খালি পায়ে মাটিতে ও ঘাসের উপর হাঁটার উপকারিতা কি?

 


আধুনিক সমাজ ব্যবস্থার চাপে পরে আমরা আসলে মাটির সংস্পর্শ হারাচ্ছি। কিন্তু আমরা যদি আমাদের দৈনন্দিন জীবন ব্যবস্থার মাঝেই সময় বের করে নিয়ে কিছুটা সময় খালি পায়ে হাঁটি তার উপকারিতা অভাবনীয়। ড. মারকোলার মতে খালি পায়ে মাটি স্পর্শ করে হাঁটলে তা সরাসরি মাটি থেকে দেহে নেগেটিভ ইলেকট্রন শোষণ করে যা আভ্যন্তরীণ বায়োইলেক্ট্রিক্যাল পরিবেশের ভারসাম্যতা সৃষ্টি করতে সাহায্য করে। খালি পায়ে হাটার কিছু উপকারিতাঃ-
১. ব্যাথা এবং জ্বালা পোড়া দূর করতে পারে :
অনেক সময় ঘুমানোর বা শোয়ার ব্যাতিক্রম হলে শরীরের পেছন দিকে ব্যাথা হয় বা পায়ে জ্বালাপোড়া ভাব হতে পারে।সবুজ ঘাসে খালি পায়ে হাঁটলে এই ব্যাথা দূর হয়ে যায়।এটি বেশ কিছু গবেষণার দ্বারাও প্রমানিত হয়েছে।
২. ঘুম বাড়াতে সাহায্য করে :
PubMed এর একটি গবেষণায় জানা যায় যে খালি পায়ে হাঁটা শরীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে এবং শরীরকে শিথিল করে। এছাড়া "The journal of Alternative and Complementary Medicine" এ প্রকাশিত একটি রিপোর্টের মতে, যারা খালি পায়ে হাঁটেন না তাদের তুলনায় যারা খালি পায়ে নিয়মিত হাঁটেন তারা রাতে খুব ভাল ঘুমাতে পারেন।এই ভালো ঘুমের কারন হিসেবে তারা বলেন যে খালি পায়ে হাঁটলে তা দেহের ছন্দবোধের ভারসাম্যতা আনতে সাহায্য করে।
৩. মেধা বৃদ্ধি :
বিভিন্ন শরীরচর্চা যেমন মার্শাল আর্ট, যোগ ব্যায়াম খালি পায়ে করা হয়। কারণ, আমাদের শরীরের ৭০ শতাংশই পানি, তাই আমাদের শরীর যতো বেশি মাটির সংস্পর্শে আসবে ততোই কার্যক্ষম থাকবে। খালি পায়ে হাঁটার কারণে শরীরে আয়নের যে ভারসাম্য বজায় থাকে যা শরীর সুস্থ্য রাখতে সহায়ক, পাশাপাশি বিকাশ ঘটে মেধা ও মননের।
৪. শারীরিক গড়ন ভালো রাখে :
নামি ব্র্যান্ডের দামি জুতা-স্যান্ডেলের বেশিরভাগই সৌন্দর্য সর্বস্ব, শারীরিক কোনো উপকার মেলে না। বরং কিছু জুতা-স্যান্ডেল পরার কারণে পায়ের পাতা দূর্বল হয়ে যেতে পারে। বেশি উঁচু বা অসমতল জুতা পরলে পায়ের তলা সমানভাবে মাটিতে না পড়ার কারণে শারীরিক গড়নে সমস্যা দেখা দেয়। যার ফলাফল হতে পারে ঘাড় ব্যথা, পিঠ ব্যথা, হাঁটু ব্যথা ইত্যাদি। তাই খালি পায়ে হাঁটার অভ্যাস করতে হবে যাতে পায়ের পাতা, গোড়ালি ও পায়ের আঙ্গুল শক্তিশালী হয়।
৫. প্রতিরোধক ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে :
"The Journal of Environmental and Public Health" এ প্রকাশিত একটি গবেষণায় পাওয়া যায় যে খালি পায়ে হাঁটলে তা রক্তের শ্বেত কণিকার পরিমান কমিয়ে লোহিত কণিকার পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে যা প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।
৬. হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে :
খালি পায়ে হাঁটলে তা হৃদ রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।"The journal of Alternative and Complementary Medicine" এর মতে খালি পায়ে হাঁটা রক্তের লোহিত কণিকার মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। যার ফলে কোষের রক্ত জমাট বাধা প্রতিহত হয় যা রক্তের ঘনত্ব কমায়। যেহেতু রক্তের উচ্চ ঘনত্ব সরাসরি হৃদরোগের ঝুঁকির সাথে জড়িত তাই খালি পায়ে হাঁটা উল্লেখযোগ্য ভাবে হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।
৭. অ্যাংজাইটি এবং মানসিক অবসাদ কমে :
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত খালি পায়ে ঘাসের উপর হাঁটলে মানসিক অবসাদ কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে অ্যাংজাইটি লেভেলও নিম্নমুখি হয়। আসে খালি পায়ে হাঁটার সময় আমাদের মস্তিষ্কের অন্দরে এন্ডোরফিন নামক একটি ফিল গুড হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। যে কারণে ডিপ্রেশন নিয়ন্ত্রণে চলে আসতে সময় লাগে না।
৮. জৈবিক তালের ভারসাম্য রাখতে সাহায্য করে :
মানুষসহ সব প্রাণী জগত একটি জৈবিক প্রক্রিয়ার ঘড়িকে অনুসরণ করে চলে একে সার্কাডিয়ান ক্লক বলে। খালি পায়ে হাঁটলে বা মাটির সংস্পর্শে থাকলে তা ঘুমের প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং জৈবিক ঘড়িকে আবার নতুন উদ্যমে চালু করতে সাহায্য করে। পরিবেশ দূষণ, আলো, বাতাস, রাসায়নিক পদার্থ ছাড়াও অন্যান্য অনেক বিষয় আমাদের ঘুমের প্রক্রিয়াতে বাধা সৃষ্টি করে। তাই মাটির সংস্পর্শে আসলে এর নেগেটিভ ইলেকট্রন সার্কাডিয়ান ক্লকের তাল এবং অন্যান্য জৈবিক প্রক্রিয়াকে সাহায্য করতে পারে।
৯. পেশীর ব্যথা কমাতে সাহায্য করে :
গবেষণায় পাওয়া যায় যে হঠাৎ করে শারীরিক ব্যায়াম করার ফলে শরীরে যে ব্যথা হয় বা কোন কাজ করতে গিয়ে পেশীতে টান পরার ব্যাথা যদি খালি পায়ে কিছুক্ষন হাঁটা যায় তাহলে অনেকটা কমে যায়।
১০. মাইগ্রেনের ব্যথা কমাতে :
সাধারণত মাইগ্রেইনের মাথা ব্যথা বিভিন্ন ক্ষতিকর রশ্মির প্রভাবে বাড়তে পারে। তাই যদি তখন খালি পায়ে হাঁটা যায় বা শরীরকে মাটির সংস্পর্শে আনা যায় তাহলে তা দেহকে ক্ষতিকর রশ্মির প্রভাব থেকে অনেকটা মুক্ত করতে পারে। আর এভাবেই মাইগ্রেইনের মাথা ব্যথা দূর হতে পারে।
১১. মাটির সংস্পর্শ শক্তির মাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে :
এতোগুলো কারন বলার পর হয়তো মাটির সংস্পর্শের উপকারিতার সম্পর্কে আমরা অনেক জেনেছি। তাই যত বেশি মাটির সংস্পর্শে থাকা যায় তত বেশি প্রাকৃতিক তরঙ্গ আমাদের দেহ গ্রহন করে শক্তির মাত্রা বৃদ্ধি করতে পারবে। আধুনিক সমাজ ব্যবস্থা আমাদের জীবনীশক্তির উপর প্রচুর প্রভাব ফেলে তাই সবসময়ই চেষ্টা করতে হবে যত বেশি প্রকৃতি ও মাটির সংস্পর্শে থাকা যায় আমাদের জন্য ততই মঙ্গল।
১২. বিপদজনক তড়িৎ চুম্বকীয় ক্ষেত্র থেকে রক্ষা করে :
খালি পায়ে মাটিতে হাঁটলে বা শরীরকে মাটির সংস্পর্শ আনলে তা আমাদের দেহ থেকে তড়িৎ চুম্বকীয় চার্জ কমাতে সাহায্য করে যার ফলে এটি আমাদের দেহকে তড়িৎ চুম্বকীয় ক্ষেত্রের বিপদজনক প্রভাব থেকে রক্ষা করে। তাই জীবন যাপনের ব্যস্ত সময়ের মাঝে আমরা যদি কিছুটা সময় বের করে খালি পায়ে সবুজ ঘাসে হাঁটি তাহলে অনেক ধরনের শারীরিক সমস্যা মুক্ত থাকতে পারবো।
[তথ্য সূত্রঃ পাওয়ার অফ পজিটিভিটি , ওয়েবএমডি]
R:M: এটা হচ্ছে বিজ্ঞান। এই গবেষণা বাস্তবধর্মী ও প্রাকৃতিক। এবং মানুষের জন্য উপকারী তথ্য সম্বলিত একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা। 
মানুষ মাটির তৈরী। মাটির ভিতরে রয়েছে মানুষের জন্য অনেক উপকারিতা। আজ আমরা এই মাটিকে (প্রকৃতি) ছেড়ে কংক্রিটের (কৃত্তিম) জীবনে অভস্ত হয়ে গেছি। তাই আমাদের জীবনে এতো রোগ আর অশান্তি। 


Comments

Popular posts from this blog

পোলিও টিকাতে মূল উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয় বানরের কিডনি:

আপনার শিশুকে টিকা দিতে চান? তার আগে সত্য জানুন!

ডাইনোসর নিয়ে যত জল্পনা কল্পনা: