ছোঁয়াচে রোগের ব্যাপারে ইসলাম কী বলে?

 প্রশ্ন: চিকিৎসকরা বিভিন্ন রোগের ব্যাপারে বলেন, অমুক রোগটি ছোঁয়াচে। কিন্তু বোখারী শরীফের বাংলা অনুবাদে একটি হাদিস দেখলাম, ছোঁয়াচে রোগ বলতে কিছু নেই। ইসলামে কি ছোঁয়াচে রোগকে অস্বীকার করা হয়েছে? অথচ এটি একটি বাস্তব বিষয়। 

উত্তর: মূল উত্তরের আগে কয়েকটি কথা জেনে নেয়া উচিত।

ক) ইসলামের কোনো বিষয়ই বাস্তবতার পরিপন্থী নয়। কেননা, এ বিশ্বজগত যিনি সৃষ্টি কছেন তিনিই শরীয়ত দিয়েছেন। অতএব ইসলামের কোনো বিষয়ের সঙ্গে বাস্তবতার সংঘর্ষ হতে পারে না।

খ) এ বিশ্ব জগতে যা কিছু হয় সবই আল্লাহ তাআলার ফয়সালাতে হয়ে থাকে। এর পিছনে যেসব জিনিষকে বাহ্যিক কার্যকারণ হিসেবে দেখা যায় এগুলো যদিও বাস্তব, তবে এসবের কার্য ও ক্রিয়া করার ক্ষমতা আল্লাহপ্রদত্ত। 

আল্লাহ তাআলা ক্রিয়া করার ক্ষমতা না দিলে এগুলো ক্রিয়া করতে পারবে না। এজন্যই ইবরাহীমকে (আ.) আগুনে নিক্ষেপের পরও আল্লাহর হুকুম না হওয়ার কারণে আগুন কোনো ক্রিয়া করতে পারেনি।

গ) সুস্থতা-অসুস্থতা আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়। সুস্থতার যেমন বিভিন্ন কারণ রয়েছে তদ্রূপ অসুস্থতারও বিভিন্ন কারণ আছে। যেমন-মাত্রাতিরিক্ত ঠান্ডায় সর্দি বা জ্বর হয়। 

তেমনিভাবে রোগাক্রান্ত হওয়ার একটি কারণ এটিও যে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে যাওয়া। এটি একটি বাস্তব বিষয়। শরীয়ত একে অস্বীকার করেনি। তবে অন্যান্য আসবাবের ব্যাপারে যে কথা এখানেও একই কথা-কার্য ও ক্রিয়া করার ক্ষমতা আল্লাহপ্রদত্ত। 

রোগের মধ্যে ক্রিয়া করার নিজস্ব ক্ষমতা নেই। তাই আল্লাহ চাইলে রোগাক্রান্ত হবে নতুবা হবে না। এজন্যই দেখা যায়, সংস্পর্শে যাওয়ার পরও অনেকে রোগাক্রান্ত হয় না।

এবার মূল উত্তর দেয়া হল

প্রশ্নে যে হাদিসের উদ্ধৃতি দেয়া হয়েছে এর মূল আরবী পাঠ এর সঠিক তরজমা এই, ‘রোগ-ব্যধি (তার নিজস্ব ক্ষমতায়) একজনের দেহ থেকে আরেকজনের দেহে লেগে যায় না।’ (সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৫৭৪২)

ছোঁয়াচে রোগ বলতে কিছু নেই-হাদিসের এ তরজমা বিশুদ্ধ নয়। কেননা, এর থেকে বোঝা যায়, বাস্তব ছোঁয়াচে রোগকে ইসলাম অস্বীকার করেছে। অথচ রোগাক্রান্ত হওয়ার অন্যান্য কারণ যেমনিভাবে বাস্তব তদ্রূপ রোগাক্রান্ত হওয়ার এই কারণটিও বাস্তব। ইসলাম একে অস্বীকার করেনি। 

এক্ষেত্রে যে বিষয়টিকে ভ্রান্ত ও বাতিল সাব্যস্ত করা হয়েছে তা হল, কোনো ব্যাধিকে এমন মনে করা যে, তা নিজে নিজেই সংক্রমিত হয়। যেমনটি জাহেলী যুগে মনে করা হত। উপকার ও অপকারের একমাত্র মালিক আল্লাহ তাআলা। হায়াত-মওত, সুস্থতা-অসুস্থতা সবই তাঁর হুকুমে হয়ে থাকে। 

মোটকথা, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে রোগাক্রান্ত হওয়া একটি বাস্তব বিষয়। তবে সংক্রমনের এই ক্ষমতা রোগের নিজস্ব নয়; বরং আল্লাহপ্রদত্ত। 

তাই তিনি চাইলে সংক্রমণ হবে নতুবা হবে না এবং এটি যেহেতু রোগাক্রান্ত হওয়ার একটি বাস্তব কারণ তাই রোগাক্রান্ত হওয়ার অন্যান্য কারণ থেকে বেঁচে থাকতে যেমনিভাবে কোনো দোষ নেই তেমনি এক্ষেত্রেও উপযুক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা দোষের নয়। বরং কিছু হাদিসে সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশও দেয়া হয়েছে।

প্রামাণ্য সূত্র: বাযলুল মাজহূদ ১৬/২৪২; শরহুন নববী ২/২৩০; ফয়যুল কাদীর ৬/৪৩৩; তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম ৪/৩৭০; তরজুমানুস সুন্নাহ ২/৪১৬; বুলুগুল আরাব ফী মারিফাতি আহওয়ালিল আরব ২/৩১৫

সূত্র: মাসিক আল কাউসার


ইসলামে ছোঁয়াচে রোগকে অস্বীকার করা হয় নি
▬▬▬▬●◈●▬▬▬▬
প্রশ্ন: ইসলামে কি ছোঁয়াচে রোগকে অস্বীকার করা হয়েছে?
উত্তর:
এ উত্তরটি ভালোভাবে জানার জন্য নিম্নোক্ত লেখাটি পড়ুন:
আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
لا عَدْوَى وَلا طِيَرَةَ وَلا هَامَةَ وَلا صَفَرَ "
“রোগ সংক্রমণ, কুলক্ষণ, পেঁচা এবং সফর মাস বলতে কিছু নাই।” (সহীহু বুখারী, হা/৫৭০৭)
মুহাদ্দিসগণ বলেন, উক্ত হাদীসে পেঁচা ও সফর মাসের অস্তিত্বকে অস্বীকার করা হয় নি বরং জাহেলী যুগে পেঁচার ডাক এবং সফর মাসকে কুলক্ষণে মনে করা হত (বর্তমানেও মূর্খ লোকদের মাঝে এ কুসংস্কার প্রচলিত রয়েছে) এই বাতিল ও ভ্রান্ত বিশ্বাসকে অস্বীকার করা হয়েছে। অনুরূপভাবে সংক্রমন রোগের অস্তিত্বকেও অস্বীকার করা হয় নি বরং একটি ভ্রান্ত বিশ্বাসের অনোদন করা হয়েছে। তা হল, জাহেলী যুগে কোনো কোন ব্যাধিকে এমন মনে করা হত যে, তা নিজে নিজেই সংক্রমিত হয়। কিন্তু ইসলামের সৃষ্টিভঙ্গী হল, রোগ কখনও নিজে নিজে সংক্রমিত হতে পারে না। বরং তা আল্লার ইচ্ছার সাথে সংম্পৃক্ত। তার লিখিত তাকদীর ছাড়া কোন কিছুই ঘটে না।
❑ উক্ত হাদীসের এই ব্যাখ্যাটি নিন্মোক্ত হাদীস থেকে স্পষ্ট হয়:
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছোঁয়াচে রোগ বলতে কিছু নাই বললে জনৈক বেদুঈন আরব জিজ্ঞেস করলো, ইয়া রসূলুল্লাহ! তবে সেই উটপালের অবস্থা কি যা কোনো বালুকাময় প্রান্তরে অবস্থান করে এবং সুস্থ-সবল থাকে? অতঃপর তথায় কোনো খুজলী-পাঁচড়ায় আক্রান্ত উট তাদের মধ্যে এসে পড়ে এবং সবগুলোকে ঐ রোগে আক্রান্ত করে ছাড়ে?
(এর জবাবে) তিনি বললেন, তাহলে প্রথম উটটিকে কে রোগাক্রান্ত করেছিলো?” (সহীহ মুসলিম)
এ হাদীসের অর্থ হল, যে মহান আল্লাহ প্রথম উটটিকে আক্রান্ত করেছিলেনে তিনিই অন্যান্য উটকেও আক্রান্ত করেছেন। অর্থাৎ রোগ-ব্যাধী নিজে নিজে সংক্রমিত হয় না যদি আল্লাহর হুকুম না থাকে।
মোটকথা, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে রোগাক্রান্ত হওয়া একটি বাস্তব বিষয়। তবে সংক্রমনের এই ক্ষমতা রোগের নিজস্ব নয়; বরং আল্লাহপ্রদত্ত। তাই তিনি চাইলে সংক্রমণ হবে নতুবা হবে না এবং এটি যেহেতু রোগাক্রান্ত হওয়ার একটি বাস্তব কারণ তাই রোগাক্রান্ত হওয়ার অন্যান্য কারণ থেকে বেঁচে থাকতে যেমনিভাবে কোনো দোষ নেই তেমনি এক্ষেত্রেও উপযুক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা দোষের নয়। বরং কিছু হাদীসে সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। [বাযলুল মাজহূদ ১৬/২৪২; শরহুন নববী ২/২৩০; ফয়যুল কাদীর ৬/৪৩৩)
❑ ইসলামে ছোঁয়াচে রোগকে অস্বীকার করা হয় নি:
ইসলামে ছোঁয়াচে রোগকে অস্বীকার করা হয় নি তার প্রমাণে অনেক হাদীস রয়েছে। তন্মধ্যে নিচের হাদীসগুলো অন্যতম:
💠 আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
لا يورد ممرض على مصح
“অসুস্থ উটগুলোর মালিক তার উটগুলোকে সুস্থ পশুর দলে পাঠিয়ে দেবে না। (কারণ এতে ঐসুস্থ প্রাণীগুলো রোগাক্রান্ত হতে পারে।) [সহীহ মুসলিম]
💠 তিনি আরও বলেন:
فر من المجذوم فرارك من الأسد
“সিংহের আক্রমণ থেকে যেভাবে পলায়ন কর কুষ্ঠরোগী থেকেও সেভাবে পলায়ন করো।” (সহীহ আল বুখারী)
আবার তিনি কুষ্ঠরোগীর সাথে বসেও খাবার খেয়েছেন আর বলেছেন:
كل بسم الله ثقة بالله
“আল্লাহর উপর আস্থা রেখে আল্লাহর নামে খাওয়া শুরু করো।” (তিরমিযী, অধ্যায়: খাদ্যদ্রব্য, অনুচ্ছেদ: কুষ্ঠরোগীর সাথে খাবার খাওয়া)
এটা তিনি এ জন্য করেছেন যে, কুষ্ঠ রোগীর কাছে গেলেই যে, সে রোগে আক্রান্ত হতে হবে তা জরুরি নয়। বরং কখনও হতে পারে আবার কখনও নাও হতে পারে। এটা আল্লাহ ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল।
সারাংশ:
পোস্টের সারাংশ হল, সংক্রমণ ব্যাধি আছে কিনা এ বিষয়ে পক্ষে-বিপক্ষে দুই ধরণের হাদিস পাওয়া যাচ্ছে। উভয় প্রকার হাদিসের মাঝে সমন্বয় পূর্বক যা প্রমাণ করা হয়েছে তা হল, জাহিলী যুগের ধারণা ছিল যে, রোগ-ব্যাধি নিজে নিজেই সংক্রমিত হয়। এখানে আল্লাহর ইচ্ছা বা ক্ষমতা নেই নেই। ইসলাম কেবল এই ধারণাকে রদ করেছে।
সঠিক ইসলামী বিশ্বাস হল, অবশ্যই সংক্রামক ব্যাধি আছে কিন্তু তা নিজে নিজেই সংক্রমিত হয় না বরং তা আল্লাহ তাআলার ইচ্ছাতেই ঘটে। অর্থাৎ রোগ-ব্যাধির নিজস্ব শক্তি নেই মহান আল্লাহ যদি ইচ্ছা না করেন।
অতএব, কেউ যদি সংক্রামক ব্যাধিকে অস্বীকার করে তাহলে অনেকগুলো হাদিসকে অস্বীকার করা হবে। এটা নিছক অজ্ঞতা অথবা ইসলাম সম্পর্কে ভুল বুঝ। তবে বিশ্বাস রাখতে হবে, রোগ-ব্যাধি নিজে নিজে সংক্রমিত হয় না বরং তা হয় আল্লাহর নির্দেশ ক্রমে।
এ বিশ্বাসের অর্থ হল, কোন ব্যক্তি আক্রান্ত রোগীর কাছে গেলেই যে, সেও নিশ্চিতভাবে আক্রান্ত হবে তা জরুরি নয়। বরং হতে পারে আবার নাও হতে পারে। এটা আল্লাহ ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল।
এ ক্ষেত্রে এটাই হল, মুসলিম এবং অমুসলিমদের মাঝে মূল পার্থক্য। আল্লাহু আলাম।
✒✒✒✒✒
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার , সৌদি আরব

Comments

Popular posts from this blog

পোলিও টিকাতে মূল উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয় বানরের কিডনি:

আপনার শিশুকে টিকা দিতে চান? তার আগে সত্য জানুন!

ডাইনোসর নিয়ে যত জল্পনা কল্পনা: