কাব্বালাহ




কাব্বালাহ নিয়ে সবার আইডিয়া থাকলেও সবার কাছেই ধোয়াসা, তাই একটু ক্লিয়ার করার প্রচেষ্টা মাত্র।
কাব্বালাহ খুবই বিশাল এবং অন্ত্যন্ত জটিল বিষয়, তবে চেষ্টা করবো যেন খুব সংক্ষেপে আলোচনা করা যায়।
আমরা মোটামুটি সবাই কালোযাদু সম্পর্কে জানি, যেখানে বিভিন্ন তবে তন্ত্র মন্ত্র পড়ে জ্বীনের মাধ্যমে মানুষের ক্ষতি করা হয়, তো কাব্বালাহ এই কালো যাদুর একটি অংশ বলা চলে, আর কাব্বালাহ বিষয় এত বেশি হলে ব্ল্যাক ম্যাজিকের বিস্তার কত বড় তা আন্দাজ করা সম্ভব না। সুতরাং এটা স্পষ্ট যে মানুষকে খব কম জ্ঞানই দান করা হয়েছে, আর এই অল্প জ্ঞানের সীমা এতো বেশি যা এই অল্প জ্ঞান দিয়ে মাপা সম্ভব না।
কাব্বালাহর উৎপত্তি নিয়ে অনেক কথা আছে, তবে ব্যাবিলনের সেই কাহিনি থেকেই এর উৎপত্তি হয়।
একটু গভীরে যাওয়া যাক।
প্রায় ৩৭০০ বছর আগের এক ব্যবিলনীয় গণিত ফলক সংরক্ষিত রয়েছে ব্রিটিশ মিউজিয়ামে। এটি থেকে গবেষকরা জানতে পারেন, সেই তখনই ব্যবিলনবাসীরা আধুনিক ত্রিকোণমিতি সম্বন্ধে জানতো। তারা বৃহস্পতি গ্রহের কক্ষপথও হিসেব করছিল সে যুগেই। এ তো গেল প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার। প্রত্নতত্ত্ব থেকে বহু দূরে যদি ঘুরে আসা যায়, তাহলে পাওয়া যায় সম্পূর্ণ ভিন্ন এক অধ্যায়। এক জাদুকরী যুগ। যার দেখা প্রত্নতত্ত্বে মেলে না। মেলে বরং ইসলাম, ইহুদি আর পারসিক ধর্মগ্রন্থের পাতায়।
সেই গণিত ফলক; Image Source: Silent Circle
কথা হচ্ছিল জাদুবিদ্যা নিয়ে। আর জাদু বলতে মোটেও ক্রিস অ্যাঞ্জেল কিংবা ডেভিড কপারফিল্ডের স্টেজ শো কিংবা হাতসাফাইয়ের কথা বলা হচ্ছে না, বলা হচ্ছে এমন জাদুর কথা যার অস্তিত্ব বিজ্ঞান অস্বীকার করে, কারণ প্রাকৃতিক নিয়মের বাইরের এমন কিছু বিজ্ঞানের ব্যাখ্যার অতীত। কিন্তু ধর্মের ক্ষেত্রে নেই এমন বাঁধন বা সীমাবদ্ধতা। পৃথিবীর প্রধান ধর্মগুলো বিশেষ করে সেমেটিক ধর্মগুলোতে যে জাদুর উল্লেখ রয়েছে, সেগুলোর অতীত ঘাঁটতে গেলে শুরুর মুহূর্তটা গিয়ে ঠেকে প্রাচীন ব্যবিলনে। প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার (ইরাক) ফোরাত নদীর তীরের ধ্বংস হয়ে যাওয়া উন্নত এক শহর ব্যবিলন। আর সেই সাথে চলে আসে দুজন ফেরেশতার নাম- হারুত আর মারুত।
ব্যবিলন (Babylon) পরিচিত নানা নামে, নানা কারণেও- যার মাঝে সবচেয়ে সুপরিচিত ব্যবিলনের শুন্য উদ্যান আর বাইবেলের পাতায় পাওয়া টাওয়ার অফ বাবেল। ব্যবিলনের নানা উচ্চারণের মাঝে আছে 'বাবেল', যা একইসাথে আরবি (بَابِل‎), হিব্রু (בָּבֶל‎) ও আরামায়িক (בבל) উচ্চারণ। আক্কাডিয়ান ভাষায় ডাকা হত বাবিলি।
এ লেখায় আমরা ব্যবিলনের ইতিহাস নিয়ে কথা বলব না, বরং ব্যবিলনের সাথে জাদুবিদ্যার সম্পর্ক নিয়ে কথা হবে। আর এর শুরুটা পাওয়া যায় খোদ কুরআনের আয়াতেই। সুরা বাকারার ১০২ নং আয়াতে উল্লেখ আছে-
সূরা ২. আল-বাকারা
আয়াত নং ১০২
অনুবাদঃ- এবং সুলায়মানের রাজত্বকালে শয়ত্বানরা যা পাঠ করত, তারা তা অনুসরণ করত, মূলতঃ সুলায়মান কুফরী করেনি বরং শয়ত্বানরাই কুফুরী করেছিল, তারা মানুষকে যাদু শিক্ষা দিত এবং যা বাবিলের দু’জন ফেরেশতা হারূত ও মারূতের উপর পৌঁছানো হয়েছিল এবং ফেরেশতাদ্বয় কাউকেও (তা) শিখাতো না যে পর্যন্ত না বলত, আমরা পরীক্ষা স্বরূপ, কাজেই তুমি কুফরী কর না, এতদসত্ত্বেও তারা উভয়ের নিকট হতে এমন জিনিস শিক্ষা করতো, যদ্বারা তারা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ সৃষ্টি করতো, মূলতঃ তারা তাদের এ কাজ দ্বারা আল্লাহর বিনা হুকুমে কারও ক্ষতি করতে পারত না, বস্তুতঃ এরা এমন বিদ্যা শিখত, যা দ্বারা তাদের ক্ষতি সাধন হত আর এদের কোন উপকার হত না এবং অবশ্যই তারা জানত যে, যে ব্যক্তি ঐ কাজ অবলম্বন করবে পরকালে তার কোনই অংশ থাকবে না, আর যার পরিবর্তে তারা স্বীয় আত্মাগুলোকে বিক্রয় করেছে, তা কতই না জঘন্য, যদি তারা জানত! -(তাইসিরুল)
এই আয়াতে দেখা যাচ্ছে, এখানে বাবেল অর্থাৎ ব্যবিলন শহরের কথা বলা হচ্ছে। সেখানে হারুত (هَـارُوت) ও মারুত (مَـارُوت) নামের দুই ফেরেশতার কথা আছে, যাদের উপর কিছু একটা অবতীর্ণ হয়েছিল যা কিনা 'তারা' অর্থাৎ অসৎ বা খারাপ লোকেরা 'শিক্ষা দিত'। একই বাক্যাংশে বলা হয়েছে তারা জাদুবিদ্যাই শিক্ষা দিত। তারা সেটা শিখেছিল হারুত-মারুতের কাছ থেকেই; কিন্তু এটাও বলা হয়েছে, এই দুজন ফেরেশতা এ শাস্ত্র শেখাতেন বটে, কিন্তু সাথে এটাও তারা সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ হিসেবে বলে দিতেন, "আমরা পরীক্ষার জন্য; কাজেই তুমি কাফের হয়ো না।'" কিন্তু এই পরীক্ষামূলক বিদ্যা গ্রহণ করে তারা অসৎ কাজে ব্যবহার করতে শুরু করল, যার মাঝে আছে স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদ, ইত্যাদি। শেষে সতর্কবাণী দেওয়া হয়েছে, যারা এই জাদুবিদ্যা ব্যবহার করে, তাদের জন্য পরকালে কিছুই নেই, তারা নিজেকে বিক্রয় করেছে, এতে তার অপকার বৈ কিছু হবে না।
কিন্তু এ আয়াতের সাথে সুলাইমান (আঃ) বা কিং সলোমনের কী সম্পর্ক? সেটা জানতে হলে ফিরে যেতে হবে ইহুদি জাতির ইতিহাসের সুলাইমান (আঃ) অধ্যায়ের বিশদ আলোচনায়, যেটা অবশ্য এ লেখার বিষয় নয়। ইবনে কাসিরের তাফসিরে উল্লেখিত ঘটনা সংক্ষেপে বলতে গেলে, বিশেষ এক ঘটনার পর সুলাইমান (আ)-কে জাদুকর অপবাদ দেওয়া হয়, এবং তার সিংহাসনের নিচ থেকে অন্যের লুকোনো জাদুবিদ্যার বই উদ্ধার করা হয়। জানা যায়, সেগুলো সেই প্রাচীন বাবেলের জাদুবিদ্যার বই। কুরআনে সেই অপবাদ কাটিয়ে দেওয়া হয়েছে, সুলাইমান (আঃ) এ কুফরি কালাম বা জাদুবিদ্যা বা ডার্ক আর্টস আদৌ ব্যবহার করেননি, বরং সেসব 'আবৃত্তি' বা মন্ত্রপাঠ করত শয়তানেরা।
সুলাইমান (আঃ) সে বইগুলো পরে পুঁতে ফেলেন, আর সে বইগুলো নিয়ে যেকোনো কথা বলা নিষিদ্ধ করে দেন। কিন্তু তার মৃত্যুর পর সেগুলো খুঁড়ে বের করা হয়, এবং রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে সেগুলো। এখনো তাবিজ-কবচ এমনকি 'জাদুবিদ্যার' বইতে অনেক সময় সুলেমানি জাদু কথাটি উল্লেখ করা হয় বা নাম দেওয়া হয়। ১০২ নং আয়াতটি সে অপবাদের বিরুদ্ধেই অবতীর্ণ হয় বলে তাফসিরে জানা যায়।
কিন্তু কথা হলো, এই হারুত আর মারুত ফেরেশতা কারা? কুরআনে কেবল তাদের নামখানাই বলা হয়েছে, বিস্তারিত উল্লেখ হয়নি। বিস্তারিত জানবার আগ্রহ থাকলে আমাদের চোখ ফেরাতে হবে তাফসিরে, এবং ফেরেশতাদের উল্লেখ থাকা ইহুদি ও পারসিক ধর্মের দিকে।
তাফসির থেকে আমরা জানতে পারি, ইবনে জারির (র) এর মতে, হারুত ও মারুত ফেরেশতা দুজনকে আল্লাহ পৃথিবীতে পাঠান বান্দাদের পরীক্ষা করবার জন্য। এজন্য তিনি তাদের জাদুবিদ্যা শেখাবার অনুমতি দিয়েছিলেন। তারা আল্লাহর আদেশ পালন করেছিলেন। কথিত আছে, সেটা ইদ্রিস (আঃ) এর সময়কাল ছিল।
ইসলামি তাফসিরে বলা হয়েছে, হারুত ও মারুত ফেরশতাদের কাহিনী নিয়ে নিশ্চিত কোনো বর্ণনাই কুরআন তো দূরের কথা, সহিহ হাদিসেও নেই। তাই এই কাহিনীগুলোতে নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস বা অবিশ্বাস করা বিষয়ে সতর্কবাণীর উল্লেখ আছে। তবে ইবনে কাসির সেই যুগে এই তাফসির লিখতে গিয়ে মন্তব্য করেন, এ ঘটনাগুলো 'হয়তোবা' ইসরায়েলি কাহিনী থেকে এসেছে; কিন্তু সেটা মিলিয়ে দেখবার উপায় হয়তো তার কাছে ছিল না। এখন আমরা মিলিয়ে দেখতে পারি আসলেই এগুলো ইহুদিদের উৎস থেকে এসেছে কিনা।
হ্যাঁ, আসলেই এসেছে। আমরা ইহুদিদের তালমুদ আর মিদ্রাশ ইয়ালকুত উল্টিয়ে হারুত আর মারুতের কাহিনী দেখতে পাই, যা বিভিন্ন দুর্বল হাদিসেও এসেছে। চলুন জেনে আসি কাহিনীটা কী। এ ব্যাপারে আমরা সেই ইহুদি উপকথা তাফসিরে ইবনে কাসিরের লেখনিতে যেভাবে বর্ণিত হয়েছে, তার বিভিন্ন সংস্করণ সংক্ষেপে তুলে ধরব।
যখন আল্লাহ আদম (আঃ)-কে পৃথিবীতে প্রেরণ করেন এবং তার সন্তানেরা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে, তখন তারা নাফরমানি করতে থাকে আল্লাহর। ফেরেশতারা পরস্পর বলাবলি করতে লাগলেন, "দেখ এরা কত দুষ্ট প্রজাতি! কত অবাধ্য! আমরা এদের জায়গায় থাকলে কখনোই অবাধ্য হতাম না।"
তখন আল্লাহ তাদের বলেন, "তোমরা তোমাদের মাঝ থেকে দুজন ফেরেশতাকে বাছাই কর। আমি তাদের মাঝে মানবীয় প্রবৃত্তি সৃষ্টি করে তাদের পৃথিবীতে পাঠিয়ে দিচ্ছি। দেখা যাক এরপর তারা কী করে।"
তারা তখন হারুত আর মারুতকে হাজির করলেন। আল্লাহ তাদের বললেন, "দেখো, মানুষকে তো আমি নবীর মাধ্যমে বাণী পাঠাই, কিন্তু তোমাদের সরাসরিই বলে দিচ্ছি- আমার সাথে কাউকে অংশীদার করবে না উপাস্য হিসেবে, কখনো ব্যভিচার করবে না আর মদপান করবে না।"
তারা দুজন তখন পৃথিবীতে অবতরণ করলেন। তাদের কাজ ছিল সকাল থেকে সন্ধ্যা জনগণের সমস্যার সমাধান করা, বিচার-ফয়সালা করা ইত্যাদি। সন্ধ্যা হলে তারা আবার আকাশে ফেরত যেতেন, এবং সে কাজে তারা ব্যবহার করতেন ইসমে আজম- স্রষ্টার যে পবিত্র নাম উচ্চারণ করার পর যেকোনো অসাধ্য আকাঙ্ক্ষা সাধন করা যায়। ইসমে আজম ব্যবহারের কারণ ছিল, ফেরেশতাদের সাধারণ ক্ষমতাগুলো তাদের ছিল না তখন।
একবার জোহরা নামের এক নারী হাজির হলো তার স্বামীর বিরুদ্ধে বিচার চাইতে। অসম্ভব সুন্দরী সে নারীকে দেখে তারা বিমোহিত হয়। তারা তার সাথে ব্যভিচার করবার ইচ্ছে প্রকাশ করে [তাফসিরে ইবনে কাসিরের (তাফসির পাবলিকেশন কমিটি প্রকাশনী, ড. মুহম্মদ মুজীবুর রহমান অনূদিত) বাংলা অনুবাদ প্রথম খণ্ডের ৩৩৮ পৃষ্ঠায় সেটিই উল্লেখ আছে, সাথে স্ক্রিনশট জুড়ে দেওয়া হলো]। কিন্তু জোহরা অস্বীকার করে বসে, কারণ হারুত বা মারুত জোহরার দেব-দেবী মানেন না। জোহরা জানায়, যদি তারা জোহরার মতো আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে মেনে নেয় উপাস্য হিসেবে তবেই সে মিলিত হবে (অর্থাৎ যদি 'শিরক' করে)।
হারুত মারুত জানালেন, "এটা আমাদের দ্বারা হবে না।" এটা শুনে জোহরা চলে গেল।
পরের বার জোহরা এক শিশুকে নিয়ে এসে বলল, "তোমরা যদি এ শিশুকে হত্যা করে দেখাতে পারো তাহলে বুঝব তোমরা আসলেই আমাকে চাও। আমি তোমাদের মনোবাসনা পূর্ণ করব।" শিশুহত্যার তো প্রশ্নই আসে না, তাই তারা সেটাও প্রত্যাখ্যান করলেন।
এরপরের বার জোহরা এলো মদ নিয়ে। বলল, "আচ্ছা, এ মদ তো পান করো।"
এরপরের বার জোহরা এলো মদ নিয়ে। বলল, "আচ্ছা, এ মদ তো পান করো।"
হারুত মারুত মনে করলেন, এ তো অল্প পাপ। তারা মদ পান করে নিলেন। বেশি পরিমাণেই পান করলেন। হুঁশ হলে তারা আবিষ্কার করলেন, তারা মদের নেশায় ব্যভিচার তো করেছেনই, সাথে শিশুটিকে হত্যাও করে ফেলেছেন। তারা তখন অনুতপ্ত হয়ে যায়।
তাদেরকে বলা হয়, তারা কি দুনিয়াতেই শাস্তি নিয়ে নেবে, না পরকালের শাস্তি নেবে? তারা দুনিয়ার শাস্তি বাছাই করে নেয় (ইবনে কাসির, পৃষ্ঠা ৩৩৮)। তাদের শাস্তি হয় ব্যবিলনের এক কুয়ায় কিয়ামত পর্যন্ত উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখা।
আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রা) এই দুর্বল হাদিস বর্ণনা করেন ইসরায়েলি বর্ণনা থেকে। (ইবনে কাসির, পৃষ্ঠা ৩৩৭)
পারসিক কল্পনায় উল্টো করে ঝুলন্ত মানুষরুপী হারুত-মারুত; Image Source: Wikimedia Commons
আবার ইবনে আব্বাস (রা) আরেকটি ইসরায়েলি বর্ণনা জানান এ বিষয়ে। জোহরার (বা যাহরা) নাম ফারসি ভাষায় আনাহীদ। সে স্বামীর বিরুদ্ধে যে বিচার চেয়েছিল সেটি সাথে সাথেই রায় দিয়ে দিয়েছিল ফেরেশতা দু'জন। এরপর জোহরা দাবি করে বসে, "তোমরা যে মন্ত্র পড়ে আকাশে উঠে থাকো আর নিচে নেমে আসো সেটা আমাকে শিখিয়ে দাও।"
মানুষরূপী ফেরেশতা দুজন সেটিও তাকে শিখিয়ে দেয় (ইবনে কাসির, পৃষ্ঠা ৩৩৯)। কিন্তু নিচে নেমে আসবার জন্য নাকি ভিন্ন কিছু বলার কথা ছিল, যেটা জোহরা ভুলে যায়। জোহরা উর্ধ্বে আরোহণ করে নিচে নামতে পারেনি আর। সেখানেই তার দেহকে তারকায় রূপান্তরিত করা হয়। সে তারকাকে শুকতারা নামে চেনে মানুষ। জোহরা তারকা বলা হয়ে আরবিতে। আজকে আমরা জানি সেটা শুক্রগ্রহ।
উজ্জ্বল শুকতারা, যাকে আরবরা ডাকত জোহরা বলে; Image Source: Weekends in Paradelle
কোনো কোনো বর্ণনায় আছে, যখন এ ফেরেশতা দু'জনের কাছ থেকে অবাধ্যতা প্রকাশ পায় তখন আকাশের ফেরেশতারা স্বীকার করে নেন, মানবজাতি আল্লাহ থেকে দূরে অবস্থানের কারণে এবং তাকে না দেখেই ঈমান আনবার কারণে, তাদের ভুল হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু না (ইবনে কাসির, ৩৩৯ পৃষ্ঠা)।
আল-কালবির বিবরণে দেখা যায়, আসলে তিনজন ফেরেশতাকে বাছাই করা হয়েছিল। তারা ছিলেন ফেরেশতা আয, আযাবি এবং আযরাইল (আঃ)। এর মাঝে যখন আযরাইল (আঃ) নিজের মাঝে কামনা অনুভব করেন তখন ক্ষমা প্রার্থনা করে তাকে তুলে নিতে বলেন, তাকে তুলে নেওয়া হয়। কিন্তু বাকি দুজন কামনা চরিতার্থ করেন, তখন আল্লাহ তাদের নাম পরিবর্তন করে হারুত ও মারুত করে দেন যথাক্রমে।
কাতাদার ভাষ্যে জানা যায়, এক মাস লেগেছিল ফেরেশতা দুজনের অবাধ্য হতে। আর অন্য এক বিবরণে শোনা যায়, জোহরা আসলে যেন-তেন মহিলা ছিলেন না, পারস্যের রানী ছিলেন। আরেক ইহুদি বিবরণে জানা যায়, ফেরেশতা দুজনের আগের নাম ছিল শামহাজাই এবং আযাইল। আর জোহরার নাম সেখানে এস্থার। ইহুদি মিদ্রাশের অন্য বিবরণে এও জানা যায়, এস্থার বা জোহরা আসলে ব্যভিচারে জড়িত হয়নি, বরং তার ইচ্ছে ছিল কেবল স্রষ্টার পবিত্র নাম জানা, যেন সে স্রষ্টার নৈকট্য পেতে পারে। সে নাম জপ করবার পর যখন জোহরা স্বর্গারোহণ করল, তখন স্রষ্টা নিজে খুশি হয়ে তাকে কিমাহ নক্ষত্রমালায় স্থান দেন। তৎকালীন আরবে জোহরার শুকতারা হয়ে যাবার কাহিনী প্রচলিত ছিল।
ইহুদীদের মিদ্রাশ; Image Source: The Talmud Blog
হারুত-মারুতের ঘটনা বংশের পর বংশ ধরে চলে আসে। যাদের হাতে ছিল জাদুর মতো অলৌকিক ক্ষমতা, একটা সময় পর যে তাদেরকে পুজো শুরু করে দিবে তখনকার মানুষ, সে কী আর বলতে! সত্যি সত্যি এক সময় তারা উপাস্যে পরিণত হন; না, এটা কোনো ইহুদি, খ্রিস্টীয় বা ইসলামিক বই থেকে বলা হচ্ছে না, খোদ ইতিহাস থেকে বলা হচ্ছে। যেমন- আরমেনিয়াতে হারুত আর মারুত নামের দুই মূর্তির পুজা করা হতো। তারা ছিল আমিনাবেগ এবং আরারাত পর্বতের দেবী আসপারদারামলতের (Aspandaramlt) দুই উপদেবতা। ইরানেও (অর্থাৎ, পারস্যে) এই দেবীর পুজা হতো। আরমেনীয়রা তাকে দ্রাক্ষাক্ষেতের দেবী মানলেও ইরানে অর্থাৎ পারস্যের জরথুস্ত্রুর ধর্মে আসপারদারামলত আসলে একেবারে পৃথিবীর আত্মা। হোরোত আর মোরোত (হারুত মারুত) তার দুই সহকারী। তারা বাতাস আর বৃষ্টি আনত বলে বিশ্বাস করা হতো। আরারাত পর্বতের চুড়ায় তাদের বাস।
মজার ব্যাপার, আরো ঘাঁটলে আমরা জানতে পারি, জোহরার হিব্রু নাম ইস্থার। যাকে ব্যবিলন আর সিরিয়ায় কামের দেবী এবং জন্মের দেবী হিসেবে উপাসনা করা হতো। গিলগামেশ আর ইস্থারের এক করুণ প্রেমকাহিনী আমরা সেখানে পাই, তবে সে অন্য কথা।
দেবী ইস্থার; Image Source: The Conversation
জরথুস্ত্রুর পারসিক ধর্মে আমরা আভেস্তা ভাষায় 'হাওরভাতাত' (Haurvatat) নাম পাই, যার সাথে পানি, উন্নতি আর স্বাস্থ্যের সম্পর্ক ছিল। হাওরভাতাত নারী না পুরুষ সে বিষয়ে আছে বিতর্ক। তবে তার সাথে গ্রিক ধনের দেবতা প্লুটাসের মিল পাওয়া যায়। আবার আরেকটি নাম পাওয়া যায় যেটি হলো 'আমেরাতাত' (Ameretat)। আমেরাতাতের সাথে জড়িত ছিল ইহকাল আর পরকালের আয়ু আর সমৃদ্ধি।
জরথুস্ত্রুর পারসিক ধর্ম; Image Source: Zoroastrianism in Greater Boston | The Pluralism Project
ভাবছেন এ দুজনের কথা কেন বলছি? ইতিহাস এখানেই শেষ না। ইসলাম আবির্ভাবের প্রায় ৬০০ বছর আগে থেকে ইরানে বা পারস্যের একটি অঞ্চলে সগদিয়ান ভাষায় কথা বলা হতো, বর্তমানে সেটি উজবেকিস্তান আর তাজিকিস্তান, সমরকন্দ যার রাজধানী। সে ভাষায় আমরা দেখতে পাই হাওরভাতাত আর আমেরাতাত এর উচ্চারণ হারুত আর মারুত। হতে কি পারে না তারা একই?
হারুত-মারুতের নাম শুধু এ ভাষায় না, বরং ইরানের নানা উপভাষাতেও প্রচলিত হয়ে যায়। এমনকি তারা এক জাতের ফুলের নামও রাখে হারুত-মারুত।
ব্যবিলনে ছিল ঝুলন্ত উদ্যান; Image Source: pinterest
আবু দাউদ শরিফের ৪৯০ নং হাদিসে এসেছে, একবার আলী (রা) বাবেলের পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন। আসরের নামাজের সময় হয়ে গেলেও তিনি সেখানে নামাজ পড়লেন না। একেবারে বাবেল সীমান্ত পার হয়ে যাবার পর নামাজ পড়লেন। এরপর বললেন, "রাসুল (সা) আমাকে কবরস্থানে নামাজ পড়তে মানা করেছেন, আর বাবেলের ভূমিতে নামাজ পড়তে মানা করেছেন। কারণ বাবেল অভিশপ্ত ভূমি (সেই জাদুর কারণে)।"
তবে, 'ফলেন অ্যাঞ্জেল' ধারণা কিংবা ফেরেশতার অবাধ্যতার ধারণা ইসলামে অনুপস্থিত থাকায় এসব ইহুদি উপকথা মিথ্যা বলে মেনে নেন আধুনিককালের ইসলামি আলেমগণ। ইমাম কুরতুবিরও তাই মতামত। কারণ, কুরআন বলছে,
সূরা ৬৬. আত-তাহরীম
আয়াত নং ৬
অনুবাদঃ- হে মু’মিনগণ! তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে আর তোমাদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা কর যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যাতে মোতায়েন আছে পাষাণ হৃদয় কঠোর স্বভাব ফেরেশতা। আল্লাহ যা আদেশ করেন, তা তারা অমান্য করে না, আর তারা তাই করে, তাদেরকে যা করার জন্য আদেশ দেয়া হয়। -(তাইসিরুল)
ইমাম তাবারি আর ইবনে জারির মনে করেন, হারুত মারুত আসলে ফেরেশতা ছিলেন না, মানুষই ছিলেন, তাদেরকে ফেরেশতা মনে করা হতো।
বর্তমানে ইসলামে যে ফতোয়া এ বিষয়ে দেওয়া হয়েছে, সেটি সৌদি ফতোয়া কাউন্সিলের শেখ সালিহ আল ফাওজানের, "হারুত ও মারুত ফেরেশতাই ছিলেন, কিন্তু তারা কখনোই অবাধ্যতা করেননি। তাদের আল্লাহ কেবল পাঠিয়েছিলেন মানুষের পরীক্ষা নেবার জন্য। তারা যে জাদুবিদ্যা শেখাবার কথা বলতেন, সাথে সতর্কবাণীও দিতেন। আল্লাহর হক বান্দাগণ সে সতর্কবাণী মেনে জাদু শিখবে না, কিন্তু নাফরমানি যারা করতে চায় তারা শিখবে। এটা ছিল ছিল সে পরীক্ষা। আর কিছুই নয়।"
শেখ সালিহ আল ফাওজান; Image Source: imamu.edu.sa
সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রা) আকাশে শুকতারা দেখলেই প্রচলিত ইহুদি কাহিনীটি স্মরণ করে অভিশাপ দিতেন বলে ইবনে কাসিরের তাফসিরে উল্লেখ আছে। ইসলামে সরাসরি হারুত আর মারুত নিয়ে কিছু উল্লেখ না থাকলেও ইহুদি উপকথার মিশেল সহস্রাব্দেরও বেশি সময় জুড়ে কাহিনীর যোগান দিয়ে এসেছে বটে মুসলিম বিশ্বে।
ব্যবিলনের টাওয়ার অফ বাবেল; Image Source: file.army
মুল কথায় আসি,
পারিভাষিক ভাবে কাব্বালাহ বলতে আসলে শয়তানের পূজা করা বোঝানো হয়, যেমন ইলুমিনাতি, ফ্রি ম্যাশনারি, এসব সিক্রেট সোসাইটি আর বাফোমেট হেন তেন এসব সম্পর্কে মোটামুটি সবাই জানি। কিন্তু কাব্বালাহ আরো গভীরে।
শয়তান তখন খুশি হয় যখন বান্দা আল্লাহ কে ছেড়ে অন্য কাউকে রব হিসেবে মেনে নেয়, আর এরকমই একটি মাধ্যম হলো কাব্বালাহ।
কাব্বালাহ আসলে শয়তানের আরাধনা করে তাকে খুশি করা এবং তার সাহায্যে প্রাপ্ত শক্তি কাজে লাগানো।
কাব্বালাহর পূজারীদের আমি সাধারণত কুফফার বলে সম্বোধন করবো।
তো কুফফাররা কথিত লুসিফার বা ইবলিসের পূজা করে, শুধু তাই না, প্যাগান সভ্যতা থেকে আফ্রিকার দূর্লভ আদিবাসীরা যেসমস্ত অতিপ্রাকৃত জিনিসে বিশ্বাস করে এবং সমস্ত কাফের, তারা প্রত্যেকে এই কাব্বালাহর অন্তর্ভুক্ত, তবে খ্রিস্টান ব্যাতীত।
শয়তানের পূজা করার, তার ইবাদত করার অনেক পদ্ধতি আছে, তবে বিস্তারিত আমি সব বলবো না, কারণ শুধু মাত্র কৌতুহলের বশে অনেকে এসব জানতে গিয়ে ঈমান হারিয়ে ফিরবে।
১) #আত্মা_বিক্রিঃ-
আত্মা সম্পর্কে মানুষকে খুব কম জ্ঞানই দান করা হয়েছে। যেমন আল্লাহ বলেন,
সূরা ১৭. আল-ইসরা
আয়াত নং ৮৫
অনুবাদঃ- তোমাকে তারা রূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বল, ‘রূহ হচ্ছে আমার প্রতিপালকের হুকুমের অন্তর্ভুক্ত (একটি হুকুম)। এ সম্পর্কে তোমাকে অতি সামান্য জ্ঞানই দেয়া হয়েছে।’ -(তাইসিরুল)
সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে মানুষকে অল্প জ্ঞান দান করা হয়েছে, কিন্তু আমাদের সীমার মধ্যেই আমরা বিবেচনা করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
আমাদের আত্মা বা রুহ বলে কিছু আছে, আর আমরা যখন আল্লাহর ইবাদত করি করি আত্মার মধ্যে একরকম পরিবর্তন হয়, ফলে অন্তর প্রশান্ত হয়, যেমন আল্লাহ বলেন,
সূরা ১৩. আর-রাদ
আয়াত নং ২৮
অনুবাদঃ- তারাই ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে তাদের অন্তর প্রশান্তি লাভ করে। জেনে রেখ, আল্লাহর স্মরণের মাধ্যমেই দিলের সত্যিকারের প্রশান্তি লাভ করা যায়। -(তাইসিরুল)
আত্মার প্রশান্তিকেই অন্তরের প্রশান্তি বলা হয়। কিন্তু আল্লাহর বদলে যখন শয়তানের উপাসনা করা হয় তখন আত্মার চাহিদা বেড়ে যায়, যেখানে প্রভাবক হিসেবে কারীন শয়তান কাজ করে, আর চাহিদা বাড়তে বাড়তে এমন পর্যায়ে চলে যায় যেখানে নিজের আত্মা কে বিক্রি করা হয় শয়তানের কাছে আর একটি চুক্তি করা হয় আত্মা বিক্রি নিয়ে শয়তানের সাথে। আত্মা বিক্রি নিয়ে কোরআনেও বলা আছে,
সূরা ২. আল-বাকারা
আয়াত নং ৯০
অনুবাদঃ- তা কতই না নিকৃষ্ট যার বিনিময়ে তারা নিজেদের আত্মাকে বিক্রি করেছে, তা এই যে, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, জিদের বশে তারা তা প্রত্যাখ্যান করত শুধু এজন্য যে, আল্লাহ তাঁর বান্দাহদের মধ্য হতে যাকে ইচ্ছে অনুগ্রহ করেন, অতএব তারা ক্রোধের উপর ক্রোধের পাত্র হল এবং কাফিরদের জন্যই লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি রয়েছে। -(তাইসিরুল)
বিভিন্ন সময় আমরা বিভিন্ন নিউজ শুনি অমুক সেলিব্রিটি তমুক লোক হটাৎ মারা গেছে, আসলে ব্যাপারটি এমন নয়।
শয়তান প্রত্যেক কাজের একটা বিনিমিয় চায়, আর আত্মা বিক্রয় হচ্ছে শয়তানকে খুশি করার সবচেয়ে বড় মাধ্যম। তাই কুফফাররা এসব বড় বড় মানুষকে বলি দেয় শয়তান কে খুশি করে নিজের কাজ উসূল করতে, কারণ জ্বীন শয়তান এমন সব কিছু পারে যা সাধারণ মানুষের পক্ষে করা সম্ভব না। যেমন হিটলারের ৬০০০০ ইহূদী হত্যা করা, এ ব্যাপারে অনেক সংশয় আছে, যতদূর সম্ভব হিটলার এসব ইহূদী কে বলি দিয়েছে নিজেদের ভূমি ফেরত পাওয়ার জন্যে যেমনটা আজ তারা ঈসরায়েল কে পেয়েছে।
এভাবে বিভিম্ন কাজের জন্যে বিভিন্ন উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য কুফফাররা বড় বড় লোককে বলি দেয়।
সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে যে বিষয়টি কতটা গভীর আর ষড়যন্ত্রমূলক।
২) #শয়তানের_নাগাল_পাওয়াঃ-
কুফফাররা শায়াতিনের নাগাল পাওয়ার জন্যে বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যাবহার করে। সব বর্ণনা আমি করবোনা, তবে এরকম একটি পদ্ধতি হলো মেডিটেশন।
আমরা জানি মানুষ থার্ড ডাইমেনশনের প্রানী। তাই মানুষ স্বশরীরে কখনোই থার্ড থেকে অন্য ডাইমেনশনে পৌঁছানো সম্ভব না, তবে নিজের আত্মা কে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব। মেডিটেশন হলো এমন একটি মাধ্যম যেখানে মানুষ নিজের শরীরকে স্থিতিশীল রেখে আপন আত্নাকে থার্ড থেকে বেশি ডাইমেনশনে পৌঁছে দেয়, যেখানে তারা শয়তানকে রব হিসেবে মেনে নিয়ে তার কাছে যেতে চায়, তার সাথে যোগাযোগ করতে চায়, তাকে সন্তুষ্ট করে নিজের দুনিয়াবি উদ্দেশ্য হাসিল করতে চায়।
এরকম আরো অনেক পদ্ধতি আছে যেখানে শয়তানের সাথে যোগাযোগ করে তাকে রব মেনে নিয়ে তাকে সন্তুষ্ট করে দুনিয়াবি বিভিন্ন উদ্দেশ্য হাসিল করা হয়।
৩) #জঘন্য_কাজঃ-
আগেই বলা হয়েছে যে কাব্বালাহ মানে শয়তানের পূজা। তাই শয়তান সেসবই পছন্দ করে যা আল্লাহ অপছন্দ করে, আর শয়তান সেসব অপছন্দ করে যা আল্লাহ পছন্দ করেন। তাই দুনিয়ার যত জঘন্য কাজ আছে সেসব করেও শয়তানকে খুশি করা হয়। আমরা জনি পৃথিবীতে অনেক ধরণের অনেক উৎসব আছে, যা একটা থেকে আরেকটা খুব বাজে, আর সিক্রেট সোসাইটির মেম্বাররা এসব পালন করে থাকে, আর এরকমই একটি ধর্ম হলো স্যাটান ধর্ম। ইভেন এরকম কিছু উৎসব এমনও আছে শোনা যায় যেখানে কুফফাররা পরস্পরের সাথে জিনা করে, এবং নিজেকে নাপাক করে যত বাজে ধরণের কাজ আছে এনাল, অরাল, ফ্রি মিক্স, গ্যায়নিজম, লেসবিয়ানিজম, সবই করে থাকে।
৪) #ম্যাথম্যাটিকসঃ-
ব্যাবিলনিয়ান ম্যাথম্যাটিক্স ছিল প্রাচীন পৃথিবীতে সবচেয়ে সমৃদ্ধ। তাদের যেসব ক্লু পাওয়া গিয়েছে তা থেকে জানা যায় আলজেবরা, ফ্র্যাকশন, কিউবিক ইকুয়েশন, কোয়াড্রাটিক, পিথাগোরিয়ান থিওরেম প্রভৃতিতে তারা সমৃদ্ধ ছিল। “......The majority of recovered clay tablets date from 1800 to 1600 BC, and cover topics that includefractions, algebra, quadratic and cubic equationsand the Pythagorean theorem. "
তাদের সংখ্যা সিস্টেম ছিল সেক্সাগেসিম্যাল, অর্থাৎ ষাটভিত্তিক। সম্ভবত এ কারণেই CERN এর লোগোতে ট্রিপল সিক্স দেখা যায়। এর প্রভাব আজও বিদ্যমান। এই মডার্ন এজেও ৬০ সেকেন্ডে এক মিনিট, ৬০মিনিটে এক ঘন্টা হিসেব করা হয়।
ব্যাবিলনিয়ান অ্যাস্ট্রোনমাররা কথিত গ্রহেরও হিসাবনিকাশ রাখতো। সেলেশিয়াল বডির হিসাবনিকাশ রাখার জন্য তারা বেসিক অ্যারিথমেটিক্স ও কো-অর্ডিনেট ইউজ করতো। এ থেকে বুঝা যায়, তারা যাদুশাস্ত্রে কতোটা আপডেট ছিল। ব্যাবিলনিয়ান অ্যাস্ট্রোলজিতে বিশেষ সাত নক্ষত্রকে কিভাবে দেখা হয় এটা নিয়ে একটি আলাদা আর্টিকেল লেখা লাগবে।
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত-
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জ্যোতিষীর জ্ঞান শিক্ষা করলো সে যাদু বিদ্যার একটা শাখা শিক্ষা করলো। তা যতো বৃদ্ধি পাবে যাদুবিদ্যাও ততো বাড়বে।
সুনানে আবু দাউদ, ৩৯০৫
হাদিসের মান: হাসান হাদিস
#মিশরীয় ম্যাথম্যটিক্স
মিশরীয়রাও এতে অনেক এগিয়ে ছিল। জ্যামিতি, অ্যারিথমেটিক্স, প্রাইম নাম্বারস, পারফেক্ট নাম্বার থিওরি (তাদের মতে পার্ফেক্ট নাম্বার হলো ৬)-অর্থাৎ বেসিক সবকিছুতেই তারা এক্সপার্ট ছিল। পিরামিড নির্মাণ, বিশাল আকৃতির স্কাল্পচার প্রভৃতি দেখেই বুঝা যায় তাদের ম্যাথম্যাটিক্যাল নলেজ কোন স্তরে ছিল। কিছু ক্ষেত্রে এখনকার গণিতের থেকেও অ্যাডভান্স। এছাড়াও পিরামিডের অবস্থান বিশেষ কিছু নক্ষত্রের সাথে সম্পর্কিত। এ থেকে বুঝা যায় অ্যাস্ট্রোলজিক্যাল নলেজও তাদের কম ছিল না। গ্রিক ফিলোসফিতে মিশরীয় যাদুশাস্ত্রের প্রভাব রয়েছে
#গ্রিক ম্যাথম্যাটিক্স
ব্যাবিলনিয়ানদের নিকটে গ্রিসের যাদুকররা ঋণী। তাদের অপবিদ্যাই তারা গ্রহণ করেছে।
উইকির স্বীকারোক্তি- “Since the rediscovery of the Babylonian civilization, it has become apparent that Greek and Hellenistic mathematicians and astronomers, and in particular Hipparchus, borrowed greatly from the Babylonians.”
পিথাগোরাস মিশরের পুরোহিতদের থেকে অ্যাস্ট্রোনমি, গণিত ও জ্যামিতি শিখেছিল। “According to legend, Pythagoras traveled to Egypt to learn mathematics, geometry, and astronomy from Egyptian priests.”
পিথাগোরাসের প্রতিষ্ঠিত স্কুলের মোটো ছিল ’সবকিছুই সংখ্যা’। প্লেটোনিজমও একই শিক্ষা দিতো।
পিথাগোরাস ছাড়াও অন্যান্য গ্রিক যাদুকরদের দ্বারাও ম্যাথম্যাটিক্সের উন্নয়ন ঘটে।
এছাড়াও গ্রিসেই পিথাগোরিয়ান কাল্ট, প্লেটোনিক থট প্রভৃতির জন্ম ঘটে। যা পরবর্তীতে বিজ্ঞানের ভিত্তির প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হয়।
#ইন্ডিয়ান ম্যাথম্যাটিক্স
মিশরের মতো ইন্ডিয়াতেও প্যাগানদের রিচুয়ালে গণিতের দেখা মেলে। পিথাগোরিয়ান ট্রিপলস, baudhayana sulba sutras, sulba sutras ছাড়াও অনেক কিছুতে তাদের দক্ষতা উল্লেখ্য। তাদের বিভিন্ন গাণিতিক দক্ষতা ও ব্যাবিলনিয়ান গণিতের সাথে সাদৃশ্যতা থাকাতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে ভারতেও ব্যাবিলনের প্রভাব ছিল।
উইকির বক্তব্য- ”All of these results are present in Babylonian mathematics, indicating Mesopotamian influence.”
গণিতবিদ এস.জি. ডানির মতে, ”Since these tablets predate the Sulbasutras period by several centuries, taking into account the contextual appearance of some of the triples, it is reasonable to expect that similar understanding would have been there in India."
তার আরও বক্তব্য- "As the main objective of theSulvasutras was to describe the constructions of altars and the geometric principles involved in them, the subject of Pythagorean triples, even if it had been well understood may still not have featured in the Sulvasutras. The occurrence of the triples in theSulvasutras is comparable to mathematics that one may encounter in an introductory book on architecture or another similar applied area, and would not correspond directly to the overall knowledge on the topic at that time. Since, unfortunately, no other contemporaneous sources have been found it may never be possible to settle this issue satisfactorily."
