier) ভেঙ্গে এক হবে সেদিন কেয়ামত আসবে। জ্বীন ও মানব জগত ত্রকত্র হয়ে গেলে পৃথিবীর মাটি, আকাশ, পাহাড় ধ্বংস হয়ে যাবে কারন প্রকৃতিতে সব কিছুই তার নিয়মমাফিক চলে। কেয়ামতের দিন পৃথিবী ভিন্ন মাটি, ভিন্ন আকাশে পরিনত হবে।আল্লাহ বলেছেনঃ“যেদিন পরিবর্তিত করা হবে এ পৃথিবীকে অন্য পৃথিবীতে এবং পরিবর্তিত করা হবে আকাশ সমূহকে এবং লোকেরা পরাক্রমশালী এবং আল্লাহর সামনে পেশ হবে।”(সূরা ইব্রাহীম) আল্লাহ কারো উপর জুলুমকারী নন বরং তারাই নিজেদের উপর জুলুমকারী। আল্লাহ বলেছেনঃ, “হে মানুষ! তোমাদের অনাচার তোমাদের ওপরই পতিত হয়ে থাকে। পার্থিব জীবনের সুখ (সাময়িক) ভোগ করে নাও; পরে আমার কাছেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন করতে হবে। তখন আমি জানিয়ে দেব তোমরা যা করতে।” [সুরা : ইউনুস, আয়াত : ২৩) আল্লাহ আরত্ত বলেছেনঃ “তারা নিজেদের মধ্যে ভীষণ চক্রান্ত করে নিয়েছে এবং আল্লাহর সামনে রক্ষিত আছে তাদের কু-চক্রান্ত। তাদের কুটকৌশল পাহাড় টলিয়ে দেয়ার মত হবে না।জালেমরা যা করে, সে সম্পর্কে আল্লাহকে কখনও বেখবর মনে করো না তাদেরকে তো ঐ দিন পর্যন্ত অবকাশ দিয়ে রেখেছেন, যেদিন চক্ষুসমূহ বিস্ফোরিত হবে। তারা মস্তক উপরে তুলে ভীত-বিহবল চিত্তে দৌড়াতে থাকবে। তাদের দিকে তাদের দৃষ্টি ফিরে আসবে না এবং তাদের অন্তর উড়ে যাবে।”(সূরা ইব্রাহীম) সেদিন আকাশ বিদীর্ণ হবে তখন সেটি রক্তবর্ণে রঞ্জিত চামড়ার মত হয়ে যাবে। [55:53] “যখন কিয়ামতের ঘটনা ঘটবে, ...যখন প্রবলভাবে প্রকম্পিত হবে পৃথিবী এবং পর্বতমালা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে। অতঃপর তা হয়ে যাবে উৎক্ষিপ্ত ধূলিকণা।” (সূরা আল ওয়াক্বিয়াহ্) বর্তমানে ওয়ার্মহোল, ব্ল্যাকহোল, particle, টেলিপোর্টেশন, টাইম ট্রাভেল আর The Large Hadron Collider ত্রর গবেষণার প্রকৃত কারন কি ইবলিসের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা নয়? নিউক্লিয়ার বোমের বিস্ফোরণ তৈরি করে মাশরুমের ন্যায় মেঘের (mushroom cloud) যার বিস্ফোরণে জ্বীনদের জগতকে মানুষের জগতের সাথে ত্রক করা যেতে পারে। ত্রমন “মাশরুম মেঘ” দেখা গিয়েছিল বিশ্বযুদ্ধের সময়। পারমাণবিক শক্তি জ্বীনজগতের “পোর্টাল" খুলতে সহায়তা করে বলে ধারণা অনেক গবেষকদের। কেয়ামতের আগের ত্রকটি লক্ষণ হল ধোয়াঁ। কারন কেয়ামতের পূর্বে মানুষ ও জ্বীন-শয়তানেরা নিউক্লিয়ার বোম (atomic weapon) ব্যবহার করে উভয়ের জগতের আবরণকে ভেঙে ত্রক করে ফেলতে চাইবে । আল্লাহর বান্দারা পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চায় আর কাফেররা চায় ইবলিসের আদেশ মেনে পৃথিবীকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যেতে।
আগেও আল্লাহ যেসব অবাধ্য সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেছেন তারা নিজেরাই ধবংস হয়েছিল নিজেদের সীমালঙ্ঘন ও কুফরের কারনে। আল্লাহ বলেছেনঃ “তারা কি দেখেনি যে, আমি তাদের পুর্বে কত সম্প্রদায়কে ধ্বংস করে দিয়েছি, যাদেরকে আমি পৃথিবীতে এমন প্রতিষ্ঠা দিয়েছিলাম, যা তোমাদেরকে দেইনি। আমি আকাশকে তাদের উপর অনবরত বৃষ্টি বর্ষণ করতে দিয়েছি এবং তাদের তলদেশে নদী সৃষ্টি করে দিয়েছি, অতঃপর আমি তাদেরকে তাদের পাপের কারণে ধ্বংস করে দিয়েছি এবং তাদের পরে অন্য সম্প্রদায় সৃষ্টি করেছি।” (সুরা আন’য়াম ৬:৬) সেসব জ্বীন ও মানুষ শয়তান নিজেরাই আল্লাহর অবাধ্যতাবশত সীমা অতিক্রম করে নিজের ধ্বংস ডেকে এনেছিল। তাদের সম্প্রদায়কে ধ্বংসের পূর্বে আল্লাহ সর্তককারী প্রেরণ করেছিলেন।আল্লাহ বলেনঃ“আমি কোন জনপদ ধবংস করিনি; কিন্ত তার নির্দিষ্ট সময় লিখিত ছিল" [সুরা হিজর, ২-৪]।” “আর যারা কুফরী করেছে এবং আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে, তারাই আগুনের অধিবাসী। তারা সেখানে স্থায়ী হবে।” (বাকারাঃ৩৯) অতএব, স্বীয় কুফরের কারণে শাস্তি আস্বাদন কর।”(সুরা আন’য়াম ) ভবিষ্যতে মানবজাতির জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে আল্লাহ এইসব পাপাচারী এবং অভিশপ্ত সভ্যতার কিছু কিছু ধ্বংসাবশেষ, স্থাপত্য ও শৈল্পিক বস্তু এখনো পৃথিবীতে রেখে দিয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ, স্যাক্সাহুয়ামান, মিশরীয় পিরামিড, স্টোনহেঞ্জ, টোটিহুয়াকানের পিরামিড(মেক্সিকো), ময়ইইস্টার দ্বীপের ঘাসঘরের পাহাড়ের প্রাচীন দুর্গ।এমন অনেক অবাধ্য জাতি এবং সম্প্রদায় ধবংস হওয়ার পর সেখানে আবার নতুন সম্প্রদায় বসবাস শুরু করে।বিতাড়িত শয়তানরা আবার একই কৌশলে তাদেরকেও ধোকা দিতে চেষ্টা করে।
যারা শয়তানের কুমন্ত্রণায় সাড়া দেয় ত্রবং যারা জ্বীন-শয়তানদের দেবদেবী হিসেবে পূজা করে তাদের উদ্দেশ্যে কেয়ামতের দিন বিতাড়িত শয়তান কি বলবে? “যখন সব কাজের ফয়সলা হয়ে যাবে, তখন শয়তান বলবেঃ নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে সত্য ওয়াদা দিয়েছিলেন এবং আমি তোমাদের সাথে ওয়াদা করেছি, অতঃপর তা ভঙ্গ করেছি। তোমাদের উপর তো আমার কোন ক্ষমতা ছিল না, কিন্তু এতটুকু যে, আমি তোমাদেরকে ডেকেছি, অতঃপর তোমরা আমার কথা মেনে নিয়েছ। অতএব তোমরা আমাকে ভৎর্সনা করো না এবং নিজেদেরকেই ভৎর্সনা কর। আমি তোমাদের উদ্ধারে সাহায্যকারী নই। এবং তোমরাও আমার উদ্ধারে সাহায্যকারী নও। ইতোপূর্বে তোমরা আমাকে যে আল্লাহর শরীক করেছিলে, আমি তা অস্বীকার করি। নিশ্চয় যারা জালেম তাদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (সূরা ইব্রাহীম, আয়াত ২২) সেদিন আল্লাহ বলবেনঃ “হে জ্বীন ও মানব সম্প্রদায়, তোমাদের কাছে কি তোমাদের মধ্য থেকে পয়গম্বরগণ আগমন করেনি? যাঁরা তোমাদেরকে আমার বিধানাবলী বর্ণনা করতেন এবং তোমাদেরকে আজকের এ দিনের সাক্ষাতের ভীতি প্রদর্শন করতেন? তারা বলবেঃ আমরা স্বীয় গোনাহ স্বীকার করে নিলাম। পার্থিব জীবন তাদেরকে প্রতারিত করেছে। তারা নিজেদের বিরুদ্ধে স্বীকার করে নিয়েছে যে, তারা কাফের ছিল।” (সূরা আল-আনআ’ম, ১৩০)
শয়তান কি বন্ধু সেজে মানুষকে ধোকাঁ দিতে পারে? হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) বর্নিত শয়তান সম্পর্কিত একটি ঘটনা সংক্ষিপ্ত আকারে ঘটনাটি শেয়ার করলাম যা হযরত মুহাম্মাদ ইবনে আরাবী (রাঃ)র বই শাজরত আল-কান ("The Tree of Being") থেকে সংগ্রহিত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) বর্নিত একটি হাদিস: একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চারপাশে আনসারদের এক বাড়িতে অনেকে সমবেত হয়। সেসময় বক্তব্যের মাঝখানে বাইরে থেকে নবী একটি কুশ্রী কণ্ঠস্বর শুনতে পেলেন যে বলল, "হে আল্লাহর রসূল! আপনি কি আমাকে প্রবেশ করতে অনুমতি দেবেন? আমার সাথে আপনার কাজ আছে! " নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সবাইকে বললেন, "তোমরা কি এই কণ্ঠস্বরটি কার জানো?" সাহাবীগণ উত্তর দিলেন, "আল্লাহ ও তাঁর রসূলই ভাল জানেন।" রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এটা শয়তান । উমর রাঃ এ কথা শুনে বললেনঃ”রাসূল আপনি অনুমতি দিলে আমি শয়তানের মাথা কেটে ফেলবো! আমি তার মাথার খুলি ভাঙ্গাবো এবং মানুষকে তার কষ্ট থেকে মুক্ত করিব! "রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “না উমার, তুমি কি জান না যে তুমি শয়তানকে হত্যা করতে পারবে না?” আল্লাহ কেয়ামতের আগ পর্যন্ত তাকে সময় দিয়েছেন।” তারপর তিনি বললেন, "দরজা খুলে দাও এবং তাকে আসতে দাও, কারন শয়তান আল্লাহর হুকুম ছাড়া আসতে পারে না। আর সে যা বলে তা শোনো, এবং বুঝতে চেষ্টা করো। " শয়তান মানুষকে পরীক্ষা করতে আসতে পারে, মানুষের বেশে (কণ্ঠস্বরে) বিভান্ত্র করতে পারে। অনেকসময় আল্লাহ মানুষের ঈমান পরীক্ষা করেন। নবী শয়তানকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ “আমাকে বলো, সৃষ্টির মধ্যে তুমি কাকে সবচেয়ে ঘৃণা করো?'শয়তান উত্তর দিল, 'হে মুহাম্মদ! ['এবং সমস্ত নবী'] পুরো সৃষ্টির মধ্যে আমি তোমাকে সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করি। 'রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার শয়তানকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ “আমাকে ছাড়া অন্য কাকে তুমি ঘৃণা করো?' শয়তান বলল, 'অল্প বয়স্ক ছেলেমেয়েদের যারা আল্লাহর কথামত চলেছে এবং জ্ঞানী মানুষ যারা তাদের জ্ঞান দিয়ে আল্লাহর কাজ করছে এবং যারা শয়তানের ধোঁকাকে প্রত্যাখ্যান করছে। যারা ওযু করে; তারপর যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যদের কাছ থেকে কোন সাহায্য চায় না, কাউকে কোন অভিযোগও করেন না; যারা আল্লাহর ইবাদাতের জন্য মানুষকে ডাকে, যারা জেনাকে বর্জন করে; আর গরীবদের আল্লাহর কথা অনুযায়ী দান করে।”বস্তুতঃ আল্লাহর অনুগ্রহ ও করুণা যদি তোমাদের উপর বিদ্যমান না থাকত তবে তোমাদের অল্প কতিপয় লোক ব্যতীত সবাই শয়তানের অনুসরণ করতে শুরু করত! (An-Nisaa: 83)
আরেকটি কাহিনী শেয়ার করছি। এক গ্রামে শয়তান মানুষকে বিভ্রান্ত করতে সক্ষম হয়েছিল যে গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ সত্যিকারের সৃষ্টিকর্তার পরিবর্তে একটি গাছকে পূজা করত। আল্লাহর বদলে গাছকে পূজা করতে দেখে একজন ধার্মিক ব্যক্তি পরিকল্পনা করে এক রাতে সেই গাছটিকে সে কেটে ফেলবে। তখন শয়তান মানুষের বেশে হাজির হয় তার সামনে। তারপর শয়তান লোকটিকে বলল, “তুমি গাছটি কাটতে পারবে না।” ধার্মিক লোকটি বলল, “হ্যাঁ, গাছটি আমি অবশ্যই কাটব”। শয়তান লোকটিকে বিভ্রান্ত করার জন্য আবার বলল, “তুমি গাছটা নিশ্চয়ই মন থেকে কাটতে চাও না।” সাহসী লোকটি বলল, “অবশ্যই আমি গাছটি কাটব কারন গাছটির জন্য মানুষ শিরকে লিপ্ত হচ্ছে।” শয়তান লোকটিকে তার সাথে লড়াই করার প্রস্তাব দেয় আর লড়াইয়ে ধার্মিক লোকটি জয়ী হয়। শয়তান তখন লোকটাকে বলল, “দেখো যারা গাছটিকে পূজা করছে তারা এমনিতেই জাহান্নামী; তুমি নিজে বরং আল্লাহর প্রতি ইবাদতে মনোনিবেশ করো।আর তুমি যদি গাছ না কাটো তবে আমি প্রতিদিন তোমাকে কিছু দিনার দেব। এ কথা শুনে লোকটি খুশি হল এবং গাছটি কাটতে গেল না।প্রথম কিছুদিন লোকটিকে শয়তান দিনার দিলেও পরবর্তীতে শয়তান অঙ্গীকার ভঙ্গ করে লোকটিকে দিনার দেয়া বন্ধ করল।লোকটি দিনার না পেয়ে আবার রাতে বের হল সেই গাছ কাটার জন্য। শয়তান আবার মানুষের বেশে সামনে দাড়ালো। শয়তান আবার লোকটিকে লড়াই করার প্রস্তাব করল। কিন্তু এবার লোকটি হেরে গেল শয়তানের কাছে। লোকটি অবাক হল কেন সে প্রথমবার জয়ী হল কিন্তু দ্বিতীয়বার তার কাছে হেরে গেল। জবাবে শয়তান বলল, “প্রথমবার তুমি আল্লাহর জন্য গাছটি কাটতে গিয়েছিলে তাই আল্লাহ তোমাকে বিজয় দিয়েছেন। আল্লাহর বান্দাদের উপর শয়তানের কোন ক্ষমতা নেই। আর দ্বিতীয়বার তুমি গাছটি কাটতে চেয়েছিলে দিনারের জন্য (পার্থিব লাভের জন্য) তাই আমি জয়ী হয়েছি।” সুতরাং যাদের অন্তরে ঈমান (আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস) তাদের শয়তান ক্ষতি করতে পারে না।কিন্তু যারা দুর্বল ঈমানের অধিকারী ও যাদের অন্তর পার্থিব বিষয়াদিতে মগ্ন তাদের শয়তান তাদের সহজেই কাবু করে ফেলে।
হাদিস অনুযায়ী শয়তান মানুষের বেশে থাকতে পারে। এসব শয়তান সত্যের সাথে মিথ্যা মিশিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে রমযানের যাকাত হিফাযত করার দায়িত্বে নিযুক্ত করলেন। এক ব্যক্তি এসে আঞ্জলি ভর্তি করে খাদ্যসামগ্রী নিতে লাগল। আমি তাকে পাকড়াও করলাম এবং বললাম, আল্লাহ্র কসম, আমি তোমাকে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে উপস্থিত করব। সে বলল, আমাকে ছেড়ে দিন। আমি খুবই অভাবগ্রস্ত, আমার যিম্মায় পরিবারের দায়িত্ব রয়েছে এবং আমার প্রয়োজন তীব্র। তিনি বললেন, আমি ছেড়ে দিলাম। যখন সকাল হলো, তখন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আবূ হুরায়রা, তোমার রাতের বন্দী কি করল? আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্, সে তার তীব্র অভাব ও পরিবার, পরিজনের কথা বলায় তার প্রতি আমার দয়া হয়, তাই তাকে আমি ছেড়ে দিয়েছি। তিনি বললেন, সাবধান! সে তোমার কাছে মিথ্যা বলেছে এবং সে আবার আসবে। ‘সে আবার আসবে’ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উক্তির কারণে আমি বুঝতে পারলাম যে, সে পুনরায় আসবে। কাজেই আমি তার অপেক্ষায় থাকলাম। সে এল এবং অঞ্জলি ভরে খাদ্যসামগ্রী নিতে লাগল। আমি ধরে ফেললাম এবং বললাম, আমি তোমাকে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে নিয়ে যাব। সে বলল, আমাকে ছেড়ে দিন। কেননা, আমি খুবই দরিদ্র এবং আমার উপর পরিবার-পরিজনের দায়িত্ব ন্যস্ত, আমি আর আসবো না। তার প্রতি আমার দয়া হলো, এবং আমি তাকে ছেড়ে দিলাম। সকাল হলে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আবূ হুরায়রা, তোমার রাতের বন্দী কি করল? আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্, সে তার তীব্র প্রয়োজন এবং পরিবার- পরিজনের কথা বলায় তার প্রতি আমার দয়া হয়। তাই তাকে আমি ছেড়ে দিয়েছি। তিনি বললেন, খবরদার। সে তোমার কাছে মিথ্যা বলেছে এবং সে আবার আসবে। তাই আমি তৃতীয়বার তার অপেক্ষায় রইলাম। সে আবার আসল এবং অঞ্জলি ভর্তি করে খাদ্য সামগ্রী নিতে লাগল। আমি তাকে পাকড়াও করলাম এবং বললাম, আমি তোমাকে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে অবশ্যই নিয়ে যাব। এ হল তিন বারের শেষ বার। তুমি প্রত্যেকবার বলো যে আর আসবে না, কিন্তু আবার আস। সে বলল আমাকে ছেড়ে দিন। আমি তোমাকে কয়েকটি কথা শিখিয়ে দেব। যা দিয়ে আল্লাহ্ তোমাকে উপকৃত করবেন। আমি বললাম সেটা কি? সে বলল, যখন তুমি রাতে শয্যায় যাবে তখন আয়াতুল কুরসী اللَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّومُ আয়াতের শেষ পর্যন্ত পড়বে। তখন আল্লাহ্র তরফ থেকে তোমার জন্য একজন রক্ষক নিযুক্ত হবে এবং ভোর পর্যন্ত শয়তান তোমার কাছে আসতে পারবে না। কাজেই তাকে আমি ছেড়ে দিলাম। ভোর হলে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে বললেন, গত রাতে তোমার বন্দী কি বলল? আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম), সে আমাকে বলল, যে সে আমাকে কয়েকটি বাক্য শিক্ষা দেবে যা দিয়ে আল্লাহ্ আমাকে লাভবান করবেন। তাই আমি তাকে ছেড়ে দিয়েছি। তিনি আমাকে বললেন, এই বাক্যগুলো কি? আমি বললাম, সে আমাকে বলল, যখন তুমি রাতে শয্যায় যাবে তখন আয়াতুল কুরসী اللَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّومُ প্রথম থেকে আয়াতের শেষ পর্যন্ত পড়বেএবং সে আমাকে বলল, এতে আল্লাহ্র তরফ থেকে তোমার জন্য একজন রক্ষক নিযুক্ত থাকবেন এবং ভোর পর্যন্ত তোমার নিকট কোন শয়তান আসতে পারবে না। সাহাবায়ে কিরাম কল্যাণের জন্য বিশেষ লালায়িত ছিলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ এ কথাটি তো সে তোমাকে সত্য বলেছে। কিন্তু হুশিয়ার, সে মিথ্যুক। হে আবূ হুরায়রা, তুমি কি জান, তিন রাত ধরে তুমি কার সাথে কথাবার্তা বলেছিলে? আবূ হুরায়রা (রা.) বললেন, না। তিনি (নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সে ছিল শয়তান। [সহীহ বুখারী]
যখন মানুষ ঘুমায় তখন রূহ আল্লাহর কাছে চলে যায়। সেসময় মানুষের নফস (unconscious mind) তাদের সাথেই থাকে যা অন্য জগতের (জ্বীনজগতের) জানলাসরূপ। তখন ক্বারিন জ্বীন-শয়তান দুঃস্বপ্ন দেখায়। প্রাচীন পাগান মিশরীয়, চীন, রোমান ও গ্রীকদের বিশ্বাস ছিল ঘুমের সময় তাদের দেবতারা (জ্বীন-শয়তান) স্বপ্নের মাধ্যমে তাদের তথ্য পাঠায় এবং ঘুমের মাধ্যমে অন্য জগতে যাত্রা করা যায়। রাবী মুহাম্মাদ (রহঃ) বলেন, .. “স্বপ্ন তিন প্রকার, মনের কল্পনা, শয়তানের তরফ থেকে ভয় দেখানো এবং আল্লাহ্র তরফ হতে সুসংবাদ। তাই যদি কেউ অপছন্দনীয় কিছু দেখে তবে সে যেন তা কারো কাছে বর্ণনা না করে। বরং উঠে যেন (নফল) সালাত আদায় করে নেয়।” (সহিহ বুখারী:7017) শয়তানের কারনেই sleep paralysis ত্রবং sleepwalking এর ঘটনা ঘটে আর একারণে মুসলমানরা ঘুমের পূর্বে আল্লাহকে স্মরণ করে। জাবের (রাঃ) বলেন, কোন ব্যক্তি যখন তার ঘরে প্রবেশ করে অথবা তার বিছানায় আশ্রয় নেয় তখন একজন ফেরেশতা ও একটি শয়তান তার দিকে ধাবিত হয়। ফেরেশতা বলেন, কল্যাণের সাথে (তোমার দিনটি) শেষ করো, আর শয়তান বলে, অনিষ্ট সহকারে শেষ করো। অতএব সে যদি আল্লাহর প্রশংসা করে, তার যিকির করে তাহলে সে শয়তানকে বিতাড়িত করলো এবং রাতটি (আল্লাহর) হেফাজতে কাটালো। অনুরূপভাবে সে ঘুম থেকে জাগ্রত হলে একজন ফেরেশতা ও একটি শয়তান তার দিকে ধাবিত হয় এবং তারা পূর্বানুরূপ কথা বলে। সে যদি আল্লাহকে স্মরণ করে এবং বলে, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি আমার মৃত্যুর পর আমার জীবনটা আমার নিকট ফিরিয়ে দিয়েছেন এবং ঘুমের মধ্যে মৃত্যুদান করেননি।সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, “যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীকে স্থানচ্যুত হওয়া থেকে রুখে রেখেছেন। যদি এই দুটি স্থানচ্যুত হয় তবে তিনি ছাড়া কেউই এদের প্রতিরোধ করে রাখতে পারবে না। নিশ্চয় তিনি পরম সহিষ্ণু, পরম ক্ষমাশীল” (সূরা ফাতিরঃ ৪১)। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, “যিনি আসমানকে প্রতিরোধ করে রেখেছেন যাতে তা তার অনুমতি ব্যতীত পৃথিবীর উপর পতিত হতে না পারে। নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি অতীব মমতাশীল, পরম দয়াময়” (সূরা হজ্জঃ ৬৫)। সে মারা গেলে শহিদী মৃত্যুবরণ করলো, অন্যথা উঠে নামায পড়লে মর্যাদাপূর্ণ নামায পড়লো। (নাসাঈ, ইবনে হিব্বান) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেনঃ ঘরে প্রবেশকালে কেউ আল্লাহকে স্মরণ না করলে সেই ঘরে শয়তান রাত যাপন করে।কোন লোক তার আহার গ্রহণকালে আল্লাহকে স্মরণ না করলে শয়তান বলে, তোমাদের রাত কাটানোর জায়গা এবং রাতের আহার উভয়ের ব্যবস্থা হয়ে গেলো। (মুসলিম, হাকিম, ইবনে হিব্বান, আবু আওয়ানা) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কেউ যেন তার বাম হাতে পানাহার না করে? কেননা শয়তান তার বাম হাতে পানাহার করে। রাবী বলেন, নাফে (রহঃ) তাতে আরো যোগ করেন যে, বাম হাতে কিছু গ্রহণও করবে না এবং বাম হাত দ্বারা কিছু দিবেও না। (মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী) নতুন গবেষণাও বলছে বামহাতী (left-handed) মানুষেরা ডানহাতীর চেয়ে ব্যক্তিত্ব, বিশ্বাস, আচরণ, বিবেচনায় ভিন্ন ধরনের। যারা বামহাতী তারা খেলাধুলা, মিউজিক, অঙ্কন, আর সৃজনশীলতায় বেশি পারদর্শী যেমনঃ মার্ক টোয়েন, মোৎসার্ট, নিকোলা টেসলা,বিল গেটস, লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি, অ্যারিস্টটলের মত ব্যক্তিরা ছিল বামহাতী যাদের cognitive ও psychological profiles ডানহাতীদের চেয়ে ভিন্ন এবং তাদের অনেকে মস্তিষ্কের উভয় বাম ও ডান hemispheres ব্যবহার করতে সক্ষম। তবে বর্তমান গবেষণা অনুযায়ী বামহাতী লোকদের মানসিক সমস্যাও ডানহাতীদের চেয়ে বেশি থাকে। বর্তমানে অনেক বিখ্যাত স্রেলিবিটি, বিজ্ঞানী, লেখক, গণিতবিদ, মিউজিশিয়ান, পরিচালক, অভিনেতা-অভিনেত্রী ও অন্যান্য অনেকেই বিশ্বাস করে জ্বীনসাধনার মাধ্যমে বেশি সৃজনশীল হওয়া যায়, নৃত্য-বাদ্যযন্ত্র-গান- গণিতে দক্ষতা অর্জন করা যায়, ও তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কে আরো জ্ঞান লাভ করা যায়। আসলে জ্বীন-শয়তান মানুষকে সেই পার্থিব জ্ঞানই দেয় যা আল্লাহর স্মরণ থেকে নিজেকে দূরে রাখবে।
শয়তান আল্লাহকে বলেছিল: “আপনি আমাকে যেমন উদভ্রান্ত করেছেন, আমিও অবশ্য মানুষের জন্যে আপনার সরল পথে বসে থাকবো।এরপর তাদের কাছে আসব তাদের সামনের দিক থেকে, পেছন দিক থেকে, ডান দিক থেকে এবং বাম দিক থেকে। আপনি তাদের অধিকাংশকে কৃতজ্ঞ পাবেন না।” (সূরা আল আ’রাফ) জ্বীন-শয়তান আধ্যাত্মিক শক্তি ব্যবহার করে মানুষের জগতে প্রবেশ করে এবং সে প্রবেশ করতে পারে মানুষের মুখ, পায়ুপথ ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষের দেহে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: "আল্লাহ হাঁচি পছন্দ করেন এবং হাই তোলা অপছন্দ করেন। তোমাদের কেউ হাঁচি দিয়ে আল্লাহর প্রশংসা করলে (আলহামদুলিল্লাহ বললে) এবং অপর মুসলমান ব্যক্তি তা শোনতে পেলে ইয়ারহামুকাল্লাহ (আল্লাহ তোমার প্রতি সদয় হোন) বলা তার কর্তব্য হয়ে যায়। আর হাই উঠে শয়তানের পক্ষ থেকে। অতএব তোমাদের কারো হাই উঠলে সে যেন তার হাত দিয়ে তার মুখ চেপে ধরে। কেননা শয়তান মুখে প্রবেশ করে"। (মুসলিম, আবু দাউদ, আহমাদ, আবু আওয়ানা) তবে মানুষ ওযু করলে পানি শয়তানকে দেহ থেকে বের করে দেয়।শয়তান বন্ধ কিছুতে প্রবেশ করতে বাধাগ্রস্ত হয়। জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ "তোমরা (রাতে ঘুমানোর পূর্বে) ঘরের দরজাগুলো বন্ধ করো, পানির পাত্রের মুখ ঢেকে বা বেঁধে দিও, থালাগুলো উপুড় করে রেখে বা ঢেকে দিও এবং আলো নিভিয়ে দিও। কেননা শয়তান বন্ধ দরজা খোলতে পারে না, পানির পাত্রের বন্ধ মুখ খোলতে পারে না এবং উপুড় করা বা ঢেকে দেয়া থালাও উন্মুক্ত করতে পারে না। (আলো নিভিয়ে না দিলে) দুষ্ট ইঁদুর মানুষের ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়"। (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী হাঃ ১৭৫৮) শয়তান পানি এবং বায়ুবাহিত রোগজীবাণু ত্রবং প্রাণীর বেশে আসতে পারে। ময়লা-অপরিচ্ছন্ন জায়গায় এবং যা কিছু অপবিত্র, খাঁটি নয়, নিষিদ্ধ ও বর্জিত খাদ্যের মাধ্যমে শয়তান রোগ ছড়াতে পারে। বর্তমানের বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছে অনেক রোগজীবাণু বহনকারী ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া অন্য জগতে (জ্বীন জগতে) সৃষ্টি হয়েছে যা Blood rain এবং অন্যান্য কারণে মানবজগতে প্রবেশ করে। পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে আইয়ুব (আলাইহি-আস-সালাম) শয়তানের কারনে রোগে ভুগেছেন বহুদিনঃ “স্মরণ করুণ, আমার বান্দা আইয়্যুবের কথা, যখন সে তার পালনকর্তাকে আহবান করে বললঃ শয়তান আমাকে যন্ত্রণা ও কষ্ট পৌছিয়েছে”। (Saad: 41) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ "যখন তোমাদের কেউ তার ঘরের দরজার নিকট আসবে সে যেন সালাম দেয়। কারণ এতে তার সাথী শয়তান যে তার সাথে ছিল সে ফিরে যাবে। অতঃপর তোমরা যখন তোমাদের ঘরে প্রবেশ করবে তখন সালাম দাও। কারণ ঘরের মাঝে অবস্থানকারী শয়তানরা বেরিয়ে যাবে। তোমরা যখন সফরে যাবে তখন তোমরা তোমাদের বাহনের জন্য ব্যবহৃত চতুস্পদ জন্তুর উপরে প্রথম কাপড়টি রাখার সময় বিসমিল্লাহ্ বল। তাহলে তোমাদের বাহনে শয়তান অংশীদার হতে পারবে না। আর তোমরা যদি তা না কর তাহলে শয়তান তোমাদের সাথে অংশীদার হয়ে যাবে। তোমরা যখন খাবে তখন বিসমিল্লাহ্ বল যাতে করে শয়তান তোমাদের খাদ্যের মধ্যে অংশ গ্রহণ করতে না পারে। কারণ তোমরা যদি তা না কর তাহলে সে তোমাদের খাদ্যের মধ্যে অংশ গ্রহণ করবে। তোমরা তোমাদের ঘরে তোমাদের সাথে ময়লা আবর্জনা রেখে রাত যাপন করো না। কারণ সেগুলো হচ্ছে শয়তানের অবস্থান স্থান। তোমরা তোমাদের সাথে তোমাদের গৃহে রুমাল (যা ময়লা) রেখে রাত যাপন করো না। কারণ তা তার (শয়তান রোগবাহিত জীবাণুর) বিছানা। তোমরা পশুর পিঠের নিচের অংশের ব্যবহৃত কাপড় বিছায়ো না। তোমরা বাড়ির (দরজা) বন্ধ না করে বাস কর না। না-ঘেরা ছাদের উপর তোমরা রাত যাপন করো না। তোমরা যখন কুকুরের ডাক শুনবে অথবা গাধার আওয়াজ শুনবে তখন (শয়তান হতে) আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করবে। কারণ একমাত্র শয়তানকে দেখেই গাধা আওয়াজ করে আর কুকুর ডাকে।"
শয়তান পশুপাখি কিংবা মানুষ যে কারো আকার, রূপ বা বেশেই আসতে পারে। আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে একটি কবুতরের পিছু ধাওয়া করতে দেখলেন। তিনি বলেনঃ "এক শয়তান আরেক শয়তানের পিছে লেগেছে"। (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, মুসনাদ আহমাদ) জ্বীন-শয়তান বদরের যুদ্ধের সময় মক্কার কুরাইশদের কাছে বনু কিনানাহর সর্দার সূরাক্বা ইবনে যুশাম এর আকার ধরে গিয়ে তাদেরকে রাসুল (সঃ) এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার প্ররোচনা দিয়েছিল। (ইবনে কাসীর, আল বিদায়া ওয়াল নিহায়া, ৫/৬২)
আমাদের চারপাশের মানুষের মধ্যে কারো কারো সঙ্গী শয়তান আবার কারো কারো সঙ্গী ফেরেশতা। যাদের সঙ্গী শয়তান তারা নিজেরাও অন্য মানুষকে পাপ কাজে কুমন্ত্রণা দেয়। গানবাজনা, অহেতুক হাসিতামাশা, গীবত, অপ্রয়োজনীয় কথা (বাচলতা), অহেতুক আলাপ, আল্লাহর আদেশের বিরুদ্ধাচারন, সৃষ্টিশীল-সৃজনশীল কর্ম দ্বারা মানুষকে মোহিত বা আকৃষ্ট করার চেষ্টা, নিষিদ্ধ কাজ-এসবের কাছাকাছি থাকে তারা যাদের সঙ্গী শয়তান। উম্মু আলকামা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। আয়েশা (রাঃ)-র ভ্রাতুষ্পুত্রীদের খতনায় এক গায়ককে ডেকে পাঠানো হলো। আয়েশা (রাঃ) ঘরে প্রবেশ করে তাকে মাথার পর্যাপ্ত চুল ঝাকড়িয়ে গীত পরিবেশন করতে দেখেন।আয়েশা (রাঃ) বলেন, "আহ! এ(গায়ক) একজন শয়তান, একে বের করে দাও, একে বের করে দাও!" (আল-আদাবুল মুফরাদ ১২৫৯) যারা অধিকারভুক্ত নারী ও স্ত্রী ব্যতীত অন্য নারীর সাথে দেখা করে তাদের সঙ্গী শয়তান। “তারা আল্লাহকে পরিত্যাগ করে শুধু নারীর আরাধনা করে এবং শুধু অবাধ্য শয়তানের পূজা করে।” (An-Nisaa: 117) জাবির বর্ণনা করেন যে, মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ওয়াসায়াম বলেছেনঃ “যাদের স্বামী উপস্থিত নেই, সে সকল মহিলাদের নিকট তোমরা যেও না। কেননা, তোমাদের সকলের মাঝেই শয়তান রক্তের ন্যায় বিচরণ করে …” (জামে’ আত-তিরমিজি; হাদিস নং: ১১৭২) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরত্ত বলেনঃ "তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি জান্নাতের প্রশস্ততম জায়গা পেতে চায় সে যেন জামায়াতের সাথে থাকে। কেননা যে একাকী থাকে, শয়তান তারই সঙ্গী হয় এবং সে (শয়তান) দু’জন থেকে অধিকতর দূরে থাকে। কোন পুরুষ যেন কোন নারীর সাথে একাকী সাক্ষাত না করে। কেননা সেখানে শয়তান হয় তাদের তৃতীয় ব্যক্তি (যে যিনা করতে উদ্বুদ্ধ করে)। আর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তিকে তার ভালো কাজ আনন্দ দেয় এবং তার মন্দ কাজ দুঃখ দেয়, সেই মুমিন"।[ইবনু হিব্বান, ইবনু মাজাহ] মানুষ তার চারপাশের মানুষ দেখে শিখে তাই বর্তমানে মানুষের সঙ্গী “টেলিভিশন” ও “ইন্টারনেট”- তার শিক্ষা ও কর্মে ব্যপক প্রভাব ফেলছে। বর্তমানের স্রেলিবিটিরা গান, সিনেমা ও মিউজিক ভিডিওতে নানা ধরনের জ্বীন উপাসকদের মত প্রতীক, প্রতিমা ব্যবহার করে এবং মানুষকে নিষিদ্ধ কাজ করতে উৎসাহিত করে। আল্লাহ বলেছেন: “হে মুমিনগণ, এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্র কার্য বৈ তো নয়। অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাক-যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও।” (Al-Maaida: 90) “শয়তান তো চায়, মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মাঝে শুত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করে দিতে এবং আল্লাহর স্মরণ ও সালাত থেকে তোমাদেরকে বিরত রাখতে। অতএব, তোমরা এখন ও কি নিবৃত্ত হবে?” (Al-Maaida: 91) “এই কানাঘুষা তো শয়তানের কাজ; মুমিনদেরকে দুঃখ দেয়ার দেয়ার জন্যে। তবে আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত সে তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। মুমিনদের উচিত আল্লাহর উপর ভরসা করা”। (Al-Mujaadila: 10) এজন্য মুসলমানদের বন্ধু নির্বাচনে শুধুমাত্র এমন ব্যক্তিকেই নির্বাচন করা উচিত যে আল্লাহর বাধ্য। প্রতি সালাতে মুসলমানরা আল্লাহর সাথে প্রতিজ্ঞা করে আল্লাহর অবাধ্য কারো সাথে কোন সম্পর্ক তারা রাখবে না। আল্লাহ বলেছেন: "তোমরা অনুসরণ কর, যা তোমাদের প্রতি পালনকর্তার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য বন্ধুদের অনুসরণ করো না।”(সুরা আরাফ) তবে যে মানুষ আল্লাহর কাছে নিজের ইচ্ছাকে আত্মসমর্পণ করে দেয় তখন তার সাথে থাকা শয়তান সরে পড়ে এবং ফেরেশতা সঙ্গী নিযুক্ত হয়।যতক্ষণ না মানুষ খারাপ সঙ্গী আর ক্ষতিকর জিনিসকে না বর্জন করবে ততক্ষণ পর্যন্ত মানুষ কোনটা ভালো আর কোনটা মন্দ তা উপলব্ধি করতে পারবে না। সহিহ বুখারী (৫০১০) হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে- “যে আয়াতুল কুরসী পড়বে, আল্লাহ তা’আলা তার জন্য একজন প্রহরী (ফেরেশতা) নিযুক্ত করে দিবেন এবং কোন পুরুষ এবং নারী জ্বীন-শয়তান তার কাছে আসতে পারবে না।”
“বলুন, আমি আশ্রয় গ্রহণ করিতেছি মানুষের পালনকর্তার, মানুষের অধিপতির, মানুষের মা’বুদের, তার(শয়তান) অনিষ্ট থেকে, যে কুমন্ত্রণা দেয় ও আত্নগোপন করে, যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে জ্বিনের মধ্য থেকে অথবা মানুষের মধ্য থেকে।” (সূরা নাস)
হাত এবং যবান দ্বারা শয়তান মানুষকে বেশি পাপ করায় তাই হাত ও যবান ব্যবহারের পূর্বে মানুষকে অন্তর দিয়ে বিবেচনা করা প্রয়োজন। ইয়াদ ইবনে হিমার (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এক ব্যক্তি আমাকে গালাগালি করে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ "যারা একে অপরকে গালি দেয় তারা দুইটি শয়তান, তারা বাজে কথা বলে এবং তারা মিথ্যুক "(ইবনে হিব্বান; আল-আদাবুল মুফরাদ ৪২৮) শয়তান মানুষকে শিরক করতে উৎসাহিত করে।সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর। শয়তানের প্ররোচনায় একজন মানুষ আরেকজন মানুষকে খুশি করার উদ্দেশ্যে অতিরিক্ত প্রশংসা করে যা শিরকসরূপ।মুতাররিফ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার পিতা বললেন, আমি আমের গোত্রের প্রতিনিধি দলের সাথে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে গেলাম। লোকেরা (রাসূলকে) বললো, আপনি আমাদের সাইয়েদ (নেতা)। রাসূল সা: বললেনঃ সাইয়েদ তো হচ্ছেন আল্লাহ। লোকেরা বললো, আপনি আমাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সবচেয়ে বড়। রাবী বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা নিজেদের কথা বলো এবং শয়তান যেন তোমাদের মধ্যে অনুপ্রবেশ না করতে পারে (আবু দাউদ, নাসাঈ, আহমাদ; আল-আদাবুল মুফরাদআল-আদাবুল মুফরাদ, হাদিস নাম্বার:২১০ ) “বলুনঃ হে আমার পালনকর্তা! আমি শয়তানের প্ররোচনা থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি,এবং হে আমার পালনকর্তা! আমার নিকট তাদের উপস্থিতি থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি।” (সূরা আল-মু’মিনূন; আয়াত: ৯৭-৯৮)
আবুল আহওয়াস (রহঃ) বলেন, আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেছেন, আল্লাহর যিকির করলে শয়তানের পক্ষ থেকে ঘুম এসে যাবে। তোমরা চাইলে অনুশীলন করে দেখতে পারো। তোমাদের কেউ যখন শয্যাগত হয়ে ঘুমাতে ইচ্ছা করে তখন সে যেন মহামহিম আল্লাহর যিকির করে। (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ) একপ্রকার শয়তান জ্বীন (ওলহান) মানুষকে ওযুর সময় ওয়াসওয়াসা দেয় যেন তারা ওযুতে ভুল করে বেশি। আযান শোনার পর সালাত আদায় করতে ভুলিয়ে দেয়ার জন্য পার্থিব চিন্তায় ব্যস্ত রাখে শয়তান। আবার নামায পড়ার সময় একদল শয়তান (খানজাব) সালাতে আদায়কারীর কাছাকাছি হাজির হয় এবং তাকে পার্থিব বিষয়াদি স্মরণ করিয়ে এক আল্লাহর প্রতি মনোনিবেশে বাধা দেয়। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ও ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, গতরাতে একটি দুষ্ট জ্বীন আমার সালাত (নামায) নষ্ট করার জন্য হানা দিয়েছিল। কিন্তু আল্লাহ তাকে আমার আয়ত্তাধীন করে দিলেন। আমি তার ঘাড় মটকিয়ে দিলাম। আমার ইচ্ছা হয়েছিল যে, তাকে মসজিদের কোনও একটি খুঁটির সাথে বেঁধে রাখি। যাতে তোমরা সবাই ভোর বেলা তাকে দেখতে পাও। পরে আমার ভাই সুলায়মানের প্রার্থনা মনে পড়ে গেল। তিনি প্রার্থনা করেছিলেন- “হে আমার রব! আমাকে ক্ষমা কর এবং আমাকে এমন রাজত্ব দান কর যা আমার পর অন্য কেউ না পায়।” এরপর আল্লাহ তাকে (দুষ্ট জ্বীনকে) লাঞ্ছিত করে বিতাড়িত করলেন। [ সহীহ মুসলিম, হাদিস নাম্বার:১০৯২ ]
নবী সুলায়মান (আলাইহি-আস-সালাম)কে আল্লাহ ত্রমন এক সাম্রাজ্য দান করেছিলেন যা অন্য কোন রাজাকে দেয়া হননি। হযরত সুলায়মান (আলাইহি-আস-সালাম) আল্লাহর দেয়া ক্ষমতা দিয়ে মেঘ ও বাতাসকেও নিয়ন্ত্রণ করেতে পারতেন। তিনি জাদুচর্চা বা জ্বীনদের উপাসনা করেন নি।আল্লাহ জ্বীনদের নবী সুলায়মান (আলাইহি-আস-সালাম) এর অনুগত করে দিয়েছিলেন যারা তাকে বিভিন্ন কাজে সহযোগীতা করত। যেমন: এক স্থান থেকে অন্য স্থানে অল্প সময়ে যাতায়াত করা, মসজিদ তৈরি করা ইত্যাদি। আল্লাহ বলেছেন: “আর সকল শয়তানকে তার(নবী সুলায়মান আলাইহি-আস-সালাম এর) অধীন করে দিলাম অর্থাৎ, যারা ছিল প্রাসাদ নির্মাণকারী ও ডুবুরী।” (Saad: 37) একটি কাহিনী প্রচলিত আছে যে নবী সুলায়মান (আলাইহি-আস-সালাম) এর একটি আংটি ছিল যা পড়লে তিনি দৃশ্যমান জগত থেকে জীনদের অদৃশ্যমান জগতে প্রবেশ করতে পারতেন, পশুপাখির কথা বুঝতে পারতেন। একবার নবী সুলায়মান (আলাইহি-আস-সালাম) তার সেই আংটি তার অধীনস্থ ও বিশ্বস্ত এক সঙ্গীর কাছে দিয়ে গোসলখানায় যান, তখন এক শয়তান নবী সুলায়মান-এর বেশে হাজির হয়ে সেই সঙ্গীর কাছ থেকে সুলায়মান নবীর আংটি নিয়ে নিজের আঙুলে পড়ে।তারপর সেই শয়তান সুলায়মান (আলাইহি-আস-সালাম) এর সিংহাসনে বসে নিজেকে রাজা সুলায়মান বলে দাবি করে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক বলেছেনঃ “অনুরূপভাবে আমি প্রত্যেক নবীর জন্য শত্রু স্থির করেছি – মানুষ-শয়তান ও জ্বীন-শয়তান”। (সূরা আন’আম, আয়াত ১১২) যখন সত্যিকারের সুলায়মান নবী গোসলখানা থেকে বের হয়ে বুঝতে পারেন তার সিংহাসনে যে বসে আছে সে আসলে শয়তান তখন নবী সবাইকে বললেও সবাই সত্যিকারের সুলায়মান (আলাইহি-আস-সালাম) কে পাগল ভাবে আর শয়তানকে সবাই সুলায়মান রাজা হিসেবে বিশ্বাস করে। কুরআনে আছে নবী সুলায়মান (আলাইহি-আস-সালাম) তার সিংহাসনে একটি দেহ (নবী সুলায়মান -এর রূপ ধারণ করা শয়তান) দেখে অস্বস্তি বোধ করে। সুলায়মান আ:-এর রূপ ধারণ করা শয়তান রাজ্যশাসন শুরু করে এবং সত্যিকারের সুলায়মান আ: -কে রাজ্য থেকে বিতাড়িত করে। সুলায়মান (আলাইহি-আস-সালাম) এর বেশে সেই শয়তান স্রামাজ্যের মানুষকে জাদুচর্চায় উৎসাহিত করে আর তাই কুরআনে আছে, “সুলায়মান (আল্লাহর প্রতি) অবিশ্বাসী ছিল না; অবিশ্বাসী ছিল শয়তান।” সুলায়মান (আলাইহি-আস-সালাম) এর বেশধারী শয়তান ম্যাজিক শেখানোর কারনে কিছু পাগান- পৌত্তলিক এবং ইহুদিরা বিশ্বাস করে যে রাজা সুলায়মান শয়তানের (Asmodeus) সাহায্য নিয়ে জাদুচর্চা করত। ইহুদিরা সেই জাদুবিদ্যার বইগুলোকে চর্চা করত। আল্লাহ বলেছেনঃ “তারা ঐ শাস্ত্রের অনুসরণ করল, যা সুলায়মানের রাজত্ব কালে শয়তানরা আবৃত্তি করত।...যা তাদের ক্ষতি করে এবং উপকার না করে, তারা তাই শিখে। তারা ভালরূপে জানে যে, যে কেউ জাদু অবলম্বন করে, তার জন্য পরকালে কোন অংশ নেই। যার বিনিময়ে তারা আত্নবিক্রয় করেছে, তা খুবই মন্দ যদি তারা জানত।” (সূরা আল বাক্বারাহ, 102) পরে সুলায়মান (আলাইহি-আস-সালাম) এর আংটিটি হারিয়ে যায় এবং একটি মাছ তা গিলে ফেলে। সুলায়মান (আলাইহি-আস-সালাম) আল্লাহর কাছে দোয়া করতে থাকেন তার হারানো সাম্রাজ্য ফিরে পাওয়ার জন্য। সুলায়মান (আলাইহি-আস-সালাম) রাজ্য হারিয়ে সমুদ্রতীরে একাকী বসবাস শুরু করেন এবং এভাবে চল্লিশ দিন অতিবাহিত হয়। একদিন এক মৎস্যজীবী তাকে একটি মাছ দেন। তিনি মাছের পেটে এসমে আজমখচিত তার আংটিটি পান। তখন তিনি আবার তার রাজ্য নিজের হস্তগত করেন এবং ওই শয়তান জ্বীনকে একটি বিশেষ পাত্রে আবদ্ধ করে গভীর সমুদ্রে নিক্ষেপ করেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা সুলায়মান (আলাইহি-আস-সালাম) এর মত সমস্ত নবীকে পরীক্ষা করেছিলেন। সুলায়মান (আলাইহি-আস-সালাম) এর অবর্তমানে শয়তানের পৃষ্ঠপোষকতায় রাজ্যের মানুষ জাদুবিদ্যা চর্চা শুরু করেছিল তাই নবী সুলায়মান (আলাইহি-আস-সালাম) আবার ক্ষমতায় এসে রাজ্যের সব জাদুবিদ্যার বই সংগ্রহ করে লুকিয়ে রাখেন তার সিংহাসনের মাটির নিচে এবং তিনি রাজ্যের জাদুচর্চাকারীদের মৃত্যুদন্ড দেয়ার আদেশ করছিলেন। আর সেসময় কিছু অমুসলিমরা বিশ্বাস করত নবী সুলায়মান (আলাইহি-আস-সালাম) জাদুচর্চার মাধ্যমে জ্বীনদের নিয়ন্ত্রণ করতেন যা সত্যি নয়। নবী সুলায়মানের মৃত্যুর পর আবার রাজ্যে সেসব জাদুবিদ্যা চর্চা শুরু হয়।সেসব জাদুবিদ্যার বই তারপর বংশপরম্পরায় বিভিন্ন secrect societyতে প্র্যাকটিস করা হত। প্রশ্ন হল আংটিটি এখন কার কাছে?
© Book: AD-DAJJAL: The World is Full of Lies and Deception -এর অনুবাদ, লেখিকাঃ ফারহানা আকতার, পিএইচডি
Comments
Post a Comment