#মুসলিমদের স্বর্ণযুগে
গ্রিসের যাদুকরদের বইপত্র আরবে প্রবেশ করাতে আরব হয়ে যায় অপবিজ্ঞানের নতুন ঘাটি।
পারসিয়ান গণিতবিদ আল খোয়ারিজমির অবদান আজও অনস্বীকার্য। এছাড়াও আল কিন্দি, মিশরের আবু কামিল, আল ফাখরি, আল কারাজি, ইবনে আল হাইসাম, আবু ওয়াফা, নাসির আল দীন তুসি, ওমর খৈয়াম, গিয়াস আল কাশী, আল-কালাসাদি প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
এছাড়াও চাইনিজ, রোমান ও মায়ান প্রভৃতি প্যাগান সভ্যতাতেও ম্যাথম্যাজিক্স এর দেখা মেলে। তারা মিউজিকেও বেশ অগ্রগতি করেছিল। প্লেটো থেকে হার্মোনি রিলেটেড আলোচনা ফিজিক্সের অংশ বলে বিবেচিত হয়।
#মধ্যযুগীয় ইউরোপ
১২০০ সালের দিকে ইউরোপিয়ান স্কলাররা স্পেন ও সিসিলি ভ্রমণ করে ন্যাচারাল ফিলোসফির কিতাবাদি সংগ্রহ করে। যেমন, ইউক্লিড’স এলিমেন্টস, টলেমির almagest, খাওয়ারিজমির The Compendious Book on Calculation by Completion and Balancing প্রভৃতি। এসব বই আবার ম্যাথম্যাজিক্সের জাগরণ ঘটায়, তবে এবার ইউরোপে। থমাস ব্রাড ওয়ারডাইন, ফিবোনাক্কি, গ্যালিলিও গ্যালিলাই, কোপার্নিকাস, কিংবা নিউটন- অর্থাৎ সকল ন্যচারাল ফিলোসফাররা আরবদের থেকেই প্রভাবিত।
গ্যালিলিও তার বই saggiator এ লিখেছে, “"[The universe] is written in the language of mathematics, and its characters are triangles, circles, and other geometric figures."
মহাবিশ্বকে গণিত দ্বারা এক্সপ্লেইন করার প্রচেষ্টা গ্যালিলিওর মাঝেও দেখা যায়।
#রেনেসা
নিওপ্লেটোনিজমের ফিলোসফার George Gemistos Plethon প্লেটো ও আলেক্সান্দ্রিয়ান মিস্টিক্স এর ওপর বক্তৃতার কারণে ফ্লোরেন্স সোসাইটি তার প্রতি মুগ্ধ হয় এবং ২য় প্লেটো নাম উপাধি দেয়। ১৪৫৯ সালে john argyropoulos ফ্লোরেন্সে গ্রিক ভাষা ও সাহিত্যে ওপর লেকচার দেওয়ার সময় marsilio ficino তার ছাত্র হয়। যখন cosimo ফ্লোরেন্সে পুনরায় প্লেটো একাডেমি পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করে তখন ficino কে তার হেড করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ficino প্লেটোর রচনা গ্রিক থেকে ল্যাটিনে ট্রান্সলেট করে, এমনকি হেলেনিস্টিক গ্রিক ডকুমেন্টস ও হার্মেটিসিজমের বই হার্মেটিক কর্পাসও! এছাড়াও Porphyry, Iamblichus, Plotinus এদের অবদান রয়েছে। ficino এর ছাত্র Giovanni Pico della Mirandola ও প্লেটোর মতবাদ ধারণ করতো, অবশ্য অ্যারিস্টটল এর প্রতিও তার ভক্তি ছিল। সে মনে করতো অ্যারিস্টটল ও প্লেটোর বক্তব্য একই, জাস্ট ভিন্ন ওয়ার্ডস ইউজ করা হয়েছে। এজন্য সবসময় তার লক্ষ্য ছিল দুই যাদুকরের ফিলোসফিকে একত্রিত করা। সে বিশ্বাস করতো প্রত্যেক এডুকেটেড পার্সনেরই উচিত তালমুদিক ও হার্মেটিক সোর্স অধ্যয়ন করা।
এছাড়াও হার্মেটিসিজমের আরেক বই hermes trismegistus রেনেসায় নিওপ্লেটোনিক থটের পুনর্জাগরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
জুডিও ব্যাবিলনিয়ান মিস্টিসিজম ও ইস্টার্ন মিস্টিসিজম থেকে প্রাপ্ত ম্যাথম্যাটিক্স গ্রিক থেকে আরব, এবং আরব থেকে ইউরোপে চলে যায়। ইউরোপে তখন খ্রিস্টানদের প্রভাব ছিল। তারা ভালো করেই বুঝতো ফিলোসফাররা আসলে যাদুকর। এ কারণে তারা যাদুকরের শাস্তি তাদের ওপর প্রয়োগ করতো। এভাবেই শাস্তিপ্রাপ্ত হয় গ্যালিলিও থেকে ব্রুনো। এটা মোটেই অস্বাভাবিক ছিল না। কিন্তু এক সময়ে চার্চের শাসন ভেঙে গেলে অপবিদ্যা পাবলিকলি লিগ্যালাইজড হয়। আগের থেকে বেশি সংখ্যক মানুষ এতে জড়িয়ে যায়। এভাবেই ইউরোপে ধীরে ধীরে সমৃদ্ধ হওয়া ম্যাথম্যাটিক্স আজকের সাইন্সের ভিত্তি গড়ে দেয়।
#হোক্স
ন্যাচারকে ম্যাথম্যাটিক্যালি এক্সপ্লেইন করার জন্য আবিষ্কৃত সকল ইকুয়েশন আপাত দৃষ্টিতে অকাট্য মনে হলেও তার মাঝে একটি ধাপ্পাবাজি লুকিয়ে রয়েছে। এ কথা বিজ্ঞানীরাও স্বীকার করে।
নিকোলা টেসলা - “
Today's scientists have substituted mathematics for experiments, and they wander off through equation after equation, and eventually build a structure which has no relation to reality.”
মডার্ন প্লেটোনিজম/পিথাগোরিয়ানিজম/ম্যাথম্যাটিসিজম/ম্যাথম্যাটিক্যাল মনিজম
ফরাসি ম্যাথম্যাটিসিয়ান রেনে দেকার্তে অ্যারিস্টটল আর সেইন্ট অগাস্টিন দ্বারা প্রভাবিত ছিল।


one more article:

কাব্বালাহ: ইহুদি অতীন্দ্রিয়বাদের আদ্যোপান্ত


https://roar.media/bangla/main/art-culture/kabbalah-mysticism-in-judaism

 

Comments

Popular posts from this blog

পোলিও টিকাতে মূল উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয় বানরের কিডনি:

আপনার শিশুকে টিকা দিতে চান? তার আগে সত্য জানুন!

ডাইনোসর নিয়ে যত জল্পনা কল্পনা: